somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম; ডু আই? (৩)

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উৎসর্গঃ গৃহে যারা নির্যাতিত, গতানুগতিক জীবনটা যাদের কন্টকময়!


প্রাণটা ভরে শ্বাস নেই “আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম”! পরক্ষনেই চোখটা বন্ধ করে ভাবি “ডু আই?”


আরে দূর, সত্যিই কি আমার স্বপ্ন নেই নাকি! তাই হয়? কি স্বপ্ন আমার? লেখাপড়া শেষ করে একটা ভালো চাকরি, যুতসই জামাই, ক্লাসি শ্বশুড়বাড়ি, একটা গাড়ি, ফ্লাট? আর কিছু?? কিছুকি বাদ গেল? দূর এইটা কিছু হইলো? এইটা কি কোন স্বপ্ন? এইটা তো গতানুগতিক জীবন!এখানে স্বপ্ন আসলো কোথায়?


এটা কি আমার স্বপ্ন হতে পারে যে, আমি একজন ভালো মানুষকে সঙ্গী হিসেবে পেতে চাই! হতে পারে। নাহলে কেন আমি যশোরের নাম না জানা এক তরুণী গৃহবধু যাকে কিনা শ্বশুড়বাড়ির লোকজন জীবন্ত কবর দিয়েছিলো তার যায়গায় আমি নই এ জন্যই সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিবো! এখনো সেই নাম না জানা মেয়েটির চেহারা আমার চোখে ভাসে, হাসপাতালে চিকিৎসাহীন অবস্থায় পড়ে থাকা কর্দমাক্ত দেহটা আমার সামনে জীবন্ত হয়; আর আমার নিজের অক্ষমতার জন্য নিজের উপর করুণা হতে থাকে ! এই নরক যন্ত্রনা থেকে বাঁচার জন্য আমি মুখোসে নিজেকে জড়িয়ে রাখি। সো কলড নারীবাদী/ মানবাধিকার কর্মীদের মতো অন্তরালে আমিও ভাবতে থাকি, “গড ড্যাম লাকি আই অ্যাম !”


মুহুর্তে আমার মনে পরে, কর্তার সংসার বইতে একটা লেখা পড়েছিলাম, “আপনি আর আমি”। হ্যাঁ ভাই, আমি এখানে, তাই আমার একটা স্বপ্ন আছে, একজন ভালো মানুষকে সঙ্গী হিসেবে পাবার। আর তুমি? তুমিতো যশোরের অখ্যাত গ্রামে বড় হওয়া একটা মেয়ে, হয়তো ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলে, নয়তো না; হয়তো তোমার স্বামী তোমাকে ৩৬৫ দিনই মারধর করতো না; হয়তো তোমার বাবার টাকা থাকলে তিনি টাকা দিয়ে তোমার সুখ কিনে নেয়ার চেষ্টা করতেন; হয়তো তিনি বেঁচেই নেই আপদ নামানোর জন্য তোমার আপনজনেরা যারা তোমাকে তোমার ভাইয়ের অর্ধেক খাবার খাইয়ে বড় করেছেন তারা তাড়াহুড়ো করে এই পাষন্ড পরিবারে তোমাকে তুলে দিয়েছিল! দূর মেয়ে, কোথায় তুমি আর কোথায় আমি! আমার একটা ভালো সঙ্গী পাওয়া স্বপ্ন হতে পারে, কিন্তু তোমার সেটা বিলাসিতা বটে!


কিন্তু সত্য কথাটা জানো, আমি চাইলেও ভুলতে পারি না “আমিই আসলে তুমি”। কারন আমি যে মেয়ে ! সিজোফ্রেনিয়া রোগীর মত তোমার জীবনটাকে আমি চোখের সামনে দেখতে পাই। আমি দেখি, তোমার স্বপ্নটাও আমার গতানুগতিক স্বপ্নটার চেয়ে বড় কিছু ছিলো না, তুমি হয়তো তরকারিতে নুন কম হলো বলে গাল মন্দ খেতে চাওনি; কেননা সেদিন বাড়িতে নুনের ঘাটতি ছিলো! কিংবা একদিন সময় মতো রান্না বসাওনি বলে পিঠে কিলের বাড়ি পরুক সেটা মেনে নাও নি! তুচ্ছ কারনে তোমাকে ছোট করে দেখাটা তোমার পছন্দ হয়নি; হয়তো অভাবের সংসারে জুয়ো খেলে স্বামীর ফেরাটাও তুমি মেনে নিয়েছিলে কপাল বলে! তবু তোমার একটা স্বপ্ন ছিলো ছিমছাম একটা সংসারের।


