যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তাহলে আগামি নির্বাচনে আমি প্রথমবারের মত আমার ভোট দিব। ঠিকঠাক এজন্য বললাম যদি সুস্থভাবে বেঁচে থাকি। এটা তো আর আমার হাতে নাই। সবকিছুই উপরওয়ালার হাতে। ভিতরে ভিতরে আমি তো ভীষণ খুশি। বাপরে বাপ অনেক বড় হয়ে গেছি। এখন আমারও ভোট দেওয়ার অধিকার আছে। আমার সব খুশি, আনন্দ, উচ্ছ্বাস, উৎসাহ, উদ্দীপনা নিমিষেই চুপসে গেছে যখন এই প্রশ্নটার সম্মুখীন হলাম “ভোট মানে কি?” ডিকশনারী ঘেঁটে দেখলাম ইংরেজি “vote” মানে “formal expression of choice or opinion by a ballot” সহজ বাংলা ভাষায় “মতামত প্রকাশ”, এর বিপরীত প্রতিশব্দ হল “veto”। মানে “the right or power of rejecting” অর্থাৎ “অগ্রাহ্য বা নামঞ্জুর করার অধিকার বা ক্ষমতা”।
আমি এক অ-রাজনৈতিক (non-political) পরিবারের সংযুক্ত আরব আমিরাতে জন্মগ্রহনকারি এক অ-রাজনৈতিক ছাত্র। আমি বি.এন.পি/আওয়ামীলীগ বুঝিনা। বাবা তাঁর পুরু জীবনটাই কিটিয়েছেন বিদেশে। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে আসার পর থেকে ২ টা সংসদ নির্বাচন দেখলাম, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে। আমার মা কাউকে ভোট দেননি। উনার কথা হল “আমি আমার খাব, আমার পরব ওদেরকে ভোট দেব কেন? ওরা তো আমাকে খাওয়াবে না, পরাবেনা”, বললাম - না ভোট দাও, উত্তর “দরকার কি?” না ভোটের দরকার কি সেটা তো জানিনা।
যাই হোক, বাবা মা যাই করুক আমি আমার ভোট দেব। আমার যত সমস্যা ভোটের অর্থ মত প্রকাশ নিয়ে। অশিক্ষিত লোকদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে একটা দেশের নীতিনির্ধারণ করা, একটা সভায় বয়োজ্যেষ্ঠ লোকদের রেখে একটা বাচ্ছা ছেলের মতকে প্রাধান্য দেওয়ার মতই অযৌক্তিক (আমার মতে)।
আমার এলাকা কিংবা দেশের জন্য কে নির্বাচিত হলে ভাল হবে সেটা কি আমি ভাল বুঝি নাকি আমার ঘরের কাজের বুয়া ভাল বুঝে নাকি আমি প্রতিদিন ক্লাসে যাই যে রিক্সা চড়ে সেই রিক্সার ড্রাইভার ভাল বুঝে নাকি আমার ডিপার্টমেনটের হেড ডক্টরেট ডিগ্রিধারী জহির স্যার ভাল বুঝেন? জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন।
ধরে নিলাম সিলেট-১ আসনের সংসদ নির্বাচনে জামাল সাহেব আর কামাল সাহেব প্রার্থী। আরও ধরে নিলাম সিলেটে মাত্র একটা পরিবার আছে। ঐ পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুজনই পি.এইচ.ডি হোলডার, আর তাদের ঘরে আছে একজন কাজের বুয়া, একজন গাড়ির ড্রাইভার এবং একজন দারোওয়ান। এই ৫ জনই সিলেটের ভোটার। নির্বাচনে দেখা গেল জামাল সাহেব পি.এইচ.ডি হোলডার দুই স্বামী-স্ত্রী এবং নিজের ভোট সহ মোট ৩ টি ভোট আর কামাল সাহেব কাজের বুয়া, ড্রাইভার, দারোওয়ান এবং নিজের ভোট সহ মোট ৪ টি ভোট পেয়েছেন।
তাহলে দেখা গেল নির্বাচনে শিক্ষা কিংবা শিক্ষিত লোকের কোন মর্যাদা নেই। প্রত্যেক রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দ শিক্ষা নিয়ে কাজ করার কথা তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে উল্লেখ করেন। কিন্তু এমন একটা পদ্ধতিতে নির্বাচিত হন যে পদ্ধতিতে শিক্ষার কোন গুরুত্ব নেই।
আমি হলাম সমাধানের সাগর (solution bank)। আমার মতে, ই.ভি.এম (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন) এর সুষ্ঠু প্রয়োগই (মনে রাখবেন, সুষ্ঠু প্রয়োগ) এই সমস্যার আসল সমাধান। প্রত্যেক কেন্দ্রে শিক্ষিত ও অর্ধ বা অল্প শিক্ষিতদের জন্য আলাদা ই.ভি.এম এর ব্যবস্থা করা এবং ভোট শেষে শিক্ষিতদের ই.ভি.এম এর ভোট দুইবার গননা করা। এতে করে নির্বাচনী প্রার্থীদের কাছে শিক্ষিত লোকদের কদর বাড়বে। সেই সাথে শিক্ষার গুরুত্ব বাড়বে, দেশে শিক্ষার হারও বাড়বে।
বাংলাদেশে আমার চেয়ে শিক্ষিত লোকের অভাব নেই। এই বিষয়টা নিয়ে দীর্ঘ ৪০ বছরেও যদি তাদের টনক না নড়ে তাহলে কি ধরে নেব আমিই ভুল। শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়নি এমন একটা পদ্ধতিকে ভুল বলে যদি আমি ভুল করে থাকি তাহলে আমার ভুলই ভাল।
ভুল থেকে মনে পড়ে গেলো তসলিমা নাসরিনের কবিতা “ভুল মানুষ”
ভুল-মানুষের সঙ্গে জানাশোনা হোক,
হৃদয়ের কথা হোক,
ভালবাসা দেওয়া নেওয়া হোক।
যতটা জীবন বাকি, এভাবেই পার হোক,
জিবনের বিনিময় হোক
ভুলের সঙ্গে হোক,
প্রতিদিন হোক।
ভুল-মানুষকেই খুঁজি, নিতান্তই যদি খুঁজি।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ৮:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




