সকাল এগারটার মত বাজে । মে মাসের প্রচন্ড গরম।
আমি এসেছি গুলশানে । Maxis এর শোরুমে । Maxis তুলনামূলকভাবে নুতন ব্রান্ড। এখনও মানুষ খুব বেশি চেনে না । এনড্রয়েড ট্যাব আর স্মার্ট ফোন বিক্রি করে । কয়েক মাস আগে এক খানা ট্যাব কিনেছিলাম এদের কাছ থেকে। কেনার পর থেকে মনে হচ্ছে সস্তা দামের এই জিনিস না কিনলেই ভাল হত।
কিন্তু প্রোডাক্ট এর অবস্থা যাই হোক শোরুম বেশ সাজানো গোছানো।
রিসেপশনে বিষণ্ণ চেহারার এক তরুনী বসে আছে। গ্রীষ্মের এই প্রখর দুপুরেও তার চোখে আষাড়-শ্রাবণের গভীর বিষণ্ণতা । রিসেপশনিস্টরা সাধারনত হাসিখুশি স্মার্ট ধরনের হয়। এই মেয়েটি ব্যতিক্রম।
আমি তাকে বললাম – “আপনাদের একটা ট্যাব কিনেছিলাম, T25 মডেল । এখন কল করতে গেলে সেটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একটু দেখবেন কি করা যায়।”
আমার কথা শুনে মেয়েটি বোধহয় আরও বিষণ্ণ হয়ে গেল। নিজের পণ্যের বদনাম শুনতে ভাল লাগে না।
সে খুব মনমরা হয়ে বলল – “ওয়ারেন্টি আছে ?”
আমি ওয়ারেন্টি কার্ড বের করে দেখালাম ।
আমি দাঁড়িয়ে আছি ।
মেয়েটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ওয়ারেন্টি কার্ড পরীক্ষা করছে। এখনও তিন মাসের ওয়ারেন্টি বাকি আছে। এটুকু বোঝার জন্য মাইক্রোস্কোপ দিয়ে কার্ড পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়না।
আমি আশেপাশের দিকে তাকালাম।
বেশ সুন্দর করে সাজানো একটা শোরুম । শোরুম দেখে কেউ বুঝবে না যে এদের প্রোডাক্টের কোয়ালিটি এত খারাপ। শোরুমে বিশাল এক ব্যানার লাগানো । Maxis এখন নতুন স্মার্টফোন বিক্রি করছে। মাত্র ৩,৮০০ টাকায় এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন। রীতিমত লোভনীয় অফার।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম । এই বিজ্ঞাপন দেখে মানুষ Maxis এর স্মার্টফোন কিনবে। দুমাস চলার পর এই স্মার্টফোন আর কাজ করবে না । ঠিকমত চার্জ থাকবে না। কল করলে কথা শোনা যাবে না। আমার মতই তারা ওয়ারেন্টি কার্ড নিয়ে রিসেপশনে দাঁড়িয়ে থাকবে। কিছু করার নেই। বাংলাদেশ এরকমই।
আচ্ছা Maxis শব্দটার অর্থ কি ? হাতের কাছে ডিকশনারি থাকলে খুঁজে দেখা যেত। তাদের জিনিস ব্যবহার করছি অথচ শব্দটার অর্থ জানব না এটা ঠিক না । রিসেপশনের মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়। তার তো জানার কথা।
রিসেপশনের মেয়েটির ওয়ারেন্টি কার্ড পরীক্ষা করা শেষ হয়েছে।
সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল - “রেখে যেতে হবে। একমাস লাগবে ঠিক করতে। একমাস পর খোঁজ নেবেন।”
আমি অবাক হয়ে বললাম - “একটা ট্যাব ঠিক করতে এক মাস লাগবে!”
মেয়েটি খুব বিরক্ত হয়ে বলল – “আমাদের টেকনিশিয়ানরা ব্যস্ত । এখন তাদের সময় নেই।”
আমি বললাম –“এক কাজ করলে কেমন হয়। আমি নাহয় একমাস এখানেই অপেক্ষা করি। আপনাদের টেকনিশিয়ানদের ব্যস্ততা কমুক। তারপর আপনারা আমার ট্যাব ঠিক করে দেবেন । তখন একবারে বাসায় যাব।”
মেয়েটি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এরকম অদ্ভুত কথা সে বোধহয় খুব বেশি শোনেনি।
পিপাসা পেয়েছে । এক গ্লাস পানি খাওয়া দরকার। পানির কথা মেয়েটিকে বলতে ইচ্ছে করছে না । কে জানে, তাতেও হয়ত একমাস সময় লাগবে।
আমি কিছু না বলে বাইরে বেরিয়ে এলাম । বাইরে প্রচন্ড রোদ । আমি বাসস্ট্যান্ডের দিকে হাঁটছি । আমার হঠাৎ মনে পড়ল Maxis শব্দটার অর্থ জানা হয়নি । বেশ কিছু দূর চলে এসেছি। শব্দার্থ জানার জন্য এখন আর ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না ।
সবাইকে Maxis ব্র্যান্ডের কোন জিনিস না কিনতে অনুরোধ করছি।