তোমার কি মন খারাপ হচ্ছে? তোমার স্বপ্নটা পূরণ হয়নি বলে! মন খারাপ করো না। “আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম” সবাই বলতে পারে না। ইংরেজী জানে না, সেই জন্য না; বিষয় হচ্ছে মেয়েদের যে স্বপ্ন থাকে বা থাকতে পারে সেইটাই মেনে নেই না আমরা! বললাম তো, আমি যখন তোমাকে দেখি মাঝে মাঝে, তখন সেই প্রথম দিনের মত তুমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকো। আমি তোমাকে গল্প শোনাই, ইয়াসমিনের কথা, শামারুখের কথা আমার কথা, তোমার কথাও বাদ যায় না। শামারুখের কথা শুনে তোমার মন খারাপ হয়েছিলো, জিজ্ঞাসা করেছিলে, এত শিক্ষিত মেয়ে, এত শিক্ষিত শ্বশুড়বাড়ির সবাই তবুও এটা কি হলো ! আমি কপাল থেকে রেশমি চুল সরিয়ে শোনাই, মেয়েদের স্বপ্নের চড়া দাম, চাইলেই কেনা যায় না ! সেই জন্য চার লেনের মহাসড়কের মতো চওড়া কপাল লাগে।


সেদিন তুমি খুব হেসেছিলে, যেদিন আমার এক বান্ধবির কথা বলেছিলাম, যার হাত থেকে শ্বাশুড়ি বাজারে লিস্ট টেনে নিয়ে বলেছিলো, “তোমার হাতের লেখা ভালো না”। আমিও দুঃখে হেসেছিলাম! কত তুচ্ছ কারনে যে একটা মেয়েকে অপমানিত হতে হয়! আমার দেখা অন্যতম সুন্দর হাতের লিখা তার! আমার বান্ধবি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো, যে মানুষটাকে ভালোবেসে এত কিছু সহ্য করা সেই মানুষটা এই সবের কতটুকু মূল্য দেয়? ওদের বিয়ের আগেও কথা উঠেছিলো, এই মেয়ের থাইরয়েডের সমস্যা, বাচ্চা হবে তোহ! কথায় আছে, “যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা”, সেদিন কথাটার মর্ম বুঝলাম! আমার মাথাতেই ঢোকে না, যে বাজারের লিস্ট কি পরীক্ষার খাতা যে সেখানে মুক্তাক্ষরে লিখতে হবে?


তুমি দূর হও মেয়ে চোখের সামনে থেকে, আমি তোমাকে দেখতে চাই না ! তুমি আমাকে বলতে দিচ্ছো না, “আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম”। আমি প্রিয়তমের বাহুডোরে পরম নির্ভরতায় মাথা রেখে সোমেশ্বরী নদীর নীল জল দেখতে চাই! কেননা আমি জানি; বোভোয়ার অর্ধ শতাব্দী আগেই বলে গেছেন, এই গুলি মেনে না নিলে আমাকে বিবর্ন একাকিত্বের যন্ত্রনা সহ্য করতে হবে! সেই যন্ত্রনার চেয়ে “আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম” থাকা ভালো নাকি না থাকাই ভালো; আমি কনফিউসড।


আমি বাচ্চারা জিতলে জিতে যায় মা, এমন “মা” হবো নাকি আমার জীবনের স্বপ্নকে প্রাধান্য দেব বুঝতে পারি না মেয়ে। তুমি হয়তো বলবে, আরে এটা কোন কথা নাকি, আল্লাহর দুনিয়ায় কত “মা”ই তো ঘর বাহির সমান তালে মিলিয়ে নিচ্ছে! হয়তো নিচ্ছে, কিন্তু এই মিলিয়ে নিতে গিয়ে কত পেনাল্টি কিক গোলপোস্টের ত্রিসীমানায় ঘেসতে পারছে না সেই খবর কয়জন রাখি!


