somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৯০'র আন্দোলনের কিছু টুকরো স্মৃতি - ২

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট অনেক বিশাল , আমি শুধু আমার নিজের ভুমিকার স্মৃতি গুলো উল্লেখ করার চেষ্টা করছি । ২৪ মার্চ ১৯৮২ তে এরশাদ দেশের সেনাবাহিনীর প্রধান থাকা অবস্থায় সামরিক ক্যু দেতার মাধ্যমে দেশের শাসনভার গ্রহন করে । তখন বিএনপি ছিল ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল । দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার । আওয়ামীলীগ তাৎক্ষনিকভাবে এরশাদের সামরিক শাসনকে স্বাগত জানিয়েছিল যদিও পরবর্তীতে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের গুরুত্ব পূর্ণ অংশীদার ছিল । এরশাদ দেশের সংবিধান স্থগিত ঘোষণা করে দেশে সামরিক শাসন জারি করে । সমস্থ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে ।

এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সর্ব প্রথম প্রতিবাদ করে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ । ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রদের প্রতিবাদ মিছিলে সামরিক জান্তা ট্রাক উঠিয়ে দিলে জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দিপালি সাহা নিহত হন । অনেকেই মারাত্মক আহত হয়ে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান । ১৯৮৪’র মধ্য ফেব্রুয়ারিতেও ছাত্রদের মিছিলে সামরিক জান্তা গরম পানি ছিটায় , রাবার বুলেট দিয়ে আক্রমন করে , ছাত্রী-ছাত্র নিবাস গুলোতে হামলা চালায় । প্রতিবাদে ছাত্র অঙ্গনে ক্রিয়াশীল সকল ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গড়ে উঠে “ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ” । এর সাথে সদ্য ক্ষমতা হারানো বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল যুগপৎ আন্দোলনে শরিক হয় । দাবী ছিল সামরিক শাসন প্রত্যাহার ও একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে সেনাবিহিনিকে ব্যারাকে ফিরে যেতে হবে । কিন্তু অবাধ নিরেপেক্ষ নির্বাচনের প্রক্রিয়া সংক্রান্ত কোন বক্তব্য তখনও আসেনি ।

ছাত্র আন্দোলনের এই ঐক্য জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব পড়ে । বিএনপির নেতৃত্বে ৭ দলীয় ঐক্য জোট এবং আওয়ামীলীগ , ন্যাপ , সিপিবি , জাসদ , বাসদ এর সমন্বয়ে ১৫ দলীয় ঐক্য জোট গড়ে উঠে ।

শুরু হয় স্বৈরাচার এরশাদ উৎক্ষাতের আন্দোলন ।

আমি তখন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী এবং ৮৫’র পরে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর ময়মনসিংহ জেলা শাখার আহবায়ক হিসাবে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাথে জরিত । এরশাদ চাপের মুখে ঘরোয়া রাজনীতির সুযোগ দিয়েছে । ঘরোয়া রাজনীতি মানে শুধু মাত্র পার্টি অফিসে আলোচনা , মিটিং করা যাবে । কিন্তু রাস্তায় নামা যাবে না । ঘরোয়া রাজনীতির প্রথম সুযোগেই হরতাল আহবান করা হোল । সারা দেশের মানুষের ব্যাপক অংশ গ্রহনে একের পর এক হরতাল পালিত হতে লাগলো । তখন থেকেই শুরু হোল হাসিনা-খালেদার রাজনীতির উত্থান ।

আমি জেলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের বয়সে সর্ব কনিষ্ঠ । মাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি । আওয়ামীলীগ সমর্থিত ছাত্রলীগের জেলা সাভাপতি মোয়াজ্জেম ভাই , জাসদ ছাত্রলীগের জেলা সাভাপতি সাদেক ভাই , ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারন সম্পাদক মিল্লাত ভাই ও এনামুল ভাইরা তখন অনার্স-মাস্টার্স পরছে অথবা পাশ করে ফেলেছে ।

