তো আবার সেই গোবর্ধন।
এইতো সেদিনকার কথা।গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে এক
জরুরী কার্য উদ্ধারের হেতু আমি ঢাকা যাইবার
সিদ্ধান্তে উপনীত হইলাম।
তো যথাসময়ে আমি লন্চে উঠিলাম।লন্চ ছাড়িবার
পূর্বমুহুর্তে যেই না ভেপু
বাজাইলো অমনি দেখিতে পাইলাম আলুর বস্তা স্বরুপ পেট
বিশিষ্ট এক লোক লন্চের দিকেই দৌড়াইয়া আসিতেছে।
একে তো বয়স হইছে,তার উপর আবার রাতের বেলা,তাই
ঠিক চিনিতে পারিলাম না,কিন্তু আলুর বস্তাটা থুক্কু লোকটা যখন
খুবই সন্নিকটে পৌছাইলো,তখন আর আমার
বুঝিতে বাকি রইলো না যে ইহা আর অন্য কেহ
নহে,আমারই ডায়পার কালের দোস্ত গোবর্ধন।
আমি তাহাকে কোনোরুপে টানিয়া খিচিয়া লন্চে উঠাইলাম।
অতপর জানিতে চাহিলাম,সে ঢাকা যাইতেছে কিসের হেতু
সে আমাকে উদ্বেগবিহীন স্বরে জবাব
দিলো,যে সে আর বরিশালে থাকিতে চায় না।
এইখানে নাকি তাহার মন টিকিতেছে না।ঢাকার খোলা হাওয়া দরকার
তার।আমি আর কথা না বাড়াইয়া,বলিলাম চল দোস্ত একসাথে যাই
তাহইলে।সে তিন পায়ে সম্মতি জানাইলো আমাকে।
গ্রীষ্মকালীন ছুটির হেতু,লন্চে প্রচুর ভীড়,তাহার সহিত
কেবিন ও নেই।তাই বাধ্য হইয়া আমাদিগকে ডেকেই
একখানা রুমাল বিছাইয়া জায়গা দখল করিবার আপ্রাণ
চেষ্টা চালাইতে হইলো।
মিনিট উনচল্লিশেক পর আমি লক্ষ করিতে পারিলাম,৪/৫ গজ
দুরে কাহার দিকে চাহিয়া যেনো গোবর্ধন মিটিরমিটির
পিটিরপিটির করিয়া হাসিতেছে।আমাকে তাহাকে হেতু
জিজ্ঞেস করিলে সে আমাকে হাইকোর্ট
দেখাইয়া দমাইয়া দিলো।কিন্তু কাচকি মাছ না খাইলেও
আমি যে কানা না,তাহা বোধ হয় সে জানিতো না।
আমি ঐদিকে চাহিয়া দেখিলাম একজন অল্প
বয়সী নারী তল্পিতল্পা সহিত বসিয়া আছে।
দেখিয়া মনে হইলো,বাড়ি থেকে পালাইছে।রহস্যের
উদঘাটনে ব্যাঘাত ঘটিলো গোবর্ধনের ডাকে।সে হঠাতই
বলিয়া উঠিলো,দোস্ত এইখানে এমনিতেই
জায়গা কম,তোর কষ্ট হবে।তার থেকে তুই
এইখানে একা থাক,আমি নাহয় ঐদিকে যাইয়া বসি।আমার
মতামতের উপেক্ষা না করিয়া সে তৎক্ষনাত ঐখান
থেকে প্রস্থান করিলো,তারপর লক্ষ করিলাম,সে যাইয়া ঐ
রহস্যময়ী নারীর পাশে বসিয়া পড়িলো
তখন কয়টা বাজে,ঠিক খেয়াল করিতে পারিতেছি না।ঘুম
ভাঙিলো এক চিৎকারের হেতু।চোখ বন্ধ অবস্থায়
