somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জমিজমা ক্রয়ের ক্ষেত্রে যেসব কাগজ পত্র করতে হবে!

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জমিজমা কেনার আগে কিছু বিষয়ে অবশ্যই ক্রেতাকে সাবধান হতে হয়। জমিজমা নিয়ে ঝামেলার শেষ নেই। জমি ক্রয় করতে চাইলে অবশ্যই কিছু বিষয়ে খেয়াল না রাখলে স্বপ্নের জমি দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে যেতে পারে। একখণ্ড জমি কিনতে গিয়ে হয়ে যেতে হবে সর্বস্বান্ত।
জমি কেনার আগে জমির ক্রেতাকে জমির বিভিন্ন দলিল বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

বিশেষ করে, জমির মালিকের মালিকানা বৈধতা ভালো করে যাচাই করতে হবে। মাঝেমধ্যে দেখা যায়, একজনের নামের জমি অন্য একজন ভুয়া দলিল দেখিয়ে বিক্রি করেছে। পরে আসল মালিক ক্রেতাকে জড়িয়েও মামলা ঠুকে দেয়। যে ব্যক্তি জমিটি বিক্রয় করবে ওই জমিতে বিক্রয়কারীর জমির মালিকানা আছে কি না, প্রথমে সে বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে। এ জন্য প্রস্তাবিত জমিটির সর্বশেষ রেকর্ডে বিক্রয়কারীর নাম উল্লেখ আছে কি না। সিএস, আরএসসহ অন্যান্য খতিয়ানের ক্রম মিলিয়ে দেখতে হবে। জমির বিভিন্ন প্রকার দলিল থাকতে পারে। বিক্রীত দলিল থেকে শুরু করে ভূমি উন্নয়ন কর, খতিয়ান সবই হচ্ছে দলিল। ক্রেতাকে প্রথমেই দেখতে হবে সব শেষে যে দলিল করা আছে, তার সঙ্গে পূর্ববর্তী দলিলগুলোর মিল আছে কি না। বিশেষ করে, ভায়া দলিলের সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কি না, দেখতে হবে। ভায়া দলিল হচ্ছে মূল দলিল, যা থেকে পরের দলিল সৃষ্টি হয়। ধরা যাক, মাসুদ সাহেব কিছু জমি ১৯৮০ সালে ৩৭৭ নম্বর রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে কেনেন। সেই জমি ২০০৭ সালে অন্য একজনের কাছে ২৭০ নম্বর রেজিস্ট্রি দলিলে বিক্রি করলেন। তাহলে আগের ৩৭৭ নম্বর দলিলটি হচ্ছে ভায়া দলিল। হস্তান্তরকৃত দলিলে দাতা এবং গ্রহীতার নাম, ঠিকানা, খতিয়ান নম্বর, জোত নম্বর, দাগ নম্বর, মোট জমির পরিমাণ ভালো করে দেখতে হবে। আরেকটি বিষয় খেয়াল করতে হবে, যে ভায়া দলিল থেকে পরবর্তী দলিল করা হয়েছে, তাতে প্রতি দাগের হস্তান্তরিত জমির পরিমাণ কম না বেশি।

অনেক সময় আগের দলিলের চেয়ে পরের দলিলে বেশি জমি দেখানো হয়। জমিটি যদি বিক্রেতা অন্য কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে ক্রয় করে থাকে, তাহলে অবশ্যই তাকে এ জমির ভায়া দলিল রেজিস্ট্রেশনের সময় উপস্থাপন করতে হবে। ভায়া দলিল যদি বিক্রেতার সংগ্রহে না থাকে, তাহলে এ দলিল থানা ভূমি রেকর্ড অফিস থেকে ওঠানো যাবে। যদি থানা ভূমি অফিসে না পাওয়া যায়, জেলা ভূমি রেকর্ড অফিস থেকে তোলা যাবে। মিউটেশন বা নামজারির মাধ্যমে যে খতিয়ান তৈরি করা হয়েছে, সে অনুযায়ী খতিয়ানে হস্তান্তরিত দাগের মোট জমির পরিমাণ এবং দাগের অবশিষ্ট পরিমাণ যোগ করতে হবে। এই যোগফল কোনো দাগে মোট যে পরিমাণ জমি আছে, তার চেয়ে কম না বেশি, তা দেখতে হবে। যদি বেশি হয়, তাহলে অতিরিক্ত জমির মালিকানা কোনোভাবেই দাবি করা যাবে না। নামজারি যদি না হয়, তাহলে কেন হয়নি, তার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে।

নামজারির মাধ্যমে জোত নম্বর খোলা না হলে এতে পরবর্তী সময়ে ঝামেলা হয়। জমিটির হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। ভূমি কর না দেওয়ার কারণে কোনো সার্টিফিকেট মামলা আছে কি না, এই বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে। জমিটির ওপর অন্য কোনো মামলা আছে কি না, জেনে নিতে হবে। বিক্রয়কারী ওয়ারিশসূত্রে জমির মালিক হয়ে থাকলে বণ্টনের মোকদ্দমা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। জমিতে ওয়ারিশদের কোনো অংশ থাকা না থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। যদি জমিটি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়ে থাকে, তাহলে বণ্টননামায় জমি দখলের কথা উল্লেখ থাকার বিষয়টি দেখতে হবে। কৃষিজমির ক্ষেত্রে অংশীদারিরা ও পার্শ্ববর্তী ভূমির মালিকেরা অগ্র-ক্রয়াধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কি না, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

