ছোট্ট সেজুতি এখন ও জানে না ও কতটা সুখি! কতটা ভালবাসার মধ্যে বড় হচ্ছে মেয়েটা। বাবা-মা, দিদা- দিদির পরম স্নেহে বেড়ে ওঠা এই মেয়েটাই হয়তো একদিন জীবনের চরম দৌটানার মুখোমুখি হবে। আতৎকে ওঠে মিসেস গুপ্তা, কেন এমনটা ভাবছে সে? এমন তো না ও হতে পারে, হয়তো এই মেয়ে-ই হবে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ। কখনো কোন অশুভ স্পর্শ করবেনা ওকে। তাই যেন হয়। কোন দিন যেন কোন দুঃখ স্পর্শ না করতে পারে তার পরীর মত মেয়ে টাকে। বেঁচে থাকতে কখনো যেন মেয়েকে চরম কষ্টে আছে এমন দেথতে না হয় তাকে। এমন ভাবতে ভাবতে কখন যেন চোখে পানি চলে এলো।
আসলে নিজের গোপন কষ্টোর কারণেই এমনটা ভাবা। গোপন কষ্ট? হ্যাঁ তাইতো। অন্যের কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে বরাবর-ই নারাজ গুপ্তা। বন্ধু, আত্মীয় কাউকেই কখনো কষ্টোর ভাগিদার করেনি, কেন জানি মন সায় দেয় না, থাকনা নিজের মধ্যে, একান্ত ঘোপনে। এখন পর্যন্ত সেভাবেই আছে, কিন্তু মাঝে মাঝে খুব বলতে ইচ্ছে করে। মনকে উড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে পাখির মত।
কখনো কখনো মনে হয় কাছের মানুষ গুলো কাছে থেকেও নেই। আট বছরের সংসার তাপষ এর সাথে। কিন্তু ও ই বা কতটুকু ভিতরে প্রবেশ করতে পেরেছে গুপ্তার মনে। না তেমন টা পারেনি। বিয়ের পর প্রথম প্রথম হয়তো একটু গভীর সম্পর্ক ছিল দু-জনের মধ্যে, কিন্তু ফাগুন হাওয়া কতদিন-ই বা মনকে আন্দোলিত করে। একসময় তাপষও কেমন যেন উদাস; আর গুপ্তার যে সভাব আগ বাড়িয়ে কোন দিন কি সে গেছে কারও কাছে। সব সময় মনে হয়েছে পাছে ওই মানুষটা ওর প্রতি বিরক্ত হয়। সেই সকালে বের হয় তাপষ তার পর রাত করে বাড়ি ফেরা, সংসারের দু- চারটা কথা এই তো প্রতিদিন, চলছে এ ভাবেই। তাপষের হয়তো কিছু মেয়ে বন্ধু ও আছে। বুকের ভেতর এ নিয়ে ঝড় বইতো এক সময়, এথন তাও হয়না। থাকনা যা খুশি করুক না । দুটি মনই যখন এক না তখন শুধু শুধু কেন বেধে রাখা। হয়তো একদিন তাপষ ছেড়ে গুপ্তাকে, কিন্তু এই যে ফুটফুটে মেয়েটা ও যেন কোন দিন ছেড়ে না যায় মাকে। এই শুধু চাওয়া।
এই ছোট মেয়েটা একমাত্র গুপ্তাকে বোঝে। সবাই যখন গুপ্তার হাশিখুশি আচরনের প্রশংসা করে। তখন হুট করেই মেয়েটা মায়ের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় মা তোমার কি হয়েছে? তোমার মন খাবাপ? চমকে ওঠে গুপ্তা, এখাবেই কি ইশ্বর কাউকে সহায় করে পাঠায় পৃথিবীতে। ও কিভাবে বোঝে মায়ের কষ্ট। কখনোতো মেয়ের সামনে মন খারাপ করে থাকে না। তার পরও ললিতা বোঝে। বোঝে মায়ের নিসঙ্গতার কথা।