somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ*১





ইসলাম কি জাতীয়তাবাদ সমর্থন করে?

জাতীয়তাবাদ বলতে কি †বাঝায়?

ইসলাম কি এ রাজনৈতিক মতাদর্শ অর্থাৎ জাতীয়তাবাদের সমর্থক?



জবাব

ন্যাশনালিজম বা জাতীয়তাবাদ সর্বশেষ শতাব্দীসমূহের ফল যার বীজ †ষাড়শ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে ইউরোপে †রাপিত এবং সপ্তদশ শতাব্দীতে তা বিকশিত হয়েছিল। আর অষ্টাদশ শতকে তা তুঙ্গে †পঁŠছেছিল। তবে বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্ন হতে বিশেষ করে ১ম ও ২য় মহাযুদ্ধের পরে ইউরোপে এর ভীত দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এর অনাকাক্সিক্ষত ধ্বংসাত্মক প্রভাব, পরিণতি ও ফলাফলের কারণে এর তীব্রতা ও শক্তিও হ্রাস পায়।

যদিও জাতীয়তাবাদ ইউরোপ ও পাশ্চাত্যের †দশসমূহে পতন্মুখ অবস্থার মধ্যে রয়েছে তবুও এশিয়ায় বিশেষ করে ইসলামী †দশসমূহে এখনও জাতীয়তাবাদের †জায়ার প্রবল।

অবশ্য বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং যুগের প্রয়োজনীয়তার কারণে জাতীয়তাবাদের †জায়ারে ভাটা পড়েছে এবং জাতিসংঘ ও এর অধীনস্থ শাখা-প্রশাখা, ল্যাটিন আমেরিকার জাতিসমূহের আঞ্চলিক †জাট, উত্তর আট্লান্টিক †জাট (ন্যাটো) ইত্যাদির মতো আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক †জাট সংগ?নসমূহের আবির্ভাব ও প্রতিষ্?ার ফলে জাতিসমূহের সহযোগিতায় বৃহত্তর †জাট ও সংগ?ন প্রতিষ্?ার ধারণারও উদ্ভব হয়েছে। আর এটা হচ্ছে স্বয়ং বিশ্বব্যাপী জাতীয়তাবাদের ধারণার ক্রমাবনতি ও পতনের নমুনা ও নিদর্শনস্বরূপ। যাহোক আমরা এখন জাতীয়তাবাদ (ঘধঃরড়হধষরংস) ও আন্তর্জাতিকতাবাদ (ওহঃবৎহধঃরড়হধষরংস)- এ দুই মতবাদের সংজ্ঞা এতদুভয়ের শক্তিশালী ও দুর্বল দিকগুলো সমেত বর্ণনা করব এবং †সই সাথে এতদসংক্রান্ত ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিমতও তুলে ধরব।

জাতীয়তাবাদ (ঘধঃরড়হধষরংস) হচ্ছে অন্য সকল জাতির †চয়ে নির্দিষ্ট †কান জাতিকে †শ্রষ্? বলে বিশ্বাস করা এবং †সই সাথে উক্ত জাতির আকিদা বিশ্বাস এবং মূল্যবোধসমূহকেও অন্য সকল জাতির আকিদা-বিশ্বাস, ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-†চতনা এবং মূল্যবোধসমূহের †চয়ে †শ্রষ্? ও প্রাধান্যপ্রাপ্ত বলে মনে করা।

আন্তর্জাতিকতাবাদ (ওহঃবৎহধঃরড়হধষরংস) হচ্ছে এ ধরনের বিশ্বাস ও ধারণা †পাষণ করা †য, বিশ্বের জাতিসমূহের মধ্যে যদি পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা বিরাজ করে তাহলে তা মানবজাতির কল্যাণ ও †সŠভাগ্যের নিশ্চয়তা বিধান করবে এবং তা বিশ্বশান্তিরও কারণ হবে। এ মতাদর্শের সমর্থকগণ বিশ্বব্যাপী এমন এক বৃহৎ সরকার ও রাষ্ট্র গ?নের প্রস্তাব †দয় যা পৃথিবীর সকল জাতি বা সম্প্রদায়কে পরিচালনা করবে অথচ এর ফলে †কান জাতি ও সম্প্রদায়ের জাতিসত্তা, ব্যক্তিত্ব, স্বাধীনতা ও অভ্যন্তরীণ স্বায়ত্বশাসন ও সার্বভেŠমত্বের বিন্দু মাত্র ক্ষতি সাধন হবে না।

