somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদেশে যদি ভাঙ্গচুর না করে থাকতে পারি, তাহলে দেশে ভাঙ্গচুর কেন?

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ৭:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশের মানুষদের ভাঙ্গচুর করা একটা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। উনিশ থেকে বিশ হলেই, তার উত্তর আমরা দেই ভাঙ্গচুরের মাধ্যমে। হরতাল হলে ভাঙ্গচুর, জিনিসপত্রের দাম বাড়লে ভাঙ্গচুর, সরক দূর্ঘটনা হলে ভাঙ্গচুর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন বা অন্যান্য ফি বৃদ্ধি পেলে ভাঙ্গচুর, পরিক্ষা না পিছালে ভাঙ্গচুর, স্টক মারকেটের সূচক কমলে ভাঙ্গচুর, বেতন নিয়ে সন্তুষ্ট না হলে ভাঙ্গচুর। ভাঙ্গচুর না করতে পারলে আমরা যেন অসহায় হয়ে যাই।

দুঃখের বিষয় হল, শুধু যারা অশিক্ষিত কিংবা অর্ধশিক্ষিত তারাই নয়, বরং দেশে যারা আমরা সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত মনে করে থাকি সেই বুয়েট কিংবা অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাতর্থীদেরও বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশের প্রধান উপায় হল ভাঙ্গচুর। তাহলে এই শিক্ষা অর্জন করে কি লাভ হল তাদের? তাদের তো অন্তত উচিত ছিল এই ভাঙ্গচুরের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা এবং অন্যান্যদেরকে এটা থেকে বিরত রাখা।

আমাদের মধ্যে তো দেশ প্রেমের তেমন একটা অভাব নাই। সারা বছরই কোথাও না কোথাও দেশ নিয়ে আলোচনা সভা অথবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে। তাহলে দেশের জিনিস ভাঙ্গচুর কেন? একবারও কি আমরা ভেবে দেখি না, যে যেই জিনিসটা ভাঙ্গলাম, এটা তো আমারই দেশের সম্পত্তি অথবা আমারই কোন ভাইয়ের সম্পত্তি। নিজের দেশের জিনিস কিংবা ভাইয়ের জিনিস ভেঙ্গে আমরা কার ক্ষতি করছি আসলে? কখনও কি এটা ভেবে দেখার প্রয়োজন মনি করি না আমরা? আমরা তো নিজেদেরই ক্ষতি করছি। এই পৈশাচিক, ধ্বংসাত্মক এবং হিংসাপরায়ণ মনোভাব থেকে কি আমরা বেরিয়ে আসতে পারি না?

আমার তো মনে হয় আমরা এটা খুব ভালো ভাবেই পারি। আজ উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্যে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে অবস্থান করছে। অন্যান্য দেশের কথা যানি না তবে এইটুকু যানি আমেরিকায় প্রতি বছর ৭-১০% টিউশন ফি বৃদ্ধি পায়, এছারাও আমার ৭ বছরের আমেরিকার জীবনে আমি কখনও সেখানে পরিক্ষা পিছাতে দেখিনি। আমেরিকায় তো আমার মতো প্রচুর পরিমাণ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আছে। তাহলে প্রতি বছরের শেষে তারা কেন বেতন বৃদ্ধির জন্য ভাঙ্গচুর করছে না কিংবা বিশ্বকাপ থাকা সত্তেও পরিক্ষা না পিছানের কারণে ভাঙ্গচুর করছে না? ওখানে কিভাবে তারা এতো সুবোধ বালক ও বালিকার মতো থাকতে পারছে? দেশে থাকলে তো ঠিকি ভিসি অফিস ঘেরাও, ক্লাসরুম ভাঙ্গচুর শুরু হয়ে যেত।

অন্য মানুষের দেশে যদি এতো ভদ্র ভাবে থাকতে পারি তাহলে আমরা নিজের দেশেও এতো ভদ্র ভাবে থাকতে পারব। অন্যের দেশের প্রতি যদি আমরা এতো ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা দেখাতে পারি, তাহলে আমাদের উচিত হবে আমাদের নিজের বাংলা মায়ের প্রতিও সেই অনুরূপ শ্রদ্ধা প্রকাশ করা। শুধু দেশ নিয়ে গান গেলেই আর দেশ নিয়ে আলোচনা সভা করলেই দেশ প্রেম হয়ে যায় না। দেশ প্রেমের জন্য আমাদেরকে দেশ, দেশের সম্পত্তি এবং দেশের অন্যান্য মানুষের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে যেমনটা আমরা হই বিদেশে গেলে।

মনে রাখতে হবে ভাঙচুর তথা সংঘাত কখনও শান্তি নিয়ে আসে না। শুধু মানুষে মানুষে বিদ্বেষ সৃষ্টি করে, সমাজে আতংক সৃষ্টি করে, দেশের আইন শৃঙ্খলার অবনতি হয় এবং সবচেয়ে বড় কথা দেশের অপূরণিয় ক্ষতি হয়। তাই আসুন আমরা এই ধ্বংসাত্মক মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসি। কারণ আমরা ভাঙ্গচুরের মাধ্যমে শুধু এই গরিব দেশটার ক্ষতিই করে যাচ্ছি বার বার, কোন উপকার করছি না। আসুন আমরা ভাঙ্গচুর না করার প্রতিজ্ঞা করি এবং কাওকে করতে দেখলে তাকেও তা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×