somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হত্যার রাজনীতি ও ২১ আগস্ট

২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৪৭ সালের মধ্য আগস্টে ভারত ভাগ এবং ইন্ডিয়া-পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতে সাম্প্রদায়িক শাসন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ঘটে। ভারতবর্ষের পূর্ব ও পশ্চিমের দুটি সীমিত অংশ নিয়ে গঠিত পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির যাত্রা শুরু হয় অগণতান্ত্রিক স্বেচ্ছাচারিতার মধ্য দিয়ে। তবে অবিভক্ত পাকিস্তানের ২৩ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রতিপক্ষকে হত্যার মাধ্যমে নিঃশেষ করে দেয়ার সামরিক-বেসামরিক প্রচেষ্টা দেখা যায়নি। পশ্চিম পাকিস্তানের সামন্ত মানসিকতার মানুষরা এ মহত্ত্ব দেখাতে পারলেও ১৯৭১ সালের ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত এবং দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশের মানুষরা সেটা পারেনি। স্বাধীনতা লাভের কিছুদিন পর থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে হত্যার মাধ্যমে সরিয়ে দেয়ার সামরিক-বেসামরিক প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়েছে। সে প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন বছরের প্রান্তে এসে বাংলাদেশের স্থপতিকে হত্যার মতো ভয়ঙ্কর ঘটনাও ঘটেছে।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রথম হত্যাকাণ্ড ঘটে ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর। এ দিন রাওয়ালপিন্ডির সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তর এলাকায় এক জনসভায় ভাষণ প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে প্রকাশ্য দিবালোকে একজন সেনাসদস্য খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে ঘাতককে হত্যা করা হয়। ঘাতকের তাৎক্ষণিক মৃত্যুর কারণে এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য রহস্য স্পষ্ট না হলেও বলা যায়, সেটি প্রতিপক্ষকে নিঃশেষ করার রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ছিল না। ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকেও সেটি ঘটে থাকতে পারে। ১৯৫৪ সালে ক্ষমতাধিষ্ঠিত মুসলিম লীগকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে আওয়ামী মুসলিম লীগ সমন্বয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্ট। যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভাও গঠন করে। চক্রান্তের মাধ্যমে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়া হয়। পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও কৃষক শ্রমিক পার্টি পরস্পর প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে। এই দুটি দলকে কেন্দ্র করে বলা যায়, দুটি জোট বা রাজনৈতিক ঘরানার সৃষ্টি হয়। এ দল দুটির বিরোধের কারণে ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৫৮ সালের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে সাতটি মন্ত্রিসভার পতন ঘটে এবং তিনবার কেন্দ্রীয় শাসন জারি হয়। কিন্তু দল দুটির নেতাদের মাঝে প্রতিপক্ষকে হত্যার মাধ্যমে নিঃশেষ করে দেয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায় না। ১৯৫৮ সালের অক্টোবর মাসে জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন প্রবর্তনের মাধ্যমে পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। তিনি শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবসহ পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ নেতাকে গ্রেপ্তার করেন। মামলার পর মামলা দিয়ে বিরোধী পক্ষকে বিপর্যস্ত করে তোলেন। কিন্তু প্রতিপক্ষকে হত্যা প্রচেষ্টা তার শাসনামলে লক্ষণীয় নয়।
১৯৬৬ সালে ৬-দফা ঘোষণা এবং পরবর্তীকালে সময়োপযোগী সাহসী ভূমিকার কারণে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর বিস্ময়কর উত্থান ও ব্যাপক জনগ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির ধারণাই বদলে দেন। তিনি ৬-দফা দাবিনামা প্রচারে ১৯৬৬ সালের ২০ মার্চ থেকে ৮ মে পর্যন্ত ৫০ দিনে ৩২টি জনসভায় ভাষণ প্রদান করেন। ফলে পাকিস্তানের স্বেচ্ছাচারী সরকার রাজনীতির খোলা-মাঠে বঙ্গবন্ধুর অবাধ বিচরণ অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টির কারণ হয়ে উঠতে পারে ভেবে তাঁকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় করে ফেলার অছিদ্র পরিকল্পনা আঁটে। ফলে তাঁকে ১৯৬৬ সালের ৮ মে গ্রেপ্তার করা হয় এবং জেলবন্দি অবস্থায় ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি তাঁকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি করা হয়। এ দামলা দায়েরের নেপথ্যে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বিচারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিলেন এ কথা সত্য, তবে তিনি মিলিটারি একশন কিংবা সন্ত্রাসী আক্রমণের মাধ্যমে তাঁকে আকস্মিকভাবে হত্যার পথ বেছে নেননি। এমনকি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার নির্দেশে পাকিস্তানি মিলিটারিরা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করেছে, স্বাধীন বাংলাদেশের মিলিটারিদের মতো হত্যার পরিকল্পনা করেনি।