তো সেদিনকার ঘটনা,আশ্বিন মাসের পৌনে তিন তারিখ রাত্রি দেড়টার
মত বাজে,শহর থেকে ফিরিলাম।ট্রেন মিস হইবার হেতু
আসিতে আসিতে যথেষ্ঠ বিঘ্ন ঘটিলো।গৃহে যাইবার মত কোনো যানবাহন
পাইতেছিলাম না,তাই নিজের পা দুখানাকেই কর্মে লাগাইয়া দিলাম।
চারিদিকে বেসম্ভব অন্ধকার,ভুতুড়ে একটা পরিবেশ ঠাওর
করিতে পারিতেছিলাম।এইভাবে দু এক ক্রোশ হাটিবার পর পায়ের নিচের
মাটিতে কেমন যেন এক প্রকার কম্পন অনুভব করিলাম।ভাবিলাম রাতের
আধারে ভীত হইয়া আমার পা দুখানা কাপিতেছে।কিন্তু না, কম্পন ক্রমশ
জোড়দার হইতে আরম্ভ করিলো।যেন এক পাল বুনো হাতি বনভোজন
করিতেছে।তখন দেখিলাম কে যেন আমার এইদিকেই
দৌড়াইয়া আসিতেছে।তাহার কথা আর কি বলিবো।বেসম্ভব
এক্স্ট্রা লার্জ সাইজের দেহ,আর তাহার মাথার এক পাশে ঘন
এবং ধবধবে কৃষ্ন বর্ণের কেশ, আর অন্য পাশে মাইক্রস্কোপ দিয়াও
একখানা কেশ পাওয়া যাইবে কিনা সন্দেহ রইয়াছে।তো তাহার বদনের
কাটিং খানা দেখিয়া আমার কেন যেন পুর্বপরিচিত মনে হইতেছিলো।
তো সে যখন একেবারেই সন্নিকটে,তখন দেখিলাম, এ কী, এ তো অন্য কেহ
নহে,আমারই ডায়পার কালের দোস্ত গোবু।
তো তাহাকে দেখিয়া তো বিস্ময়ের ঘোর কাটিতেছিলো না।তাই
তাহাকে শুধাইলাম,আরে তুই গোবু না?তুই এত রাতে,এই খানে?আর মাথার
এই অবস্থা ক্যান…?
সে কিসের হেতু যেন একবার পিছনে তাকাইলো,তাহার পর বলিলো।
ইসটাইল দোস্ত,ইসটাইল।এইডা হইলো মডার্ন ইসটাইল।নতুন সেলুন
দিছি তো," গ্যাবস হেয়ার ড্রেসার "।দেখোস না,কি কুল হেয়ার
কাটিং দিছি।
বলিলাম,তা ঠিক আছে,বুঝিলাম।কিন্তু এত রাতে দৌড়াইতেছোস ক্যান।?
সে বলিলো,আর বলিস না,আমাকে দেইখা তো গ্রামের সব মাইয়ারা পাগল।
আমার পিছে লাগছে,তাই দৌড়াইতেছি,তাগো থেইকা বাচার লাইগ্যা।
হঠাৎ দুর হইতে কিছু শরগোল শুনিবামাত্র গোবু বলিলো,গেলাম
দোস্ত,পরে কথা হইবো।
এত মেয়ে পিছে দৌড়াইবে শুনিয়া ঐরুপ হেয়ারকাট দিতে আমার ও মনের
সুপ্ত বাসনা ঠিকরাইয়া পড়িতে লাগিলো।ভাবনায় ছেদ হইলো,ধর ধর
শালারে,এইরুপ শব্দ শুনিয়া,গোটা বিশেক মধ্যবয়স্ক লোক
লাঠি,ঝাটা নিয়ে দৌড়াইতেছে।আমাকে দেখিয়া খানিক থামিলো,তাহার
মধ্যে একজন বলিয়া উঠিলো,বাবা দ্যাশে আইলা কবে?
আমি বলিলাম,এইতো চাচা এইমাত্র।
তো সে আবার বলিলো,কাহিনী শুনছো নি কিছু?
আমি বলিলাম,কিসের কাহিনী?আর শুনিবোই বা কিভাবে।?আসিলাম
তো মাত্র।
সে বলিলো,তাও তো ঠিক।তবে হুনো,তোমার কইলজার দোস্ত গোবু,ঐ
হারামী তো আইজ সর্বণাস করিয়া হালাইছিলো।ঐ বাড়ির আলেয়ার
মাইয়া গুপীর বাড়িত গেছিলো আন্ধার রাইতে।হেরে ঘরের তন বাইর
কইরা,রেন্ডি গাছডার তলায় বইয়া ইটিশ পিটিশ শুরু করছিলো।তহন
মাঝি বাড়ির জয়্নাইল্যা দেখছে ওগো।জম মারা মারছি,চুল অর্ধেক
কামাইছি।এখন খালি আলকাতরাডা দেওন বাকি,তার আগেই হালায় দৌর
দিছে।তা দেখছো নি ওরে…
আমি কি বলিবো,ভাবিয়া পাইলাম না।খানিক চুপ থাকিয়া শুধু এইটুক
বলিলাম,চাচা আমার বাথরুমে যাওয়া লাগবে।আমি এখন যাই।
কালকে কথা বলবো এই ব্যাপারে।
এই বলিয়া,নিজের চুলগুলাকে হাত দিয়া ঠিক করিয়া জোড় কদমে বাড়ির
দিকে রওয়ানা করিলাম,আর ভাবিতে লাগিলাম,
কালকের ট্রেন ধরিয়াই ঢাকায় চলিয়া যাইবো…