somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিচ্ছে সবই দিচ্ছে না কিছুই

৩০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দীপু মনির দৌড়ঝাঁপ ব্যর্থ, এই সরকারের সময় তিস্তা চুক্তি, স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না
আরিফুজ্জামান মামুন
স্বাধীনতার ৪২ বছরের পরও বাংলাদেশের প্রতিবেশী সবচেয়ে কাছের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে দাবীদার ভারত কোন কথায় রাখেনি। প্রতিবারই ভারত শুধু আশ্বাসে সীমাবদ্ধ রেখেছে কর্মকান্ড। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ভারতের মন গলাতে তিনদিনের ভারত সফর করেন গত ২৫ জুলাই। তিনদিনের এই সফরে দীপু মনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতাদের সাথে সাক্ষাত করেন। কিন্তু এবারো প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস নিয়ে ব্যর্থ হাতেই ফিরে এসেছেন তিনি। বাংলাদেশের প্রাপ্তীর খাতা শূন্য থাকলেও ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে তার চাহিদার সব কিছুই নিচ্ছে।
গত শুক্রবার নয়াদিল্লীতে মনমোহনের সাথে সাাৎ করেন দীপু মনি। অবশ্য তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তির ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি মনমোহন। এ বিষয়ে নয়াদিল্লি ‘জাতীয় ঐকমত্যে’ পৌঁছাতে চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে সরকারের বর্তমান মেয়াদে তিস্তা চুক্তি, সীমানা চুক্তি হচ্ছে না এটি নিশ্চিত। কারণ তিস্তা চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতার সায় নেই। মমতা তিস্তা চুক্তির ঘোর বিরোধী। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ১৯৭৪ সালে স্বারিত স্থল সীমান্ত চুক্তি এবং ২০১১ সালে সই হওয়া এ সংক্রান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন করতে হলে ভারতের সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এ ল্েয কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকার এর আগে পার্লামেন্টে বিল তোলার উদ্যোগ নিলেও বিষয়টি আটকে যায়। পার্লামেন্টের উচ্চক রাজ্যসভায় গত অধিবেশনে এ বিলটি উত্থাপনের উদ্যোগ নেয় ভারত সরকার। তখন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা দুই মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে বিরোধী দল পার্লামেন্টে কোনো বিল পাস হতে না দেয়ার হুমকি দেয়। সে সময় আসাম গণপরিষদের দুই সংসদ সদস্যও ওই বিল তোলার উদ্যোগের বিরোধিতা করেন।
তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি, ছিটমহল বিনিময়, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নির্বিচারে নিরহ বাংলাদেশি হত্যা, বাণিজ্য ঘাটতি কমানোসহ নানা সমস্যার সমাধান আশা করলেও সেটি হয়নি। কেবল এবারই নয়, দু’দেশের ঝুলে থাকা সমস্যাগুলো সমাধানে বরাবরই অনীহা দেখিয়ে আসছে ভারত। ৭৪’-এর মুজিব-ইন্ধিরা সীমান্ত নির্ধারন চুক্তি বাস্তবায়নে সে সময়েই ‘চুক্তি সংশোধনীর’ অজুহাত দিয়ে পিছিয়ে যায় বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতম প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি। স্বাধানীতার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারত অনকে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। যার মধ্যে ফারাক্কা তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বন্টনের মত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে কয়েক দশক ধরে। বরং গেল বছরের শেষ দিকে ভারত টিপাইমুখ বাঁধ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে মূলত বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বৈরীসুলভ আচরণ করতে চাইছে। বাংলাদেশের কোন তি হবে না, এমন কাগজি কথার উপর কোন ভরসাই করতে পারছেন না বাংলাদেশের মানুষ।
বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের শুরু ১৯৭১ সালে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত অস্ত্র ও আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলো। আর এর জন্য ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এসেছে। গত কিছুদিন আগে স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার দায় মেটাতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দীরা গান্ধিকে মরোনত্তর স্বাধীনতা পদক সম্মননায় ভূষিত করা হয়। ২০০ ভরী স্বর্ণের পদক দেয়া হয় ইন্দিরা গান্ধির পূত্রবধূ কংগ্রেস প্রধান সোনিয়া গান্ধির হাতে। কিন্তু স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে সকল চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে তা বাংলাদেশ শতভাগ পূরণ করলেও ভারত একটিরও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেনি। ভারতের আচরণে বিষয়টা এখন এমন হয়েছে দাঁড়িয়েছে যে কথা দেয়া মানে দিয়ে দেয়া নয়।
সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশের দায়িত্ব নিয়ে তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ মুজিবর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন ভবিষ্যতে ভারতের সহযোগিতা দরকার হবে বাংলাদেশের। কারণ বাংলাদেশ চারিপাশ ঘিরে রয়েছে ভারত। আর এই উপলব্ধি থেকেই ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে শুরু করেন তৎপরতা। এরই ধারাবাহিকতায় যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেন ১৯৭২-এর ২৭ মার্চ। একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর স্বাক্ষারিত হয় সংস্কৃতি বিনিময় চুক্তি। ’৭৩-এর ২৭ আগষ্ট হয় শান্তিপূর্ণ আনবিক শক্তি ব্যবহারে সহযোগিতা নিয়ে চুক্তি। পরের বছর শেখ মুজিবর রহমানের দিল্লি সফরে সই হয় বহু আলোচিত-সমালোচিত ‘সীমানা নির্ধারন চুক্তি’ যা পরে ‘মুজিব-ইন্ধিরা সীমান্ত চুক্তি’ নামে চিহ্নিত হয়। এতে বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১টি ও ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল অদল-বদল এবং দু-দেশের অপদখলীয় জমির সমাধানসহ, অচিহ্নিত সীমানা চিহ্নিত করার কথা বলা হয়। একই বছরই অক্টোবরে ‘সীমান্তে পরির্বতন’ আনার বিষয়টি যোগ করে সংবিধান সংশোধন করে বাংলাদেশ। অথচ বেঁকে বসে ভারত। ডিসেম্বরে ‘চুক্তির কিছু বিষয় সংশোধন প্রয়োজন’ এমন অজুহাতে পিছিয়ে গেলে অস্বস্তিতে পড়ে বাংলাদেশ চার দশকেও যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। তারপরও সেই তিক্ত অভিজ্ঞতাকে পাশে সরিয়ে রেখে, সু-সর্ম্পক বজায় রাখতে আবারও পথচলা শুরু করে বাংলাদেশ।
’৭৪-এর ২৭ নভেম্বর চিঠি-পত্র দেয়া-নেয়া সহজ করতে সই হয় চুক্তি। এরপর ’৭৭ সালে গঙ্গার পানি সমভাগ ও ফারাক্কা বাঁধ নিয়ন্ত্রন নিয়ে চুক্তি হয়। শর্ত ছিলো আর্ন্তজাতিক বিধি অনুযায়ী, সবোর্চ্চ সুবিধা বিবেচনা করে অভিন্ন নদীগুলো থেকে পানি পাবে বাংলাদেশ-ভারত, দু’দেশই। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। উজানের দেশ ভারত থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায়, এককালের প্রমত্তা পদ্মায় জেগে ওঠে মাইলের পর মাইল চর। বৈষমের শিকার বাংলাদেশ তবুও আশায় বুক বাঁধে। আবারও শুরু হয় দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের সন্দেহ মাড়িয়ে পথ চলা।
এরপর নব্বই দশকে গিয়ে আবারো হোঁচট। বাঁধ দিয়ে সেচ খালের মাধ্যমে সারা বছর চাষের জন্য পানি, বাড়তি পানি আটকে রেখে দু-দেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং পানি বিদ্যুৎ তৈরি এমন তিনটি শর্তে লালমনিরহাটের ডালিয়াসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবায় তৈরি হয় ‘তিস্তা ব্যারাজ’। তবে আবারো আশাভঙ্গের বেদনায় পুড়তে হয় বাংলাদেশকে। শুকনো মওসুমে ভারত পানি আটকে রাখায় বিপাকে পড়ছে বাংলাদেশ। আর ভরা বর্ষায় পানি ছেড়ে দেয়ায় উজানের পানির তোড় ভেসে যাচ্ছে গ্রামকে গ্রাম। বছরের পর বছর ধরে তাও মুখ বুঁজে সহ্য করে আসছে বাংলাদেশ। আশা, কোন একদিন প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির সুবুদ্ধি জাগবে। এদিকে ’৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর, আরেক দফা চুক্তি হয় গঙ্গার পানি নিয়ে। কিন্তু সে পানিও এখন ঠিকমতো মিলে না। এরপর নতুন আশায় বুক বেঁধে বতর্মান মহাজোট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গেল বছর ভারত সফরে সমুদ্রবন্দর ব্যবহার নিয়ে ‘ট্রান্সশিপমেন্ট ও ট্রানজিট’সহ তিনটি চুক্তি করেন। বিনিময়ে চান, তিস্তাসহ বাংলাদেশ-ভারতের অমীমাংসিত সাত চুক্তির বাস্তবায়ন। প্রধানমন্ত্রীর সেই সফরে সীমান্ত সন্ত্রাস ও ভারতের বিচ্ছিন্নবাদীদের দমনে বাংলাদেশকে কাছে পেয়েছিলো ভারত। এই সফরে দাবী করা হয়েছিলো দু প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সম্পর্কের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। কিন্তু এবারো ফিরিয়ে দেয় প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি। ফিরতি সফরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আবারও বুঝিয়ে দিলেন, ‘কথা দেয়া মানেই, দিয়ে দেয়া নয়’ তাই ঢাকা আসার ঠিক আগে, পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতার জেদের কাছে হেরে গিয়ে নানা নাটকীয়তায় পিছিয়ে গেলেন তিস্তা চুক্তি থেকে। আর অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘ঐতিহাসিক সফরে’র তকমা লাগিয়ে জাতিকে দিয়ে গেলেন এক রাশ হতাশা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ভারতের প্রধথানমন্ত্রীর এই সফরে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভারতের যে অনেকগুলো দায় ছিলো সেই দায়গুলো মেটালো না ভারত। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত ভারতের সাথে বিদ্যমান সম্পর্কের যে ফাটল ছিলো মনমোহন সিংহয়ের সফরের পর সেটি আরো বড় হলো।
প্রকল্প অনুমোদন, ক্রয়-সংক্রান্ত শর্তসহ নানা জটিলতায় ভারতের প্রতিশ্রুত ১০০ কোটি ডলার সহযোগিতার অর্থছাড় থমকে গেছে। দুই দেশের মধ্যে চিঠি চালাচালিতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে অগ্রগতি। প্রতিশ্রুতি দেয়ার তিন বছরের বেশি পেরিয়ে গেলেও অর্থছাড় হয়েছে মাত্র ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ঋণের অর্থপ্রাপ্তির চেষ্টা করে তেমন অগ্রগতি হয়নি। এতে হতাশ হয়ে পড়েছে সরকারের উচ্চমহল। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ভারত। পরে ১০০ কোটি ডলার ঋণের মধ্যে ২০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে গণ্য হবে বলে ভারতের তত্কালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ঘোষণা দেন। কিন্তু সে অর্থের প্রকল্পের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়নি দেশটি। গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চিঠি পাঠায় অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু এর পর কয়েক মাস চলে গেলেও কোনো জবাব দেয়নি দেশটি। ফলে এ অর্থ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছে। এমনকি অনুদান দেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও দেশটির বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়নি।