রাজনৈতিক মতাদর্শসমূহ বিষয়ক †লখক ও রচয়িতাগণ বিশ্বাস করেন †য, এতদর্থে জাতীয়তাবাদ আধুনিক অর্থাৎ সর্বশেষ শতাব্দীসমূহের ফল। বিগত শতাব্দীসমূহে এ আধুনিক অর্থে জাতীয়তাবাদের †কান অস্তিত্বই ছিল না।

এটা নিশ্চিত †য, মানবপ্রেমিক ব্যক্তি †য মানবীয় আশা-আকাক্সক্ষার অধিকারী তার দৃষ্টিতে আন্তর্জাতিকতাবাদের এক বিশেষ ধরনের প্রকাশমানতা রয়েছে যদিও †খাদায়ী (ঐশী) মতাদর্শের ওপর নির্ভর করা ব্যতিরেকে একটি একক বিশ্ব হুকুমত ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্?া কখনোই সম্ভব নয় এবং বস্তুবাদী মানুষেরাও কখনো উন্নত ও অনুন্নত †দশ ও রাষ্ট্রসমূহের মধ্যকার ঐক্যকে দৃঢ় ও মজবুত করতেও সক্ষম হবে না। আর পরিণতিতে, দুর্বল জাতিসমূহের স্বৈরাচারী শাসকদের শাসনও বহাল তবিয়তে বিদ্যমান †থকে যাবে। এ ব্যাপারে যা কিছু বলা হচ্ছে (হয়ে থাকে) †সগুলো সবই আসলে ঐ সব মানবীয় আবেগ ও অনুভূতির উথ্লে ও?ার প্রত্যক্ষ ফলস্বরূপÑ ধর্মের সাহায্য ও সমর্থন ব্যতীত যার কার্যকারিতা হবে আসলেই অতি সামান্য। তাই জাতিসমূহের মধ্যকার এ ধরনের ঐক্যের প্রবক্তা ও দাবিদারগণ যখনই কর্ম তৎপরতা শুরু করতে যাবে ?িক তখন তার সকল জাতির স্বার্থ সংরক্ষণের পরিবর্তে কট্টর জাতীয়তাবাদী হয়ে দাঁড়াবে।

আমরা সবাই জানি †য, নিয়ামিষ †ভাগী হিন্দুরা †কান প্রাণীকেই কষ্ট দিতে চায় না। এমনকি তারা এ অজুহাত †দখিয়ে পশু জবাই ও শিকার করা †থকেও বিরত থাকে এবং †গাশতের বদলে তারা উদ্ভিদ ও নিরামিষ †ভাগী অর্থাৎ তারা শাক-সব্জি †খয়ে থাকে। (কিন্তু ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ও বিভক্তিকালে) হিন্দু মুসলমানÑ এ দুই জাতির স্বার্থের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলে এই হিন্দু জাতির হাত কনুই পর্যন্ত মুসলমানদের রক্তে নিমজ্জিত (রঞ্জিত) হয়ে যায় এবং কাশ্মীর সমস্যা ক্ষতের নিচে অস্থির রূপ পরিগ্রহ করে যা সর্বদা পাক-ভারত উপমহাদেশের মুসলমান ও হিন্দু জাতির মধ্যে স্থায়ী অশান্তির ইন্ধন †যাগাচ্ছে। কারণ, জাতীয় আশা-আকাক্সক্ষাকে মানবীয় আশা-আকাক্সক্ষার ঊর্ধ্বে প্রাধান্য †দয়া হয়েছে। এ কারণে অবশ্যই বলা উচিত, জাতীয়তাসমূহকে উপেক্ষা করে মানবজাতির আশা-আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন ও মানবসমাজের †সবা, ঐশী মতাদর্শ যা মানুষের অন্তরাত্মাকে খাঁটি মানবপ্রেম ও ভালোবাসা দিয়ে পরিপূর্ণ করে †তালে †সই মতাদর্শের ওপর নির্ভর করা ব্যতীত কখনোই সম্ভব নয়। এই ঐশী †খাদায়ী মতাদর্শের বাণীসমূহ †থকে দুটি উদ্ধৃতি : (الناس امامَ الحقِّ سواءٌ) সকল মানুষ আইন ও হকের (অধিকার) দৃষ্টিতে এক সমান (ও অভিন্ন) (النَّاسُ سَوَاءٌ كَأَسْنَانِ الْمُشْط), সমগ্র মানবজাতি চিরুনির দাঁতসমূহের মতো পরস্পর সমান।