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা লাভ ও সরকার গঠনের কিছুদিন পর বাংলাদেশের রাজনীতি ঘোলাটে হয়ে পড়ে। রাজনীতি হয়ে পড়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির চক্রান্তের শিকার। স্বাধীনতা লাভের বছর না পুরোতেই ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি অংশের উদ্যোগে গঠিত একটি রাজনৈতিক দল জাসদ গঠন এবং পরবর্তীকালে দলটির গণবাহিনী গঠন সে চক্রান্তের সরস পদক্ষেপ। এই গণবাহিনী বাংলাদেশের রাজনীতিতে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে নিঃশের করার ধারণা যুক্ত করে। দলটি কর্তৃক সারা দেশে সৃষ্ট নৈরাজ্যের সুযোগ গ্রহণ করে স্বাধীনতা বিরোধী পক্ষ, যোগও দেয় দলটির সঙ্গে। তৎকালীন সামরিক বাহিনীর মধ্যে এ দলটির বিস্তৃত সংযোগ ও আধিপত্য ছিল। জাসদের গণবাহিনী ও সামরিক সংশ্লিষ্টতায় সৃষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি হত্যার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে নিঃশেষ করার নৃশংসতা এ মাটির রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করে, বাংলাদেশে হত্যা রাজনীতির সূত্রপাত ঘটায়। হয়তো একদিন প্রমাণিত হবে যে, কজন সামরিক নেতা কর্মকর্তা কর্তৃক বাংলাদেশে হত্যার রাজনীতি শুরুর নেপথ্যে আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে মূল কারিগর ছিল ওই দলটির নেতৃত্ব।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে যে হত্যার রাজনীতি শুরু হয়েছিল, তার গতি আজকের সময় পর্যন্ত প্রবহমান। তবে হত্যা ও হত্যা প্রচেষ্টার কেন্দ্র পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৮১ সালের জিয়া হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের হত্যার রাজনীতির সঙ্গে সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার কোনো কোনো সদস্য যুক্ত থাকার অভিযোগ এলেও প্রত্যক্ষভাবে এ হত্যাকাণ্ডে সামরিক বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি। ৯০-এ সামরিক সরকার এরশাদের লজ্জাজনক পতনের পর লক্ষ করা যায় যে, গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভের পর রাজনৈতিক দলসমূহের পৃষ্ঠপোষকতায় বেসামরিক পর্যায় অর্থাৎ দলীয় পর্যায় থেকে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের প্রচেষ্টা ও বাস্তবায়ন ঘটেছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এ ঘটনাসমূহ আবার কেবল একপাক্ষিক- অর্থাৎ কেবল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে, বিশেষ করে সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার প্রচেষ্টা নানা কৌশল সুচারুভাবে পরিচালিত হয়েছে।
১৯৮১ সাল থেকে শেখ হাসিনাকে ২১ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। জেনারেল এরশাদের শাসনামলে তাকে তিনবার হত্যার চেষ্টা করা হয়। প্রথম চেষ্টাটি ছিল ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার জিরো পয়েন্টে। দ্বিতীয়টি ছিল ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি। এ দিন শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের জনসভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। সেখানে তাকে আক্রমণ করা হয়। জানা যায়, একজন বড় পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে পরিচালিত সে আক্রমণে আওয়ামী লীগের ১৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। ১৯৮৮ সালের ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যা প্রচেষ্টা চালায় প্রেসিডেন্ট এরশাদের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত ফ্রিডম পার্টির সন্ত্রাসী বাহিনী। তারা ৩২ ধানমণ্ডির বাসভবনে গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে তাকে হত্যার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়।
