somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিভিন্ন ভাষার কবিদের সম্মিলনে মাল্টিকালচারাল পোয়েট্রি সমাবেশ সম্পন / আবদুল কাইয়ুম

৩০ শে অক্টোবর, ২০১০ ভোর ৫:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লন্ডন, ২৭ অক্টোবর - কবিতা অনেক রকমের। কবিরাও নানা ভাষার। কিন্তু সব কবিতারই সুর ও বক্তব্য অভিন্ন। আর এমনি এক অভিন্ন কাব্যগাঁথা এবং ছন্দ-সুরের ব্যঞ্জনায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল রোববারের মাল্টিকালচারাল পয়েট্রি সমাবেশ। জাতি-গোসষ্ঠী, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এক মেলবন্ধন সূচিত হয়েছিল কবিতার সূত্র ধরে। শৈল্পিক কাব্যভাষার মাধ্যমে কবিদের কন্ঠে উচ্চারিত হয়েছে মানুষ ও মানাবিকতার জয়ধ্বনি।
গত ২৪ অক্টোবর সেবা ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত দ্বিতীয় ‘মাল্টিকালচারাল পোয়েট্রি’ সমাবেশে বহুভাষী কবিদের কাব্যমুর্ছনার উষ্ণতায় ভরে উঠেছিল পূর্ব লন্ডনের স্ট্রার্টফোর্ড লাইব্রেরি হল। সমাবেশে নবীন-প্রবীণ, শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ সম্মিলন ঘটেছিল একঝাঁক কবি-সাহিত্যকদের। বিভিন্ন পর্বে সাজানো অনুষ্ঠানে বাঙালি-অবাঙালি কবিদের অংশগ্রহণে পঠিত হয় বাংলা, ইংলিশ, ইটালিয়ান, ফ্রেঞ্চ এবং আরবী ভাষার কবিতাসমূহ। ছিল আবৃত্তি এবং গিটারের হৃদয়গ্রাহী সুর মুর্ছনা। বিকেল দুটো থেকে সন্ধ্যা পাঁচটা পর্যন্ত ছন্দপতনহীনভাবে চলা কাব্য সমাবেশের নানা পর্বে কবিতা পাঠে অংশ নেন বিপুল সংখ্যক কবি। শুরুতেই আগত কবি এবং উপস্থিত সুধীবৃন্দকে স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কবি ও কলামিস্ট ফরীদ আহমদ রেজা। তিনি সেবা ট্রাস্টের পক্ষে ‘মাল্টিকালচারাল পোয়েট্রি ২০১০‘ এ আগত কবিদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, নিঃসন্দেহে এসমস্ত ইভেন্টের আয়োজন কবিতার প্রতি ভালোবাসা থেকেই হয়ে থাকে। আর কবিতার প্রতি ভালোবাসা আছে বলেই আপনারা শত ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন। তিনি হলিডের উপভোগ্য সময়কে উপেক্ষা করে শিশু-কিশোরসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা আগতদের অভিনন্দন জানিয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান আগামীতেও অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এসময় তিনি বিখ্যাত ইংলিশ কবি টিএস এলিয়টের কবিতা বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যও তুলে ধরেন।
ফরীদ আহমদ রেজা ইভেন্ট সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করে বলেন, এটা মাল্টিকালচারাল পোয়েট্রি সমাবেশ এবং তা গভীরভাবে বৃটেনের মাল্টিকালচারাল সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি বলেন, কালচার হচ্ছে বসবাসের এমন এক পদ্ধতি যার মাধ্যমে সর্বসাধারণের বিশ্বাস, মূল্যবোধ এবং কর্মকা- পরস্পরের মধ্যে ভাগাভাগি করা যায়। তিনি আরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি প্রত্যেকের মাঝেই ভিন্নতা থাকবে এবং বর্ণ, ভাষা অথবা মতামতের ভিন্নতাই সৃষ্টির সৌন্দর্য, এই ভিন্নতা সত্ত্বেও প্রত্যেককেই আমরা সম্মান করি। পরিশেষে তিনি প্রত্যেকের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেন, আসুন আমরা বিশ্বকে বসবাসের উপযোগী এবং শান্তিময় করে গড়ে তুলি।
কবি তাবাসসুম ফেরদৌস এবং ইয়াং কালচারাল এক্টিভিস্ট রাবি নিয়ামের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় ব্যত্যয়হীনভাবে সম্পন্ন হয় পুরো সমাবেশ। বেঙ্গলী কবিতা পাঠ পর্বে স্বরিচত কবিতা পাঠ করেন কবি অমরনাথ চক্রবর্তী, কবি গোলাম কবির, কবি ফেরদৌস রহমান, কবি নাট্যকার মুজিবুল হক মনি, কবি আতাউর রহমান মিলাদ, কবি মাজেদ বিশ্বাস, কবি ও ছড়াকার রেজওয়ান মারুফ, নারী সাময়িকী সম্পাদক কবি শাহনাজ সুরতানা, কবি মতিউর রহমান সাগর, কবি ও সাংবাদিক ফায়সাল আইয়ূব ও কবি সাজেদা সাঈদ। এছাড়াও এ পর্বে বৃটেন সফররত কবি সৈয়দ আলী আহমদ তার রচিত ইংরেজি কবিতা পড়ে শোনান এবং কবি খাতুনে জান্নাতের বাংলা কবিতার ইংরেজি অনুবাদ পড়ে শোনান ব্রজেন চৌধুরী।
ইংরেজি কবিতা পর্বে কবিতা পাঠে অংশ নেন জুবায়ের পারভেজ, সামুয়েল জিমাহ, সারাহ সেডেন, নাফে আনাম প্রমুখ। ফ্রেঞ্চ কবিতা পাঠ করেন গিলিয়ান মেনিগট এবং পার্সিয়ান কবিতা পড়েন ফারাহ আফসারী। লেবানিজ কবিতা পাঠ ও ইংরেজি-বাংলা ভাবার্থ করে শুনান কবি মনোয়ার আহমেদ।
সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কবিতা পাঠ পর্বে কবিতা পাঠ করেন স্টার্টফোর্ট সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্রী ওয়ারদাহ নিসওয়ান ও রিদা হিসান, প্লাসেট সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্রী সাবিহা এবং নিকিতা।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক-কলামিস্ট ইসহাক কাজল, কবি ও প্রাবন্ধিক সৈয়দ মবনু, বার্মিংহাম থেকে প্রকাশিত বাংলা ভয়েস এর সম্পাদক কবি মোহাম্মদ মারুফ, কবি শাহ সুহেল।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিলো আবৃত্তি এবং গিটার সঙ্গতে কাব্যবন্দনা। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মানুষ কবিতার আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার ও সংবাদ পাঠিকা মুনিরা পারভীন এবং গিটারের ঝঙকারের সাথে ইটালিয়ান কাব্যপঙক্তিতে সুরারোপ করেন হ্যানরি ওল্ডহাম।
সম্প্রতি প্লাসেট সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের হাতে পুরস্কার হিসেবে বুক টুকেন এবং এবারের অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠে অংশগ্রহণকারী স্কুল ছাত্রছাত্রীদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেন কবি সৈয়দ আলী আহমদ, কবি অমরনাথ চক্রবর্তী, সাংবাদিক ইসহাক কাজল এবং কবি গোলাম কবির। অনুষ্ঠানে মরমি কবি হাসন রাজার লোকসঙ্গীতের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও গান গেয়ে শোনান সামারিন দেওয়ান।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১০ সকাল ৭:১০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×