গ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। সেখানে অনেক ঢাক ঢোল পিটিয়ে বন্দি বিনিময় সংক্রান্ত বহিঃসমর্পণ চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। রাজধানীতে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকে চুক্তিটি সই হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও সফররত ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে নিজ নিজ দেশের পে চুক্তিতে সই করেন। একই বৈঠকে দু’দেশের ভিসা সহজীকরণ সংক্রান্ত (রিভাইজড ট্রাভেল অ্যারেঞ্জমেন্ট-আরটিএ) দলিলেও সই হয়। চুক্তি সইয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দু’স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিপীয় বৈঠক ও সম্পাদিত চুক্তি দু’টির বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. মহীউদ্দীন আলমগীর স্পষ্ট করেন রাজনৈতিক বন্দি ছাড়া যে কোন অপরাধীকে এ চুক্তির আওতায় এখন থেকে বিনিময় করা যাবে। এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে আটক উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ফেরত নেয়ার ব্যবস্থা করলো ভারত। কিন্তু বাংলাদেশ ভারত থেকে কোন বন্দিকে আনতে পারবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ হিসেবে অতীত অভিজ্ঞতা সূখকর নয় বলে মনে করছেন তারা।
দ্বিপীয় বাণিজ্য
বর্তমান সরকারের সময়ে অর্থনীতির হিসেবে ভারতই লাভবান হয়েছে। তাদের রপ্তানি অনেক বেড়েছে। তুলনায় কমেছে আমাদেরটা। দ্বিপীয় বাণিজ্যে এখনো বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমারও কোনো লণ দেখা যাচ্ছে না। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৮৯.৪২ মিলিয়ন ডলার আর আমদানির পরিমাণ ছিল ২২৬৮.০ মিলিয়ন ডলার। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে রপ্তানি ও আমদানি ছিল যথাক্রমে ৩৫৮.০৮ ও ৩২৭৩.৭০ মিলিয়ন ডলার। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এটা ছিল ২৭৬.৫ ও ২৮৬৩.৬ মিলিয়ন ডলার। ২০০৯-১০ এ এটা ছিল ৩০৪.৭ ও ৩২১৪.৬ মিলিয়ন ডলার। ২০১০-১১ তে এটা ছিল ৫০০ ও ৪৫৭০ মিলিয়ন ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে এটা দাঁড়ায় ৫৪০.৩ ও ৪৯৮৮.৬ মিলিয়ন ডলার। ছোট্ট এ হিসাবটি বলে দিচ্ছে বাণিজ্য ঘাটতি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। অথচ দণি এশিয়ার দেশগুলো তাদের নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ল্েয ১৯৯৩ সালে সাপ্টা ও ২০০৪ সালে সাফটা চুক্তি স্বার করে। সাফটা চুক্তি অনুযায়ী সার্কভুক্ত অপোকৃত উন্নত দেশগুলো শুল্কের পরিমাণ কমিয়ে এনে ২০১৩ সালের মধ্যে শূন্যের কোটায় নামানোর কথা। আর স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে শুল্ক শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে হবে ২০১৬ সালের মধ্যে। অর্থাৎ ২০১৬ সাল পর্যন্ত ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর বাংলাদেশ শুল্ক আদায় করতে পারবে কিন্তু রপ্তানির সময় ভারতকে কোনো কর দিতে হবে না। কিন্তু সাফটা বাস্তবায়নে ভারতের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু ভারতে যে সমস্ত কারণে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি ব্যাহত হয় তার কোনো প্রতিকার এখনো পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিটি চালানের ল্যাবরেটরি পরীা, পরীার ফল পেতে বিলম্ব, বিভিন্ন রাজ্যের নিজস্ব শুল্ক, এন্টি ডাম্পিং, কাউন্টারভেইলিং ডিউটি, গুদাম ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, রাস্তাঘাটের দুরবস্থা, ভারতীয় কাস্টমস এর স্বেচ্ছাচারিতা, পণ্যবাহী যানবাহনের পার্কিং এর অসুবিধা, ট্রানশিপমেন্ট ইয়ার্ডের অপ্রতুলতা ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলোর সমাধান হয়নি বলেই প্রতি বছর বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি।
ট্রানজিট
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ইস্যুতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জনউদ্বেগের বিষয় এই ট্রানজিট। ভারত ট্রানজিট চাইছে তাদের পূর্ব অঞ্চলের প্রদেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য। এেেত্র তারা নৌপথ, সড়কপথ ও বন্দর ব্যবহারের সুবিধা চায়। বর্তমান বাংলাদেশ সরকার ট্রানজিট প্রশ্নে গোড়া থেকেই ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করে আসছে। যদিও সরকার সীমিত আকারে ট্রানজিট ভারতকে কয়েক দফা দিয়েছে। এখনো ভারত বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করছে। ট্রানজিট প্রশ্নে সরকার ভারতকে সুবিধা দিলেও দেশের পাওনা আদায় করতে পারেনি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতের ত্রিপুরায় পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজে মালামাল পরিবহনের জন্য সরকার যেভাবে তিতাস নদীর ওপর দিয়ে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়েছিল তা নজিরবিহীন। সে সময় ছোট বড় প্রায় ৩৪টি খালে বাঁধ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এতে বাংলাদেশ সরকারের পাওনা কি তা জানা যায়নি। মন্ত্রীরা বিভিন্ন সভা সমাবেশে ট্রানজিট থেকে বিশাল আয়ের কথা বললেও বেশ কয়েক দফায় ভারতকে সীমিত পরিসরে ট্রানজিট সুবিধা দেয়া হলেও বাংলাদেশের ভাগ্যে কিছু জোটেনি।