১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ঢাকার গ্রিনরোডের একটি উপনির্বাচন কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করা হয়। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, সে ঘটনায় যুক্তদের তৎকালীন সরকার গ্রেপ্তার পর্যন্ত করেনি। ১৯৯৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনা ঈশ্বরদীতে এক জনসভায় যোগ দিতে ট্রেনে করে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে তার কামরা লক্ষ করে বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করা হয়। ১৯৯৫ সালে এক জনসভায় তাকে গুলি করা হয়।
১৯৮১ সাল পরবর্তীকালের হত্যা প্রচেষ্টাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ২০ জুলাই ২০০০ সালের হত্যা পরিকল্পনা। সে দিন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার এক জনসভায় অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। তাই পূর্ব থেকে হত্যা-চক্রান্ত্র বাস্তবায়নে উগ্রধর্মীয় সংগঠন হরকাতুল জেহাদ নেতা মুফতি হান্নান হেলিপ্যাড ও জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ওজনের একটি ধ্বংসাত্মক বোমা স্থাপন করে। সে বোমাটি বিস্ফোরিত হওয়ার পূর্বে নিরাপত্তা বাহিনী উদ্ধার করতে সমর্থ হয়। পরবর্তীকালে এই মুফতি হান্নানের সঙ্গে জামায়াতে ইসলাম ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সংযোগের কথা ব্যাপকভাবে প্রচার লাভ করে। পঁচাত্তর-পরবর্তী সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। এ দিন প্রকাশ্য দিবালোকে জনসভারত বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে নিঃশেষ করে দেয়ার চক্রান্ত বাস্তবায়নে নিখুঁত তৎপরতা দেখা যায়। এ হত্যা-অভিযানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। আহতের সংখ্যা কয়েকশ। এ আক্রমণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী মানবঢাল রচনা করে শেখ হাসিনার জীবন রক্ষা করেন। ফলে তিনি কেবল ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। এই গ্রেনেড আক্রমণ হরকাতুল জেহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। এ আক্রমণের সঙ্গে তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা জড়িত ছিলেন। ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর প্রকাশিত ডেইলি স্টারের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২১ আগস্ট গ্রেনড আক্রমণের পূর্বে আক্রমণকারীরা হাওয়া ভবন ও তৎকালীন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসভবনে একাধিক সমন্বয় সভা করে।
১৯৮১ সাল-পরবর্তী যত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ও হত্যাকাণ্ডের প্রচেষ্টা মঞ্চস্থ হয়েছে, তার প্রায় সবই ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করে দেয়ার ভয়ঙ্কর প্রচেষ্টা। বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার নিরন্তর প্রচেষ্টা একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছে। আইভী রহমান, এস এম কিবরিয়া, আহসানুল্লাহ মাস্টারসহ নিহত হয়েছেন আওযামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা। কিন্তু এর বিপরীতে বিএনপির সভানেত্রী কিংবা দলীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এ জাতীয় রাজনৈতিক হত্যা প্রচেষ্টায় আক্রান্ত হননি। কাজেই একটি সরল সমীকরণ চলে আসে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯১ সাল-পরবর্তী দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নেপথ্য-অনুঘটকদের যথার্থভাবে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া থেমে আছে। ২১ আগস্টের বিচারকার্য প্রক্রিয়াধীন। তবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার শেখ হাসিনাকে হত্যার বিগত সব প্রচেষ্টাকে এখনো আমলে নেয়নি। ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে এরশাদ ও খালেদা জিয়ার শাসন আমলের হত্যা প্রচেষ্টার ঘটনাগুলো যথার্থভাবে বিচারের আওতায় আনা হয়নি বলেই মনে হয়। ফলে হত্যা প্রচেষ্টাকারীরা কোটালীপাড়া ও ২১ আগস্টের ঘটনা ঘটাবার স্পর্ধা পেয়েছে। আজো আজকের প্রধানমন্ত্রী ও প্রগতির অগ্রপথিক শেখ হাসিনার দিকে ঘাতকদের শ্যেন দৃষ্টি। তাকে রাজনীতির মঞ্চ থেকে সরিয়ে দিতে পারলে ১৯৭৫-এর মতো তাদের আরেকবার বিজয় সূচিত হবে এবং মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়া হবে।