এ ধরনের মতাদর্শে অনুসারীরাই †কবল সকল জাতীয়তা এবং জাতিসমূহের ব্যক্তিত্ব ও (জাতি) সত্তা সংরক্ষণ করে সবাইকে এক বিশেষ হুকুমত ও সরকারের শাসনাধীনে আনতে এবং বিশেষ †কান জাতির †সŠভাগ্যের পুনরুজ্জীবনের পরিবর্তে †গাটা মানবজাতির †সŠভাগ্যের পুনরুজ্জীন ঘটাতে সক্ষম।

জাতীয়তাবাদ হচ্ছে সত্য ও মিথ্যার (হক ও বাতিল) সংমিশ্রণ। তাই এর শক্তিশালী দিকগুলোর পাশাপাশি এর দুর্বল দিকগুলোও বিদ্যমান। পরিণতিতে এ মতবাদ †যমন সৃজনশীল ?িক †তমনি তা ধ্বংসাত্মকও বটে। তবে মুসলিম †দশ ও রাষ্ট্রসমূহে এর ধ্বংসাত্মক দিক, এর সৃজনশীল ও ইতিবাচক দিকের †চয়ে †ঢর †বশি। †যহেতু ইসলামী (মুসলিম) জাতিসমূহের মাঝে পাশ্চাত্যই জাতীয়তাবাদের লালন ও বিকাশের †চষ্টা করে যাচ্ছে, †সহেতু পাশ্চাত্য জাতীয়তাবাদের ধ্বংসাত্মক দিকের জন্য চাচ্ছে মুসলিম উম্মাহ্র ঐক্য বিনষ্ট (করতে), মুসলমানদের মাঝে অনৈক্য ও বিভেদ সৃষ্টি (করতে) এবং ভ্রাতৃপ্রতীম মুসলিম জাতিসমূহকে পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও শত্রুতায় লিপ্ত করতে যাতে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও দ্বীনী ঐক্যের বদলে তারা (মুসলিম জাতিসমূহ) বিভিন্ন জাতীয়তা ও জাতিসত্তায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। প্রকৃত বিষয় ও বাস্তবতা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য আমরা এখন কিছু বিষয় উল্লেখ করব :

রাজনৈতিক মতবাদসমূহের †লখকগণ জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে †য ব্যাখ্যা করে থাকেন তাতে নি¤েœাক্ত বিষয়াদি পরিদৃষ্ট হয় :

১. †য ভূখণ্ডে মানুষ লালিত-পালিত ও বড় হয়েছে †সই ভূখণ্ডের প্রতি তার টান

২. †য জাতির মাঝে †স বড় হয়েছে †সই জাতির প্রতি তার টান

৩. নিজ জাতির অর্জিত সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক কীর্তি এবং ঐতিহ্যসমূহ

