somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিনেমা-ভালোবাসা আজকালঃ আরো ভালো হতে পারত

২২ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্যবসা যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন পোস্ট দিতে অসুবিধা নাই।
শুধু শিরোনাম দিয়েই পোস্ট শেষ করে দেয়া যেত, কিন্তু ব্লগের জন্য এটা প্রত্যাশিত নয়। ব্লগের যারা পাঠক তারা প্রত্যেকেই অল্প-বিস্তর ব্লগ লিখে থাকেন, তাই ফেসবুকের মত একটা স্ট্যাটাস পোস্ট করেই ক্ষ্যান্ত হওয়া স্বভাবতই প্রযোজ্য নয়। তাই কিছুটা বিস্তৃতভাবেই লিখতে হচ্ছে। সে লেখায় যথাযথ এন্টারটেইনিং এর উপস্থিতি না থাকলেও কিছু উপলব্ধি নিশ্চয়ই থাকবে।
যা বলছিলাম, ভালোবাসা আজকাল দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে, আরো অনেক ভালো হতে পারত। হয়তো ব্যবসাসফল হয়েছে, হয়তো অনেক দর্শক ছবিটা দেখেছে, তবুও এটাকে প্রত্যাশিত মানের বলার সুযোগ নেই। দুর্বল চিত্রনাট্য, দুর্বল কাহিনী, দুর্বল সংলাপ, দুর্বল অভিনয়। শুধু পাত্র-পাত্রী আর ঈদের ছবির কারণেই হয়তো এটা ব্যবসা করেছে। ইচ্ছা করেই অনেক পরে সিনেমাটা দেখলাম। এর আগে বেশ কয়েকটা রিভিউ পরেছিলাম। রিভিউগুলোতে পজেটিভই বলা হয়েছে, কেউ কেউ বলেছেন ভিন্ন কিছু। তবে দেখার সময় তেমন উল্লেখযোগ্য পজেটিভ বা ভিন্নকিছু চোখে পড়লনা। কেউ কেউ রিভিউতে লিখেছেন স্ট্যানলি কুব্রিকের না, এটা বাংলা ছবি মতান্তরে বাংলাদেশি ছবি মনে করে দেখলে খারাপ লাগবে না। কিন্তু আমি আমাদের ছবি মনে করেই দেখেছি এবং মনোযোগ সহকারেই দেখেছি, কিন্তু মনে মনে ভেবেছি, মৌলিক গল্প হলেই কি সিনেমা ভাল হয়, যদি না তার উপস্থাপনা যথোপযুক্ত নাহয়। কোত্থেকে কি হচ্ছে, কবিরাজ ছেলে (এখনো কবিরাজ হয়নি) সারাদিন স্যুটেড-বুটেড (আরকি বুটেড এর সাথে স্যুটেড কথাটা দারুন যায়, তাই বলা) আর বাড়িঘরের অবস্থা দেখ, হঠাৎ মা মারা যায়, ভাইগ্না মামাকে রেখে কোত্থেকে কোথায় এসে দাফন করে ফিরে আসে কিছুই বোঝার উপায় নাই। ট্রাক স্ট্যান্ডের লোকজন কত্ত ভালো, শুধু ভাই বলাতেই ৩০ লাখের মায়া হাওয়া হয়ে যায়। আর সব সিনেমাতেই একই বাড়ি। আগে ছিল লাল কার্পেট, আর এখন বিশাল ড্রয়িংরুমের এই বাড়ি। কেউ কেউ বলে এটা শাকিব খানের গুলশানের বাড়ি। কে জানে ঠিক কিনা। এমএলএম থুক্কু এলএলএম পাশ করা মেয়ে সম্পর্কে কি বলব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। মাসুদকে হোটেলে বসিয়ে মুরগী বানানোর দৃশ্যটা অবশ্য ভালো লেগেছে।

