photo-courtesy: Rakhal Raha
আমার ছোটবোন ক্লাস ফাইভে। পিএসসি পরীক্ষা দিল কিছুদিন আগে। আমি ওর থেকে অনেক দূরে থাকি। ভয় পাওয়া উচিত ছিল যখন ও আমাকে ফোনে বলল, "ভাইয়া, প্রশ্ন সব ফাঁস হয়ে যাচ্ছে।" আমি ভয় পাইনি, আমার মা একজন শিক্ষিকা, বাবা একজন আদর্শ বাবা। আমি জানতাম আমি না থাকলেও তাঁদের হাত হয়ে এ প্রশ্ন কখনও আমার ছোট বোনের হাতে যাবেনা।
তবুও ভয় হয়। প্রশ্ন হাতে পেয়ে আমার বোন পরীক্ষা দেবেনা সত্য; কিন্তু রেজাল্ট এর পর স্কুল এ গিয়ে যখন দেখবে প্রশ্ন পাওয়া পরীক্ষার্থী'রা ওর থেকে বেশি নম্বর হাতিয়ে বসে আছে, যখন ওরা বুক ফুলিয়ে হেঁটে গিয়ে রজনীগন্ধা স্টিক আর জিপিএ ফাইভ মারা ঐ সার্টিফিকেট নিয়ে আসবে...আমি জানিনা ওর শিশু-মনে নীতিবোধ এর পারিবারিক শিক্ষাগুলা আসলেই কতদূর টিকে থাকবে তখন। মানুষের শৈশব-ই প্রকৃত মানুষটাকে তৈরী করে দেয়। নীতিবোধ, মূল্যবোধ থেকে শুরু করে বিবেকের যত ডাইমেনশন সব শৈশবেই সৃষ্টি হয়ে গিয়ে জীবনব্যাপী স্থায়ী হয়। পরে শুধু একটু আধটু ভোল পালটিয়ে চলা আরকি।
মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে অভাবের টানাহেঁচড়ায় বেড়ে উঠার সময়গুলাতে এমনিতেই শিশুকে বিবেক-বোধের দীক্ষা দেওয়া অনেক কঠিন। বেশির ভাগ শিশুই যেখানে ঘুমাতে যায় কোন একটা অভাব নিয়ে, একটা চকলেট কিংবা কোন একটা খেলনা'র জন্যে দু'চোখ কান্না নিয়ে- তার উপর এধরনের বিষয়গুলাও যদি ঘটা শুরু করে তাহলে আমি জানিনা জাতির রুগ্ন-ভগ্ন চেহারাটা শেষপর্যন্ত আসলে কোন মরণ বেছে নিবে। অনেক ভাবেই মরা যায়। প্রতি পদেই আমরা মরছি- ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্রের বেঘোর ফাঁস প্রতিনিয়ত মেরে চলেছে আমাদের। তাই বলে সদ্য-ফোটা ফুলগুলোকে নিয়ে মরতে হবে? এরচে বরং বাদ দিয়ে দিই না এই বালের পিএসসি- যে পরীক্ষায় পড়ে আসলে অভিভাবকগুলা আর শিশুগুলা হয় অযথা ভুক্তভোগী।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:৫৮