৪. স্বায়ত্ত্বশাসন ও স্বাধীনতা অর্জনের প্রতি †ঝাঁক ও প্রবণতা

এ ধরনের ধারণাসমূহকে (ঈড়হপবঢ়ঃং) জাতীয়তাবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট বলে গণ্য করা যায় না। কারণ, মানুষের সাথে এই ধরনের টান, আকর্ষণ, †ঝাঁক ও প্রবণতাসমূহ তার সহজাত প্রকৃতিপ্রসূত। যখন †কান মানুষ †কান ভূখণ্ড বা জনপদের মধ্যে বড় হয় তখন তাদের প্রতি তার টান ও ভালোবাসা অথবা তাদের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শনাদির প্রতি তার টান ও আগ্রহ আসলে নিতান্ত স্বাভাবিক বিষয়ই হবে। প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের সাথে এ বিষয়টা অনুভব ও উপলব্ধি করে থাকে। আবার একই ভাবে দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙা ও স্বাধীনতা অর্জন ইত্যাদিও হচ্ছে নিতান্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। এসব বিষয়কে জাতীয়তাবাদের খাতায় হিসেব করা অনুচিত। এ মতাদর্শ অর্থাৎ জাতীয়তাবাদ বিলুপ্ত করেও এসব অর্জন করা সম্ভব।

মহনবী (সা.) মক্কা নগরী †থকে মদীনায় হিযরত করার সময় পথিমধ্যে জন্মভূমি মক্কার কথা স্মরণ করলেন এবং মাঝে †সখানে পুনঃপ্রত্যাবর্তন করার আগ্রহ অনুভব করলেন। মহান আল্লাহর পক্ষ †থকে ওহি অবতীর্ণ হলো এবং তাঁকে ওয়াদা †দয়া হলো : †য আল্লাহ আপনার ওপর পবিত্র †কারআনের প্রচার ওয়াজিব করেছেন তিনি আপনাকে আপনার জন্মভূমিতে ফিরিয়ে আনবেন।২ আর মহান আল্লাহর এ ওয়াদা ৭ম হিজরিতে বাস্তবায়িত হয়েছিল।

মক্কা বিজয়ের সময় ৮ম হিজরিতে মহানবী (সা.) যখন স্বীয় জন্মভূমি মক্কায় প্রবেশ করলেন তখন তিনি পবিত্র মক্কা নগরীর ব্যাপারে স্বীয় টান ও ভালোবাসা ব্যক্ত করে বলেছিলেন : ‘†হ মক্কা! আমি †তামাকে ভালোবাসি। আমাদেরকে যদি †তামাকে †ছড়ে চলে †যতে বাধ্য করা না হতো তাহলে আমি †তামাকে কখনো ত্যাগ করতাম না।৩

এমন †কান জাতি, †গাত্র ও পূর্বপুরুষ যারা মানুষের উৎসমূল বলে গণ্য হয় তাদের সাথে রক্ত ও বংশগত সম্পর্ক আছে বলে ব্যক্ত করা হচ্ছে জাতীয়তাবাদের অন্যতম নিদর্শন। †যমন : এ কথা বলা : ‘আমি অমুক †গাত্র বা জাতির অন্তর্ভুক্ত’ অথবা নিজেকে †কান বিশেষ জাতির সাথে সম্পর্কিত বলে গণ্য করা ইত্যাদি। এ ধরনের কাজ ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। তবে এ †ক্ষত্রে একটি শর্ত আছে। আর তা হলো : এ ধরনের সম্পর্ক †যন গর্বের কারণ না হয়। বরং তা †যন মানুষের পরিচিতি ও শণাক্তের পন্থা হয়। পবিত্র †কারআন এ বাস্তবতাকে নি¤েœাক্ত আয়াতে ব্যক্ত করেছে : (وَ جَعَلْنا كُمْشُعُوباً وَ قَبائِلَ لِتَعارَفُوا) এবং আমরা †তামাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও কাবীলায় (†গাত্র) বিভিক্ত করেছি যাতে †তামরা নিজেদেরকে চিনতেও শণাক্ত করতে পার।৪ অর্থাৎ †কান †গাত্রের সাথে সম্পর্কিত হওয়া অবশ্যই এক ব্যক্তি †থকে আরেক ব্যক্তিকে শণাক্ত ও পৃথক করার উপায় বা উসিলা হতে হবেÑ তা †যন বংশীয় †গŠরব ও অহংকারের কারণ না হয়। †যসব অস্থি পচে গলে †গছে †সগুলোর সাথে নিজেকে সম্পর্কিত করার মধ্যে †কান গর্ব ও †গŠরব †নই। বরং মানুষের †গŠরব হচ্ছে তার তাকওয়া-পরহেযগারীÑ যা তাকে অর্জন করতে হয়।