তুমি ভাবছো আমি একটা ভালো চাকুরি করি বলেই বেতনের টাকার উপর আমার একচ্ছত্র অধিকার ! কখনোই না মেয়ে, সেই টাকা কিভাবে খরচ হবে তার উপর নিয়ন্ত্রন আমার সামান্যই। আমি কোন ছার, সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে একজন শিক্ষয়িত্রীকেও বলতে শুনেছি, কীভাবে টাকা খরচ হবে সেই সিদ্ধান্ত পতি নামক দেবতার কাছ থেকেই আসে! আরেক জন পি এইচ ডি করতে যাবেন, তখন তার ননদিনী বলেছিলো, ভাবি এসে যদি দেখ ভাইয়া অন্য কারো সাথে ঘর করছে তাহলে দোষ দিও না কিন্তু !


ইশ একটা, “স্বপ্নই নয় এমন স্বপ্ন”, এমন একটা তুচ্ছ স্বপ্নই ঠিক ঠাক মতো দেখা যাচ্ছে না! একটা গতানুগতিক জীবনও যে কত কন্টকময়!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঘরে আগুন, মন্দীরে হামলা, মাজার ভাঙ্গা, পিটিয়ে মানুষ মারা এমন মেধাবী এদেশে দরকার নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৩২



২০০১ সালে দেলাম ঘরে আগুন দেওয়া ও মন্দীরে হামলার জঘণ্য কাজ। ২০০৪ আবার দেখলাম ঘরে আগুন, মন্দীরে হামলা, মাজার ভাঙ্গা, পিটিয়ে মানুষ মারার জঘণ্যতম ঘটনা।জাতি এদেরকে মেধাবী মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিক্ষাঙ্গনে অপ্রীতিকর ঘটনার মুল দায় কুৎসিত দলীয় লেজুরভিত্তিক রাজনীতির

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৫

সোস্যাল মিডিয়ার এই যুগে সবাই কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবি সাজতে চায়। কিন্ত কেউ কোন দ্বায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে রাজী নয়। ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটা মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে । এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোমলমতিদের নিয়ে আমি কি বলেছিলাম?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৫৪



আমি বলেছিলাম যে, এরা ভয়ংকর, এরা জাতিকে ধ্বংস করে দেবে।

ড: ইউনুসের সরকারকে, বিশেষ করে ড: ইউনুসকে এখন খুবই দরকার; উনাকে টিকিয়ে রাখতে হলে, কোমলমতিদের থামাতে হবে; কিভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পিটিয়ে মানুষ মারার জাস্টিফিকেশন!

লিখেছেন সন্ধ্যা প্রদীপ, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৩

এদেশে অনেক কিছুই সম্ভব।বর্তমান এলোমেলো সয়য়ে যা সম্ভব না বলে মনে করতাম তাও সম্ভব হতে দেখেছি।তবে মানুষকে কয়েক ঘন্টা ধরে পিটিয়ে মারাকে ইনিয়েবিনিয়ে জাস্টিফাই করা যায় এটা ভাবিনি।তাও মেরেছে কারা?
একদল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আহা তোফাজ্জল

লিখেছেন সামিয়া, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৪




মৃত্যু এখন এমনি সহজ
ভিডিও করতে করতে;
কথা বলতে বলতে
ভাত খেতে দিতে দিতে;
কনফিউজড করতে করতে
মেরে ফেলা যায়।

যার এই দুনিয়ায় কেউ অবশিষ্ট নাই
এমন একজনরে!
যে মানসিক ভারসাম্যহীন
এমন একজনরে!
যে ভবঘুরে দিক শূণ্য
এমন একজনরে!
যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×