somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারত - মার্কিন নীতি ও বাংলাদেশ

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীর সবচেয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী শাসন ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে বর্তমান চীন । ১৯৪৯ সালে মাও সেতুং এর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর এখনও দোর্দণ্ড প্রতাপে একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় ও জাতীয় কংগ্রেস নামক আভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই শাসন ব্যবস্থা ধরে রেখেছে । ১০০ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে একটি সামান্ততান্ত্রিক পসচাদপদ চীনকে বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক ও সামরিক ভাবে শক্তিশালী করার পিছনে এই কমিউনিস্ট একদলীয় শাসন ব্যবস্থার ভুমিকা অপরিসীম ও জনগণের রয়েছে অগাধ আস্থা । তবে পাশ্চাত্য রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি মোহও আছে ।
দ্বিতীয় পরাক্রমশালী একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন বা বর্তমান রাশিয়া । একটি আধা সামন্তরান্ত্রিক দেশকে ১৯১৭ সালে মহান লেলিন-স্তালিনের নেতৃত্বে জার সম্রাটকে উচ্ছেদ করে প্রতিষ্ঠিত হয় কমিউনিস্ট একদলীয় শাসন ব্যবস্থা । ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দোর্দণ্ড প্রতাপে টিকে থেকে বর্তমান বিশ্বে আমেরিকার পাশাপাশি রাশিয়াই একমাত্র শক্তিশালী সামরিক শক্তিতে পরিনত হয়েছে । তারপরও কমিউনিস্ট একদলীয় শাসন ব্যবস্থার পতন বিশ্বের একদলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রতি একটি নেতিবাচক ইঙ্গিত । রাশিয়ার পতনের পর পরই পূর্ব ইউরোপের সকল একদলীয় শাসন ব্যবস্থার পতন ঘটে । শুধু তাই নয় সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো সব ভেঙ্গে যায় ।
এক দলীয় শাসন ব্যবস্থার দোর্দণ্ড প্রতাপ লক্ষ করা গিয়েছিল সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে ইরাকে ও গাদ্দাফির নেতৃত্বে লিবিয়ায় । দীর্ঘ সময় শাসন করলেও শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেনি । সিরিয়াও টিকতে পারবে বলে মনে হয় না । সৌদি আরব সহ আনন্য আরব রাষ্ট্র গুলোও শেষ পর্যন্ত টিকবে না ।
ভিয়েতনাম , কম্বোডিয়া ইত্যাদি দেশ কমিউনিস্ট একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটিয়েছে বিধায় এখনও টিকে আছে । ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলা একদলীয় শাসন না থাকলেও হুগো স্যভেজের মত সামাজ্যবাদ বিরোধী জনপ্রিয় নেতা মার্কিন সাম্রজ্যবাদের সাথে সংগ্রাম করে জনগণের ভোটে বার বার নির্বাচিত হয়েছেন , ভেনিজুয়েলাকে একটি শক্তিসালি অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁর করাতে পেরেছেন, নিজেদের তেল সম্পদ রক্ষা করতে পেরেছেন । । হুগো স্যভেজের নেতৃত্বে ও প্রভাবে বলিভিয়া , প্যরাগুয়ে , চিলির মত দেশ মার্কিনের সাথে অনেক জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি বাতিল করে নিজেদের মত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে এবং ব্যপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাচ্ছে ।