জাতীয়তাবাদের ধ্বংসাত্মক দিকসমূহ

জাতীয়তাবাদের ইতিবাচক দিকসমূহ হচ্ছে ঐসব দিক যা আমরা বর্ণনা করলাম। তবে অবশ্যই মনে রাখা উচিত †য, ইসলামী †দশসমূহ অথবা এশিয়া ও আফ্রিকার †দশসমূহে এই রাজনৈতিক মতাদর্শ অর্থাৎ জাতীয়তাবাদ উত্থাপন করার লক্ষ্যই হচ্ছে এর ধ্বংসাত্মক দিকসমূহ †যগুলো আমরা এখন নিচে উল্লেখ করব :

ইসলামী ঐক্য বিনষ্ট করা : ইসলামী দৃষ্টিতে ভাষা, বর্ণ, রক্তসম্পর্ক, ভূখণ্ড ইত্যাদির মতো †যসব উপাদান ও †মŠল একটি জাতিসত্তার গা?নিক উপাদান বলে বিবেচিত †সগুলোর মধ্যে †কবল ‘ধর্মীয় আকিদাবিশ্বাস এবং চিন্তাগত ঐক্য’ই আসলে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি বিনির্মাণ করতে সক্ষম যা জাতীয় লাভ-†লাকসানের †ক্ষত্রে জাতির সকল সদস্যকে †যমন পরস্পর অংশীদার করে ?িক †তমনি তা বিভিন্ন জাতি ও †গাত্রকে ঐক্যবদ্ধ অভিন্ন উম্মতেও পরিণত করেÑ যদিও ভাষা, রক্ত-বর্ণ, ভূখণ্ড ও আবাসস্থলের †ক্ষত্রে তাদের মাঝে বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান। পবিত্র †কারআনে এরশাদ হচ্ছে : (إِنَّ هذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً واحِدَةً وَ أَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُونِ) নিঃসন্দেহে এটাই হচ্ছে †তামাদের জাতি যা হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ এক উম্মত, আর আমি হচ্ছি †তামাদের প্রভু। অতএব, †তামরা আমারই ইবাদত কর।৫ (وَ إِنَّ هذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً واحِدَةً وَ أَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُون) নিঃসন্দেহে (নিশ্চয়) এটি হচ্ছে †তামাদের জাতি যা হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ এক উম্মত। আর আমি হচ্ছি †তামাদের প্রভু। অতএব, †তামরা সবাই আমাকে ভয় কর।৬ অথবা পবিত্র †কারআন সবাইকে পরস্পর ভাই এবং মহান আল্লাহর কাছে সবাই †য সমান তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে : (إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَة) নিশ্চয় মুমিনগণ পরস্পর ভাই।৭

একদিন সালমান ফারসী মহানবী (সা.)-এর মসজিদে উপবিষ্ট ছিলেন এবং †সখানে মহানবী (সা.) এর কতিপয় সাহাবীও উপস্থিত ছিলেন। বংশ ও রক্তসম্পর্কের কথা উত্থাপিত হলে প্রত্যেকেই নিজের বংশ সম্পর্কে কিছু কিছু কথা বলছিলেন। সালমানের পালা আসলে উপস্থিত ব্যক্তিরা তাঁকে বললেন : ‘সালমান, আপনিও আপনার বংশ ও পরিবার সম্পর্কে কিছু বলেন। অতঃপর সালমান বললেন : ‘আমি সালমান ইবনে আবদুল্লাহ (আল্লাহর দাসের সন্তান সালমান)। আমি †গামরাহ ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ পাক আমাকে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মাধ্যমে †হদায়াত করেছেন এবং আমি রিক্তহস্ত ছিলাম, অতঃপর আল্লাহ পাক হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মাধ্যমে আমাকে ধনী ও স্বচ্ছল করেছেন (এবং তিনি আমার সকল অভাব মিটিয়ে দিয়েছেন)। আমি ক্রীতদাস ছিলাম। অতঃপর মহান আল্লাহ আমাকে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মাধ্যমে মুক্ত করেছেন। এই হচ্ছে আমার বংশ ও খান্দানের পরিচয়।’

