somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাকির আবু জাফরের বাংলাদেশ

১১ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আফসার নিজাম


ক.
বাংলা সহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদের উত্তরাধীকার আমরা বহন করি। এই পদগুলো বাংলা সাহিত্যের ক্রম বিকাশকে সমৃদ্ধ করে উন্নত সাহিত্য রচনার পথকে অগ্রসর করে দেয়। অগ্রসরমান লেখাগুলো আমাদের পরিণত বয়সে সমৃদ্ধ করলেও আমাদের বেড় উঠার স্মৃতিগুরো শিশু-কিশোর সাহিত্য চর্চা। কারণ প্রথম পাঠ থেকেই শিশু-কিশোর সাহিত্য আমাদের মননকে সজাগ করে তোলে। করে তোলে দেশ-প্রেমিক ও স্বাজাত্ববোধে সমৃদ্ধ। আর পরিচয় করিয়ে দেয়Ñ যে দেশে বেড়ে ওঠি তার আকাশ-বাতাস, নদ-নদী, পাখ-পাখালী, বান-বাদার, পাহাড়-প্রকৃতি, মা-বাবা, আÍিয়-স্বজন, শত্র“-মিত্র, উৎসব-আয়োজন।

খ.
বেশ ক’বছর আগে এক আড্ডায় কবি আবদুল হাই শিকদার পল্লী কবি জসীম উদদীনের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘সন্ত্রাসী বুশ যদি গোটা বাংলাদেশকে হিরুসিমা ও নাগাসিকার মতো পরমানুবিক বোমা মেরে ধ্বংস করে দেয়, আর এই ধ্বংসস্তুপের মধ্যে যদি জসীম উদদীনের নকশী কাঁথার মাঠ ও সোজন বাধিয়ার ঘাট টিকে যায়। তা হলে পুরো বাংলাদেশকে ঠিক আগের মতোই নতুন করে তৈরি করা যাবে।’ সত্যিই চমৎকার উদাহরণ দিয়েছেন কবি হাই শিকদার। জসীম উদদীন সমৃদ্ধ বাংলাদেশের ছবি আঁকার পরেও জীবনানন্দ দাস এলেন আর এক বাংলাদেশ নিয়ে। এই বাংলাদেশ জসীম উদদীনের বাংলাদেশ নয়। কিন্তু বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশের পর আর কি থাকতে পারে ছোট্ট দেশটির রূপ বর্ণনা করার। কিন্তু তারপরেও সেই সিলসিলায় কবি আল মাহমুদ এলেন গ্রাম বাংলার শব্দভাণ্ডার নিয়ে। তিনি তার শব্দবীজ রোপন করার সময় বরাবরই সজাগ ছিলেন যেন কেউ তাকে জসীম উদদীন বলতে না পরে। বাংলাদেশের রূপ-বৈচিত্র, জীবন-জটিলতা, কাম-ক্রধ, ধ্বংস-নির্মাণে আল মাহমুদের জসীম উদদীনের ভীতি থাকলেও কবি জাকির আবু জাফরের সেই ভীতি একেবারেই আক্রান্ত করতে পরেনি। তিনি সাহস প্রদর্শন করলেন আর জসীম উদদীন, জীবনানন্দ, আল মাহমুদকে আÍস্থ করে ঠিক অন্যপাশ থেকে আলো ফেললেন চৌষট্টি হাজার বর্গমাইলে বাংলাদেশর ওপর।

গ.
হৃদয়ের শিকড় কতটা প্রথিত হলে অন্য হৃদয়ের প্রবেশ করা যায়। প্রবেশ করা যায় হৃদয়ের পলি, দোঁয়াশ ও এটেল জমির ভেতর। এবং একটা দেশকে কতটা ভালোবাসলে দেশের প্রতিটি অনু-পরমানু আপন মনে হয়। আপন মনে হয় একটি ক্ষুদ্র কীট-পতঙ্গও। এরকম হাজার অনুসঙ্গের ভালোবাসা ধারণ করে আছে কবি জাকির আবু জাফরের জোনাকি আগুন গ্রন্থের ছড়া কবিতায়। এই গ্রন্থটি যেনো গোটা বাংলাদেশের তৈলচিত্র।

