somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মসজিদের উপরে অথবা নিচে ভবন নির্মাণ করার বিধান

১০ ই মার্চ, ২০১০ দুপুর ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রশ্ন :
আমার পিতা মৃত্যুর পূর্বে ওসিয়ত করেছেন, যেন তার সম্পদের কিছু অংশ দ্বারা সদকায়ে জারিয়া হিসেবে একটি মসজিদ নির্মাণ করি। এভাবে যে, গ্রাউণ্ড ফ্লোরে মসজিদ থাকবে, তার উপরে থাকবে দাতব্য চিকিৎসালয়, কুরআন হিফজ করার ইউনিট, ইসলামি পাঠাগার, এবং দাতব্য চিকিৎসালয়ে আগত ভিজিটরদের জন্য থাকবে প্রাইভেট কার রাখার গ্যারেজ। অতএব, মসজিদের উপরে অথবা নিচে ভবন নির্মাণ করা কি বৈধ হবে ? না ওসিয়ত পরিবর্তন করে মসজিদ আলাদা নির্মাণ করা, ও অন্যান্য চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানগুলো আলাদা নির্মাণ করা উত্তম ?

উত্তর :
আল-হামদুলিল্লাহ
প্রথমত :
ভবনের নিচে অথবা উপরে মসজিদ থাকলে কোন অসুবিধা নেই, যদি শুরু থেকেই ভবন এভাবে নির্মাণ করা হয়।
"الموسوعة الفقهية" (12/295) গ্রন্থে রয়েছে, শাফেয়ী, মালেকী ও হানাবেলাগণ ভবনের নিচের অংশ বাদ দিয়ে উপরের অংশে মসজিদ নির্মাণ, বা এর বিপরীত করা বৈধ বলেছেন। কারণ, দুটি অংশই আলাদা ও স্বতন্ত্র। তাই একটি ওয়াকফ করে, অপরটি ওয়াকফ না করা বৈধ।
লাজনা দায়েমার আলেমদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল : আমি একটি বাড়ি এ নিয়তে নির্মাণ করেছি যে, তার নিচে হবে মসজিদ। এখন বাড়িটি পূর্ণ হয়েছে, নির্মাণ অবকাঠামোতেই কেবলা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। মসজিদ সংলগ্ন নির্দিষ্ট বাথরুম তৈরি করা হয়েছে, এবং ফার্নিচার ইত্যাদির কাজও সমাপ্ত হয়েছে। রং ব্যতীত আর কিছুই অবশিষ্ট্য নেই। মসজিদটি ইসলামি আকৃতির রূপ পরিগ্রহণ করেছে। আমি বাড়ি ও মসজিদটি গত পাঁচ বছর যাবত ওয়াকফ করে দিয়েছি, যতদিন এর উপকারীতা বিদ্যমান থাকবে, ততদিন এ ওয়াকফও কার্যকর থাকবে। কিন্তু কারো কাছ থেকে শোনেছি, বাড়ির নিচে মসজিদ নির্মাণ বৈধ নয়। বাড়ির নিচে মসজিদ নির্মাণের ব্যাপারে আপনাদের মতামত কি ?
উল্লেখ্য যে, এ সময়ের মধ্যে তার আশপাশে ছোট ছোট অনেক মসজিদ গড়ে উঠেছে। উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন।
তারা উত্তর দিয়েছেন : ভিত্তি প্রস্তর থেকেই যদি এভাবে ভবন নির্মাণ করা হয় যে, নিচে থাকবে মসজিদ আর উপরে থাকবে বাড়ি, তবে তাতে কোন অসুবিধে নেই। অথবা বাড়ির নিচে নতুন করে মসজিদ নির্মাণ করলেও কোন সমস্যা নেই। হ্যাঁ, যদি মসজিদের উপরে নতুন করে বাড়ি নির্মাণ করা হয়, যা ইতিপূর্বে ছিল না, তবে তা বৈধ নয়। কারণ, মসজিদ ও মসজিদের উপরে যে শূন্য রয়েছে তাও মসজিদের তাবে। ফতোয়া লাজনা দায়েমা : (৫/২২০), দ্বিতীয় ভলিয়ম।
