somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিফেন্স মেকানিজম ২ (মহান গীতিকার গোবিন্দ হালদার স্মরণে)

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডিফেন্স মেকানিজম ১ যারা পড়েননি তাদের সুবিধার্থে লিঙ্ক সংযুক্ত করে দিলাম। ডিফেন্স মেকানিজম (উৎসর্গ- মহান স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন)

***************************************************
বিসিএস এর মৌখিক পরীক্ষার ঐ তেতো রস এখনো কাটেনি। হারুন স্যার দরখাস্ত দিয়ে সবকিছু থেকে অব্যাহতি নিয়ে এসেছেন। ভেবেছিলেন পুরো অবসরে চলে গেলেই তো হয়। বয়স তো আর কম হয়নি। এতকালের যে জীবন সাধন, যে পথ চলা সেখানে কোথাও এক ছটাক জ্ঞান পেলে তাও কুড়িয়ে ঝুলিতে পুরেছেন। বয়স যত বাড়ছে, মস্তিষ্ক নামের ঐ ঝুলিটাও তত জীর্ণ হচ্ছে। সুতো ছিঁড়ে এদিক ওদিক গলে যাচ্ছে কত কিছুই। এই যেমন সেদিন হঠাৎ করে কৈশোরের সবথেকে প্রিয় 'চরমপত্র' লেখকের নামটা মনে করতে পারলেন না। অনেক বার চেষ্টা করেও ক্ষান্ত দেওয়া লাগল মস্তিষ্কের চরম বিরোধিতায়। তাঁর আমোদ-প্রমোদ বলতে বই আর সঙ্গীত এ দুটো বিষয়ের বাইরে কিছুই ছিলনা কখনও। মোবাইল ফোনগুলো যখন থেকে বিচিত্র হয়ে যাওয়া শুরু করল। কথা বলা বাদ দিয়ে ভার্চুয়াল কুকুর,বিড়াল পালার মত ন্যাকা বিষয় চলে আসল তখনকার তরুণ সমাজের ঐ গ্যাজেটপ্রীতিও আকৃষ্ট করেনি তাঁকে খুব। যত বই পড়েছেন জীবনে সেগুলো সংগ্রহে থাকলে বোধহয় বাড়ির দেয়ালটুকুও অপ্রয়োজনীয় হয়ে যেত আজ। তবুও কত কিছুই পড়া হয়নি। পৃথিবীতে এত অসামান্য লেখকেরা এত কিছু লিখে গেছেন যার একাংশ পড়ে ফেলতে চাইলেও এ জীবনটা নিতান্ত ক্ষুদ্র। অন্তত দুই-চারশো বছর বেঁচে না থাকলে বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন '-পাধ্যায়' , ঠাকুর,বসু, মজুমদার, দত্ত, হুমায়ূন, ইলিয়াস, মুজতবা আলী আর গুটিকতক লেখক ছাড়িয়ে বিদেশী ইলিয়ট, পো, মার্কেজ পর্যন্ত যেতে যেতেই মহাকালের মহাপটল তুলে নভোঃ -পাতালের একটাতে ফেরত যেতে হয়।