ভাবিতে লাগিলাম,ওঠার সময় তো আকাশ পরিষ্কারই
দেখলাম,তাইলে আবার সমস্যাটা হইলো কী।
চোখ খুইলাই গোবর্ধনের মুখখানা দেখিয়া একরকম
হচকচাইয়া উঠিলাম।তাহাকে জিজ্ঞেস
করিলাম,কী হইছে দোস্ত।
সে আমারে জবাব দিলো,দোস্ত হইছে।
আমি বলিলাম,আলহামদুলিললাহ।তা ছেলে না মেয়ে।
সে আমার কথার মানে বুঝিতে না পারিয়া উত্তেজিত
কন্ঠে বলিলো।
আরে দোস্ত,সর্বনাশ হইছে।
সর্বনাশের কথা শুনিয়া উঠিয়া বসিয়া তাহার
কাছে পুরো ঘটনা জানিতে চাহিলাম।
সে আরম্ভ করিলো,অনেকটা এইভাবে।
দোস্তরে,ও দোস্ত আমি তো শেষ।আমার
তো সর্বনাশ হইয়া গেলো রে দোস্ত।ঐ
মাইয়া তো আমারে নাড়ে খাইয়া চইলা গেলো।
আমি বলিলাম,মানে?
সে বলিতে লাগিলো,
আমি ঐ মাইয়ার পাশে বসি,গল্প গুজব করি।কেস
পুরা জইমা গেছিলো।তহন ঐ মাইয়া আমারে চানাচুর
খাইতে দিছিলো।ঐ চানাচুর খাইয়া আমি তো শেষ দোস্ত।
সকালে উইঠা দেখি,ঐ মাইয়াঅ নাই,আর আমার ব্যাগ ও নাই।
আমি বলিলাম,ব্যাগ নাই মানে?ব্যাগ নিয়া চইলা গেলো।!
কি কি ছিলো ব্যাগে?
সে কান্দিয়া কান্দিয়া বলিলো,দোস্ত রে ,ব্যাগে আমার
ছয়সত উনসত্তর টাকা ছিলো।লগে অর্ধেক হোসেন
মোল্লার দাঁতের মাজন ও আছিলো।
আমি তাহারে শান্তনা দিবার হেতু,বলিলাম,
দেখো দোস্ত,যা হবার,তা তো হইছেই।এরপর
থেকে একটু সাবধান থাইকো।আর যাত্রাকালে অপরিচিত
লোকের হাতে কিছু খাইও না।
জানোই তো,দূর থেকে জুহি চাওলা,আর
কাছে আইলে পোড়া কয়লা।
এরপর কোথা থেকে যেন সেই রহস্যময়ী নারীর
উদয় হইলো।
আসিয়া বলিলো,কেমন ঘুম দিছিলেন ভাই।এত
ডাকলাম,শুনলেনই না।আমি একটু
বাথরুমে গেছিলাম,তো দেখলাম আপনার
অবস্থা বেগতিক,তাই আপনার ব্যাগ খানা চুরি হবার
ভয়ে,সাথে কইরা নিয়া গেছিলাম।এই নেন আপনার ব্যাগ।
দেখেন সব ঠিক আছে কিনা।
আমি আর সময় ব্যায় না করিয়া,হুট করিয়া বলিয়াই ফেলিলাম।
দেখছোস দোস্ত,কইছিলাম না।
বিশ্বাসে মিলায় বস্তু,তর্কে বহুদুর।তুই মেয়েটারে কি ভুলই
না বুঝছিলি…
মেয়েটা গোবর্ধনের দিকে ঘৃণা স্বরুপ আধখান
ভেঙচি মারিয়া আমার কাছে আসিয়া বসিয়া পড়িলো।তখন আর
আমার কি করার।মনে তো তখন ঢিংকা চিকা শুরু হইয়া গিয়াছিলো।
তাই মনে মনে ভাবিতে লাগিলাম…
এই পথ যদি না শেষ হয়..……