‘প্রেম দরিয়ার পানি’ ও সোহরাব হোসেন
সোহরাব হোসেন সম্পর্কে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বর্ণনা এ প্রসঙ্গে উত্থাপন করা যেতে পারে। সদ্য তারুণ্যে পা দেয়া আমরা ক’জন এক সময় রবীন্দ্রসঙ্গীতে বিভোর হয়ে থাকতাম। আমার মনে হতো রবীন্দ্রনাথের ‘তুমি কি কেবলই ছবি’ গানটি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গান। এ গান যখনই যেখানে বাজত, কানে প্রবেশ করলেই চিত্ত স্থির হয়ে যেত, একাগ্র হয়ে শুনতাম। কেন্দ্রীভূত হয়ে যেত মন এ গানে। রবীন্দ্রনাথের গানের প্রতি আমার এ প্রবল আগ্রহ উপলব্ধি করে কিনা জানি না, একদিন আমার এক মামা আমাকে নজরুল সঙ্গীত সম্পর্কে কিছু ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেন। তখনও নজরুল সঙ্গীতের প্রতি শ্রোতা হিসেবে সে অর্থে আমার কোনো মনোযোগ ছিল না। ওই মামা আমাকে অনুপ জালোটা শুনতে বললেন। আমি তেমন গা করলাম না। একদিন তিনিই অনুপ জালোটার একটি ক্যাসেট নিয়ে এলেন, নজরুলের গজল। আমি শুনছি, কিন্তু আমার ভেতরে কিছুই প্রবেশ করছে না। বেশ ক’বার শোনার চেষ্টা করে বিরতি দিয়ে দিলাম। কিছুদিন পর কোনো এক সাহিত্য আসরে কিংবা আড্ডায় অনুপ জালোটার অ্যালবামটির প্রশংসা শুনলাম, বাসায় গিয়ে খুঁজলাম ক্যাসেটটি। পেলাম না। এবার নিজে কিনে আনলাম। শুনলাম। আবার একই দশা, ভালো লাগছে না। আমার ক্যাসেটটি আড়ালে পড়ে গেল। ক’দিন পর আবার কোথাও শুনলাম অনুপ জালোটার প্রশংসা। বাসায় গিয়ে আবার ক্যাসেটটি খুঁজলাম। কিন্তু এবারও সেটি হাওয়া। অবাক ব্যাপার।
আমি দ্বিতীয়বার ক্যাসেটটি বাজার থেকে কিনে আনলাম। বাজালাম, আর নিজের প্রতি নিজে বিরক্ত হয়ে উঠলাম। যাদের কাছে অনুপ জালোটার প্রশংসা শুনছি তারা বিজ্ঞ লোক, গান বোঝেন, সঙ্গীত বোঝেন। আমি তাহলে এগুলো কিছুই বুঝি না বুঝি! এই বিরক্তিকে সম্বল করে কাগজ, কলম, অভিধান, নজরুল রচনাবলী সামনে নিয়ে ক্যাসেটটি বাজাতে থাকলাম; আর নজরুলের গানের বাণী যেখানে বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল, সেখানে অভিধানের কিছুটা সাহায্য নেয়ার চেষ্টা করলাম। গান শুনছি আর কাগজে লিখছি। আমার মনে হচ্ছিল, বাণী বুঝতে পারছি না বলেই আমার সমস্যা হচ্ছে। কয়েকদিন এরকম কাটল এবং আমি অবাক হয়ে দেখলাম, নজরুলের গজল আমার হৃদয়ে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। এবার অনুসন্ধান করতে থাকলাম নজরুলের গানের ক্যাসেট। বাজারে অনুপ জালোটা, অনুপ ঘোষাল, ফিরোজা বেগমের ক্যাসেটই শুধু পাই। একদিন পেয়ে গেলাম সোহরাব হোসেন ও খালিদ হোসেনের অ্যালবাম। দু’টি ক্যাসেটই ইসলামী গানের। শুনলাম এবং অভিভূত হতে থাকলাম। খুঁজলাম আরও ক্যাসেট। পেলাম খালিদ হোসেনের। সোহরাব হোসেনের আর কিছুই পেলাম না, পেলাম না, পেলাম না।
বড় মানুষদের কাছে জানতে চাই সোহরাব হোসেনের কথা। তারা সবাই অভিভূত কণ্ঠে তার কথা বলেন। কিন্তু আমি আর তার কোনো ক্যাসেট খুঁজে পাই না, সিডি খুঁজে পাই না। আজও সোহরাব হোসেনের ওই ক্যাসেটটির ইসলামী গানগুলো ছাড়া আর কোনো গান সচেতনভাবে শোনার সুযোগ আমার হয়নি। ক্যাসেট যুগের অবসান হওয়ার পর সোহরাব হোসেনের আর কোনো সিডি আমি আজও খুঁজে পাইনি। আজও খুঁজে ফিরছি সোহরাব হোসেনের গান। হয়তো আমার অগোচরে কোথাও আছে সেসব গানের রেকর্ড।
