somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটুখানি মজা, একটুখানি স্মৃতি

১৬ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইউনিভার্সিটি জীবনের তিন বছর শেষ করে চার বছরে পা দিলাম, কিন্তু আজকের আগে কখনো 'ডি ইউ' বিখ্যাত লাল বাসগুলোতে চরা হয়নি। আজকে আমার ভাইয়ের বদৌলতে এই অভিজ্ঞতাটা হল, আর বুঝলাম, জীবনের এক বিশাল মজা থেকে এতদিন নিজেকে বঞ্চিত করেছিলাম। এই অসাধারণ অভিজ্ঞতাটা ছাড়াই যদি আমার ভার্সিটি জীবনটা শেষ হয়ে যেত, তাহলে এই আফসোস করার মত সুযোগও মনে হয় পেতাম না।

আমার গন্তব্য ছিল ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট । মিরপুর হয়ে আসতে হবে এখানে, সময়টা একটু বেশি লেগে গেছে ঠিক, কিন্তু ভীষণ মজায় মুহূর্তগুলো কেটে গেছে, বুঝতেই পারিনি। বিশাল রাস্তা আর ঢাকার ট্রেডমার্ক জ্যাম পার হয়ে যখন বাসার কাছে এসে পৌঁছুলাম, ততক্ষণে দেড়ঘণ্টার মত সময় চলে গিয়েছে। আশ্চর্য, টেরই পাইনি একদম।

কার্জন হলের সামনে থেকেই তো প্রতিদিন এই টকটকে লাল রঙের বাসগুলো ছাড়ে। তাই জায়গা পেতে হলেও ওখান থেকেই বাস ধরতে হবে। কিন্তু আমরা বাসে উঠলাম টিএসসি এর সামনে থেকে, তাই যা হওয়ার তাই হল, "no seat vacant."যাই হোক, মিথ্যা বলবনা, প্রথমে খুব হতাশ হয়েছিলাম, এত বিশাল রাস্তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হবে চিন্তা করে। পরিচিত দুই একজনের সাথে দেখাও হয়ে গেল, যাদের সাথে শুধু হয়তোবা ফেসবুকেই কথা হয়, এছাড়া দিনের পর দিন দেখা কথা কিচ্ছু হয়না। অথচ একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, প্রায় একিসাথেই যাতায়াত, অথচ কখনো দেখা হয়নি এর আগে। ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত লাগল নিজের কাছে।

যা হওয়ার তাই। জায়গা পেলামনা, আমার ভাইটাও না। তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই রওনা দেয়া। বাসটা দ্বিতল, জায়গাও প্রচুর, কিন্তু বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিস্ফোরণকে সমর্থন করে এত বড় বাসটাতে তিল ধারণের জায়গা নেই। পড়ার বইতে পড়েছি, ছোট্ট একটু জায়গায় অনেকগুলো মানুষ থাকলে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটা হয়, তা অক্সিজেনের অভাব বা অন্য কোন কারণে হয়না, হয় তাপমাত্রা আর আর্দ্রতার জন্য। আজকে তা ব্যবহারিকভাবে আবিষ্কার করলাম। আবহাওয়াটা তেমন গুমোট ছিলনা, তবু মনে হচ্ছিল আর্দ্রতার জন্যই দম বন্ধ হয়ে মারা যাব।

ঝুলতে ঝুলতে রওনা দিয়েছি, দোতলায় উঠে যাওয়ার সিঁড়িটাতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। আমার ভাইটা একদম দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে , ওর সাথে কথা বলার কোন সুযোগ হচ্ছেনা। আমি আর আরেকটা মেয়ে পাশাপাশি দাঁড়ানো, অনেকটা চিরে চ্যাপ্টা অবস্থা, বাস ব্রেক করলেই একজন আরেকজনের গায়ের উপর পড়ে যাচ্ছি। তবে এই পাশাপাশি দাঁড়ানোটাই আমাদের ঠিক মত দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করছে। সিঁড়ির একেবারে কাছে দাঁড়ানোতে কোন স্টপেজ আসলেই সবচেয়ে বেশি ভুগছি আমি, বারবার একবার এইপাশে, আরেকবার ওইপাশে করে জায়গা করে দিচ্ছি বের হওয়ার জন্য।

তবে এটাও ঠিক কিছুক্ষণের মধ্যেই এই খারাপ লাগা ব্যাপারটা চলে গেল, আর এজন্য ধন্যবাদ দেব বাসে ওঠা কতগুলো অপরিচিত মুখকে, পুরা সময়টা যারা নিজেদের কথাবার্তায় আমাকে নির্মল আনন্দ দিয়ে গেছে , তারা নিজেরাও সেটা জানেনা। আর বুঝতে পারলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আসলে কতটা মহা ট্যালেন্টেড। কত রকম কথাবার্তা যে কানে আসল, হেন কোন বিষয় নেই যেটা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া হয়নি। কখনো কমিউনিজম, কখনো ডান বাম রাজনীতি, আবার হঠাৎ করে আলোচনা ঘুরে যায় ৭১ এর দিকে।বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বোকামি, বার্সেলোনার খেলা পর্যালোচনা,ক্ষণে ক্ষণে বিষয় বদলাতে থাকে। নানা মুনির নানা মত, আলোচনা চলতেই থাকে। সত্য হোক আর মিথ্যা হোক, ওদের কথাবার্তার গভীরতা দেখে মাঝে মাঝে হাসি পাচ্ছিল, আবার মাঝে মাঝে অবাক লাগছিল। এই অদ্ভুত আলোচনার নীরব দর্শক হয়ে ছিলাম আমি আর আরেকটি মেয়ে ,যে নিজেও কিনা আমার মত ঝুলতে ঝুলতে পুরো রাস্তাটা আসল।

একসময় পথ ফুরিয়ে আসে, একে একে কানায় কানায় ভরা বাসটার মানুষগুলো নিজের নিজের গন্তব্যে পৌঁছে যেতে থাকে। একটা ব্যাপার যেটা না বললেই নয়, আমার খুব ভাল লেগেছে। দেখলাম, পরিচিত হোক অপরিচিত হোক একজন আরেকজনকে নিশ্চিন্ত মনে নিজের পোটলা খানা ধরিয়ে দিচ্ছে, নামার সময় শুধু একটা আওয়াজ দিয়ে নিয়ে নেমে যাওয়া। পাবলিক বাসগুলোতে চরতে চরতে এমনটা চিন্তাই করতে পারিনা। এই নির্ভরতা ভাল লাগল খুব।

সবচেয়ে শেষের গন্তব্যতা ছিল আমার। ততক্ষণে পুরো বাসটা ফাঁকা হয়ে গেছে। ভাইটার সাথে গল্প করতে করতে বাকি রাস্তাটুকুও পার হয়ে আসলাম। এই দাঁড়িয়ে নিয়ে আসা, অসুবিধায় ফেলে দেয়া এসবের জন্য আমার কাছে দুঃখিত বলল অনেকবার করে। কিন্তু আসল কথাটা হল, আমি আসলে এই "জার্নি বাই বাস" উপভোগ করেছি। ভীষণ।

তাই ধন্যবাদ জানাব আমার কাজিন ভাইটাকে, আমাকে ধরে বাসে উঠানোর জন্য। নাহয় এমন মজার আর অদ্ভুত অনুভূতি আমার কখনই পাওয়া হতোনা।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×