১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যথার্থভাবে সতর্ক ছিলেন না বলে অভিযোগ আছে। জানা যায়, সে সময় বঙ্গবন্ধুর এক ধরনের অসহায়ত্বে কার্যকরভাবে তাঁর পাশের লোকগুলো পাশে এসে দাঁড়াননি, অনেকে হত্যার বিষয়টি আঁচ করতে পেরেও যথাযথ ভূমিকা নেননি বলে শোনা যায়। আজ শেখ হাসিনার চার পাশে যারা আছেন, তারা অতীব জাগরুক, নেতাকর্মীরা যথার্থভাবে সতর্ক আছেন বলে জাতি বিশ্বাস করতে চায়। অতীত সবার কাছে শিক্ষণীয় হবে আশা করলে জাতি ভুল করবে না বলে মনে হয়।১৯৪৭ সালের মধ্য আগস্টে ভারত ভাগ এবং ইন্ডিয়া-পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতে সাম্প্রদায়িক শাসন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ঘটে। ভারতবর্ষের পূর্ব ও পশ্চিমের দুটি সীমিত অংশ নিয়ে গঠিত পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির যাত্রা শুরু হয় অগণতান্ত্রিক স্বেচ্ছাচারিতার মধ্য দিয়ে। তবে অবিভক্ত পাকিস্তানের ২৩ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রতিপক্ষকে হত্যার মাধ্যমে নিঃশেষ করে দেয়ার সামরিক-বেসামরিক প্রচেষ্টা দেখা যায়নি। পশ্চিম পাকিস্তানের সামন্ত মানসিকতার মানুষরা এ মহত্ত্ব দেখাতে পারলেও ১৯৭১ সালের ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত এবং দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশের মানুষরা সেটা পারেনি। স্বাধীনতা লাভের কিছুদিন পর থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে হত্যার মাধ্যমে সরিয়ে দেয়ার সামরিক-বেসামরিক প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়েছে। সে প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন বছরের প্রান্তে এসে বাংলাদেশের স্থপতিকে হত্যার মতো ভয়ঙ্কর ঘটনাও ঘটেছে।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রথম হত্যাকাণ্ড ঘটে ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর। এ দিন রাওয়ালপিন্ডির সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তর এলাকায় এক জনসভায় ভাষণ প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে প্রকাশ্য দিবালোকে একজন সেনাসদস্য খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে ঘাতককে হত্যা করা হয়। ঘাতকের তাৎক্ষণিক মৃত্যুর কারণে এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য রহস্য স্পষ্ট না হলেও বলা যায়, সেটি প্রতিপক্ষকে নিঃশেষ করার রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ছিল না। ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকেও সেটি ঘটে থাকতে পারে। ১৯৫৪ সালে ক্ষমতাধিষ্ঠিত মুসলিম লীগকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে আওয়ামী মুসলিম লীগ সমন্বয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্ট। যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভাও গঠন করে। চক্রান্তের মাধ্যমে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়া হয়। পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও কৃষক শ্রমিক পার্টি পরস্পর প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে। এই দুটি দলকে কেন্দ্র করে বলা যায়, দুটি জোট বা রাজনৈতিক ঘরানার সৃষ্টি হয়। এ দল দুটির বিরোধের কারণে ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৫৮ সালের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে সাতটি মন্ত্রিসভার পতন ঘটে এবং তিনবার কেন্দ্রীয় শাসন জারি হয়। কিন্তু দল দুটির নেতাদের মাঝে প্রতিপক্ষকে হত্যার মাধ্যমে নিঃশেষ করে দেয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায় না। ১৯৫৮ সালের অক্টোবর মাসে জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন প্রবর্তনের মাধ্যমে পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। তিনি শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবসহ পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ নেতাকে গ্রেপ্তার করেন। মামলার পর মামলা দিয়ে বিরোধী পক্ষকে বিপর্যস্ত করে তোলেন। কিন্তু প্রতিপক্ষকে হত্যা প্রচেষ্টা তার শাসনামলে লক্ষণীয় নয়।
১৯৬৬ সালে ৬-দফা ঘোষণা এবং পরবর্তীকালে সময়োপযোগী সাহসী ভূমিকার কারণে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর বিস্ময়কর উত্থান ও ব্যাপক জনগ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির ধারণাই বদলে দেন। তিনি ৬-দফা দাবিনামা প্রচারে ১৯৬৬ সালের ২০ মার্চ থেকে ৮ মে পর্যন্ত ৫০ দিনে ৩২টি জনসভায় ভাষণ প্রদান করেন। ফলে পাকিস্তানের স্বেচ্ছাচারী সরকার রাজনীতির খোলা-মাঠে বঙ্গবন্ধুর অবাধ বিচরণ অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টির কারণ হয়ে উঠতে পারে ভেবে তাঁকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় করে ফেলার অছিদ্র পরিকল্পনা আঁটে। ফলে তাঁকে ১৯৬৬ সালের ৮ মে গ্রেপ্তার করা হয় এবং জেলবন্দি অবস্থায় ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি তাঁকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি করা হয়। এ দামলা দায়েরের নেপথ্যে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বিচারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিলেন এ কথা সত্য, তবে তিনি মিলিটারি একশন কিংবা সন্ত্রাসী আক্রমণের মাধ্যমে তাঁকে আকস্মিকভাবে হত্যার পথ বেছে নেননি। এমনকি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার নির্দেশে পাকিস্তানি মিলিটারিরা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করেছে, স্বাধীন বাংলাদেশের মিলিটারিদের মতো হত্যার পরিকল্পনা করেনি।