এ মাসেই শুরু হলো বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের ত্রিপুরায় খাদ্য নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া। এখন থেকে ভারত জল-স্থল উভয় পথেই খাদ্যশস্য নিয়ে যেতে পারবে। ইতোমধ্যে কলকাতার হলদিয়া বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে একটি জাহাজ আশুগঞ্জ হয়ে খাদ্যশস্য পরিবহন করেছে। বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এজন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার নৌ-প্রটোকলের মেয়াদ ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নতুন প্রটোকল অনুযায়ী ভারত নৌপথ রণাবেণের জন্য বাংলাদেশকে বছরে ১০ কোটি টাকা দেবে। আগে এটা ৫ কোটি ছিল। নতুন চুক্তিতে প্রটোকলের আওতা বৃদ্ধি করে ভারতকে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরও ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দুর্গম উত্তর-পূর্বাঞ্চলে খাদ্যশস্য সরবরাহে ভারতের খরচ অনেক কমে আসবে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশি সব বাহনেই এ পণ্য পরিবহন করা হবে। পরিবহন খাতে বাংলাদেশ কিছু আয় করতে পারবে। তবে ভারতীয় পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হবে বাংলাদেশের জ্বালানি। এতে জ্বালানি খাতে সরকারের দেয়া ভর্তুকির পরো সুবিধা ভোগ করবে ভারত।
ট্রানজিটের আরও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে রেল বিভাগে। আগামী বছর থেকে আগরতলা হতে আখাউড়া হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে। রেললাইন স্থাপনের ব্যাপারে গত মার্চে দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বার হয়েছে। আখাউড়া থেকে সীমান্ত পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে আগামী অক্টোবরে। তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই রেল লাইন স্থাপনের কাজ শেষ করে আগামী বছরের প্রথম দিকেই পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু করতে চায় ভারতীয় কর্তৃপ। এর আগে এ বছরই দু’দেশের মধ্যে রেল ট্রানজিট চুক্তি হবে। ট্রেন পরিচালনা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পরিবহন মাশুলসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো তখনই নির্ধারিত হবে। আখাউড়া থেকে সীমান্ত পর্যন্ত দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। ভারতীয় অংশের দূরত্ব ৬ কিলোমিটার। রেলে ট্র্যাক, দু’টো ব্রিজ নির্মাণ, সিগন্যালিংসহ পুরো কাজে ব্যয় হবে ২০০ কোটি টাকা। ভারতীয় অংশে ব্রিজ নির্মাণ, রেললাইন স্থাপনের কাজ ভারতীয় রেলওয়ে শেষ করে এনেছে। বাকি রয়েছে সিগন্যালিং। বাংলাদেশ অংশের কাজও দ্রুত করার জন্য তারা তাগিদ দিচ্ছে। আগামী বছরের প্রথম ভাগে রেললাইন চলাচলের উপযোগী করতে চায় ভারত। যদিও পণ্য মাশুল কী হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। এ নিয়ে পুরো প্রক্রিয়া আটকে যাবার সম্ভাবনা থাকলেও ভারত যেভাবে তাদের অংশে কাজ শেষ করে ফেলেছে তাতে বোঝা যাচ্ছে দুই দেশের সরকার চুক্তি না করতে পারলেও অনেকদূর এগিয়ে গেছে।
ট্রানজিট নিয়ে এ পর্যন্ত দেশে অনেক আলাপ হয়েছে বিশ্লেষকদের একটাই মত সরকার কিছু নিচ্ছে না। শুধু দিয়েই যাচ্ছে। দ্বিপীয় সম্পর্কে এত উদারতা ভালো না বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বিশেষ বিবেচনায় পণ্য পরিবহনের অনুমতি না দিয়ে উচিত হবে সবকিছু নির্ধারণ করে একটি চুক্তির মাধ্যমে বিষয়টি নির্ধারণ করা। এতে পণ্য পরিবহনে ভারতকেও কোনো অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হবে না। বাংলাদেশও তার ন্যায্য দাবি করতে পারবে। ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের যাবতীয় জটিলতা নিরসনে সব ইস্যু টেনে একটি রেল, সড়ক ও নৌপথের সমন্বিত চুক্তি দরকার। এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার পুরো সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই লাভবান হতে পারবে। অন্ধভাবে ভারতকে বিরোধিতা করা বা লাগাতার উদারতা প্রদর্শন দুটোই আমাদের তির কারণ হচ্ছে।
ছিটমহল
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সবচেয়ে পুরনো সমস্যা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ মুজিব ও ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে ১৯৭৪ সালে সীমান্তবিরোধ নিষ্পত্তি ও ছিটমহল বিনিময়ের উদ্দেশ্যে একটি চুক্তি স্বারিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের বেড়–বাড়ী ইউনিয়নটি ভারতকে দিয়ে দেয়ার বিনিময়ে করিডোরের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের কথা ছিল ভারতের। বেরুবাড়ী ভারত পেলেও করিডরের নিয়ন্ত্রণ আজ পর্যন্ত পায়নি বাংলাদেশ। এমনকি ১৯৭৪ সালে এই চুক্তি স্বার হলেও অদ্যাবধি ভারতীয় পার্লামেন্ট তা অনুমোদন করেনি। অথচ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য তা অপরিহার্য। ছিটমহল সংক্রান্ত সমস্যা দীর্ঘদিন ধরেই অমীমাংসিত ছিল। বর্তমান সরকার মতায় আসার পর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে মনমোহন সিং ও শেখ হাসিনার মধ্যে বাংলাদেশের ভিতরে অবস্থিত ভারতীয় ১১১টি ছিটমহল ও ভারতের ভিতরে অবস্থিত বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বার হয়। কিন্তু এই চুক্তিও ভারতের সংসদে পাস হয়নি এখনো। সরকারিভাবে চুক্তি সম্পাদন হলেও ভারতের রাজনীতিবিদদের একটি অংশ এই চুক্তির বিরোধিতা করেন এবং তারা যুক্তি দেন যে, ভারতীয় সংবিধানে ভূখণ্ড সংযোজনের বিধান রয়েছে কিন্তু বিয়োজনের বিধান নেই। প্রয়াত শেখ মুজিবের সঙ্গে করা ইন্দিরা গান্ধীর চুক্তিটিও একই যুক্তিতে ভারতের উচ্চ আদালতে একটি মামলার জালে বন্দী অবস্থায় আছে। বাংলাদেশ ছিটমহল সমস্যা সমাধানে আগ্রহী হলেও ভারতের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। রাষ্ট্রহীন অবস্থায়, সুযোগসুবিধার অভাবে, আতঙ্কের মধ্যে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন প্রায় লাখখানেক মানুষ।

