গত ২৪ অক্টোবর সেবা ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত দ্বিতীয় ‘মাল্টিকালচারাল পোয়েট্রি’ সমাবেশে বহুভাষী কবিদের কাব্যমুর্ছনার উষ্ণতায় ভরে উঠেছিল পূর্ব লন্ডনের স্ট্রার্টফোর্ড লাইব্রেরি হল। সমাবেশে নবীন-প্রবীণ, শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ সম্মিলন ঘটেছিল একঝাঁক কবি-সাহিত্যকদের। বিভিন্ন পর্বে সাজানো অনুষ্ঠানে বাঙালি-অবাঙালি কবিদের অংশগ্রহণে পঠিত হয় বাংলা, ইংলিশ, ইটালিয়ান, ফ্রেঞ্চ এবং আরবী ভাষার কবিতাসমূহ। ছিল আবৃত্তি এবং গিটারের হৃদয়গ্রাহী সুর মুর্ছনা। বিকেল দুটো থেকে সন্ধ্যা পাঁচটা পর্যন্ত ছন্দপতনহীনভাবে চলা কাব্য সমাবেশের নানা পর্বে কবিতা পাঠে অংশ নেন বিপুল সংখ্যক কবি। শুরুতেই আগত কবি এবং উপস্থিত সুধীবৃন্দকে স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কবি ও কলামিস্ট ফরীদ আহমদ রেজা। তিনি সেবা ট্রাস্টের পক্ষে ‘মাল্টিকালচারাল পোয়েট্রি ২০১০‘ এ আগত কবিদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, নিঃসন্দেহে এসমস্ত ইভেন্টের আয়োজন কবিতার প্রতি ভালোবাসা থেকেই হয়ে থাকে। আর কবিতার প্রতি ভালোবাসা আছে বলেই আপনারা শত ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন। তিনি হলিডের উপভোগ্য সময়কে উপেক্ষা করে শিশু-কিশোরসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা আগতদের অভিনন্দন জানিয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান আগামীতেও অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এসময় তিনি বিখ্যাত ইংলিশ কবি টিএস এলিয়টের কবিতা বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যও তুলে ধরেন।
ফরীদ আহমদ রেজা ইভেন্ট সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করে বলেন, এটা মাল্টিকালচারাল পোয়েট্রি সমাবেশ এবং তা গভীরভাবে বৃটেনের মাল্টিকালচারাল সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি বলেন, কালচার হচ্ছে বসবাসের এমন এক পদ্ধতি যার মাধ্যমে সর্বসাধারণের বিশ্বাস, মূল্যবোধ এবং কর্মকা- পরস্পরের মধ্যে ভাগাভাগি করা যায়। তিনি আরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি প্রত্যেকের মাঝেই ভিন্নতা থাকবে এবং বর্ণ, ভাষা অথবা মতামতের ভিন্নতাই সৃষ্টির সৌন্দর্য, এই ভিন্নতা সত্ত্বেও প্রত্যেককেই আমরা সম্মান করি। পরিশেষে তিনি প্রত্যেকের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেন, আসুন আমরা বিশ্বকে বসবাসের উপযোগী এবং শান্তিময় করে গড়ে তুলি।
কবি তাবাসসুম ফেরদৌস এবং ইয়াং কালচারাল এক্টিভিস্ট রাবি নিয়ামের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় ব্যত্যয়হীনভাবে সম্পন্ন হয় পুরো সমাবেশ। বেঙ্গলী কবিতা পাঠ পর্বে স্বরিচত কবিতা পাঠ করেন কবি অমরনাথ চক্রবর্তী, কবি গোলাম কবির, কবি ফেরদৌস রহমান, কবি নাট্যকার মুজিবুল হক মনি, কবি আতাউর রহমান মিলাদ, কবি মাজেদ বিশ্বাস, কবি ও ছড়াকার রেজওয়ান মারুফ, নারী সাময়িকী সম্পাদক কবি শাহনাজ সুরতানা, কবি মতিউর রহমান সাগর, কবি ও সাংবাদিক ফায়সাল আইয়ূব ও কবি সাজেদা সাঈদ। এছাড়াও এ পর্বে বৃটেন সফররত কবি সৈয়দ আলী আহমদ তার রচিত ইংরেজি কবিতা পড়ে শোনান এবং কবি খাতুনে জান্নাতের বাংলা কবিতার ইংরেজি অনুবাদ পড়ে শোনান ব্রজেন চৌধুরী।
ইংরেজি কবিতা পর্বে কবিতা পাঠে অংশ নেন জুবায়ের পারভেজ, সামুয়েল জিমাহ, সারাহ সেডেন, নাফে আনাম প্রমুখ। ফ্রেঞ্চ কবিতা পাঠ করেন গিলিয়ান মেনিগট এবং পার্সিয়ান কবিতা পড়েন ফারাহ আফসারী। লেবানিজ কবিতা পাঠ ও ইংরেজি-বাংলা ভাবার্থ করে শুনান কবি মনোয়ার আহমেদ।
সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কবিতা পাঠ পর্বে কবিতা পাঠ করেন স্টার্টফোর্ট সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্রী ওয়ারদাহ নিসওয়ান ও রিদা হিসান, প্লাসেট সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্রী সাবিহা এবং নিকিতা।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক-কলামিস্ট ইসহাক কাজল, কবি ও প্রাবন্ধিক সৈয়দ মবনু, বার্মিংহাম থেকে প্রকাশিত বাংলা ভয়েস এর সম্পাদক কবি মোহাম্মদ মারুফ, কবি শাহ সুহেল।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিলো আবৃত্তি এবং গিটার সঙ্গতে কাব্যবন্দনা। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মানুষ কবিতার আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার ও সংবাদ পাঠিকা মুনিরা পারভীন এবং গিটারের ঝঙকারের সাথে ইটালিয়ান কাব্যপঙক্তিতে সুরারোপ করেন হ্যানরি ওল্ডহাম।
সম্প্রতি প্লাসেট সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের হাতে পুরস্কার হিসেবে বুক টুকেন এবং এবারের অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠে অংশগ্রহণকারী স্কুল ছাত্রছাত্রীদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেন কবি সৈয়দ আলী আহমদ, কবি অমরনাথ চক্রবর্তী, সাংবাদিক ইসহাক কাজল এবং কবি গোলাম কবির। অনুষ্ঠানে মরমি কবি হাসন রাজার লোকসঙ্গীতের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও গান গেয়ে শোনান সামারিন দেওয়ান।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১০ সকাল ৭:১০