যে কোন ব্যাবসার থেকে প্যাসেনজার প্লেনের ব্যাবসা করা অনেক কঠিন। এর প্রধান কারণ হলো এই ব্যাবসায় প্রচুর পরিমাণে মূলধনের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও এক সাথে অন্তত ৪-৫টা প্লেন না থাকলে এই ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পরে।
একটা এয়ারলাইনসকে যাত্রীদের মাঝে জনপ্রিয় করতে হলে কয়েকটা বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়গুলো হলঃ প্লেনের ভারা যাত্রীদের নাগালের মধ্যে রাখা, সিডিউল মেইনটেইন করা, যাত্রীসেবার মান উন্নয়ন করা (প্লেনের ভিতরে, এয়ারপোর্টে এবং এয়ারলাইনসের অফিসগুলোতে), একটি ইনফরমেটি ওয়েবসাইট তৈরি করা (ওয়েবসাইটে ফ্লাইট সিডিউল, ভারা, যোগাযোগের ঠিকানা, ফোন নাম্বার, ইমেল এড্রেস ইত্যাদির উল্লেখ থাকবে)।
এ পর্যন্ত বাংলাদেশে অনেক প্রাইভেট এয়ারলাইনস যাত্রা শুরু করলেও এখন আন্তর্জাতিক রূটে যাতায়াত করছে মাত্র দুটি (জিএমজি ও ইউনাইটেড) এবং অভ্যান্তরিন রূটে চলাচল করছে মাত্র তিনটি প্রাইভেট এয়ারলাইনস (জিএমজি, ইউনাইটেড ও রিজেন্ট)।
প্রায় ৬৫ লাখ বাংলাদেশী এই মুহূর্তে প্রবাশে অবস্থান করছেন, যার একটি বর অংশই অবস্থান করছে মধ্য প্রাচ্যে। অর্থাৎ অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশের প্রাইভেট এয়ারলাইনসদের বিদেশী যাত্রীদের উপর নির্ভর করতে হবে না। তারা শুধু মাত্র আমাদের দেশের প্যাসেনজারদের সার্ভিস দিয়েই লাভজনক হতে পারবে। বাংলাদেশে প্রাইভেট এয়ারলাইনসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৬ সালে। গত ১৪ বছরে ১০টিরো বেশী প্রাইভেট এয়ারলাইনস ব্যাবসা শুরু করলেও এখন টিকে আছে মাত্র তিনটি। এর কারণ কি?
এর প্রধান দুটি কারণ হচ্ছে সিডিউল মেইনটেইন না করতে পারা এবং নিম্নমানের সার্ভিস প্রদান। মানুষের জীবনে সময়ের দাম অনেক। যারা প্রবাসে বসবাস করে তারা অনেক কষ্টে ছুটি যোগার করে দেশে আসেন। ৭দিনের ছুটির যদি একটি দিন ফ্লাইট ডিলে হবার কারণে কাউকে এয়ারপোর্টে বসে নষ্ট করতে হয় তাহলে সেই মানুষটি আর কখনো ওই এয়ারলাইনসে চরবে না। ফ্লাইট ডিলে কোন কারণে হতেই পারে। কিন্তু এই বিষয়ে যদি এয়ারলাইনস যাত্রীকে আগে থেকে না জানায় বিশেষ করে যখন ফ্লাইট ৪ঘন্টারো বেশী ডিলে থাকার কথা কিংবা এয়ারপোর্টে গিয়েও যদি যাত্রীরা দেখেন যে ফ্লাইট ডিলে কিন্তু কাউন্টারে কেউ নাই এ সম্মন্ধে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার জন্যে তাহলে সেই মানুষটি সভাবতই ওই এয়ারলাইনসে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকবে।
একটা ছোট উদাহারণ দেই। ঢাকা – ব্যাংকক – ঢাকা থাই এয়ারওয়েজে গেলে ভাড়া পরে ৪৫ হাজার টাকা সেখানে একই রূটে জিএমজি এয়ারওয়েজে গেলে ভাড়া পরে মাত্র ২৫ হাজার টাকা। তারপরও দেখা যায় যেখানে থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইট ভর্তি থাকে সেখানে জিএমজির ফ্লাইটে মাত্র ১৫ জন যাত্রী থাকে। জিএমজির ভাড়া এত কম হওয়ার পরেও তাদের যাত্রী সংখ্যা এত কম হওয়ার প্রধান