somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোদ্দুর (গল্প)

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাথাটা দপ দপ করছে সাদিকের। কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে তার মাথায় অবিরত বাড়ি মেরে যাচ্ছে। সে বারবার একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি মনে করার চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। আর সেই সাথে মাথার যন্ত্রণাটা বাড়ছে তো বাড়ছেই। ইদানিং এই যন্ত্রণাটা মাঝে মাঝেই হয়। তবে ঠিক কবে শুরু হয়েছিল, সাদিক মনে করতে পারছেনা। ঘুরন্ত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে সে ভাবতে চেষ্টা করে। নাহ্ ভাবতে গেলেই ব্যাথাটা আরও বেড়ে যাচ্ছে। ফ্যানটা ভনভন করে ঘুরছে। একটা একঘেঁয়ে বাজে ঘ্যানর ঘ্যানর শব্দে মাথাটা আরও ভোঁ ভোঁ করছে।

একটা ঘুমের ঔষধ খেলে হয়তো ভালো লাগবে। বিছানা থেকে উঠে টেবিলের ড্রয়ারে খুঁজল। পেলো না। সব শেষ হয়ে গেছে। কদিন আগে তিনটি রিলাক্সিন ট্যাবলেট কিনে এনেছিলো। শেষ হয়ে গেছে। বুক শেল্ফ থেকে একটা এডভেঞ্চার বই নিলো ‘লাইফ অফ পি’ ইয়ান মারশেলের লেখা। ইদানিং বেশ চলছে বইটা। বেশ কিছুদিন আগে কিনেছে কিন্তু সময়ের অভাবে পড়া হয়নি। এডভেঞ্চার তার সবথেকে প্রিয়। ছোটবেলায় আলেকজেন্ডার দুমস, মার্ক টোয়েন, রবার্ট লুইস স্টিভেন্সন এঁদের কালজয়ী নভেল গুলো পড়ে, সে একদম ফিদা হয়ে গিয়েছিলো। এখনো সে মাঝে মাঝে সেগুলো পড়ে। ওঁদের সবগুলো নভেল তার সংগ্রহে আছে। ওর লাইব্রেরিটাও একদম ছোট নয়। বিশাল তার সংগ্রহ। প্রায় সারে পাঁচ হাজার বই তো হবেই। ইদানিংকালের এডভেঞ্চার লেখক স্টুয়ার্ট উডস, টম ক্লান্সি, এন্ড্রু পিটারসন তো আছেই। তাছাড়া সত্যজিৎ, হুমাইয়ূন আহমেদ, সুনীল এঁদের সবগুলো বই তার সংগ্রহে রয়েছে। তাকে একপ্রকার বইয়ের পোকা বলা যায়। ব্যাথাটা আরও বাড়ছে। মাথায় পানি দেবে কিনা ভাবছে। ভাবতে ভাবতেই বাথরুমে চলে এলো। বেসিনের আয়নার দিকে তাকিয়ে সে আঁতকে উঠলো। আয়নায় কি এটা তার প্রতিবিম্ব! গাল দুটো কুঁচকে গেছে। চুল গুলো ছাই বর্ণ হয়ে গেছে। তার বমি বমি লাগছে। পেটের ভেতরটা ভীষণভাবে মোচড় দিয়ে উঠলো। অনেক চেষ্টা করেও বমি হলো না। চোখে মুখে পানি দিয়ে সে দ্রুত বের হয়ে আসলো। বিছানায় ধপাস করে তার শরীরটা ছেড়ে দিল। নরম বিছানায় শরীরের বেশ খানিকটা ডুবে গেলো। সে কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কি তা বুঝতে পারছে না। ভাবতে ভাবতে দৃষ্টি ঘোলা হয়ে আসছে। হঠাৎ বিকট শব্দে মোবাইলটা বেজে উঠলো। ওর মেজাজটা আরও খারাপ হয়ে গেলো। মোবাইলটা ছুড়ে ফেলতে গিয়েও, সে থমকে গেলো। রিসিভ করলো। মিষ্টি কণ্ঠে কেউ একজন ‘হ্যালো’ বলল। মানুষের কণ্ঠ যে এত মধুর হতে পারে, সেটা তার আগে জানা ছিলো না। সাদিক চুপ করে আছে।

ওদিক থেকে আবার হ্যালো, সাদিক তুমি শুনতে পারছ? তুমি এখন কেমন বোধ করছ?