ইত্যবসরে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) †সখানে প্রবেশ করলেন এবং সালমানও পুরো ঘটনা তাঁর কাছে বললেন। মহানবী (সা.) উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ, যারা ছিলেন কুরাইশ বংশীয়, তাঁদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন : ‘†হ কুরাইশ বংশীয়গণ! মানুষের দ্বীনই হচ্ছে তার বংশ-পরিচিত (حَسَب)। তার বন্ধু ও সাথি হচ্ছে তার স্বভাব- চরিত্র (আখলাক) এবং তার উৎসমূল (اصل) হচ্ছে তার আকল (বিবেক-বুদ্ধি)।’৮

ইসলামের ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে †য, উহুদের যুদ্ধে মুসলমানদের মধ্যে একজন ইরানী দাসও ছিল। †স এক শত্রুসৈন্যের ওপর আঘাত †হনে গর্বভরে বলেছিল : ‘আমার †থকে এ আঘাতটা গ্রহণ কর। আমি একজর ইরানী যুবক।’ ঐ ইরানী যুবকের কথা যা অন্যদের জাতি ও বর্ণগত †গাঁড়ামির উদ্রেক করতে পারত তা মহানবী (সা.)-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। তিনি যুবকটিকে বললেন : “তুমি †কন বললে না : ‘আমি একজন আনসার যুবক?”৯ এটাই হচ্ছে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ও রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর অনুসৃত নীতি। অথচ জাতীয়তাবাদ চায় বিশ্বাস ও আকীদাগত ঐক্যের পরিবর্তে অন্যান্য †মŠল ও নিয়ামক ব্যবহার করতে, মুসলিম উম্মাহর ঐক্যকে বহুত্বে ও দ্বিধাবিভক্তিতে রূপান্তরিত করতে; আরব, আজম (অনারব) তুর্ক, পারস্য এবং সকল মুসলিম †গাত্র, সম্প্রদায় ও কওমের ঐক্যকে বিভিন্ন বর্ণ, জাতি ও ভাষায় বিভক্ত করতে। ফলে ঐক্যবদ্ধ উম্মাতের মাঝে কপটতা, বিবাদ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার বীজ বপন হবে এবং ইসলামের সুবিশাল শক্তি ও ক্ষমতা নাস্তানাবুদ হয়ে যাবে। অবশেষে মুসলিম জাতিসমূহের ওপর পরাশক্তিবর্গের আধিপত্য স্থাপনের পথও সহজ ও সুগম হবে।

ইতিহাসে †কান জাতির যদি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও অর্জনসমূহ †থকে থাকে তাহলে তা সমালোচনার বিষয়বস্তু হওয়া উচিত নয়। তবে এ প্রসঙ্গটা আমাদের †দশে (ইরান) এবং এতদসদৃশ্য অন্যান্য †দশে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় †য, অন্যান্য মুসলিম জাতির সাথে আমাদের (ইরানি জাতি) সম্পর্কচ্ছেদ করানোই হচ্ছে এর প্রকৃত উদ্দেশ্য। †কবল এতটুকুই যথেষ্ট বলে মনে করা হয় না বরং ইসলামের দুশমনরা চায় আমাদের জাতি দীর্ঘ ১৪ শতাব্দী ধরে ইসলামের ইতিহাস †থকে †যসব মর্যাদা ও †গŠরব অর্জন করেছে তা ধ্বংস করে দিতে এবং জাতীয়তাবাদের নামে আমাদের সকল সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক (জ্ঞানগত) বুদ্ধিবৃত্তিক †গŠরবের ওপর আঘাত হানতে। আর তখন আমরা থাকব এবং আমাদের সাথে অবশিষ্ট থাকবে শুধু কূরোশ ও দারায়ুশের যুগের কীর্তি ও †গŠরব। কিন্তু ১৪ শতাব্দী যাবৎ ইসলামের অর্জিত তাবৎ বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অবদান, কীর্তি ও ঐতিহ্য †থকে ইরান ও ইরানী জাতিকে বিছিন্ন করা হলে তা ইরানী জাতির উভয় কীর্তি ও ঐতিহ্য ধ্বংস ও বিনষ্ট করা ব্যতীত আর †কান সুফল বয়ে আনবে না।