কারণ তাদের অকল্পনিয় ভাবে ফাইট ডিলে করা। প্রায়ই দেখা যায় তাদের ফ্লাইট ১২ ঘন্টা ডিলে। ব্যাংককে যারা বাংলাদেশ থেকে আসে তাদের একটা বড় অংশই আসে চিকিৎসার জন্যে। অর্থাৎ তাদের ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট থাকে। জিএমজিতে যদি তারা আসেন তাহলে এপয়েন্টমেন্টের আগে যে তারা ব্যাংককে পৌছঁতে পারবেন তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই তারা ভাড়া বেশী হলেও থাই এয়ারওয়েজে আসেন।
আশা করব বাংলাদেশের প্রাইভেট এয়ারলাইনসগুলো তাদের সিডিউল মেইনটেইন করার চেষ্টা করবে এবং যাত্রী সেবার মান উন্নয়ন করবে। কার না ভালো লাগে বিদেশের কোন এয়ারপোর্টে দেশের কোন প্লেনকে দেখতে? আমার তো গর্বে বুক ভরে যায় যখন বিদেশের কোন এয়ারপোর্টে বাংলাদেশের প্লেন দেখি বিশেষ করে যখন প্লেনের গায়ে ওই ছোট্ট লাল সবুজের পতাকাটা দেখি।
এছাড়াও যারা বাংলাদেশে প্রাইভেট এয়ারলাইনসের ব্যাবসা শুরু করতে চাচ্ছেন তাদের কাছে আমার আরো একটি আবেদন অন্তত ৪টি প্লেন (এর মধ্যে দুটি মিড রেঞ্জ – যেমন ৭৩৭-৮০০) কেনার সামর্থ্য না থাকলে এই ব্যাবসায় না আসাই উচিত কারণ অতিতের দিকে তাকালে বুঝতে পারবেন যে দুটি ড্যাশ৮ – ১০০ দিয়ে অভ্যান্তরিন রূটে বেশীদিন টিকা যায় না।
এয়ারলাইনস ব্যাবসায় সাফল্যা লাভ করতে হলে আরো একটা জিনিসের প্রয়োজন সেটা হল, নেট ওয়ার্ক বৃদ্ধি করা। এর সব চেয়ে সোজা উপায় হল অন্য কোন এয়ারলাইনসের সাথে মার্জ করা। এ কারণেই এতো বড় এয়ারলাইনস হওয়ার পরেও আমেরিকার ডেলটা ও নর্থওয়েস্ট এয়ারলাইনস মার্জ করল এবং কন্টিনেন্টাল ও ইউনাইটেড এয়ারলাইনস মার্জ করল। এ কারণে তারা এখন অনেক স্ট্যাবলও।
সবচেয়ে ভালো হত যদি জিএমজি, ইউনাইটেড এবং রিজেন্ট একসাথে মার্জ করতো। তাহলে এই মুহূর্তে তাদের ১টি এয়ারবাস এ৩১০, ১টি বোয়িং৭৬৭, ৫টি এমডি৮০, ১টি এটিআর৭২ এবং বেশ কয়েকটি ড্যাস ৮ থাকতো। সেক্ষেত্রে তারা অনেক স্ট্যাবল হতে পারতো এবং সর্বক্ষণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকতো না।
তবে তারা যদি মার্জ নাও করে, সাফল্য লাভ করতে হলে তাদেরকে যেটা করতে হবে সেটা হল একে অন্যের সাথে একই রূটে প্রতিযোগিতা না করে একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করা এবং একসাথে একটা কমন ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লায়ার প্রোগ্রাম গঠন করা।
প্রতি বছর বিদেশী এয়ারলাইনসগুলো আমাদের দেশ থেকে হাজার হাজার টাকার ব্যবসা করছে। আশা করব আমাদের প্রাইভেট এয়ারলাইনসগুলো ভবিষ্যতে বিদেশী এয়ারলাইনসদের এই একচেটিয়া ব্যাবসা রোধ করতে পারবে। এতে আমাদের দেশের সম্পদ দেশেই থাকবে এবং অর্থনীতিরো উন্নয়ন হবে। নিচে বাংলাদেশের প্রাইভেট এয়ারলাইনস তিনটির ওয়েব এড্রেসের লিংক দেওয়া হলঃ
জি এম জি এয়ারলাইনস
http://www.gmgairlines.com/site/index.php
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বাংলাদেশ
http://www.uabdl.com/
রিজেন্ট এয়ারওয়েজ
http://www.flyregent.com/UI/Home.aspx