somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গোলাপ নয় তোমার জন্য লাল সালাম তসলিম ভাই

২০ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিগন্ত পানে যতোটুকু চোখ যায় কেবলই বিশাল শূন্যতা, মাঝে মাঝে নীরবতার সাক্ষী হিসেবে কিছু বৃক্ষের রুদ্র রূপে দাঁড়িয়ে থাকা, আকাশের নীলে আর জমিনের সবুজেও নিজেকে বড় অচেনা মনে হয়।বাতাসে ছুড়ে দেয়া উদ্দীপ্ত ধ্বনি যখন নিজের কাছে ফিরে আসে কম্পিত লয়ে দিগন্তের কোথাও বাধা পেয়ে তখন শূন্যতা যেন পাঁজর ভেদ করে বায়ু শূন্য করতে চায় অস্তিত্বকে। তবে একেই কি বলে হারিয়ে যাওয়া? জীবনের মতো , জীবন শেষে? জীবন যেন এক শক্তি ক্ষয়ী রাসায়নিক বিক্রিয়া যেখানে উত্তাপ আছে, বিকিরণ আছে, পরিবর্তন আছে নেই কেবল আবাদি স্বপ্নের রোপিত বীজ থেকে অংকুরিত চারা গাছ। জীবনকে কখনও মনে হয় মরিচিকা,কখনও কুয়াশাছন্ন সকালের পূর্ব মহুর্তটুকু আবার কখনও বা অমাবশ্যার নিকষ কালো অন্ধকার। এর মাঝেও আঁধার ঠেলে সূর্য উঠেছে, সমূদ্র সম ঢেউয়ে হৃদয়ের দুকূল ছাপিয়ে উকি দিয়েছে নানান রঙ বেরঙ স্বপ্ন, নাও ভাসিয়ে জানান দিয়েছে টিকে থাকার দোদুল্যমান অস্তিত্ব টুকু। হয়ত একেই বলে জীবন আর জীবনের নদীরূপী পর্যায় বিপর্যয়।


জীবনের জানালা দিয়ে উকি দেয়া স্বপ্ন গুলো এক সময় দূর থেকে দূরে চলে যায়, হারিয়ে যায়, মানুষ নিজেকে বিলীন করে টিকে থাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, এইতো জীবনের ভার্সান, নয়া সংস্করণ। হ্যাঁ তসলিম ভাইও আলাদা কেউ নন এমনই একজন মানুষ যে স্বপ্ন দেখেছেন দেখিয়েছেন আবার প্রজন্মের হাতে সব কিছু তুলে দিয়ে অতীত হয়ে গেছেন দুদিন আগে। আহমেদ আগা তসলিম, আমার দেখা অসাধারণ এক সিংহ পুরুষ, অকুতোভয় এক মুক্তি যোদ্ধা, প্রচার বিমুখ আত্ন ভোলা এক মানুষ।


২০০৫ সালের কোন এক দুপুরে আমার বন্ধু সোহাগের মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিল তসলিম ভাইয়ের সাথে। পঞ্চাশের কোঠায় উপনীত ছ' ফুটি ঝকঝকে পরিপাটি এক তারুণ্যময় মানুষ এই তসলিম ভাই। মায়া ভরা চোখে মুখে ছিল দেশের জন্য অকৃত্রিম ভালোবাসা, থাকাটাই স্বাভাবিক '৭১ এ রনাঙ্গন থেকে যে ছিনিয়ে এনেছেন স্বাধীনতা, লড়েছেন বীরের মতো দেশের জন্য।


যখন এনার্জীপ্যাকে ছিলাম তখন সময় খুব কম পড়ে যেত, ঢাকার রাস্তায় চলে যেত প্রাণ শক্তি তবুও মাঝে মাঝে মাসে দুমাসে এক দু বার দেখা হতো তসলিম ভাইয়ের সাথে। ২০০৫ সালের শেষের দিকে পিডিবিতে যোগ দিয়ে চলে গেলাম দিনাজপুরে, কাক্ষিত মুক্তি মিলে গেল ঢাকার কুৎসিত জীবন থেকে। মুক্তির স্বাদে ঘ্রানে কেটে গেল সময়, বছর দেড়েক ঢাকা আসিনি অনেকটা বিরক্তি থেকেই। টের পেলাম দূরত্ব বেড়ে চলেছে কোন একটা জায়গায়, স্রোতের প্রশ্নে এসেছে বিরাম চিহ্ন। যখন আসলাম তখন ঢাকার অনেক পরিবর্তন, শ্রীহীনতায় ছাড়িয়েছে আমার ধারণা। কিছুই ভালো লাগল না, ভাবলাম হয়তো আমিই বেমানান হয়ে গেছি এ জনপদে, সব কিছুর ব্যাখ্যা যেন খুব সংক্ষিপ্ত তখন, চিন্তার আকাশ যেন মাথা ছুঁয়ে ফেলেছে আমার। কেবল একটা মানুষকেই পেয়েছি সেই আগের উষ্ণতায়, তিনিই আমার তসলিম ভাই।


