ধর্ম নিয়ে অনেক পোস্ট দেখি, কখনো কখনো সেই সব পোস্টের উত্তর দিতে ইচ্ছে করে। কিন্ত আমি নিজেকে খুব নগন্য একজন মনে করি, ধর্মের মত একটা নাজুক অনুভূতি নিয়ে লিখতে আমার ভয় করে। তবুও আমি যেহেতু একজন মানুষ এবং মানুষ হিসেবে আমার একটা দায়িত্তবোধ আছে। তাই আমি এই লিখাটি লিখলাম।
তার আগে একটা কথা বলে নেওয়া দরকার, আমি আপনাদের মত আসাধারন মানুষ নই। আমি একজন সাধারণ মানুষ, আমি ধার্মিকের সঙ্গায় পড়ি না। মুসলমান হয়েও সাধারণত জুমা বা বিশেষ কোন সময় ছাড়া আমি ঠিক মত নামাজও পড়ি না। তাই নিজেকে মুসলমান হিসেবে দাবী করতে আমার লজ্জা বোধ হয়। আমরা জানি ধর্ম কি? এই ধর্ম শব্দটা আমরা সবাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করি। যেমন ধরেন পদার্থের ও ধর্ম থাকে। এখানে ধর্ম মানে তার প্রোপার্টি সমূহকে বুঝানো হয়েছে। তাহলে মানুষের বেলায় ধর্ম শব্দটা কি অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে? মানুষ পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে এতটা পথ হেটে এসেছে, উন্নত হয়েছে মানব সভ্যতা। উৎকর্ষের চরম শিখরে এসে আজ পৌঁছেছে মানুষ। কিন্ত কি ভাবে? ধর্ম হল সেই পথ। ধর্ম মানুষকে সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ করেছে হাজার হাজার বছর ধরে।
একটা উদাহরণ দিয়ে আমি আমার ধারণাটা আপনাদের সামনে একটু পরিস্কার করতে চাই। আমাদের সমাজ সংসারে এখন এমন কোথাও আপনি পাবেন না যে ভাই এবং বোন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। এখানে আমার প্রশ্নটা হল কেন নয়? কোন ধর্মের লোক নেই যে এই মতের বিপক্ষে চলে। আপনি একটু পিছন ফিরে পৃথিবীর ইতিহাস খুজলে দেখবেন একসময় এটা খুব স্বাভাবিক ছিল। তখন পৃথিবীতে মানুষ বংশ বিস্তারের জন্য আকুল ছিল। কিন্ত একটা সময় আসল যখন মানুষ বংশ বিস্তার নয়, জন্মনিয়ন্ত্রনের পথ পর্যন্ত অবলম্বন করছে। একটা পর্যায়ে দেখা গেল যে ভাই এবং বোনের মধ্যে যদি বিবাহের ব্যাপারে কোন নিষেধ না থাকে, তাহলে যেহেতু ভাই বোন একই পরিবারের অংশ সেহেতু পাপাচার (ভাইয়ের হাতে বোনের ধর্ষিত হওয়া) রোধ করা সম্ভব নয়। তাই ধর্মের মাধ্যমে মানুষ সেই অবধি আগ পর্যন্ত এই নিয়ম মেনে চলে এসেছে। আমার নাস্তিক ভাইদের প্রতি একটা প্রশ্ন যে তারা কেন এই নিয়ম মেনে চলে? ইদানিং সময় এটা প্রায় চোখে পড়ে যে অনেকে মনে করে যে নাস্তিকতা একটা গর্বের ব্যাপার। তাই যারা নাস্তিক তারা তা প্রকাশ করার জন্য মরিয়া হয়ে যায়। কিন্ত কোন আস্তিক লোকের মধ্যে এই ব্যাপারটা এমন প্রকট নয়।
মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বসবাস শুরু করার পর থেকে, সবাই বুঝতে পারল যে একসাথে বসবাস করতে হলে সবাই কে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হবে। কিন্ত তারা একে অন্যকে কেন মেনে চলবে? নিয়ম শুধু প্রনয়ন করলেই তা সে উদ্দেশ্য পালন করতে কখনই সফল হবে না, যতক্ষন পর্যন্ত না এই নিয়ম এমন কারো কাছ থেকে আসে, যেটা পালন না করলে শাস্তি দেওয়ার মত ক্ষমতা নিয়ম প্রনয়নকারীর না থাকে। ততক্ষন পর্যন্ত কেউ তা মেনে চলার কোন কারন নেই। কিন্ত যদি কেউ নিয়ম ভঙ্গ করে তা গোপন করতে সক্ষম হয় সে ক্ষেত্রে এই নিয়ম কি কাজে দেবে। সুতরাং নিয়ম প্রনয়নকারী এমন ক্ষমতার অধিকারী যদি না হয় যে কোন কিছুই তার অজানা হবে না এবং সেই তিনি হবেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। যার সাথে কারো শক্তির তুলনা করা যায়না। সেই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারীকে কেউ আল্লাহ, কেউ ইশ্বর, কেউ ভগবান বলে।
আমরা সবাই বিভিন্ন ধর্ম পালনকরী, কিন্ত সেই ধর্মটা আমরা নিজেরা পছন্দ করে সিলেক্ট করি নাই। আমার বাবা বা মা যে ধর্মের আমিও সেই ধর্মের হব এটাই আমাদের জীবনে ধর্মের কনসেপ্ট। আবার নাস্তিক ব্যাক্তি, নাস্তিকতার মাধ্যমে প্রমান করতে চায় যে- “আমি ধার্মিক লোক থেকে বেশি বুঝি, ধার্মিকরা অবুঝ।” কিন্ত আমি বলব যে তারাই আসলে একটা সীমানার ভেতরে জীবন যাপন করে, তাদের বুদ্ধি অত্যন্ত কম। তাই তারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব টা বুঝে না। তার মানে আমি বলছিনা যে সব ধার্মিক লোক এ সম্পর্কে বেশি জানে। একটা বিশ্বাস কে যুক্তি দিয়ে প্রমান করা অল্প বুদ্ধি সম্পন্ন লোকের কাজ না……………………. (চলবে)
বিঃ দ্রঃ
অনেকে আমার কথার সাথে একমত না হতে পারেন। আমি আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখছি, আমার সাথে আপনারা একমত না হওয়াটাই স্বাভাবিক।