ঘরোয়া রাজনীতির অংশ হিসাবে আনন্দ মোহন কলেজে প্রায় প্রতিদিনই মিটিং মিছিল হতো । একবার মিছিল নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে এলে আশ্চর্য জনক ভাবে মিছিলটি বড় হতে থাকে , একপর্যায়ে মিছিলটি বিক্ষোভ মিছিলে পরিনত হয় এবং মিছিলটি এত বড় হয় যে পুলিশ ভয়ে শুধু মিছিলের পিছনে পিছনে হেঁটেছে কিন্তু বাধা দিতে সাহস পায়নি । কিন্তু সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মিছিল করার অপরাধে মোয়াজ্জেম ভাই ও সাদেক ভাইয়ের নামে হুলিয়া বের হয় । তখন বিষয়টা এরকম ছিল যে ময়মনসিংহের ছাত্র আন্দোলনের যে কোন ঘটন-অঘঠনের সমস্ত দায় দায়িত্বই এই দুজনের উপর পড়তো । স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সংঘটিত করার ক্ষেত্রে ময়মনসিংহের ছাত্র নেতা মোয়াজ্জেম ভাই ও সাদেক ভাইয়ের ভূমিকা ও অবদান আমি নিজে খুব কাছ থেকে দেখেছি । এছারাও ছিল বিএনপি’র রানা ভাই, ছাত্রদলের নজরুল ভাই , যুবদলের মাসুদ ভাই ( বর্তমানে উনাদের কোন অস্থিত্ব বিএনপির রাজনীতিতে দেখি না ) । তখন বাকশাল নামে আওয়ামী ধারার আর একটি রাজনৈতিক দল ছিল । এর ছাত্র সংগঠনের নাম ছিল জাতীয় ছাত্র লীগ । ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন ফরিদ ভাই , আমার খুব পছন্দের নেতা । আন্দোলনের নীতি নিরধারনে উনার ভাল ভূমিকা ছিল । তবে মাঠের শক্তি দলের মারদাঙ্গা কর্মী বাহিনী । এই জায়গায় ভাল ভূমিকা ছিল ছত্রদল ও জাসদের । মিছিলের শক্তি ছিল ছাত্র ইউনিয়ন ।

এরশাদ ময়মনসিংহের জামাতা ছিলেন অর্থাৎ রওশন এরশাদের বাড়ী ছিল ময়মনসিংহে । সেই সুবাদে ময়মনসিংহের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির প্রভাব বাড়তে থাকে ।

ঘরোয়া রাজনীতি থাকা অবস্থায় বেশ কয়েকটি সফল স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল হয় । নির্বাচনের দাবী জোরাল হয় , আন্দোলন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে । আবার ঘরোয়া রাজনীতি বন্ধ করে রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা জারী হয় । একবার ঘরোয়া রাজনীতি আবার রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা এই প্রক্রিয়া চলে ২/৩ বৎসর পর্যন্ত ।

১৯৮৫ সালে রাজনীতিতে কিছুটা পরিবর্তিত পরিবেশ দেখা যেতে শুরু করে । এরশাদ সংলাপের আয়োজন করে । রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপে অংশ গ্রহন শুরু করে । ইতিমধ্যে আন্দোলনকারী দল গুলো থেকে অনেকেই এরশাদের সাথে যোগ দিতে শুরু করেছে । এর মধ্যে কাজী জাফর আহমেদ, মিজান চৌধরী , জিয়াউদ্দিন বাবলু ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে এরশাদের সাথে হাত মিলিয়ে মন্ত্রী হন এবং ১৯৮৫ সালের পরে সিরাজুল হোসেন খান, আনোয়ার জাহিদ এরশাদের মন্ত্রী সভায় যোগ দেন । এই দুজন বাম রাজনীতিতে খুব প্রভাবশালী ছিলেন বলে উনাদের মন্ত্রী হওয়াটা বাম রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পরে । এরকম অনেক বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ইতিমধ্যে মন্ত্রী হয়েছেন এবং যারা কিছুদিন আগে রাজপথে এরশাদের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিয়েছে তারাই এরশাদের প্রতিনিধি হয়ে সংলাপের টেবিলে বসেছে । ৭ দলীয় ঐক্যজোট ও ১৫ দলীয় ঐক্যজোটের লিয়াজো কমিটিও করা হয়েছে । সেই লিয়াজো কমিটিতে নির্বাচনে অংশ গ্রহনের কৌশল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে । দুই নেত্রী ১৫০+১৫০ = ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কৌশল নিচ্ছে এমন চিন্তা ভাবনা পত্র পত্রিকায় দেখতে পাই । কিন্তু ৫টি আসনের বেশী এক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না এমন একটি ফরমান জারীর মাধ্যমে এরশাদ এই কৌশল বানচাল করে দেয় । নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয় । নির্বাচন প্রতিহত করার আন্দোলন বাড়তে থাকে । ২/১ দিন থেমে থেমে লাগাতার হরতাল পালিত হতে থাকে। অবস্থা এমনই বেগতিক হয় যে জনগন এরশাদের পদত্যগ ঘোষণা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:০০
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×