somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুটবলার(গল্প)

১৯ শে জুন, ২০০৯ দুপুর ১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঠাস, ঠাস, ঠাস। পরপর তিনটি চড় মেরে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে গেলেন অমিয়বাবু , নিশ্চই সোজা গিয়ে হেডস্যারের ঘরে ঢুকবেন।

ছেলেটা তখনও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। একফোঁটাও কাঁদেনি। কোন প্রতিবাদও করেনি। নীরবে মার খেয়ে গেল। তাকিয়ে থাকল সারের গন্তব্যস্হলের দিকে। এক্ষুনি হয়ত ডাক পড়বে। হেডস্যার হয়ত আজ খুব মারবেন। পরপর পাঁচদিন পড়া না পারার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

আসলে কমল ছেলেটা খুব সরল। কিন্তু ওর পড়তে ভালো লাগে না। ও কোনদিন বই খুলেছে কিনা সন্দেহ। সাধারন বুদ্ধির জোরে কোনরকমে পরীক্ষায় পাশ করে যায়। তবে ও সবসময় ভাবে বড় ফুটবলার হবে। বড় বড় ক্লাবে খেলবে। সে তার ভবিষ্যতের কল্পনাকে রঙ্গিন স্বপ্নজালে সাজিয়ে রাখে। কিন্তু কমলরা খুব গরিব। তার বাবা নেই। শুধু সে আর তার মা। তার মা কোনরকমে সংসারটাকে টেনে নিয়ে যান। এইভাবে কি আর কারোও সপ্ন সত্যি হয়? তবুও সে হাল ছাড়ে না। যখন তখন বাড়ির পাশে ছোট্ট মাঠটিতে একটি কাগজ ও ন্যাকড়ার মোড়ককে বল মনে করে খেলতে থাকে।

একদিন তার স্বপ্ন সত্যি হতে চললো। তাদের স্কুলের নতুন খেলার মাস্টারমশায় গোপালবাবু তাঁকে কাছে ডাকলেন। তিনি কমলের ফুটবল খেলা দেখেছেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন ওর প্রতিভা আছে। ভালোমতন প্রশিক্ষন পেলে উঠে দাড়াবে। তিনি ভাবলেন কমলের মার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কমলকে নিজের কাছে রেখে ট্রেনিং দেবেন।
কমলের মা প্রথমে রাজী না হলেও ছেলের জেদের ফলে শেষপর্যন্ত রাজি হলেন। গোপালবাবু কমলকে একটা বল ও একজোড়া বুট কিনে দিলেন। ফুটবল খেলার নিয়মকানুন সংক্রান্ত একটা বইও কিনে দিলেন। প্রতিদিন বিকেলে স্কুলের মাঠে পুরোদমে চলতে থাকলো কমলের প্রশিক্ষন।

তারপর কিছুদিন পরের কথা। কমল এখন স্কুলটিমের ক্যাপ্টেন। খুব ভাল খেলে সে। ইতিমধ্যে অনেক প্রাইজ পেয়েছে। খেলার জন্য বৃত্তি হিসেবে স্কুল থেকে মাসে মাসে কিছু টাকাও দেওয়া হয়। একদিন সে স্কুলের মাঠে প্র্যাকটিস করছে।এমন সময় পাশের বড় রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ দাড়িয়ে পড়লো একটা জিপগাড়ি। তার আরোহী এক বিখ্যাত ক্লাবের খ্যাতনামা কোচ। কোচ কমলের একটি সুন্দর ব্যাকভলি দেখতে পেয়ে গাড়ি থামালেন। কমল একমনে খেলে যাচ্ছে। কখন যে অন্য একজন তার পাশে এসে দাডিয়েছেন, সে হুশ তার নেই। কোচ কমলকে ডাকতেই কমল খেলা বন্ধ করে এগিয়ে এলো।কোচ মনে মনে ভাবলেন, তিনি এক রত্ন খুজে পেলেন। একে তার ক্লাবে নিলে ক্লাবের উন্নতি হবে। কমলকে তিনি তার ক্লাবে খেলার প্রস্তাব দিলেন। কমল এক কথাতেই রাজি। সে তো এমন সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলো। কোচ তাকে এক সপ্তাহের মধ্যে ক্লাবে যোগ দিতে বললেন। কমল মাকে অনেক বুঝিয়ে রাজী করালো।কমল সহরে এলো।

অবশেষে এল কমলের জীবনে সেই বহু প্রতীক্ষিত দিন। আজ তার সামনে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। আজ তার দল চার্মস গোল্ড কাপের ফাইনালে খেলবে। মূলত তার কাঁধে ভর করেই দল ফাইনালে উঠেছে। তার নাম এখন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। তার খেলা দেখতে শুধু কয়েক হাজার লোকই নয়, তার মা ও গোপালবাবুও এসেছেন। মা,গোপালবাবু ও কোচকে প্রনাম করে মাঠে নামলো কমল।

খেলা শুরু হল। বিপরীত দলও খুব ভালো। বল নিয়ে এগিয়ে আসছে ও দলের একজন নামকরা খেলোয়াড়। এবার নির্ঘাত গোল। হলও তাই। এবার কমলের পালা। কমল বল নিয়ে উঠছে। তিনজনকে কাটিয়ে সোজা গোলে দুর্দান্ত একটা শট খেললো। এবং গোল। অপুর্ব এই গোল দেখে দর্শকেরা অনেক্ষন ধরে হাততালি দিলো। খেলা শেষের কিছুক্ষন আগে পর্যন্ত ফলাফল ড্র ছিল। শেষ বাশী বাজার ঠিক আগের মুহুর্তে কমল এক দুর্ধর্ষ ব্যাকভলিতে জয়সূচক গোলটি করল্। গো-ও-ল !গো-ও-ল! হর্ষধ্বনি ও করতালিতে সারামাঠ মুখরিত। আনন্দ-আবেগে কমল শুয়ে পড়ল মাটিতে। কিছু ধুলা মেখে নিলো নিজের গায়ে। আজ সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। আজ সে সত্যিই সফল ফুটবলার।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×