somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী কেন সংখ্যালঘু?

০৮ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নারী দিবসে সবাই অনেক কিছুই লিখছেন। আমার ২ পয়সার মতামত জানাতে বসলাম।

পড়াশুনার খাতিরে উত্তর আমেরিকায় কয়েক বছর কাটিয়েছি। সংখ্যালঘু কৃষ্ণবর্ণের লোকজনদের ওপর কি কি বৈষম্য চলে তা নিয়ে টিভি ইত্যাদিতে কম হৈচৈ দেখি নি। নিজের চোখেও কম বেশী দেখেছি বটে।

এক কৃষ্ণবর্ণ কমেডিয়ান একবার বলেছিলেন, "আমার বাসায় একবার চুরি হওয়াতে পুলিশকে ফোন করলাম। পুলিশ এসে আমার মাথায় আঘাত করে বলল, 'সব্বনাশ! সে এখনো এই বাড়িতেই বসে আছে!'" জোকটা উত্তর আমেরিকায় নিগ্রোদের অবস্থান বুঝানোর জন্য অসাধারণ।

রোজা পার্কস-এর কথা অনেকেই জানি আমরা। আমেরিকান কৃষ্ণবর্ণের এই মহিলা ১৯৫৫ সালে আমেরিকার শাসক-যন্ত্রকে বড় নাড়া দেন। সেই সময়ে কোনও বাসে সাদা চামড়ার কেউ থাকলে কৃষ্ণবর্ণের কেউ তাতে উঠতে পারতো না অথবা নিজের সিট ছেড়ে দিতে বাধ্য থাকত। কিন্তু রোজা এই নিয়ম মানেন নি। এই ছোট্ট ঘটনাই ইতিহাসে আজ অমর হয়ে আছে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদের প্রতীক হিসাবে।



কেন নিগ্রোদের এত বৈষম্য সহ্য করতে হয় উত্তর আমেরিকায়? কারণটা সহজ, তারা সংখ্যালঘু। সাদাদের সংখ্যাই বেশী। তারা মাইনরিটি। আমাদের দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য, আবার ভারতে মুসলিমরা মাইনরিটি।

কিন্তু নারী? নারী কি কোনও সমাজে কোনও জায়গায় 'সংখ্যালঘু'? পৃথিবীতে ৭০০ কোটি মানুষ আছে এই মুহূর্তে, তার অর্ধেক নারী। অথচ এক অর্ধেক বাকি অর্ধেকের উপর হাজার বছর ধরে যেভাবে কর্তৃত্ব করে যাচ্ছে, তা যেমন অসম্ভব শোনায়, তেমনি হাস্যকরও লাগে!

একটু ইতিহাস ঘেঁটে ফেলুন। যেকোনো দেশের যেকোনো সময়ের ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখা যাবে, আদতে তা 'পুরুষ'-এর ইতিহাস। রাজা-রাজড়া থেকে শুরু করে মডার্ন জেনারেল- সবই পুরুষেরই ইতিহাস, পুরুষেরই কর্তৃত্ব, পুরুষেরই সাম্রাজ্য। নারী শুধু ভোগ্যবস্তু মাত্র। তাই নারীর জায়গা পুরুষের হারেমে, পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য মাত্র।

বর্তমান উন্নত বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাফল্য নারীদের ব্রেইনওয়াশ করে বোঝাতে পারা--- সংক্ষিপ্ত অথবা যথেচ্ছ পোশাক-আশাক এবং আচরণের মাধ্যমেই নারীর মুক্তি। অথচ আদতে এহেন পোশাক- আশাকে নিজেকে উপস্থাপন করার মাধ্যমে তারা আসলে নিজেকেই ভোগ্যপণ্য হিসাবে উপস্থাপন করছে পুরুষের তৃপ্তির জন্য মাত্র। বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানির এতে হাজার হাজার কোটি ডলার পকেটে যাচ্ছে কসমেটিকস ইত্যাদির মাধ্যমে।

একইসাথে হাস্যকর নারীর পোশাকের শালীনতার মাত্রা ঠিক করে দেওয়া। নারীর পোশাক-আশাক ছোটোখাটো হলে উত্তেজিত হয়ে 'গেল গেল' রব তোলে কিন্তু পুরুষই! পুরুষ স্কিনটাইট জিন্স পড়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ালে নারীদের উত্তেজিত হাহাকার জাতীয় কোনও ঘটনার কথা শুনেছেন কখনো? আসলে তাহলে নারীর পোশাক-আশাকের শালীনতার মাত্রা ঠিক করেছে কে একবার ভাবুন!

