somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আহমদ হাসান
জন্ম: ১০ ই শ্রাবন (২৭ জুলাই), ১৯৮৩ । B. A. & M. A ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কাজের মধ্যে একটাই ভাল পারি- পড়া। যেকোনো সূখপাঠ্য বই। জীবন দর্শন: সত্য সন্ধান। I AM A TRUTH-SEEKER. খুঁজতেছি। পেলে জানাবো।

আকাইম্মা পোষ্ট

০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঘটনা গতকালের।
বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) যাচ্ছি। চারটা বই নিয়ে বের হয়েছি। আবুল হাসানের শ্রেষ্ঠ কবিতা/জীবনানন্দের শ্রেষ্ট কবিতা/চিঠিপত্রে চিত্তরন্জন সাহা/আর আবুল মনসুরের আয়না। উদ্দেশ্য যাকে যাকে পছন্দ হয় উপহার দেব। এভাবে আমি মাঝে মধ্যে করি।
প্রথমে ঢুকলাম আমার ডিপার্টমেন্টের এক মেডামের রুমে।

ম্যাডাম ভাল আছেন?
হা কি খবর?
ম্যাডাম আমি আপনার এক মিনিট সময় নষ্ট করব।
আমি ব্যস্ত, কি বিষয়?
না বিষয় কিছু না আপনার জন্য একটা বই এনেছিলাম।
কি বই?
কবিতার বই ম্যাডাম।
পড়ে আস, আমি এখন ব্যাস্ত আছি।
মেজাজ খারাপ করে একরাশ ঘৃনা নিয়ে বের হযে এলাম।

এবার অরেকজন অধ্যাপকের রুমে।
স্লামালিকুম স্যার , ভাল আছেন।
হা কি বিষয়?
স্যার দেখা করতে এলাম আপনি কেমন আছেন।
তোমার পড়ালেখার কি খবর?
ভাল স্যার।
স্যার আপনি কবিতা পড়েন? আপনার জন্যে একটা কবিতার বই এনেছিলাম, গিফ্ট।
কার কবিতা ?
আবুল হাসানের।
(নাসিকা কুন্চিত করে) কে এনি? নাম শুনিনিতো ?
আমি ১০ তলা থেকে পড়লাম। আবুল হাসানরে চেনে না। রাজা যায় রাজা আসে আবুল হাসানের লেখা বই কে না জানে।
বললাম স্যার উনি বড় মাপের কবি। অল্পদিন বেচে ছিলেন । মাত্র ২৮ বছর । জন্মেছিলেন বরিশালে।
এবারও কোনো আগ্রহ না দেখে বললাম - তাহলে আপনাকে আমি আবুল মনসুর আহমদের ’আয়নাটা’ দেই স্যার?
(সন্দেহের চোখে) কেন তুমি আমাকে বই দিবে কেন?
এ প্রশ্নের আমি কি উত্তর দেব। আমি বিব্রত। বললাম স্যার কোনো কারণ নেই । এমনি । মাঝে মধ্রে আমি কাউকে না কাউকে বই দেই , আমার ভাল লাগে দিতে।
দেখি কি বই?
দিলাম।
আগ্রহ বাড়ানোর জন্যে বললাম - স্যার বইটা খুবিই ভাল। আবুল মনসুরের মাষ্টারপিস দুইটা- একটা এই আয়না আর একটা ফুড কনফারেন্স। এটার ভুমিকা লিখেছেন আমাদের কাজী নজরুল।
তাই নাকি?
জি স্যার। (কিছুটা আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি) প্রশ্ন ছুড়লেন;
ওনার আর একটা বই আছে। কি বলতে পারবা ?
মনে মনে ভাবলাম মাত্র একটা! বলে কি এই লোক। যাই হোক উনি ঐ একটা বইই হয়তো তার চিনে এবং সেটা কোনটা হতে পারে আন্দাজ করর‌্যলাম। বললাম স্যার রাজনীতির পন্চাশ বছরের কথা বলছেন?
আমার মুখের দিকে তাকালেন যেন আশা করেননি আমি এটা বলতে পারব।
তুমি কি সারাদিন বইই পড়?
জিনা স্যার । অন্য কাজও করি। ক্লাস করি , পরীক্ষা দেই।
রেজাল্ট কি?
বললাম।
অনেকে তো আরো ভাল রেজার্ট করেছে।
মানলাম । বললাম স্যার আমি ওদের ব্যাচের না এটা একটা সমস্যা রেজাল্টের ক্ষেত্রে।
যা হোক আবশেষে বই নিলেন । ধন্যবাদও বললেন। আর কিছু দামি উপদেশ। যা এই মাষ্টার গোত্রের লোকজন দিয়ে থাকেন বরাবর।- শুধু বই পড়লে চলবে না্ রেজাল্টও ভাল করতে হবে। ইত্যাদি। আমার ধারনা মাস্টার্সের্ রেজাল্ট নিয়ে দেখা করতে এলেও যাবার সময় বলবেন ঠিকমতো পড়ালেখা কর , বই পড়লেই হবে না রেজাল্টও ভাল করতে হবে। মনে মনে গালি দিলাম - কূপমন্ডুক।