যাই হোক, পি এ কাজল আপনাকে বলি
১। ছবি দেখার আগে ‘মুখ ও মুখোশ’ ম্যাগাজিনে আপনার একটা সাক্ষাতকার পড়েছিলাম। সাক্ষাতকার পড়ে যতটা ভালো লেগেছিল, সিনেমা দেখে তার কিছুটাও লাগেনি। অন্তত আপনার মা এই সিনেমা দেখে ভালো হয়ছে এমন মন্তব্য করবেন কিনা এব্যাপারে আমি যথেষ্ট সন্দিহান।
২। এলএলএম পাশ করা মেয়ে ইংল্যান্ডে থাকে এটা বোঝানোর জন্য ছোট হাফপ্যান্টের (হাফপ্যান্টের মিনি সংস্করণ) কোন প্রয়োজন ছিলনা। আর গানের মাঝে সুন্দর পোশাকের সাথে অহেতুক পোশাক-সংকীর্ণতাও অনাবশ্যক ছিল। পূর্ণ পোশাক থাকলেও আপনার গানের কোন ক্ষতি হোতনা। দর্শক কি আপনার নায়িকার হাটু দেখতে চাইছে? বলেন চাইছে? (হুমায়ুনী ঢংগে বললাম আরকি)। আর শুনতে কি পাও গানের দৃশ্যায়নে বাড়তি পোশাক-সংক্ষিপ্ততারও কোন দরকার ছিল বলে মনে হয়না। পোশাকের সৌন্দর্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটা আপনি নিশ্চয়ই জানেন, হোক সেটা চলচ্চিত্রে অথবা গুলশান এভিনউতে।
৩। পুরো সিনেমা দেখে মনে হয়েছে, পাত্র-পাত্রী শেখানো বুলি আওড়াচ্ছে, ঘটনা যাই ডিমান্ড করুক পরিচালক বলেছেন বলেই তারা আওড়াচ্ছে, সংলাপের এমন বিক্ষিপ্ততা অপ্রত্যাশিত। আবহ সংগীতের সাথে ঘটনার ঘনঘটাকে যেন কিছুতেই মেলানো যাচ্ছিলনা।
পি এ কাজল, শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, অনেকদিন ধরেই তো সিনেমা বানাচ্ছেন, কার্যকারণ বা যৌক্তিকতার প্রতি আরেকটু নজর কি দেয়া যায়?
জাজঃ একটা বিষয় আবারও পরিস্কার হলো, সিনেমার ভালোমন্দ নির্ধারণে প্রযোজনার চেয়ে সুন্দর পরিচালনার ভূমিকাই মুখ্য। পরিচালনা যদি ভাল হয়, তবে সেন্টিমিটার-মিলিমিটারই হোক আর সাদাকালো প্রিন্টই হোক তা দর্শক সমাদৃত হবে। তাই পরিচালনা শক্তিশালি না হলে চলচ্চিত্রের জন্য কোন সুখবর নেই।
কি বলব, জাজ কিংবা মাহির ‘অন্যরকম ভালোবাসা’ কিংবা ‘পোড়ামন’ প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ কিংবা পঞ্চমবারও দেখা যায়, কিন্তু ভালোবাসা আজকাল, একবার দেখতেও কষ্ট করতে হয়েছে। কিংবা প্রথম ছবি 'ভালোবাসার রঙ' কেও এর চেয়ে উপরে রাখা যায়।
ভালোবাসা আজকালে অনেক নির্মান ত্রুটি চোখে পড়েছে তবে চিত্রনাট্য, সংলাপ, অভিনয়, ঘটনার ঘনঘটা আরেকটু মজবুত হলে, দৃশ্যায়নগুলো আরেকটু গোছালো হলে এবং এর দুর্বলতাগুলো আরেকটু কাটিয়ে উঠতে পারলে, ভালো ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে, এমন ধারণা করা যেতেই পারে।
যাই হোক সিনেমা দেখে আমার অন্তত একটা উপকার হয়েছে, ‘একটা মাদকতা ছিল সেটা উধাও হয়ে গেছে, হয়তো আর কখনো তাতে আক্রান্ত হবোনা, অথবা আগামী দিনের কথা কে বলতে পারে’।
সর্বশেষ আমাদের দেশের পরিচালক, প্রযোজকদের প্রতি উইথ রেসপেক্ট একটি পরামর্শ থাকবে, আপনার ভঙ্গুর চলচ্চিত্র শিল্পকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন এজন্য সাধুবাদ। তবে ছবি রিলিজ করার আগে, কিংবা আরো ভালো হয় যদি সেন্সর ছাড় করানোর আগে কয়েকজনা রিভিউয়ার-যারা নিয়মিত মুভি রিভিউ লিখছেন (শুদ্ধ ও যৌক্তিক সমালোচনা, নিছক সমালোচনা বা অহেতুক প্রশংসা নয়)-তাদেরকে ডেকে নিয়ে দেখিয়ে রিভিউ করে নেয়া, সম্ভবত অনেকগুলো দুর্বলতা এখান থেকে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতে পারে। শুধু টিএডিএ দিলেই চলবে, যারা চলচ্চিত্রের শিল্পের প্রতি আন্তরিক, তারা অবশ্যই সুন্দর সমালোচনা করে দিতে পারবে। একটা কথা আমরা সকলেই মানি যে চলচ্চিত্র কেবল ব্যবসার উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়না, কারণ ব্যবসার জন্য আরো অনেক কিছু আছে, অনেক সিনেমা হল তাই শপিং কমপ্লেক্সে রুপান্তরিত হয়েছে। সিনেমাতে থাকবে শিক্ষা, থাকবে বিনোদন থাকবে আরো অনেক কিছু। সংগে ব্যবসাও আসবে। অতএব কত সুন্দর ভাব এই শিল্পকে ফুটিয়ে তোলা যায় তাই হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য।
নির্মানের উপকরণতো অসংখ্য। সাহিত্য, ছোটগল্প, বাংলার ইতিহাসে বিখ্যাত-অখ্যাত লেখকের লেখনীর তো অভাব নেই, কেবল মস্তিষ্ককে একটু কাজে লাগানো আর উপযুক্ত জিনিস বাছাই করে নেয়ার পালা। শুধু মাত্র প্রেম-ভালোবাসার বাইরেও কোন কোন ছবি নির্মানের চেষ্টা করা যেতে পারে, তবে প্রেম-ভালোবাসা তার একটা অংশ হিসেবে দেখানো যেতে পারে।
কবে আমরা বলতে পারব আমাদের চলচ্চিত্র আমাদের জাতির এক উজ্জ্বল দর্পন?

বুঝতে পারছিনা, সিনেমা সম্পর্কে আমার দৃষ্টভংগির পরিবর্তন হয়ে গেছে কিনা। যে দৃষ্টিভংগি নিয়ে ‘অন্যরকম ভালোবাসা’, ‘জটিল প্রেম’, কিংবা ‘পোড়ামন’ দেখেছি সেই দৃষ্টিভংগি কি এখন কাজ করছেনা। কিন্তু সেগুলোতো এখনও খারাপ লাগছেনা।
আপনার কি মনে হয়?

বেকার যুবক
I want to live for my country. If I cannot, I don’t want to live anymore.
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:২৭
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×