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা লাভ ও সরকার গঠনের কিছুদিন পর বাংলাদেশের রাজনীতি ঘোলাটে হয়ে পড়ে। রাজনীতি হয়ে পড়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির চক্রান্তের শিকার। স্বাধীনতা লাভের বছর না পুরোতেই ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি অংশের উদ্যোগে গঠিত একটি রাজনৈতিক দল জাসদ গঠন এবং পরবর্তীকালে দলটির গণবাহিনী গঠন সে চক্রান্তের সরস পদক্ষেপ। এই গণবাহিনী বাংলাদেশের রাজনীতিতে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে নিঃশের করার ধারণা যুক্ত করে। দলটি কর্তৃক সারা দেশে সৃষ্ট নৈরাজ্যের সুযোগ গ্রহণ করে স্বাধীনতা বিরোধী পক্ষ, যোগও দেয় দলটির সঙ্গে। তৎকালীন সামরিক বাহিনীর মধ্যে এ দলটির বিস্তৃত সংযোগ ও আধিপত্য ছিল। জাসদের গণবাহিনী ও সামরিক সংশ্লিষ্টতায় সৃষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি হত্যার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে নিঃশেষ করার নৃশংসতা এ মাটির রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করে, বাংলাদেশে হত্যা রাজনীতির সূত্রপাত ঘটায়। হয়তো একদিন প্রমাণিত হবে যে, কজন সামরিক নেতা কর্মকর্তা কর্তৃক বাংলাদেশে হত্যার রাজনীতি শুরুর নেপথ্যে আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে মূল কারিগর ছিল ওই দলটির নেতৃত্ব।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে যে হত্যার রাজনীতি শুরু হয়েছিল, তার গতি আজকের সময় পর্যন্ত প্রবহমান। তবে হত্যা ও হত্যা প্রচেষ্টার কেন্দ্র পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৮১ সালের জিয়া হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের হত্যার রাজনীতির সঙ্গে সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার কোনো কোনো সদস্য যুক্ত থাকার অভিযোগ এলেও প্রত্যক্ষভাবে এ হত্যাকাণ্ডে সামরিক বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি। ৯০-এ সামরিক সরকার এরশাদের লজ্জাজনক পতনের পর লক্ষ করা যায় যে, গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভের পর রাজনৈতিক দলসমূহের পৃষ্ঠপোষকতায় বেসামরিক পর্যায় অর্থাৎ দলীয় পর্যায় থেকে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের প্রচেষ্টা ও বাস্তবায়ন ঘটেছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এ ঘটনাসমূহ আবার কেবল একপাক্ষিক- অর্থাৎ কেবল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে, বিশেষ করে সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার প্রচেষ্টা নানা কৌশল সুচারুভাবে পরিচালিত হয়েছে।
১৯৮১ সাল থেকে শেখ হাসিনাকে ২১ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। জেনারেল এরশাদের শাসনামলে তাকে তিনবার হত্যার চেষ্টা করা হয়। প্রথম চেষ্টাটি ছিল ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার জিরো পয়েন্টে। দ্বিতীয়টি ছিল ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি। এ দিন শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের জনসভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। সেখানে তাকে আক্রমণ করা হয়। জানা যায়, একজন বড় পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে পরিচালিত সে আক্রমণে আওয়ামী লীগের ১৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। ১৯৮৮ সালের ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যা প্রচেষ্টা চালায় প্রেসিডেন্ট এরশাদের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত ফ্রিডম পার্টির সন্ত্রাসী বাহিনী। তারা ৩২ ধানমণ্ডির বাসভবনে গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে তাকে হত্যার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়।
১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ঢাকার গ্রিনরোডের একটি উপনির্বাচন কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করা হয়। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, সে ঘটনায় যুক্তদের তৎকালীন সরকার গ্রেপ্তার পর্যন্ত করেনি। ১৯৯৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনা ঈশ্বরদীতে এক জনসভায় যোগ দিতে ট্রেনে করে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে তার কামরা লক্ষ করে বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করা হয়। ১৯৯৫ সালে এক জনসভায় তাকে গুলি করা হয়।