সোহরাব হোসেনের কণ্ঠে নজরুলের ইসলামী গান শুনে আমি এতটাই অভিভূত হয়ে আছি—আমার মনে হয় তাঁর কণ্ঠে বুঝি প্রেম দরিয়ার পানি উথলে ওঠে, আর আমার অন্তর তাতে পরিপূর্ণভাবে প্লাবিত হয়ে যায়। ‘ও রে কে বলে আরবে নদী নাই/যথা রহমতের ঢল বহে অবিরল/দেখি প্রেম দরিয়ার পানি যে দিকে চাই’, ‘আমি যদি আরব হতাম মদীনারই পথ’, ‘এই সুন্দর ফুল সুন্দর ফল’, ‘খোদা, এই গরীবের শোনো, শোনো মোনাজাত’—এসব গানে সোহরাব হোসেনের গায়কী আমাকে এতটাই অভিভূত করে যে, আমি ভুলতে পারি না।
আমার সংগৃহীত ওই ক্যাসেটটি মনে হয় এখনও হারিয়ে যায়নি, তবে সিডির যুগে ওই ক্যাসেটটি শোনার কোনো সুযোগ আর ঘটছে না। সিডিও খুঁজে পাচ্ছি না, ইউটিউবেও খুঁজে পাচ্ছি না সোহরাব হোসেনের গান। সেই পরিমাণ সময় নিয়ে খোঁজারও সুযোগ পাচ্ছি না। তবুও খুঁজছি আমি সোহরাব হোসেনের কণ্ঠ, খুঁজতে থাকব আরও কতদিন জানি না।
সোহরাব হোসেনকে দেখেছিলাম, তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলাম একদিন তাঁরই বাসায়। আরেকদিন কথা বলেছিলাম টেলিফোনে। তাঁর বাসায় গিয়েছিলাম দৈনিক আমার দেশ-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিতে। আমাদের প্রিয় সম্পাদক মাহমুদুর রহমান দাওয়াত পৌঁছে দিতে বলেছিলেন। অনেক খুঁজে খুঁজে কণ্ঠশিল্পী, নজরুল সঙ্গীত শিল্পী এমএ মান্নানের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম সোহরাব হোসেনের বাসায়। তিনি যখন আমাকে সাক্ষাত্ দিতে এলেন, আমি অভিভূত হয়ে তাঁর পায়ের কাছেই বসে পড়েছিলাম। তিনি আমাকে তাঁর পাশে সোফায় বসার আহ্বান করেন। সেদিন তাঁর প্রতি, তাঁর কণ্ঠের প্রতি আমার অভিভূত অভিব্যক্তি প্রকাশ করে দাওয়াতপত্রটি তাঁর হাতে তুলে দিয়ে দোয়া চেয়ে বিদায় নিয়েছিলাম। আরেকদিন তাঁকে ফোন করেছিলাম নজরুল ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রকাশিত শুদ্ধ সুর ও বাণীতে নজরুলের দশটি সিডির প্যাকেজ সম্পর্কে মন্তব্য নেয়ার জন্য। তিনি আমাকে বললেন, বিষয়টি তিনি জানেন, কিন্তু তাঁকে কোনো অ্যালবাম পৌঁছানো হয়নি। ফলে তিনি গানগুলো শোনার সুযোগ পাননি। অতএব, মন্তব্য কীভাবে করবেন? সেদিন অবাক হয়েছিলাম এতটাই যে, এই বিস্ময়বোধ এখনও কাটছে না। তিনি কানে কম শুনতেন ঠিকই, কিন্তু একটু জোরে বললে সবই বুঝতে পারতেন। গান শুনে বোঝার ক্ষমতা তাঁর তখনও ছিল। তাছাড়া নজরুল ইনস্টিটিউটের ওই প্রজেক্টের প্রধান ব্যক্তি তিনি। অথচ সিডিগুলোই তাঁর কাছে পৌঁছেনি। হায় বাংলাদেশ!
আইনের ফাঁকফোকর-০৩
যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি
(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।
ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন
সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।
সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা
সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন