#অন্যদিন
( কিছুদিন আগের এই লেখাটা সামান্য একটু এডিট করলাম ।ক্লোজ আপ কাছে আসার গল্প-২ তে পাঠাই দিবো কিনা চিন্তা করতেসি ) :p
মোবাইলে মনে হয় ভাইব্রেশন হচ্ছে ... দেখি তো! ... নাহ কিছুই তো না । ইদানীং আর আগের মতো মোবাইল বাজে না তবুও মনে হয় এই বুঝি কোন ফোন এলো!
যাই হোক আবার হাঁটা শুরু করলাম মনে মনে ভাবছি হয়তো এবার ফোন আসবেই কিংবা ছোট কোন মায়া ভরা মেসেজ। আরে! হ্যা এবার সত্যি ভাইব্রেশন হচ্ছে ! দেখি তো! "প্রিয় গ্রাহ্ক আপনি দশ টাকার কথা বললে ২০ টাকা..." নাহ কাস্টমার কেয়ার এর যন্ত্রনা আর সহ্য করা যায় না!
অন্যদিন এই সময় ঘুমিয়ে থাকি আমি , বেলা বারোটার দিকে ঘুম থেকে উঠে দেখি অনেকেই আমার ফোনে ট্রাই করে পায় নি আমাকে , কাউকেই কল বেক করা হয় না। এক সপ্তাহ হয়ে গেছে রিচার্য করিনি ।
কিন্তু আজকের দিন টা ভিন্ন । প্রতিটি শীতের সকালের মত আমি কম্বল গায়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নে পার করতে পারবো না আজকের এই দিন।তাই সকাল সকাল বেরিয়ে পরলাম । উফ কুয়াশায় কিছু দেখছিনা , কান টাও বন্ধ হয়ে আসছে ! শিট! মাফলার টা আনা উচিত ছিল! চার পাশে অনেকেই বের হয়েছে দেখি ! কেউই আমার দিকে তাকাচ্ছে না কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে সবাই আমাকেই দেখছে ! আমার জ্যাকেট টা নতুন নিয়েছি! রঙ টা কি বেশি কটকটে হয়ে গেল ? ওরা কি ওটা দেখেই হাসছে ? ধুর আমার কি! কুয়াশার ধোয়া মুখ থেকে বের করে আবার হাটা শুরু করলাম এবার গতি সামান্য বাড়িয়ে ! এই যা! ঐ আন্টি টা মনে হয় ভেবেছে আমি সিগেরেট খাচ্ছি! সিগেরেটের গন্ধ আমার একদম ভাল্লাগেনা । কেন যে কিছু মানুষ এটাকে স্মার্টনেস ভাবে কে জানে!
যাক শেষ পর্যন্ত আমি এসে গেছি! একটু পরেই ঘুম থেকে উঠে হয়তো বারান্দায় আসবে প্রিয়তী ।ও আমার সাথে কথা বলেনা ।আসলে কারো সাথেই বলেনা ।কারো কথাও শুনেনা ।জ্বি সবাই বলে ও বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী ।
কিন্তু আমি তা বলি না। আমার মতে এটা তার গুন । নোংরা কিছু তাকে শুনতে হয় না কঠিন কিছু বলতেও হয় না
আজ তার জন্মদিন । আমার মনে পরে সেই প্রথম ৫ বছর আগে এই দিনেই আমি তাকে এই সময় বারান্দায় প্রথম দেখেছিলাম । আমি সাইকেল নিয়ে ঘুড়ছিলাম সে আমায় দেখে হাসছিল ।
ভালবাসা কি জিনিশ আমি জানি না। প্রথম দেখায় ভালবাসা তৃতীয় দেখায় ভালবাসা এসব ডেফিনেশন ও আমার ভাল্লাগে না ।কিন্তু কেন জানি ঐ দিনের পর থেকে প্রতিটা মুহূর্ত যেন আমি তার নামে লিখে দিয়েছি ।তার গুনের কথা জানার পরেও একটু খানি কমেনি সময়ের দলিল থেকে তার সম্পত্তি।ধীরে ধীরে অনেকেই দূরে সরে গেছে আমার কাছ থেকে কারন সারাদিন প্রিয়তীকে ভেবেই আমার সময় কাটতো কিন্তু একটুও বিব্রত আমি হইনি । যারা যাওয়ার তারা যাবেই ।কিন্তু প্রিয়তীকে আমি যেতে দেই নি । আমার সারাটা সময় আমি তাকে মুগ্ধ করার জন্য ব্যয় করতাম ।সে তো শুনতে পারতো না । কিন্তু কেন জানি আমি সাইকেল টা নিয়ে ওদের উঠনে ঢুকলেই , মাঝে মাঝে পরে যাওয়ার ভঙ্গি করলেই সে খিলখিল করে হাসতো । আমি বুঝাতে পারবো না সেই দিনের অনুভুতি গুলোর কথা ।
স্বর্গীয় অনূভুতি কেমন তা আমি জানিনা তাই তুলনা করছি না। বোবা বধির ঐ মেয়েটাকে আমার গান শুনাতে হতো না ।গিটার কিংবা কবিতা আবৃত্তি ও না শুধু পাশে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতাম । কি যে আনন্দ হতো আমার ! ক্লাশে যেতেও ইচ্ছে করতো না । তারপর কি জানি বোবা মেয়েটার হাসিও একদিন বন্ধ হয়ে গেল কি জানি অনেক যন্ত্রনা হচ্ছিলো নাকি তার । বলতেও পাচ্ছিলো না কিছু । অনেক বড় কোন অসুখ কি হয়েছিল ? কি জানি!