কলেজপড়ুয়া সময়টাতেই তিনি প্রথম পরিচিত হন পশ্চিমা সঙ্গীত-এর সাথে, একটা দুটো করে কত শিল্পীর গান শুনেছেন তার হিসাব রাখা দুঃসাধ্য। মোজার্ট-বিটোফেন ছাড়িয়ে বাখ-শুমান-গ্লুক ও শুনেছেন চোখ বুজে। সিমফোনি’র দেয়াল ঘেঁষে কানে তুলেছেন অজস্র ওয়াল্টজ, রিকুয়েম, সোনাটা, ওরেটোরিও। বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় রবীন্দ্রনাথের জায়গা কতবার কেড়ে নিয়েছে চাইকোভস্কি, উদাস বাতাসে হেমন্ত’র জায়গায় কতবার যে এসেছে বব ডিলান তার ইয়ত্তা নেই। আর রেহনুমা ছিল পুরো বিপরীত। বাংলা গান ছাড়া অন্য গান শুনা তো দূরে থাক সহ্যই হতনা ওর। তাদের বিয়ের পর প্রথম বৃষ্টি’র দিনটা মনে পড়ে যায়। বারান্দায় দু’জন হাত ধরে দাঁড়িয়ে, বৃষ্টির ফোঁটা দুজনের গায়ে এসে পড়ছে। দুজনই ভিজে কাক। রেহনুমার কপাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জলধারা। হঠাৎ দৌড়ে ভিতরে চলে গেল ও । সিডি প্লেয়ারে জোরে ছেড়ে দিল “আজি ঝরঝর মুখর বাদল দিনে”। আবার এসে তার হাত ধরে দাঁড়াল ও। পুরো পৃথিবীটা এক বিচিত্র মায়ার আচ্ছাদনে ঢেকে গিয়েছিল সেদিন। রেহনুমার হাত কাঁপছিল শিরশির করে। তার ইচ্ছা হচ্ছিল ওকে ডেকে ভিতরে নিয়ে যেতে, এভাবে ভিজলে যদি শরীর খারাপ করে! তবু মুখ ফুটে বলতে পারছিলেন না। জীবনের সব থেকে সুন্দর মুহূর্তগুলোকে এভাবে সর্দি-কাশির দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যাওয়া বড্ড অনুচিত। ঐ কাঁপা হাতের মধ্য দিয়ে যেই নিবিড় ভালবাসা ছড়িয়ে পড়ছিল পুরো শরীরে তা কখনো অনুভূত হয়নি আগে।বৃষ্টি যেন চামড়া চিরে ভিতরে গিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে পুরো সত্ত্বা। শিরা-উপশিরায় রক্তের বদলে যেন দৌড়ে চলেছে মিষ্টি কাঁচা জলধারা। স্নিগ্ধ! ভয়াবহ স্নিগ্ধতায়। ভিতরে গান চলছে,
“একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ, প্রাণেশ হে,
আনন্দ বসন্ত সমাগমে ॥
বিকশিত প্রীতিকুসুম হে
পুলকিত চিতকাননে ॥
জীবনলতা অবনতা তব চরণে।
হরষগীত উচ্ছ্বসিত হে
কিরণমগন গগনে।”


রেহনুমা এভাবে একা পরলোকে পাড়ি দিয়ে দিবে তিনি কখনও ভাবেননি। ঐ তিরোধানটুকু হঠাৎ ভয়ানক একাকী করে দেয় হারুন স্যারকে। এর পর থেকে আর সেভাবে গান শুনা হয়নি। ইচ্ছাকৃত, কিছুটা অনিচ্ছাকৃতভাবেই ডুবে থেকেছেন কাজে। ভীষণ কাজের চাপে যেসব মুহূর্তে নিজেকেও হারিয়ে ফেলতেন, সে মুহূর্তগুলোতে রেহনুমাও লুকিয়ে যেত কোথায় জানি। কিন্তু, এখন আবার একাত্ব হয়ে গেছেন সব স্মৃতির সাথে। হারিয়ে যাওয়া শত স্মৃতি এখন নিত্য জলজ্যান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায় তাঁর আশেপাশে। তাই ঠিক করেছেন আর এগুলোকে এড়ানোর চেষ্টা করবেন না তিনি। এগুলা সাথে নিয়েই কাটিয়ে দিবেন শেষ কটা দিন।
রেহনুমার পছন্দের গানগুলো শুনা শুরু করে দিবেন ঠিক করলেন তিনি। কিন্তু ওর সবথেকে প্রিয় গানগুলো কী? রবীন্দ্র, নজরুল নাকি আধুনিক গান? বের করাটা বড় কঠিন। এত বেশি শুনত ও বাংলা গান, আর গুনগুন করে গাইত শুধু। হঠাৎ মাথায় আসল তার- না, না, ওর সবথেকে প্রিয় গান ছিল দেশের গান। প্রায়ই কোন না কোন গান বিড়বিড় করে গেয়েই বলে উঠত, “আচ্ছা দেখছ, পৃথিবীতে কত সুন্দর সুন্দর গান, অথচ কোনটাই আমাদের দেশের গানগুলোর মত না! কেমন গা শিরশির করে উঠে শুনলে, তাই না?” তিনি অন্য কোন চিন্তায় নিমগ্ন থাকলেও “হ্যাঁ, হ্যাঁ’ ঠিক” বলে সায় জানাতেন। মাঝে মাঝে কোন কারণ ছাড়াই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ত অবুঝ মেয়েটার। বলে ঊঠত, “আচ্ছা, গোবিন্দ হালদার মানুষটা এরকম কীভাবে লিখে?”
গোবিন্দ হালদার নামটার সাথে তিনি পূর্বপরিচিত হলেও রেহনুমা’র মত অতটা ভালবাসতে পারেননি। হয়ত তার কারণও রেহনুমার অগাধ ভালবাসাটুকু যা এক অকারণ শিশুতোষ হিংসার দেওয়াল তুলে দেয় হারুন স্যার আর গোবিন্দ হালদারের মধ্যে। কী আশ্চর্য্য, এখন ভাবলেও হাসি পায়।