দীপু মনির দৌড়ঝাঁপ ব্যর্থ, এই সরকারের সময় তিস্তা চুক্তি, স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না
আরিফুজ্জামান মামুন
স্বাধীনতার ৪২ বছরের পরও বাংলাদেশের প্রতিবেশী সবচেয়ে কাছের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে দাবীদার ভারত কোন কথায় রাখেনি। প্রতিবারই ভারত শুধু আশ্বাসে সীমাবদ্ধ রেখেছে কর্মকান্ড। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ভারতের মন গলাতে তিনদিনের ভারত সফর করেন গত ২৫ জুলাই। তিনদিনের এই সফরে দীপু মনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতাদের সাথে সাক্ষাত করেন। কিন্তু এবারো প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস নিয়ে ব্যর্থ হাতেই ফিরে এসেছেন তিনি। বাংলাদেশের প্রাপ্তীর খাতা শূন্য থাকলেও ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে তার চাহিদার সব কিছুই নিচ্ছে।
গত শুক্রবার নয়াদিল্লীতে মনমোহনের সাথে সাাৎ করেন দীপু মনি। অবশ্য তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তির ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি মনমোহন। এ বিষয়ে নয়াদিল্লি ‘জাতীয় ঐকমত্যে’ পৌঁছাতে চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে সরকারের বর্তমান মেয়াদে তিস্তা চুক্তি, সীমানা চুক্তি হচ্ছে না এটি নিশ্চিত। কারণ তিস্তা চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতার সায় নেই। মমতা তিস্তা চুক্তির ঘোর বিরোধী। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ১৯৭৪ সালে স্বারিত স্থল সীমান্ত চুক্তি এবং ২০১১ সালে সই হওয়া এ সংক্রান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন করতে হলে ভারতের সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এ ল্েয কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকার এর আগে পার্লামেন্টে বিল তোলার উদ্যোগ নিলেও বিষয়টি আটকে যায়। পার্লামেন্টের উচ্চক রাজ্যসভায় গত অধিবেশনে এ বিলটি উত্থাপনের উদ্যোগ নেয় ভারত সরকার। তখন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা দুই মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে বিরোধী দল পার্লামেন্টে কোনো বিল পাস হতে না দেয়ার হুমকি দেয়। সে সময় আসাম গণপরিষদের দুই সংসদ সদস্যও ওই বিল তোলার উদ্যোগের বিরোধিতা করেন।
তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি, ছিটমহল বিনিময়, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নির্বিচারে নিরহ বাংলাদেশি হত্যা, বাণিজ্য ঘাটতি কমানোসহ নানা সমস্যার সমাধান আশা করলেও সেটি হয়নি। কেবল এবারই নয়, দু’দেশের ঝুলে থাকা সমস্যাগুলো সমাধানে বরাবরই অনীহা দেখিয়ে আসছে ভারত। ৭৪’-এর মুজিব-ইন্ধিরা সীমান্ত নির্ধারন চুক্তি বাস্তবায়নে সে সময়েই ‘চুক্তি সংশোধনীর’ অজুহাত দিয়ে পিছিয়ে যায় বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতম প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি। স্বাধানীতার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারত অনকে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। যার মধ্যে ফারাক্কা তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বন্টনের মত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে কয়েক দশক ধরে। বরং গেল বছরের শেষ দিকে ভারত টিপাইমুখ বাঁধ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে মূলত বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বৈরীসুলভ আচরণ করতে চাইছে। বাংলাদেশের কোন তি হবে না, এমন কাগজি কথার উপর কোন ভরসাই করতে পারছেন না বাংলাদেশের মানুষ।
বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের শুরু ১৯৭১ সালে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত অস্ত্র ও আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলো। আর এর জন্য ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এসেছে। গত কিছুদিন আগে স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার দায় মেটাতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দীরা গান্ধিকে মরোনত্তর স্বাধীনতা পদক সম্মননায় ভূষিত করা হয়। ২০০ ভরী স্বর্ণের পদক দেয়া হয় ইন্দিরা গান্ধির পূত্রবধূ কংগ্রেস প্রধান সোনিয়া গান্ধির হাতে। কিন্তু স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে সকল চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে তা বাংলাদেশ শতভাগ পূরণ করলেও ভারত একটিরও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেনি। ভারতের আচরণে বিষয়টা এখন এমন হয়েছে দাঁড়িয়েছে যে কথা দেয়া মানে দিয়ে দেয়া নয়।
সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশের দায়িত্ব নিয়ে তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ মুজিবর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন ভবিষ্যতে ভারতের সহযোগিতা দরকার হবে বাংলাদেশের। কারণ বাংলাদেশ চারিপাশ ঘিরে রয়েছে ভারত। আর এই উপলব্ধি থেকেই ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে শুরু করেন তৎপরতা। এরই ধারাবাহিকতায় যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেন ১৯৭২-এর ২৭ মার্চ। একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর স্বাক্ষারিত হয় সংস্কৃতি বিনিময় চুক্তি। ’৭৩-এর ২৭ আগষ্ট হয় শান্তিপূর্ণ আনবিক শক্তি ব্যবহারে সহযোগিতা নিয়ে চুক্তি। পরের বছর শেখ মুজিবর রহমানের দিল্লি সফরে সই হয় বহু আলোচিত-সমালোচিত ‘সীমানা নির্ধারন চুক্তি’ যা পরে ‘মুজিব-ইন্ধিরা সীমান্ত চুক্তি’ নামে চিহ্নিত হয়। এতে বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১টি ও ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল অদল-বদল এবং দু-দেশের অপদখলীয় জমির সমাধানসহ, অচিহ্নিত সীমানা চিহ্নিত করার কথা বলা হয়। একই বছরই অক্টোবরে ‘সীমান্তে পরির্বতন’ আনার বিষয়টি যোগ করে সংবিধান সংশোধন করে বাংলাদেশ। অথচ বেঁকে বসে ভারত। ডিসেম্বরে ‘চুক্তির কিছু বিষয় সংশোধন প্রয়োজন’ এমন অজুহাতে পিছিয়ে গেলে অস্বস্তিতে পড়ে বাংলাদেশ চার দশকেও যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। তারপরও সেই তিক্ত অভিজ্ঞতাকে পাশে সরিয়ে রেখে, সু-সর্ম্পক বজায় রাখতে আবারও পথচলা শুরু করে বাংলাদেশ।