পৃথিবীতে অনেক প্রজাতির প্রাণী আছে। কোনও কোনও প্রজাতি আছে, যেখানে স্ত্রীজাতীয় প্রাণীই অনেকগুনে বেশী dominant। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, হায়েনার কথা। "With hyenas, the females are bigger and stronger than the males." "Female Hyenas are typically 12% larger and heavier than their male counterparts, and they tend to rule the roost with their large and social packs."



অন্য হাজার হাজার উদাহরণের ভিতর পড়ে প্রায় সব ধরণের শিকারী পাখি, বিভিন্ন ধরণের মাকড়সা (Most spiders have large females and tiny insignificant males), কিছু কিছু সরীসৃপ ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রাইমেটদের ক্ষেত্রে অনেক বৈচিত্র্য দেখা যায়

(James Owen in England
for National Geographic News
November 25, 2003

Feminists might be surprised to hear it, but females are the dominant sex in most primate communities) ।

আমরা মানুষ হিসেবে একটি 'প্রাণী' ছাড়া আর কিছুই না। আমাদের প্রজাতির ভিতরে দেখা যায় 'পুরুষ প্রাধান্য' বা male dominance (আপনি বায়োলজি বই যদি জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চান সেটা আপনার ব্যাপার)।

তাহলে কেন পুরুষ বেশী প্রাধান্য বিস্তারকারী মানুষ প্রজাতিতে? সে আলোচনা অনেক বড় হয়ে যাবে। তবে হাজার বছরের বিবর্তন থেকে শুরু করে টেস্টটসটরন নামক হরমোন- সবই এর কারণের মধ্যে পড়ে।


যেই কারণেই হোক না কেন, আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী- আমাদের আচরণ অবিশ্বাস্য তারপরেও। হাজার হাজার বছরের পুরুষের কর্তৃত্ব বিস্ময় জাগায় বটে।

'বোরাত' দেখেছেন? সেখানে বোরাত সিনেমার শেষে পামেলা অ্যান্ডারসনকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বস্তায় ভরে। এই ঘটনা কিন্তু কিরগিজস্তান, কাজাখিস্তান দেশের বাস্তব ঘটনা! এসব দেশের সামাজিক রীতিই হচ্ছে কোনও পুরুষ কোনও নারীকে পছন্দ করলে তাকে উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করবে। এটা সেই সমাজে বৈধ এবং মেয়ের পরিবারও এটা মেনে নেয়। ( Approximately one third of Kyrgyz women marry by means of non-consensual kidnapping Click This Link)

একইসাথে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে এই জাতীয় কথায় খুব একটা আহ্লাদিত হওয়া যায় না। নারীরা কি কাজ করছে মূলত? রিসেপশনিস্ট থেকে শুরু করে গার্মেন্টস শ্রমিকই বেশী। পৃথিবীর খুব অল্প কিছু দেশে দেখা যায় নারীরাও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ পদে পুরুষের সমান তালে কাজ করছে। উদাহরনঃ জার্মানি, কানাডা ইত্যাদি। আমেরিকার মত দেশে আজ পর্যন্ত কোনও মহিলা প্রেসিডেন্ট আসে নি। এর কারনও অনেক। একটা উদাহরণ দেই। বায়োলজিক্যাল ফ্যাক্ট হচ্ছে, সন্তান জন্মের পর কিছু হরমোনের কারণে নারী 'ক্যারিয়ার মোটিভেশন' হারিয়ে ফেলে।

একই কথা বোধয় সবাই বলবে। কিন্তু বোঝার ব্যাপার একটাই। নারীর যে কোনও নির্যাতনে, বৈষম্যে এগিয়ে আসতে হবে নারীকেই। নারীই মানব সমাজের অর্ধেক। এক অর্ধ অন্য অর্ধের উপর যেভাবে ছড়ি ঘুরিয়ে যাচ্ছে, তা রীতিমত হাস্যকর মনে হয় আমার কাছে। আবার একই সাথে এই কর্তৃত্ব কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করলে প্রথম বাধা আসবে পুরুষের কাছ থেকেই, সেটা বোঝার জন্য জিনিয়াস হওয়ার দরকার নেই।

কিন্তু নারীর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সত্য মনে রাখতে হবে- Occupy Wall Street আন্দোলনের সাথে মিলিয়ে বলতে হবে "We are 50%!"। নিজের অধিকার নিজে আদায় না করলে মানব ইতিহাসে কেউ অধিকার দান করে দেয়নি। নিজ শক্তি সম্বন্ধে জানলে গর্জে ওঠা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

মা, বোন, বন্ধু, প্রেমিকা--- সকল নারীকে জানাই নারী দিবসের শুভেচ্ছা! :)



সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৩৬
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×