কবি জাকির আবু জাফরের বাংলাদেশ চিত্র শুধু এই ছড়া কবিতায় নয়, তাঁর সৃষ্ট গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস এবং সাহিত্য বিষয়ক গদ্যসমূহে। এই যে গোটা বাংলাদেশ জাকির আবু জাফরের হৃদয়ে ধারণ করে আছে তা কখন কিভাবে তাঁর হৃদয়ে প্রবেশ করেছে তার উত্তর কবি নিজেই দিতে পারেননি।

দেশের জন্য ভালোবাসা ঘোর
কেমন করে বাঁধলো বাসা
জানি না উত্তর

সত্যি যে শিশুকালে একটি ভালোলাগা, ভালোবাসা আমাদের ভেতর জমা হয়, তার সন-তারিখ মনে করা যায় না। মুছে যায় সঠিক সময়ের স্মৃতিটুকু। কিন্তু সে যে ভালোলাগা ভালোবাসা তার রেশগুলো আমরা হৃদয়ে গভীর যতেœ লালন করি আমৃত্যু। কবি জাকির আবু জাফরও তেমনি হৃদয়ের ভেতর লালন করেছেন বাংলাদেশ। নিজের হৃদয়ের ভেতর যখন একটা বাংলাদেশ দেখেন তখন তাঁর কল্পনাশক্তি সবার হৃদয়ে আর একটা বাংলাদেশ খোঁজার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তখন তার হৃদয়ের কল্পনা পৃথিবীর সব মানুষের হৃদয়ে যেনো একটি করে বাংলাদেশ আঁকা থাকে। আর যখন মানুষের হৃদয় ছেনে সে বাংলাদেশের ছবি খুঁজে পায় না তখন তার মন মেঘলা আকাশ হয়ে হয়ে যায়। আর তখনি কবি প্রশ্ন করে

রবীন্দ্রনাথ আপনি তো এই বাংলাদেশের ছেলে
কোন খেয়ালে উড়াল দিলেন সবুজ ছায়া ফেলে
বা
দেশের জন্য ভালোবাসা একটুও নেই
তারাও এখন দেশ দরদী বিরাট নেতা

তিনি বরীন্দ্রনাথ বা নেতাদের প্রশ্ন করেও থেমে থাকেননি। তিনি অনুভব করেছেনÑ দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া, দেশ সেবার নামে নিজের সেবা করা মানুষ যেমন দেশপ্রেমিক নয়, তেমনি বাংলাদেশের উৎসব, খেলা-ধুলার সাথেও যারা সম্পৃক্ত নয় তারা দেশপ্রেমিক নয়। তাই তিনি আবারও প্রশ্ন করেনÑ

তুমি কি না করছো দাবি
বাংলাদেশের ছেলে
দিন কাটে না ডাঙগুলি আর
কানামাছি খেলে

আর যারা পর্যটক হয়ে বাংলাদেশের রূপ-বৈচিত্র অবলোকন করলো না, দেখলো না চেয়ে মুগ্ধ নয়নে ভোরের বাংলাদেশ তাদের প্রতিও প্রশ্ন করেন কবি

কাঁঠাল পাতায় হয়নি দেখা
প্রভাত আলোর চিক
বলো তুমি বাংলাদেশের
কেমন নাগরিক

এসব প্রশ্ন করে কবি কিন্তু থেমে থাকেননি। আবার এইসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজতে গিয়ে না পেয়ে হতাশায় আক্রান্ত হতে দেখি না। সে ভোরের আড়মোড়া ভেঙ্গে আকাশের মতো বিশাল আশা নিয়ে জেগে ওঠে আর বলে উঠেন।

শুনুন শুনুন রবীন্দ্রনাথ আপনি এসে দেখুন
বাংলাদেশের হৃদয় নিয়ে নতুন করে লেখুন।

ঘ.
জাকির আবু জাফরের এই চমৎকার ছড়া-কবিতার গ্রন্থটি প্রচ্ছদ করেছেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মুবাশ্বির মজুমদার এবং ছড়ার সাথে দেখার সংযোগ ঘটিয়েছে তরুণ চিত্রশিল্পী খলিল রহমান। বইটি প্রকাশ করে পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিমিটেড। যার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র সত্তর টাকা। বইটি পাঠ করে আশা করি পাঠকের পাঠতৃষ্ণা নিবারণ হবে।

১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×