’৭৪-এর ২৭ নভেম্বর চিঠি-পত্র দেয়া-নেয়া সহজ করতে সই হয় চুক্তি। এরপর ’৭৭ সালে গঙ্গার পানি সমভাগ ও ফারাক্কা বাঁধ নিয়ন্ত্রন নিয়ে চুক্তি হয়। শর্ত ছিলো আর্ন্তজাতিক বিধি অনুযায়ী, সবোর্চ্চ সুবিধা বিবেচনা করে অভিন্ন নদীগুলো থেকে পানি পাবে বাংলাদেশ-ভারত, দু’দেশই। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। উজানের দেশ ভারত থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায়, এককালের প্রমত্তা পদ্মায় জেগে ওঠে মাইলের পর মাইল চর। বৈষমের শিকার বাংলাদেশ তবুও আশায় বুক বাঁধে। আবারও শুরু হয় দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের সন্দেহ মাড়িয়ে পথ চলা।
এরপর নব্বই দশকে গিয়ে আবারো হোঁচট। বাঁধ দিয়ে সেচ খালের মাধ্যমে সারা বছর চাষের জন্য পানি, বাড়তি পানি আটকে রেখে দু-দেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং পানি বিদ্যুৎ তৈরি এমন তিনটি শর্তে লালমনিরহাটের ডালিয়াসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবায় তৈরি হয় ‘তিস্তা ব্যারাজ’। তবে আবারো আশাভঙ্গের বেদনায় পুড়তে হয় বাংলাদেশকে। শুকনো মওসুমে ভারত পানি আটকে রাখায় বিপাকে পড়ছে বাংলাদেশ। আর ভরা বর্ষায় পানি ছেড়ে দেয়ায় উজানের পানির তোড় ভেসে যাচ্ছে গ্রামকে গ্রাম। বছরের পর বছর ধরে তাও মুখ বুঁজে সহ্য করে আসছে বাংলাদেশ। আশা, কোন একদিন প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির সুবুদ্ধি জাগবে। এদিকে ’৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর, আরেক দফা চুক্তি হয় গঙ্গার পানি নিয়ে। কিন্তু সে পানিও এখন ঠিকমতো মিলে না। এরপর নতুন আশায় বুক বেঁধে বতর্মান মহাজোট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গেল বছর ভারত সফরে সমুদ্রবন্দর ব্যবহার নিয়ে ‘ট্রান্সশিপমেন্ট ও ট্রানজিট’সহ তিনটি চুক্তি করেন। বিনিময়ে চান, তিস্তাসহ বাংলাদেশ-ভারতের অমীমাংসিত সাত চুক্তির বাস্তবায়ন। প্রধানমন্ত্রীর সেই সফরে সীমান্ত সন্ত্রাস ও ভারতের বিচ্ছিন্নবাদীদের দমনে বাংলাদেশকে কাছে পেয়েছিলো ভারত। এই সফরে দাবী করা হয়েছিলো দু প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সম্পর্কের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। কিন্তু এবারো ফিরিয়ে দেয় প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি। ফিরতি সফরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আবারও বুঝিয়ে দিলেন, ‘কথা দেয়া মানেই, দিয়ে দেয়া নয়’ তাই ঢাকা আসার ঠিক আগে, পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতার জেদের কাছে হেরে গিয়ে নানা নাটকীয়তায় পিছিয়ে গেলেন তিস্তা চুক্তি থেকে। আর অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘ঐতিহাসিক সফরে’র তকমা লাগিয়ে জাতিকে দিয়ে গেলেন এক রাশ হতাশা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ভারতের প্রধথানমন্ত্রীর এই সফরে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভারতের যে অনেকগুলো দায় ছিলো সেই দায়গুলো মেটালো না ভারত। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত ভারতের সাথে বিদ্যমান সম্পর্কের যে ফাটল ছিলো মনমোহন সিংহয়ের সফরের পর সেটি আরো বড় হলো।
প্রকল্প অনুমোদন, ক্রয়-সংক্রান্ত শর্তসহ নানা জটিলতায় ভারতের প্রতিশ্রুত ১০০ কোটি ডলার সহযোগিতার অর্থছাড় থমকে গেছে। দুই দেশের মধ্যে চিঠি চালাচালিতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে অগ্রগতি। প্রতিশ্রুতি দেয়ার তিন বছরের বেশি পেরিয়ে গেলেও অর্থছাড় হয়েছে মাত্র ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ঋণের অর্থপ্রাপ্তির চেষ্টা করে তেমন অগ্রগতি হয়নি। এতে হতাশ হয়ে পড়েছে সরকারের উচ্চমহল। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ভারত। পরে ১০০ কোটি ডলার ঋণের মধ্যে ২০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে গণ্য হবে বলে ভারতের তত্কালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ঘোষণা দেন। কিন্তু সে অর্থের প্রকল্পের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়নি দেশটি। গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চিঠি পাঠায় অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু এর পর কয়েক মাস চলে গেলেও কোনো জবাব দেয়নি দেশটি। ফলে এ অর্থ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছে। এমনকি অনুদান দেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও দেশটির বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়নি।