তবে একদিন হঠাৎ করেই ঐ বাসায় গিয়ে দেখি ওরা নেই ।বিদেশে কোথায় যেন চলে গেছে কি জানি ! আমাকে কিছুই তো বলেনি! কেমনে বলবে ? ও তো কারো সাথেই কথা বলে না , কারো কথাও শুনে না । আমার অন্তরের চিৎকার কি শুনতে পারতো ও ? ও কি বেঁচে আছে এখন ? কি জানি কিচ্ছু জানি না। তবে ওকে আমি যেতে দেই নি ও আমার সাথেই আছে । চোখ বন্ধ করলেই আমি হাসি মুখ টা দেখি এখনও যদিও কিছুটা ঝাপসা হচ্ছে মুখ টা । তাই তো জন্মদিনে চলে আসলাম , হয়তো বারান্দায় সে আসবে আবারো হাসবে। দেখিই না। আমার হাতের ফুল গুলো দিবো তাকেই । মেয়েরা নাকি ফুল অনেক পছন্দ করে ! আমার ভাল্লাগে না একদম।
ওমা বারান্দায় ওটা কে ?? ফোনে কথা বলছে কে জানি হেসে হেসে ! প্রিয়তী ? নাহ হয়তো ওখানে এখন অন্য কেউ থাকে। আমার প্রিয়তী আমার সাথে কথা বলে না । কারো সাথেই না । এটা তার গুন তবুও আমার মন এতো খারাপ হচ্ছে কেন ? কিসের শুন্যতা অনুভব করছি ?
এসব ভাবছিলাম আর ঠিক তখনই কে যেন আমার পিঠ স্পর্শ করলো ... আমার মনে হলো যেন শীতের কুয়াশা ভেদ করে এক টুকরো রৌদ আমাকে ছুয়ে গেল ।পিছে তাকালাম , সত্যি প্রিয়তী!! সেই উজ্জ্বল হাসি মুখ! পাশে তার বাবা । তার থেকেই জানলাম সব ঘটনা । কোথা থেকে যেন খবর পেয়েছিলেন যে বিদেশের ডাক্তাররা নাকি প্রিয়তীকে সাধারন মানুষের মত কথা বলা ও শুণতে সক্ষম করতে পারবে । তাই তড়িঘড়ি করে তাদের চলে যাওয়া ।অনেক ডলার খরচ ঠিকই করেছিলেন কিন্তু কোন লাভই হলো না ।তিনি ঠিক করেছিলেন ওখানেই থাকবেন তারা কিন্তু প্রিয়তী কিছুতেই থাকতে চাচ্ছিলো না । খাওয়াদাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলো । তাই ফিরে আসতেই হলো তাদেরকে ।
আমি জানি না আনন্দ কাকে বলে ? সুখ কি ? ভালবাসা কি ? তবে এখন আমার যে অনুভূতি হচ্ছে তা সারাজীবন থাক আর কিচ্ছু চাই না আমি । কিচ্ছু চাই না ।
সন্ধ্যা ৬ টা
২৬ পৌষ , ১৪২০