প্রথম মহাযুদ্ধের পরে মার্কিন †প্রসিডেন্ট উইলসন বিশ্বশান্তি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৪ ধারাবিশিষ্ট একটি ইসতেহার প্রকাশ করেন। উক্ত ১৪ ধারার একটি হচ্ছে : জাতীয় স্বাধীনতা। এর পরিণতিতে উসমানি (অটোম্যান) সা¤্রাজ্য ও খিলাফত †ভঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। †কবল দুর্ভাগ্য, ব্যর্থতা, পুতুল ও শিখণ্ডি সরকারসমূহের প্রতিষ্?া এবং মুসলিম বিশ্বে অবৈধ ইসরাইলের বীজ বপণ করা ব্যতীত এর আর †কান সুফল প্রত্যক্ষ করা যায় নি।

২. বিদ্রোহাত্মক মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির লালন

জাতীয়তাবাদের মাঝে বিদ্রোহাত্মক মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির পূর্ণ বিকাশ সাধিত হয় এবং (সা¤্রাজ্যবাদী) শক্তিশালী সরকার ও রাষ্ট্রসমূহ একই ভাষাভাষী ও বর্ণের †গাষ্?ী ও সম্প্রদায়সমূহ যারা †দশের বাইরে জীবন যাপন করছে তাদের ভূখণ্ড নিজেদের সা¤্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ও দখল করার †চষ্টা করে থাকে। এমনকি এতটুকুও তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। বরং তারা সংখ্যালঘু অধীন জাতিসমূহের অস্তিত্ব বিলীন করে দিতে চায়।

ইউরোপে জাতীয়তাবাদ সা¤্রাজ্যের সম্প্রসারণ, †দশ বিজয় এবং সংখ্যালঘুদের সম্পূর্ণ উপেক্ষিত ও অবহেলিত রাখায় পর্যবসিত হয়েছে। এ জাতীয়তাবাদ †সখানে বর্ণবাদী উপাখ্যান ও প্রথাসমূহের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছিল এবং ধ্বংস সাধন ব্যতীত তা আর অন্য †কান ফলাফল বয়ে আনে নি। এমনকি তা (ইউরোপের জার্মানি ও ইতালিতে) নাৎসী ও ফ্যাসিষ্ট মতবাদী স্বৈরাচারী সরকারসমূহকে শাসনক্ষমতায় অধিষ্?িত করে ব্যাপক আগ্রসন ও যুদ্ধের কারণ হয়েছিল।

সংক্ষেপে, জাতীয়তাবাদের ইতিবাচক ও †নতিবাচক বিভিন্ন দিক রয়েছে। ইতিবাচক ও মানবিক দিকসমূহ গ্রহণ করে এর সকল †নতিবাচক ও অমানবিক দিকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা উচিত। প্রধানত ইতিবাচক দিকগুলো বিবেচনা করে জাতীয়তাবাদের আহ্বান শুরু করা হলেও অবশেষে এর †নতিবাচক ও রুঢ় দিকগুলো বাস্তবে প্রকাশিত হয়ে পড়ে।

অনুবাদ : †মাহাম্মাদ মুনীর †হাসাইন খান



*আয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানী প্রণীত প্রশ্নোত্তরসমূহ (پرسشها و پاسخ ها) †থকে অনূদিত।

১. সূরা কাসাস: ৮৫

৩. সীরাতে হালাবী, খণ্ড ২, পৃ. ৯৮

৪. সূরা হুজুরাত : ১৩

৫. সূরা আম্বিয়া : ৯২

৬. সূরা মু’মিনুন : ৫২

৭. সূরা হুজুরাত : ১০

৮. রওযাতুল কাফী, পৃ. ১৮১; বিহারুল আন্ওয়ার, খণ্ড ২২, পৃ. ৩৮২

৯. সুনানে আবু দাউদ, খণ্ড ২, পৃ. ৬২৫
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×