গ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। সেখানে অনেক ঢাক ঢোল পিটিয়ে বন্দি বিনিময় সংক্রান্ত বহিঃসমর্পণ চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। রাজধানীতে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকে চুক্তিটি সই হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও সফররত ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে নিজ নিজ দেশের পে চুক্তিতে সই করেন। একই বৈঠকে দু’দেশের ভিসা সহজীকরণ সংক্রান্ত (রিভাইজড ট্রাভেল অ্যারেঞ্জমেন্ট-আরটিএ) দলিলেও সই হয়। চুক্তি সইয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দু’স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিপীয় বৈঠক ও সম্পাদিত চুক্তি দু’টির বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. মহীউদ্দীন আলমগীর স্পষ্ট করেন রাজনৈতিক বন্দি ছাড়া যে কোন অপরাধীকে এ চুক্তির আওতায় এখন থেকে বিনিময় করা যাবে। এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে আটক উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ফেরত নেয়ার ব্যবস্থা করলো ভারত। কিন্তু বাংলাদেশ ভারত থেকে কোন বন্দিকে আনতে পারবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ হিসেবে অতীত অভিজ্ঞতা সূখকর নয় বলে মনে করছেন তারা।
দ্বিপীয় বাণিজ্য
বর্তমান সরকারের সময়ে অর্থনীতির হিসেবে ভারতই লাভবান হয়েছে। তাদের রপ্তানি অনেক বেড়েছে। তুলনায় কমেছে আমাদেরটা। দ্বিপীয় বাণিজ্যে এখনো বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমারও কোনো লণ দেখা যাচ্ছে না। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৮৯.৪২ মিলিয়ন ডলার আর আমদানির পরিমাণ ছিল ২২৬৮.০ মিলিয়ন ডলার। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে রপ্তানি ও আমদানি ছিল যথাক্রমে ৩৫৮.০৮ ও ৩২৭৩.৭০ মিলিয়ন ডলার। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এটা ছিল ২৭৬.৫ ও ২৮৬৩.৬ মিলিয়ন ডলার। ২০০৯-১০ এ এটা ছিল ৩০৪.৭ ও ৩২১৪.৬ মিলিয়ন ডলার। ২০১০-১১ তে এটা ছিল ৫০০ ও ৪৫৭০ মিলিয়ন ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে এটা দাঁড়ায় ৫৪০.৩ ও ৪৯৮৮.৬ মিলিয়ন ডলার। ছোট্ট এ হিসাবটি বলে দিচ্ছে বাণিজ্য ঘাটতি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। অথচ দণি এশিয়ার দেশগুলো তাদের নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ল্েয ১৯৯৩ সালে সাপ্টা ও ২০০৪ সালে সাফটা চুক্তি স্বার করে। সাফটা চুক্তি অনুযায়ী সার্কভুক্ত অপোকৃত উন্নত দেশগুলো শুল্কের পরিমাণ কমিয়ে এনে ২০১৩ সালের মধ্যে শূন্যের কোটায় নামানোর কথা। আর স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে শুল্ক শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে হবে ২০১৬ সালের মধ্যে। অর্থাৎ ২০১৬ সাল পর্যন্ত ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর বাংলাদেশ শুল্ক আদায় করতে পারবে কিন্তু রপ্তানির সময় ভারতকে কোনো কর দিতে হবে না। কিন্তু সাফটা বাস্তবায়নে ভারতের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু ভারতে যে সমস্ত কারণে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি ব্যাহত হয় তার কোনো প্রতিকার এখনো পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিটি চালানের ল্যাবরেটরি পরীা, পরীার ফল পেতে বিলম্ব, বিভিন্ন রাজ্যের নিজস্ব শুল্ক, এন্টি ডাম্পিং, কাউন্টারভেইলিং ডিউটি, গুদাম ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, রাস্তাঘাটের দুরবস্থা, ভারতীয় কাস্টমস এর স্বেচ্ছাচারিতা, পণ্যবাহী যানবাহনের পার্কিং এর অসুবিধা, ট্রানশিপমেন্ট ইয়ার্ডের অপ্রতুলতা ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলোর সমাধান হয়নি বলেই প্রতি বছর বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি।
ট্রানজিট
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ইস্যুতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জনউদ্বেগের বিষয় এই ট্রানজিট। ভারত ট্রানজিট চাইছে তাদের পূর্ব অঞ্চলের প্রদেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য। এেেত্র তারা নৌপথ, সড়কপথ ও বন্দর ব্যবহারের সুবিধা চায়। বর্তমান বাংলাদেশ সরকার ট্রানজিট প্রশ্নে গোড়া থেকেই ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করে আসছে। যদিও সরকার সীমিত আকারে ট্রানজিট ভারতকে কয়েক দফা দিয়েছে। এখনো ভারত বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করছে। ট্রানজিট প্রশ্নে সরকার ভারতকে সুবিধা দিলেও দেশের পাওনা আদায় করতে পারেনি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতের ত্রিপুরায় পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজে মালামাল পরিবহনের জন্য সরকার যেভাবে তিতাস নদীর ওপর দিয়ে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়েছিল তা নজিরবিহীন। সে সময় ছোট বড় প্রায় ৩৪টি খালে বাঁধ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এতে বাংলাদেশ সরকারের পাওনা কি তা জানা যায়নি। মন্ত্রীরা বিভিন্ন সভা সমাবেশে ট্রানজিট থেকে বিশাল আয়ের কথা বললেও বেশ কয়েক দফায় ভারতকে সীমিত পরিসরে ট্রানজিট সুবিধা দেয়া হলেও বাংলাদেশের ভাগ্যে কিছু জোটেনি।