একটা সময়ে সবাই ক্যাসেট-সিডি কিনে গান শুনত। তার ঠিক পরেই ডাউনলোড এর যুগ ছিল একটা- বেশ কিছুদিন সবাই শুধু ডাউনলোড করেছে। আস্তে আস্তে সেটাও ফুরিয়েছে। এখন কেউ কিছু ডাউনলোড করে আর নিজের হার্ড ড্রাইভ ভারী করেনা, সবই অনলাইন হয়ে গেছে, স্ট্রিমিং আর স্ট্রিমিং। হার্ড ড্রাইভে সর্বোচ্চ লিংকটা সেভ করা থাকে। হারুন স্যারের এতকিছু ভাল লাগেনা। টেক-বিরাগী মানুষ না হলেও খুব একটা অনুরাগীও নন তিনি। অনলাইনের প্রকোপে এতদিনে হয়ত সিডি’র দোকানগুলাও বিলুপ্ত হয়ে যেত। তবুও কেন জানি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। কয়েকটা দোকান থেকে গেছে বইয়ের দোকানগুলোর মত। ঠিক করলেন ওখান থেকে গোবিন্দ হালদারের দেশের গানগুলো নিয়ে আসবেন।

- স্লামাইলাকুম স্যার, কী লাগবে?
- না মানে, দেশের গান লাগবে কিছু।
- নাতি-নাতনীর পার্ফরম্যান্স আছে নাকি একুশে ফেব্রুয়ারিতে? হাসিমুখে বলল সেলস-এ বসে থাকা ছেলেটা।
- না, আমার স্ত্রীর খুব পছন্দ। ইতস্তত করে বললেন হারুন স্যার।
মিটিমিটি হাসি নিয়ে একটু খোঁচা দিয়ে বলল ছেলেটা,
“ অ্যানিভার্সারি নাকি?”
- আরে না না।
কথা বলতে বলতেই সে এতগুলা সিডি বের করে এনেছে তাক থেকে।
- কোনটা কোনটা লাগবে নিয়ে নেন।
- বাবা, আসলে এভাবে তো নিতে পারবনা, এখানে তো সব গায়ক, গায়িকা বা অ্যালবামের নাম লিখা সিডি। আমি আসলে ওভাবে চিনিনা। আমাকে গোবিন্দ হালদারের লিখা গানের যেগুলো আছে সেগুলো দাও।
ছেলেটা একটু অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কোন হালদার?”
- “গোবিন্দ হালদার।” হারুন স্যার বললেন।
- অ আচ্ছা! না, উনার গাওয়া সিডিগুলা নাই। মাথা নাড়তে নাড়তে বলল ছেলেটা।
- না, না, উনি গান গাইতেন না- গান লিখতেন। উনার লিখা গানের সিডি খুঁজছিলাম আমি।
- দ্যাখেন, আমি ক্যামনে জানি উনি কোন গান লিখসেন? সিডির উপরে গীতিকারের নাম লিখা থাকেনা স্যার। স্যরি, অন্যখানে দেখেন।
- দেখ না, একটু খুঁজলেই পাবা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার হত উনার গান, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বিখ্যাত গানগুলার অনেকগুলাই তার লিখা।
- নাই নাই! আমার অইসব কালেকশন কম। অন্য কোন গান লাগলে বলেন।
হারুন স্যার ওই দোকান থেকে বেরিয়ে আসলেন। ওই অপদার্থটার ওখানে সময় নষ্ট করার কোন মানেই হয়না।