একদলীয় শাসন ব্যবস্থা অভ্যন্তরীণ আমলাতান্ত্রিক সমাজ তৈরি করে ও একটি বিচারবিহীন কারাগারে গোটা জাতি আবদ্ধ হয় । সাথে পুজির সঞ্চালন বাধাগ্রস্থ হয় । মুলত বিশ্বব্যাপী পুজির সঞ্চালন বাধাগ্রস্থটাই হচ্ছে মুল কারন । ১৯৯০ এর আগে রাশিয়ায় কোন মার্কিন বা পশ্চিমা পুজির বিনিয়োগ ছিল না । এখন সেখানে অবাধে পশ্চিমা পুজি বিনিয়োগ হচ্ছে ও মুনাফা করছে । আরও যে সমস্ত জায়গায় একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ছিল সেখনে ১৯৭০-৮০ এর দশকে পুজির সঞ্চালন ছিল না । পুজি শুধু পশ্চিমাদের হাতে জমা হচ্ছিল কিন্তু বিনিয়োগের জায়গা তৈরি করতে পারছিল না । ফলে যুদ্ধ বিগ্রহ তৈরি করে অস্র ব্যবসায় বিনিয়োগে পুজির সঞ্চালন যথাযথ ভাবে পুরন হচ্ছিল না । এর জন্য প্রয়োজন হয়ে পরেছিল বিশাল অঞ্চল পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রনে আনা । সেই বিশাল অঞ্চল হিসেবে মার্কিন - পশ্চিমা গোষ্ঠী মধ্যপ্রাচ্যকে বেছে নেয় । এতে আপাতত কিছুটা দম ফালানোর সুযোগ পেলেও এর উপর ভিত্তি করে পুজি বিনিয়োগের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করাই পশ্চিমাদের উদ্দ্যেস্য । ভিয়েতনাম , কম্বোডিয়া বিদেশী পুঁজির দরজা খুলে দেয়ায় তাদের শাসন ব্যবস্থা নিয়ে পশ্চিমারা কোন কথা বলে না ।
এখন তাদের নজর বিশাল চীন রাষ্ট্রের উপর । চীন বিদেশী পুঁজির ততটুকু প্রবেশাধিকার দেয় যতটুকু তাদের প্রয়োজন কিন্ত চীনের বিশাল বাজারে মার্কিন ও পশ্চিমা পুঁজির অবাধ বিচরন এই মুহূর্তে তাদের লক্ষ । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ এই কাজে ভারতকে সঙ্গি করেছে । কিন্তু ভারত মার্কিনের উপর ভর করে চীন বিরোধী সামরিক নীতি গ্রহনে নিজেদের সামরিক শক্তি বাড়াতে ব্যস্ত । এর ফলে ভারতে উন্নয়ন বাজেট বাধাগ্রস্থ হবে । ভারতের নিজেদের উন্নয়ন বাজেটের পরিবর্তে তারা চাইবে বাংলাদেশের অবকাঠামো ব্যবহার করে উন্নয়ন বাজেটের ঘাটতি পুরন করতে । সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যপক অবকাঠামো তৈরির প্রস্তুতি চলছে । এতে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত লাভবান বেশি হবে যে, ভারত শুধুমাত্র নামমাত্র শুল্ক দিয়ে এই সমস্ত অবকাঠামো ব্যবহার করবে ।
এতে ভারতের সামরিক বাজেট বৃদ্ধি পেলেও বাংলাদেশকে পার্টনার করে তারা কিছুটা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে । ভারতের এই নীতিতে মার্কিন ও পশ্চিমাদের সায় আছে বলেই মনে হচ্ছে । শুধুমাত্র মাঝে মাঝে বাংলাদেশের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলে , কারন এটা তাদের পছন্দ না , এছাড়া বাংলাদেশে পশ্চিমা বিনিয়োগ এর জন্যও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা তাদের পছন্দ না ।
তবে ভারত মার্কিনের সাথে হাত মিলিয়ে চীন বিরোধী সামরিক নীতিতে নিজেরা কতটা লাভবান হবে সেই হিসেব তাদের কষতেই হবে । ভারতে অভ্যন্তরীণ স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলন ইত্যাদি সমস্যা এখনও চলমান । এ ক্ষেত্রে নিকট প্রতিবেশী শক্তিশালী চীন - ভারত দ্বন্দ্ব ভারতের রাজনীতিকে কতটা স্থিতিশীল রাখতে পারবে তা পর্যালোচনার বিষয় ।
মোদী সরকার এখন আর ঘোমটা দিয়ে মার্কিন এর সাথে চলছে না । রীতিমত প্রকাশ্যে সমঝোতা করেছে মার্কিন সামরিক বিমান , জাহাজ , ভারতের মাটি ব্যবহার করতে পারবে । ফলে বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিনকীরা এখন আর ভারতের সাথে বারগেইন এ যাবে না । তবে বাংলাদেশর অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগ দুটোই বাড়লে ক্ষতি নেই । পশ্চিমা বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে সেই বিনিয়গের স্বার্থেই পশ্চিমারা বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিবে । এখানেই বর্তমান সরকারের পারদর্শিতা । বিরোধী দলের মানে বিএনপির ও এখানে বিরাট দায়িত্ব আছে । একদলীয় শাসন ব্যবস্থার হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য একটি নির্বাচন আদায় করা ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:০৫
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×