এ ছাড়া মুসলিম আইন অনুযায়ী কোনো অগ্রক্রয়ের মামলা আছে কি না, খোঁজ নিতে হবে। বিক্রয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমিটি বিক্রয়কারীর দখলে থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। এ জন্য সরেজমিনে নকশার সঙ্গে জমিটির বাস্তব অবস্থা মিলিয়ে দেখতে হবে। প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী ভূমি-মালিকদের কাছ থেকে দাগ ও খতিয়ান নম্বর জেনে মিলাতে হবে। প্রস্তাবিত জমির সঙ্গে সরকারের খাসজমি আছে কি না, কিংবা সরকারের কোনো স্বার্থ থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। জমিটি অর্পিত সম্পত্তি কিংবা পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকায় আছে কি না, সেটাও দেখতে হবে। জমিটি আগে কোনো সময়ে অধিগ্রহণ হয়েছে কি না বা প্রক্রিয়াধীন কি না, ওয়াক্ফ, দেবোত্তর অথবা কোর্ট অব ওয়ার্ডসের জমি কি না, তা খেয়াল রাখতে হবে।

জমিটি কখনো খাজনা অনাদায়ের কারণে নিলাম হয়েছে কি না, ঋণের জন্য জমিটি কোনো ব্যাংকের কাছে বন্ধক আছে কি না, তা খেয়াল রাখতে হবে। জমিটি এর আগে অন্য কারও কাছে বিক্রি করেছে কি না, খোঁজ নিতে হবে। রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জমিটির দাম ও বেচাকেনার সর্বশেষ তথ্য জেনে নেওয়া প্রয়োজন। জমিটির মালিক কোনো আমমোক্তার বা অ্যাটর্নি নিয়োগ করেছে কি না, জেনে নিন। বিক্রেতা যদি আমমোক্তারনামার মাধ্যমে ক্ষমতা পেয়ে থাকে, এর বৈধতা যাচাই করতে হবে। প্রকৃত মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখতে হবে প্রকৃত মালিক যথাযথ কি না এবং আমমোক্তারটি যথাযথ হয়েছে কি না।

২০০৫ সাল থেকে নতুন ফরমেট বা ছকবদ্ধ আকারে জমির বিক্রয় দলিল সম্পাদন করার নিয়ম চালু হয়েছে। ২০০৮ সালে এটি সংশোধিত আকারে এসেছে। এখন থেকে সব হস্তান্তরিত দলিল এই ফরমেট আকারে করতে হবে। এতে জমি পূর্ববর্তী ন্যূনতম ২৫ বছরের মালিকানার ধারাবাহিক বিবরণ উল্লেখ করতে হয়। জমি কেনার সময় অবশ্যই এই বিবরণের সঙ্গে বাস্তব অবস্থা মিলিয়ে দেখতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তামিম ইকবাল - একজন প্রকৃত ক্রিকেটার

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:০৮



তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ দেয়া প্রসঙ্গে বিসিবি বলেছে তামিমের ইঞ্জুরির কারনে দলে রাখা হয়নি। । এটাতো খুব স্বাভাবিক যে , ইঞ্জুরি বা ফর্ম না থাকলে যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবসা সবার আগে!★

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:০৮


ধরুন একটি বাজারে আপনার ইনভেস্ট আছে কিংবা বাজারটি আপনি নিলামে নিয়েছেন। প্রতিদিন ওই বাজার থেকে আপনার ভালো পরিমান রিটার্ন আসতেছে। এছাড়াও ওই বাজার থেকে আপনি স্বল্পমূল্যে একটা নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকা আসলে কি চাচ্ছে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৩৬



অনেকেই বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে আমেরিকার মাথা ব্যথা কেন?
আমেরিকা সব সময় চায় বিশ্বের ভালো হোক। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এটা একটা ভালো কাজ করেছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার ভিসা স্যাংশন

লিখেছেন সরলপাঠ, ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:৪০

বাংলাদেশের সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি আমেরিকার ভিসা সেংশনের জবাবে বললেন, "আমি কখনও আমেরিকায় যাইনি, যাবোওনা। আমি এই ভিসা সেংশন নিয়ে বিচলিত নই।" তার এই কথায় বুঝা যায় আমেরিকার ভিসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রিয়তম এবং একটি মৃত্যু

লিখেছেন মিরোরডডল , ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:০৭



অনেকদিন পোষ্ট না দিয়ে এখন কিভাবে যে লেখা শুরু করবো সেটাই বুঝতে পারছি না। :(

সবকিছুর ভালো মন্দ দুটো দিক থাকে। স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও বোধহয় তাই। আর সবার মতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×