এ মাসেই শুরু হলো বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের ত্রিপুরায় খাদ্য নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া। এখন থেকে ভারত জল-স্থল উভয় পথেই খাদ্যশস্য নিয়ে যেতে পারবে। ইতোমধ্যে কলকাতার হলদিয়া বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে একটি জাহাজ আশুগঞ্জ হয়ে খাদ্যশস্য পরিবহন করেছে। বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এজন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার নৌ-প্রটোকলের মেয়াদ ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নতুন প্রটোকল অনুযায়ী ভারত নৌপথ রণাবেণের জন্য বাংলাদেশকে বছরে ১০ কোটি টাকা দেবে। আগে এটা ৫ কোটি ছিল। নতুন চুক্তিতে প্রটোকলের আওতা বৃদ্ধি করে ভারতকে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরও ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দুর্গম উত্তর-পূর্বাঞ্চলে খাদ্যশস্য সরবরাহে ভারতের খরচ অনেক কমে আসবে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশি সব বাহনেই এ পণ্য পরিবহন করা হবে। পরিবহন খাতে বাংলাদেশ কিছু আয় করতে পারবে। তবে ভারতীয় পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হবে বাংলাদেশের জ্বালানি। এতে জ্বালানি খাতে সরকারের দেয়া ভর্তুকির পরো সুবিধা ভোগ করবে ভারত।
ট্রানজিটের আরও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে রেল বিভাগে। আগামী বছর থেকে আগরতলা হতে আখাউড়া হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে। রেললাইন স্থাপনের ব্যাপারে গত মার্চে দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বার হয়েছে। আখাউড়া থেকে সীমান্ত পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে আগামী অক্টোবরে। তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই রেল লাইন স্থাপনের কাজ শেষ করে আগামী বছরের প্রথম দিকেই পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু করতে চায় ভারতীয় কর্তৃপ। এর আগে এ বছরই দু’দেশের মধ্যে রেল ট্রানজিট চুক্তি হবে। ট্রেন পরিচালনা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পরিবহন মাশুলসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো তখনই নির্ধারিত হবে। আখাউড়া থেকে সীমান্ত পর্যন্ত দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। ভারতীয় অংশের দূরত্ব ৬ কিলোমিটার। রেলে ট্র্যাক, দু’টো ব্রিজ নির্মাণ, সিগন্যালিংসহ পুরো কাজে ব্যয় হবে ২০০ কোটি টাকা। ভারতীয় অংশে ব্রিজ নির্মাণ, রেললাইন স্থাপনের কাজ ভারতীয় রেলওয়ে শেষ করে এনেছে। বাকি রয়েছে সিগন্যালিং। বাংলাদেশ অংশের কাজও দ্রুত করার জন্য তারা তাগিদ দিচ্ছে। আগামী বছরের প্রথম ভাগে রেললাইন চলাচলের উপযোগী করতে চায় ভারত। যদিও পণ্য মাশুল কী হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। এ নিয়ে পুরো প্রক্রিয়া আটকে যাবার সম্ভাবনা থাকলেও ভারত যেভাবে তাদের অংশে কাজ শেষ করে ফেলেছে তাতে বোঝা যাচ্ছে দুই দেশের সরকার চুক্তি না করতে পারলেও অনেকদূর এগিয়ে গেছে।
ট্রানজিট নিয়ে এ পর্যন্ত দেশে অনেক আলাপ হয়েছে বিশ্লেষকদের একটাই মত সরকার কিছু নিচ্ছে না। শুধু দিয়েই যাচ্ছে। দ্বিপীয় সম্পর্কে এত উদারতা ভালো না বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বিশেষ বিবেচনায় পণ্য পরিবহনের অনুমতি না দিয়ে উচিত হবে সবকিছু নির্ধারণ করে একটি চুক্তির মাধ্যমে বিষয়টি নির্ধারণ করা। এতে পণ্য পরিবহনে ভারতকেও কোনো অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হবে না। বাংলাদেশও তার ন্যায্য দাবি করতে পারবে। ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের যাবতীয় জটিলতা নিরসনে সব ইস্যু টেনে একটি রেল, সড়ক ও নৌপথের সমন্বিত চুক্তি দরকার। এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার পুরো সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই লাভবান হতে পারবে। অন্ধভাবে ভারতকে বিরোধিতা করা বা লাগাতার উদারতা প্রদর্শন দুটোই আমাদের তির কারণ হচ্ছে।
ছিটমহল
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সবচেয়ে পুরনো সমস্যা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ মুজিব ও ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে ১৯৭৪ সালে সীমান্তবিরোধ নিষ্পত্তি ও ছিটমহল বিনিময়ের উদ্দেশ্যে একটি চুক্তি স্বারিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের বেড়–বাড়ী ইউনিয়নটি ভারতকে দিয়ে দেয়ার বিনিময়ে করিডোরের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের কথা ছিল ভারতের। বেরুবাড়ী ভারত পেলেও করিডরের নিয়ন্ত্রণ আজ পর্যন্ত পায়নি বাংলাদেশ। এমনকি ১৯৭৪ সালে এই চুক্তি স্বার হলেও অদ্যাবধি ভারতীয় পার্লামেন্ট তা অনুমোদন করেনি। অথচ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য তা অপরিহার্য। ছিটমহল সংক্রান্ত সমস্যা দীর্ঘদিন ধরেই অমীমাংসিত ছিল। বর্তমান সরকার মতায় আসার পর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে মনমোহন সিং ও শেখ হাসিনার মধ্যে বাংলাদেশের ভিতরে অবস্থিত ভারতীয় ১১১টি ছিটমহল ও ভারতের ভিতরে অবস্থিত বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বার হয়। কিন্তু এই চুক্তিও ভারতের সংসদে পাস হয়নি এখনো। সরকারিভাবে চুক্তি সম্পাদন হলেও ভারতের রাজনীতিবিদদের একটি অংশ এই চুক্তির বিরোধিতা করেন এবং তারা যুক্তি দেন যে, ভারতীয় সংবিধানে ভূখণ্ড সংযোজনের বিধান রয়েছে কিন্তু বিয়োজনের বিধান নেই। প্রয়াত শেখ মুজিবের সঙ্গে করা ইন্দিরা গান্ধীর চুক্তিটিও একই যুক্তিতে ভারতের উচ্চ আদালতে একটি মামলার জালে বন্দী অবস্থায় আছে। বাংলাদেশ ছিটমহল সমস্যা সমাধানে আগ্রহী হলেও ভারতের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। রাষ্ট্রহীন অবস্থায়, সুযোগসুবিধার অভাবে, আতঙ্কের মধ্যে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন প্রায় লাখখানেক মানুষ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×