কাছেই আরেকটা দোকান আছে। কোন মেয়ের কণ্ঠে লালন সাঁইয়ের ‘পারে লয়ে যাও আমায়’ বেজে চলেছে ওটাতে। হারুন স্যারের তাদের সময়ের এক শিল্পীর কথা মনে পড়ে গেল। মহিলা গলার ভারিক্কি আর নিচুস্বরের খেলায় অদ্ভুত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতেন সাঁইয়ের গান। একটা ব্যান্ডই ছিল, নামটা মনে পড়ছে না কিছুতেই। যাই হোক এ দোকানের সেলস-এ বসে থাকা ছেলেটাকে দেখে কেন জানি মনে হচ্ছে ও গোবিন্দ হালদার-কে চিনবে। তাছাড়াও চেনা তো উচিত। ছেলেটা সুন্দরভাবে সম্ভাষণ জানাল হারুন স্যারকে।
না, সেও চিনলনা গোবিন্দ হালদারকে। তার গান যাদের গাওয়া সে গায়কদের নাম বললে অবশ্য খুঁজে দিতে পারবে বলল সে। তার নাকি দেশাত্ববোধক গানের কালেকশন ব্যাপক। কিন্তু, ওই নাম কীভাবে বলবেন তিনি? তাঁর মাথা যে আজকাল বড্ড বিরোধিতা করে, মনে থাকেনা কিছু। তবে ভাগ্য ভালই মনে হল, দোকানে কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে ঢুকল কী জানি কিনতে। সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি ঝুলানো গলায়। হারুন স্যার বুঝলেন এদেরকে দিয়েই কাজ হবে। তিনি গিয়ে কথা বললেন তাদের সাথে।
তারা গোবিন্দ হালদার নামটা জীবনে নাকি শুনেনি। দেশাত্ববোধক গান লিখত শুনে আবার খেকখেক করে হাসল কয়েকজন। যতটা সহজভাবে তারা বলে ফেলল, “আঙ্কেল দেখেন, ওয়ি আর মোর ইনটু রক সং” তার ভিতরের লুকানো অবজ্ঞাটাও তত সহজে বেরিয়ে আসল।


মেজাজটা বড্ড চড়ে গেছে,
“কেমন আমরা! কেমন! ছি!ছি!” বিড়বিড় করতে লাগলেন হারুন স্যার। ঐ দোকান থেকে বের হয়ে এসেছেন তিনি। এখন অন্য কোথা থেকে সিডি কিনবেন সে উপায়ও নেই। বাকি দোকানগুলো বহুদূর। মেজাজটা খারাপ হচ্ছে। মাথা ঠান্ডা করা উচিত। ভাবতে ভাবতে বাসার কাছে চলে এসেছিলেন তিনি। সেলুন দেখে হুট করে চুল কাটাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। চুল বড় থাকলে মাথায় বাতাস কম লাগে, সহজে ঠান্ডা হয় না- তার ছাত্রজীবনে বহুবার এই কথা শুনেছেন মুরুব্বীদের কাছ থেকে। তবে, কখনও মানেননি তিনি। কিন্তু আজ হঠাৎ মনে হল, দেখা যাক নাহয় একটা চেষ্টা করে। নাপিতগুলাও তার পরিচিত। দোকানের মালিক বিষ্ণু আজকাল খুব একটা চুল কাটেনা। দেখতে দেখতে ওর চুলগুলাও পেকে গেছে। হারুন স্যারের মনে আছে বছর বিশেক আগে এই সেলুনটাতেই প্রথম দেখেছিলেন বিষ্ণুকে, চটপটে এক তরুণ। আজও চটপটে, তবে তার থেকে বেশি চটপটে তার ছেলে শম্ভু। হারুন স্যার জিজ্ঞেস করেছিলেন একবার, “কীরে বিষ্ণু! ছেলেটারে স্কুল-কলেজে পাঠাবানা নাকি? সারাদিন দোকানেই তো দেখি।”
খুব সহজভাবে উত্তর দিয়েছিল ও, “বড় দা, আমার বাপ, তার বাপ সবাই চুল কাইটাই সংসার চালাইত। এইটা আমগো পেশা না, এইটা আমগো বংশপরিচয়। পোলা ও চুলই কাটব বড় দা।”

শম্ভুও দেখা গেল খুব সহজেই মেনে নিয়েছে এই পেশা, কী আর বলার!
দোকানে ঢুকে বিষ্ণুকে দেখলেন না হারুন স্যার- শম্ভু আছে।
- কীরে তোর বাপ কই?
- বাড়ি গ্যাছে কাকা। চুল কাটবেন? আজকে আমিই কাইট্টা দিই নাকি?
“কাট” বলে চেয়ারে বসলেন তিনি। হঠাৎ কি মনে করে বলে উঠলেন,
“আচ্ছা শম্ভু, দেশের গান আছে কোন? থাকলে ছাড় তো শুনতে শুনতে চুল কাটি”।
তড়িৎ উত্তর দিল শম্ভু, “দেশের গান থাকবনা, এইটা কিছু কইলেন কাকা!” বলতে বলতেই গিয়ে হুটহাট গান ছেড়ে দিল ও। অনেক পুরাতন রেকর্ড, শুনেই বুঝা যাচ্ছে। ফ্যাসফ্যাস শব্দ নিয়ে চিরপরিচিত একটা গান শুরু হল, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’।
হারুন স্যার জিজ্ঞেস করলেন, “এটা কার গাওয়া রে?”
- শাহনাজ রহমতুল্লা, কাকা। আগুন আছিলনা? গায়ক? ওর বাপের লিখা গান, কি নাম জানি ছিল...একটা ফলের নাম...ইস মনে পড়তাছেনা। হ হ আতা!আতা! মনে পড়ছে খান আতা! হে হে হে!
হারুন স্যার চট করে জিজ্ঞেস করে বসলেন, “তুই কি গোবিন্দ হালদার’কে চিনিস?”
- আরে কন কি, চিনুম না ক্যা? হের গান ছাড়া দেশ স্বাধীনই তো হইবার পারেনা। একাত্তরে নাকি ক্যাম্পে বইয়া মুক্তিযোদ্ধারা হের গান হুনত আর বাইর হইয়া পাইক্কাগো দাবড়ানি দিত। হা!হা!হা! হুনবেন? হেরগুলা ছাড়ুম?
হারুন স্যারের মাথার ভিতর কেমন জানি করে উঠল হঠাৎ। এটা সুখ, নাকি শান্তি, নাকি সন্তুষ্টি তিনি জানেন না। মনে হছে এতক্ষণ ধরে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে হুইসেল বাজাতে থাকা একটা ট্রেন আস্তে আস্তে দূরে চলে যাচ্ছে, দুরত্বের সাথে তাল মিলিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে হুইসেলের ভয়ানক আর্তনাদ। হাল্কা হচ্ছে মাথা, হাল্কা হচ্ছে। শম্ভু চুল কেটেই চলেছে, ঘুম ঘুম আসছে হারুন স্যারের। ঘুমের ঘোরে দেখতে পেলেন,
তিনি স্মৃতি-সৌধের পাশে একটা চেয়ারে বসা। শম্ভু হাসিমুখে কোট টাই পড়ে চুল কাটছে কচাৎ কচাৎ, গলায় তার স্বনামধন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি। রেহনুমা বসে আছে স্মৃতিসৌধের সিঁড়িতে। গুনগুন করে গাইছে, “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা”...স্বপ্নের ভিতরেই কেন জানি কান্না পাচ্ছে হারুন স্যারের।
শম্ভু টিস্যু বের করতে করতে আনমনে বিড়বিড় করতে লাগল... “হায়রে! বুড়া হওনের কত সমস্যা। ঘুমের মধ্যে কেমনে পানি পড়তাসে চোখ দিয়া, ইসস....”

৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×