আশ্চর্য! সাদিক অবাক, এই মেয়ে কিভাবে জানলো সে অসুস্থ বোধ করছে? সে তো এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলেনি! আর নম্বরটাও তো অপরিচিত। মাথার ভেতর চিন্তার ঝড় বয়ে গেলো, কিন্তু কোন উত্তর মিলল না। তার ঠোঁট শুকিয়ে খরখর করছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। অনেক কষ্টে সে জিজ্ঞেস করলো,

আপনি কে বলছেন?
ওমা, আমাকে আপনি বলছো কেনো? আচ্ছা, আগে বল তোমার মাথা ব্যাথা থেমেছে?
সে আরও অবাক, আমার মাথা ব্যাথা, আপনি জানলেন কিভাবে?
তুমিই তো একটু আগে আমাকে ফেসবুক চ্যাটিং এর সময় বললে, তোমার মাথা ধরেছে। শোনো সাদিক, তুমি বিশ্রাম নাও। আমার কথা শোনো, ইউ নিড এ ব্রেক। তুমি সাইক্রিয়ারটিস্ট এর পরামর্শ নাও। তোমার কিছুই মনে থাকছে না। তুমি কি আমার নম্বরটা সেভ করেছিলে?
নাহ্, আমি তোমাকে মনে করতে পারছিনা। বলেই লাইনটা কেটে দিয়ে, মোবাইলটা অফ করে রাখলো। ওর মাথার ব্যাথাটা আবার শুরু হয়ে গেলো। সে মনে করতে লাগলো, তার নাম সাদিক, সে একজন সিস্টেম এনালিস্ট। সে একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে দশ বছর ধরে চাকরি করছে। সবই তো ঠিক আছে, নিজেই নিজেকে বললো। আরেকটু দেখি, আজ কি কি করেছি? দুপুরে মিলার সাথে লাঞ্চ করেছি। বিকেল পাঁচটায় অফিস থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা ...।
আর মনে করতে পারছেনা। সে কি আজ বারে গিয়েছিলো? না, আজ সোমবার, প্রশ্নই আসে না বারে যাবার। তাহলে? রমার বাড়িতেও যাইনি। কারন ও তো সিলেটে গেছে। সে আর চিন্তা করতে পারছে না। ‘রোদ্দুর’ একটা ছোট্ট কোমল মুখ তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। অজান্তে দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে। নিজের ওপর থেকে সব নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে। মাথার যন্ত্রণাটা আর নেই। মাথা ফাকা হয়ে গেছে। দুপ করে সব অন্ধকার। নিঃশব্দ।

ব্রিজের ওপর অনেক মানুষের ভীর। সবাই নিচের দিকে তাকিয়ে আছে? নিচে একটা লাল রঙের গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গেছে। কয়েকজন লোক গাড়ি থেকে, গাড়ির চালককে বের করার চেষ্টা করছে। পুলিশ ও এ্যাম্বুলেন্স এসে পৌছালো। পুলিশের গাড়ি থেকে বেশ মোটাসোটা একজন পুলিশের কর্মকর্তা নামলেন। নেমপ্লেটে তার নাম লেখা ‘আব্দুল সোবহান’।
এক্সিডেন্ট করা গাড়ির চালককে ততক্ষণে উপড়ে তুলে আনা হয়েছে। এ্যাম্বুলেন্সে তোলার পূর্বে একজন পুলিশ চালকের পকেট হাতড়ে, তার পরিচয় পত্র ও একটা কাগজ পেলো। জানা গেল চালকের নাম সাদিক এবং সে লিমকো নামের মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে সিস্টেম এনালিস্ট হিসেবে কর্তব্যরত। ভাঁজ করা কাগজটি খুলে তিনি পড়তে শুরু করলেন।

সাদিক,

আমি রোদ্দুরকে নিয়ে তোমার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। এবার আর ফিরবার জন্য নয়। তোমার মিথ্যাচার আমার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের খোঁজার চেষ্টা করোনা। তোমার শেষ সুযোগটাও তুমি নষ্ট করেছো।
আজ রোদ্দুর চার বছরে পা দিয়েছে। তাও কি ভুলে গেছো?

রানু

চিঠিটা পড়া শেষ হতেই একজন ছুটে এসে একটা র‌্যাপিং করা প্যাকেট পুলিশ কর্মকর্তার হাতে দিলেন। উপড়ে লেখা ‘রোদ্দুর সোনা’।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৩০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×