সাত মসজিদ রোডের চা বারে আড্ডা হতো, দশটা পেরিয়ে কখনও এগারোটায় ঠেকত। আমি দিনাজপুর থেকে আসলে আমার বন্ধু সোহাগ আর রাজীব লোভ দেখিয়ে বলত " চল তসলিম ভাই আসবে চা বারে" আবার উনাকে ফোন দিয়ে বলত " তসলিম ভাই দিনাজপুরের লোক এসেছে, চা বারে যেতে চায়।" অফিসের কাজ সেরে শুরু হতো আড্ডা, কামু ভাই আসতেন, থেকে থেকে রবীন্দ্র নাথ থেকে উদ্ধৃতি দিতেন, জীবনের প্রভাবক কবিতায় যেন প্রশান্তি মিলত। কতো কে আসত আমাদের সেই আড্ডায়! রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, নাট্যাভিনেতা, কর্পোরেট হাউসের বড় কর্তা থেকে শুরু করে আমার মতো অতি সাধারণও। জ্ঞানে, চিন্তায়, আদর্শে, উদারতায় আমি কাউকেই তসলিম ভাইয়ের মতো পরিনত দেখিনি। সভ্য আর সম্পূর্ন মানুষ ছিলেন তিনি। একজন খাঁটি মানুষ আর সংস্কারশীল স্বত্ত্বার অধিকারী ছিলেন এই মার্জিত মানুষটি। খুব সুন্দর করে পোষনকৃ্ত প্রচলিত চিন্তা ধারণা থেকে বের করে আনতেন আমাকে, কোন আদর্শ আরোপের ধারে কাছেও যেতেন না, কেবল সাহায্য করে যেতেন নিজের বিবেক বুদ্ধিকে চিনিয়ে দিতে। বহিঃবিশ্বের রাজনীতিতে ছিল তাঁর অগাধ জ্ঞান, সব কিছু ছকে বেধে ছবির মতো বলে যেতেন। কত গল্প শুনেছি তাঁর থেকে, আমেরিকা থেকে চলে আসার গল্প, সংগ্রামের গল্প, পদ্মা নদীতে উদ্দাম সাঁতারের গল্প, গা শিউরে উঠা মুক্তি যুদ্ধের গল্প। সবই যেন আজ স্মৃতি হয়ে গেল।


অকালেই চলে গেলেন, বড় ঋনী করে রেখে গেলেন আমাদের। কত অজানা অধ্যায় আর জীবনের সাতকাহন উন্মোচিত হলো না। খুব বেশি আসহায় লাগছে আজ, বার বার মনে হচ্ছে আরও বেশি সম্মান প্রাপ্য ছিল এই মানুষটির। আমাদের সূর্যালোকে রেখে অন্ধকারের যাত্রায় বিধাতা ঠিকই আলোয় পথ চলাবেন তসলিম ভাইকে তবুও স্রষ্টার কাছে আবেদন তুমি বাংলার বুকে আবাদ করো এমন অকুতোভয় তসলিমদের যাদের ছায়া নিয়ে পথ চলব আমরা আর মাথা উচু করা বৃক্ষের মতো নিজেকে উজাড় করে ভালবাসবে আমাদের। পরশ পাথরের ছোয়ায় উন্মুক্ত হবে আমাদের হৃদয়।
আজ তোমাকে বিদায় নয় তসলিম ভাই, মুক্তি যোদ্ধা তসলিমকে আমার লাল সালাম।



( তসলিম ভাই রাজীব ও সোহাগের জীবনে কখনও ছায়া আবার কখনও এক রকম আলোর জানালা, তসলিম ভাই সম্পর্কিত অনেক তথ্যই পরে আমি রাজীবের কাছে পেয়েছি )
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×