গোবর্ধন,আমি আর হোটেল রেডিসন
তো সেইবার অপরাহ্নের বেলায় পদ্মপুকুর পাড়ে বসিয়া গোবর্ধনের সহিত আড্ডা দিতেছিলাম।তো আড্ডার এক পর্যায়ে গোবু এক অদ্ভুত প্রস্তাব দিয়া বসিলো যে বিনা নিমন্ত্রনে বিয়ের দাওয়াত খাইবে,আর আমাকেও তাহার সহিত যাইতে হইবে।আমি অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় হওয়ায় তাহার প্রস্তাবে অসম্মতি প্রদান করিলাম।কিন্তু দোস্ত আমার নাছোড়্বান্দা,সে যেইটা বলিবে,তাহাতে না করিবার সাধ্য তাহার পিতার ও ছিল বইলা আমার জানা নাই।যাই হোক,রাজি হইল্ছিলাম।তো তারপর সে বলিলো,সে ফাইভ স্টার হোটেলে বিয়ে খাইতে যাইবে।তাহার কথা শুনিয়া আমার তো মুত্রবিসর্জনের উপক্রম হইলো।কারণ চায়ের দোকানে খাইতে গেলেও আমি আগে আমার পকেট চেক করি,যে টাকা নিয়া গেছি কিনা।পরে আবার অপমানিত হইবো কিনা এই ভয়ে।
তো যাই হোক,সে আমাকে আশ্বাস দিয়া বলিলো,আরে বেটা আমি আছি তো।ন টেনশন।
দিনক্ষন ঠিক হইবার পর থেকেই প্রস্তুতি নেয়া শুরু করিলাম,এই বন্ধুর বাসা থেকে প্যান্ট,ঐ বন্ধু বাসা থেকে শার্ট,ওর বাসা থেকে ব্লেজার(আর গভীরে না যাই)।
তো নির্ধারিত দিনে হোটেল রেডিসনের সামনে উপস্থিত হইলাম,কিছু সময় পরে গোবুর আগমন ঘটিলো।তিন বছরের বাচ্চা যেইরুক তাহার বাবার হাত ধরিয়া হাটে,আমিও ঐরুপ গোবুর হস্ত খানা আকড়াইয়া ধরিয়া হোটেলে ঢুকিলাম।
তো হোটেলে ঢুকিবার পর সময়ের সহিত আমার অঙ্গ প্রত্যঙের ভাইব্রেশন সমাণুপাতিক হারে বাড়িতে লাগিলো।এইভাবে কিছু কাল অতিবাহিত হইবার পর গোবু বলিলো,চল বরের সাথে সেলফি তুলি,তো যেই কথা সেই কাজ।বরের সামনে যাইয়া নানারুপ অঙ ভঙিমার সাথে আধ কেজি ওঞনের হাসির সহিত গোটা দশেক সেলফি তুলিলো।অতপর সে বলিলো চল খাইতে বসি।অতি উত্তম প্রস্তাব,একটা সুন্দর দেখিয়া একখানা টেবিলে আসন গ্রহণ করিলাম।টেবিলের উপর একখানা প্লেট ব্যাস্তানুপাতিকে রাখা,তাহার দুই পাশে একখানা কাটা চামচ,আর একখানা আকাটা চামচ রাখা।মায়ের হাত ছাড়া জীবনে ভাত খাই নাই,আর আজকে খাব চামচ দিয়া…!ভাবিতেই আমার শরীর শিউরাইয়া উঠিলো।পরমুহুর্তেই মনে হইলো,চিন্তা কিসের।গোবু আছে তো।ও যা করিবে আমিও তাহাই করিবো।তো গোবুরে দেখিলাম সে চামম্চের গুষ্ঠি উদ্ধার করিয়া চিকেন এর গুষ্ঠি উদ্ধার করা শুরু করিয়া দিলো,তাও তাহার হস্ত খানা ব্যাবহার করিয়া।আমি আর কি করিবো,বাধ্য বালকের ন্যায় তাহাকে অনুসরন করিলাম।মনের সুখে মুরগীর গুষ্ঠি উদ্ধারকার্য করিতেছি,তো খানিকক্ষন পরে এক সুন্দরী ললনার আগমন ঘটিলো,সে আসিয়া গোবর্ধনকে উদ্দেশ্য করিয়া বলিলো আপনি কোন পক্ষ?আর জানেন না চিকেন চামচ দিয়া খাইতে হয়।এইরুপ প্রশ্ন শুনিয়া আমি তো নাই।তো যা দেখিলাম,গোবর্ধন উঠিয়া দাড়াইলো,একখানা টিস্যু দিয়া মুখ মুছিয়া মেয়েটার দিকে(অবশ্য গোবু যে মেয়েটার চোখের দিকে তাকায় নাই,তাহা আমার স্পষ্টই মনে আছে) তাকাইয়া বলিলো,
এই যে ম্যাডাম কোনটা কীভাবে খাইতে হয়,আর কোনটা কীভাবে চাবাইতে হত,তাহা আমি খুব ভালো করিয়াই জানি।আর আমি রোজ যেইসব হোটেলে সকালের নাস্তা করি,সেইসব হোটেলের মেয়ে ওয়েটার ও তোমার থেকে স্মার্ট।এইরুপ অপমানিত হইবার পর,ললনা তাহার আধ ইন্চির ওড়না খানা দিয়া তাহার মুখ চাপিয়া ধরিয়া ঐ স্থান পরিত্যাগ করিলো।আর গোবুর এইরুপ জবাবে মেয়েটার মোক্ষম শিক্ষা হইছে ভাবিয়াই আমার গর্বে ফুলিয়া উঠিলো(বক্ষ)।আমার যতদুর মনে পড়ে গোবু আজীবন নাট্টু মামার চায়ের দোকানে বাকিতে নাস্তা সারিয়া আসিছে।ও যে ফাইভ স্টার হোটেলেও নাস্তা করে,এই কথা আমার জানা ছিলো না।যাই হোক,পুনরায় মুরগীর গুষ্ঠি উধার কার্যক্রম শুরু করিলাম আর ভাবিলাম…
গোবু তোমরা বেঁচে থাকো।তোমরা আছো বলিয়াই আমরা আছি।
গোবু তোমরা দীর্ঘজীবী হও..…