১৯৮১ সাল পরবর্তীকালের হত্যা প্রচেষ্টাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ২০ জুলাই ২০০০ সালের হত্যা পরিকল্পনা। সে দিন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার এক জনসভায় অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। তাই পূর্ব থেকে হত্যা-চক্রান্ত্র বাস্তবায়নে উগ্রধর্মীয় সংগঠন হরকাতুল জেহাদ নেতা মুফতি হান্নান হেলিপ্যাড ও জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ওজনের একটি ধ্বংসাত্মক বোমা স্থাপন করে। সে বোমাটি বিস্ফোরিত হওয়ার পূর্বে নিরাপত্তা বাহিনী উদ্ধার করতে সমর্থ হয়। পরবর্তীকালে এই মুফতি হান্নানের সঙ্গে জামায়াতে ইসলাম ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সংযোগের কথা ব্যাপকভাবে প্রচার লাভ করে। পঁচাত্তর-পরবর্তী সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। এ দিন প্রকাশ্য দিবালোকে জনসভারত বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে নিঃশেষ করে দেয়ার চক্রান্ত বাস্তবায়নে নিখুঁত তৎপরতা দেখা যায়। এ হত্যা-অভিযানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। আহতের সংখ্যা কয়েকশ। এ আক্রমণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী মানবঢাল রচনা করে শেখ হাসিনার জীবন রক্ষা করেন। ফলে তিনি কেবল ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। এই গ্রেনেড আক্রমণ হরকাতুল জেহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। এ আক্রমণের সঙ্গে তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা জড়িত ছিলেন। ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর প্রকাশিত ডেইলি স্টারের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২১ আগস্ট গ্রেনড আক্রমণের পূর্বে আক্রমণকারীরা হাওয়া ভবন ও তৎকালীন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসভবনে একাধিক সমন্বয় সভা করে।
১৯৮১ সাল-পরবর্তী যত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ও হত্যাকাণ্ডের প্রচেষ্টা মঞ্চস্থ হয়েছে, তার প্রায় সবই ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করে দেয়ার ভয়ঙ্কর প্রচেষ্টা। বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার নিরন্তর প্রচেষ্টা একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছে। আইভী রহমান, এস এম কিবরিয়া, আহসানুল্লাহ মাস্টারসহ নিহত হয়েছেন আওযামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা। কিন্তু এর বিপরীতে বিএনপির সভানেত্রী কিংবা দলীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এ জাতীয় রাজনৈতিক হত্যা প্রচেষ্টায় আক্রান্ত হননি। কাজেই একটি সরল সমীকরণ চলে আসে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯১ সাল-পরবর্তী দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নেপথ্য-অনুঘটকদের যথার্থভাবে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া থেমে আছে। ২১ আগস্টের বিচারকার্য প্রক্রিয়াধীন। তবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার শেখ হাসিনাকে হত্যার বিগত সব প্রচেষ্টাকে এখনো আমলে নেয়নি। ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে এরশাদ ও খালেদা জিয়ার শাসন আমলের হত্যা প্রচেষ্টার ঘটনাগুলো যথার্থভাবে বিচারের আওতায় আনা হয়নি বলেই মনে হয়। ফলে হত্যা প্রচেষ্টাকারীরা কোটালীপাড়া ও ২১ আগস্টের ঘটনা ঘটাবার স্পর্ধা পেয়েছে। আজো আজকের প্রধানমন্ত্রী ও প্রগতির অগ্রপথিক শেখ হাসিনার দিকে ঘাতকদের শ্যেন দৃষ্টি। তাকে রাজনীতির মঞ্চ থেকে সরিয়ে দিতে পারলে ১৯৭৫-এর মতো তাদের আরেকবার বিজয় সূচিত হবে এবং মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়া হবে।
১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যথার্থভাবে সতর্ক ছিলেন না বলে অভিযোগ আছে। জানা যায়, সে সময় বঙ্গবন্ধুর এক ধরনের অসহায়ত্বে কার্যকরভাবে তাঁর পাশের লোকগুলো পাশে এসে দাঁড়াননি, অনেকে হত্যার বিষয়টি আঁচ করতে পেরেও যথাযথ ভূমিকা নেননি বলে শোনা যায়। আজ শেখ হাসিনার চার পাশে যারা আছেন, তারা অতীব জাগরুক, নেতাকর্মীরা যথার্থভাবে সতর্ক আছেন বলে জাতি বিশ্বাস করতে চায়। অতীত সবার কাছে শিক্ষণীয় হবে আশা করলে জাতি ভুল করবে না বলে মনে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৮:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×