দ্বিতীয়ত :
নিয়ম হচ্ছে ওসিয়ত বাস্তবায়ন করা। এবং ওসিয়ত বাস্তবায়নে কোন পাপ না হলে তার মধ্যে কোন পরিবর্তন না করা। আল্লাহ তাআলা বলেন :
( فَمَنْ بَدَّلَهُ بَعْدَ مَا سَمِعَهُ فَإِنَّمَا إِثْمُهُ عَلَى الَّذِينَ يُبَدِّلُونَهُ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ) البقرة/181،
অতএব যে তা শ্রবণ করার পর পরিবর্তন করবে, তবে এর পাপ তাদের হবে, যারা তা পরিবর্তন করে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। বাকারা : (১৮১)
তবে, ওসয়িতকে উত্তম থেকে অতিউত্তমে পরিবর্তন করার ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে।
শায়খ ইবনে উসাইমিন - রাহিমাহুল্লাহ - বলেছেন : অতিউত্তমের জন্য ওসিয়তে পরিবর্তন সাধন করার ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
তাদের কেউ বলেছেন : এ জন্য ওসিয়ত পরিবর্তন করা বৈধ নয়। কারণ, আল্লাহ তাআলার বাণী
(فَمَنْ بَدَّلَهُ بَعْدَمَا سَمِعَهُ) البقرة/ 181
ব্যাপক অর্থবোধক। গুনাহ ব্যতীত তাতে কোন পরিবর্তন করা যাবে না।
আবার কেউ বলেছেন : বরং, অতিউত্তমের জন্য ওসিয়ত পরিবর্তন করা বৈধ। কারণ, ওসিয়তের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা ও ওসিয়তকারীকে উপকার পৌঁছানো। তাই যেসব কাজ আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী এবং ওসিয়তকারীর জন্য বেশী উপকারী তাই উত্তম। আর ওসিয়তকারী যেহেতু মানুষ, তাই উত্তম জিনিসটি তার কাছে গোপনও থাকতে পারে। আবার এমনও হতে পারে, একই বস্তু এক সময় উত্তম, অন্য সময় অনুত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতিউত্তমের জন্য মান্নত পরিবর্তন করার অনুমতি প্রদান করেছেন, তবে যে কোন অবস্থাতে তা পুরা করা অবশ্যই জরুরি...
এ মাসআলার প্রেক্ষিতে আমার অভিমত হচ্ছে : ওসিয়ত যদি নির্দিষ্ট কারো জন্য হয়, তাহলে তাতে পরিবর্তন করা জায়েজ নয়। যেমন কেউ জায়েদের জন্য ওসিয়ত করেছে। অথবা তার জন্য ওয়াকফ করেছে। এতে পরিবর্তন করা বৈধ নয়। কারণ, এখানে নির্দিষ্ট ব্যক্তির অধিকার জড়িত রয়েছে।
হ্যাঁ, যদি অনির্দিষ্ট কারো জন্য ওসিয়ত করা হয়, যেমন মসজিদের জন্য, অথবা ফকিরদের জন্য, তার মধ্যে অতিউত্তমের জন্য পরিবর্তন করলে কোন সমস্যা নেই। তাফসীরুল কুরআন লিল উসাইমিন : (৪/২৫৬)
উপরোক্ত বর্ণনা মতে, মসজিদ ও অন্যান্য চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানগুলো আলাদা নির্মাণ করা যেমন বৈধ, অনুরূপভাবে একই ভবনে সবগুলো প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করাও বৈধ। আল্লাহ ভাল জানেন।
সূত্র
http://www.islamqa.com


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×