“একটা সাদা কাগজ। তাকে ছুড়ে মারলে সেটা গদ্য। আর দলা পাকিয়ে মারলে তখন সেটা পদ্য। এই দামি কথাটা শিখেছি আমার এ্ক টিচারের কাছ থেকে তিনি হরষিত বালা। তাকে আমার শ্রদ্ধা”
এই কথাগুলি লিখে ‘চিঠিপত্রে চিত্তরন্জন সাহা” বইটা দেয়ার জন্যে সচিবালয়ের গেটে দাড়িয়ে আছি । স্যারের সাথে ফোনে কথা হয়েছে । তিনি আসছেন ্৫ মিনিটের মধ্যে।

স্যারকে এই বইটা দেয়ার পিছনে একটা কারণ আছে। স্যার কবি । এই বইটা হচ্ছে দেশের যাবতীয় কবি সাহিত্যিকদের প্রকাশক চিত্তরন্জন সাহার কাছে লেখা চিঠির সংগ্রহ। পড়তে গিয়ে দেখি স্যারেরও চিঠি আছে দুেইটা ১৯৮৮ সালে লেখা। আথচ ফোন করাতে তিনি জানালেন - না আমি তো জানিনা আমার চিঠি ছাপা হয়েছে এভাবে !!
সুতরাং অনেক খুজে তার জন্যে একটা কপি জোগাড় করলাম ্ একেবারে দা লাস্ট কপি অব বাংলাবাজার। জানলাম এটা এখন আউট অব প্রিন্ট।
স্যারকে দিলাম বই। তিনি টাকা দিতে চান বইয়ের ।
কি মুশকিল, আমি তো আপনাকে গিপ্ট দিয়েছি স্যার।
না তা হবেনা তুমি ছাত্র, যখন চাকরী করবা তখন দিয়ো।
কি আর করা। চলে এলাম গিফ্টকৃত বইয়ের টাকা নিয়ে।

হাটতে হাটতে ভাবছি- হরষিত বালা স্যারের প্রতি আমার একধরণের অনুরাগ আছে। তিনি সেটা জানেন না বলেই পিতৃসুলভভাবে টাকাটা দিলেন। যাক এটা ভুলে যাওয়া যেতে পারে।

কিন্তু ম্যাডাম কি করলেন? একটা ছেলে একটা উপহার দিতে এসেছে ভালবেসে। তার ভালবাসা নেয়ার সময় নেই। সে কিন্তু কিছুই করছিলো না। মোবাইল টিপছিলো। কেন এই নিচুতা ? এত ছোট মন নিয়ে কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন আর পড়াচ্ছেন আমার বোধগম্য নয়। এই আচরণ আকস্মিক নয়। এর আগেও তিনি ৩/৪ বার এভাবে বলেছেন- আমার সময় নেই পরে আস।

আর ঐ স্যারেরই বা কি বিষয়? তিনি কবি আবুল হাসানকে চিনেনা ! আহারে আমার কপাল !! কবি আবুল হাসানকে চিনেননা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজীর টিচার, এ দূ:খ আমি কই রাখব ! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবীগুরু তুমি কই ? আমায় একটু শান্তনা দাও। শুধু একবার মাথায় হাত বুলিয়ে বল- মন খারাপ করিসনারে, তোর জন্যে আমি সুন্দর একটা গান লিখেছি : একলা চলার গান... একলা চলো একলা চলো একলা চলোরে......
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৫২
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×