ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, নিজ দলের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সরকারের যে ‘অ্যাকশন’ দেখতে পাচ্ছি, তা শান্তিকামী মানুষের জন্য ভালো উদ্যোগ। কেননা দলের বেপরোয়া নেতা-কর্মীরা যেভাবে টেন্ডারবাজি, নিয়োগবাণিজ্য, ভর্তিবাণিজ্য এবং আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছিল, তাতে সাধারণ মানুষ এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যে ছিল। তাদের কাছে সরকারের এই সক্রিয়তা বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তবে যে পন্থায় সরকার সক্রিয় হয়েছে বা হচ্ছে- সেটি অবশ্যই বিচারিক নিয়মে হতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রখ্যাত এই সাহিত্যিক এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে অথবা ক্রসফায়ারে যারা নিহত হয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে শত শত মামলা রয়েছে। তারা টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে কলেজে শিক্ষক নিয়োগ, ভর্তি নিয়ে জালিয়াতি, আধিপত্য বিস্তার ও শিশুদের ওপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে তারা দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিল। সেই জায়গা থেকে শান্তিকামী মানুষের কাছে সরকারের এই সক্রিয়তা ভালো উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক মনে করেন, সরকার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিলেও গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে তা অবশ্যই বিচারিক প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত। সেটি না হলে এই অস্বস্তি অপরাধী এবং নিরপরাধী দুপক্ষের মধ্যেই থাকবে। তিনি বলেন, দলের নেতা-কর্মী নিহতের ঘটনায় দেখেছি অনেক মন্ত্রী-এমপিও বিভিন্ন কথা-বার্তা এবং বিবৃতি দিয়েছেন। কেউ বলেছেন, এবার অ্যাকশন শুরু, আবার কেউ বলেছেন, এটি ঠিক নয়। আমি বলব, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন যদি বিচারিক প্রক্রিয়ায় হয় তাহলে আর নিরপরাধদের মনে ভয় বা অস্বস্তি থাকবে না। তাদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করবে না যে, এই বুঝি আমাকেও ক্রসফায়ারে দিল বা শত্রুতা করে আমাকেও কেউ ফাঁসিয়ে দিল। সুতরাং বিচারিক প্রক্রিয়ায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সবাই আশ্বস্ত থাকতে পারবে। অর্থাৎ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলে সন্ত্রাসীরাও যেমন অপরাধ করতে ভয় পাবে, তেমনি নিরপরাধীরাও কোনো অস্বস্তিতে থাকবে না। আর সে কারণেই ভালো-মন্দ সব পক্ষের জন্যই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া বিকল্প দেখছি না। ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল বলেন, সন্ত্রাস নির্মূলে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ এবং ‘ক্রসফায়ার’ দুটি ভার্সনই আমাদের জন্য বিপজ্জনক। আর এই দুটো বিষয়ই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অত্যন্ত নেতিবাচক। কারণ, প্রথমত, বিচার-বহির্ভূত কোনো হত্যাকাণ্ডই গণতন্ত্রের নীতিতে পড়ে না। আর দ্বিতীয়ত, যদি সত্যিকার অর্থেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়, সেটিও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য অশনি সংকেত। তার মানে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত এখনই সন্ত্রাসীদের একটি তালিকা তৈরি করা। ‘সন্ত্রাসীরা যে দলেরই হোক...’ যুগ যুগ ধরে রাজনৈতিক নেতাদের মুখে শুনে আসা এ কথার সত্যিকার প্রতিফলন ঘটানো দরকার। এটি যাতে কথার কথা হয়ে না থাকে সে জন্য সরকারকে আরও কঠোর হওয়া উচিত। আর তাহলেই জনমনে স্বস্তি ফিরে আসবে। বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদের মতে, আওয়ামী লীগে অনেক ভালো মানুষ আছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তাদের সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিরোধী দলের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির আজ গলা উঁচু করে কথা বলার মতো মুখ বা শক্তি নেই। কীভাবে বলবে? কারণ তারাও যে এই একই পথের পথিক। তারাই তো ক্রসফায়ারের রীতি চালু করেছিল। এমনকি তারা যদি তৃণমূলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারত, তাহলে আজ তাদের এই দশা হতো না। তৃণমূলকে গুরুত্ব না দিয়ে কেবল হাইকমান্ডের মতে দল চললে সেখানে কখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় না। আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হলে সেখানে আইনের শাসনও প্রতিষ্ঠিত হয় না। তাই বলব, সর্ব ক্ষেত্রে আইনের শাসনের বিকল্প নেই।
সরকারের শুরু হওয়া এ্যাকশন ধারাবাহিকতা রাখা জরুরি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৮:১০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ব্যাড গাই গুড গাই
নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন
টান
কোথাও স্বস্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকাতে ছুটির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছবি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বাড়ে গতিবেগ
ভাবনাদের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্বস্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজলে ঢেউ এসে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্পতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী
স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ
১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন
অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি
অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?
যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন