একসময় প্রকৃতি মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করত। আজ কালের পরিক্রমায় মানুষ প্রকৃতিকে নিয়ন্তণ করে। মানুষ প্রথমে দলবদ্ধভাবে গুহায় বসবাস করত। সে দলে একজন দলনেতা ছিল। সভ্যতার বিবর্তনে মানুষে নানা গোষ্ঠির সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হয় নানা সাম্রাজ্য। কিছু মানুষ তার বুদ্ধির জোরে সে সকল সাম্রজ্যের মালিক হয়। পরিচিত হয় রাজা, সম্রাট নামে। সৃষ্টি হয় পৃথিবীতে শ্রেণীপ্রথার। উঁচু-নিচু, ছোট-বড়, কালো-সাদা, বেটে-লম্বা, রাজা-প্রজা সহ আরও অনেক শ্রেণীর। সৃষ্টি হয় শ্রেণী বৈষম্যের। যারা উঁচু জাতের ছিল তারা শুরু করে নিচু জাতের মানুষকে খাটানো। তাদের মনমত না হলে বেছে নেয় অত্যাচারের হাতিয়ার।
একসময় রাজারাই ছিল রাজ্যের মালিক। বলা হয় রাজ-বাড়ীর সামনে দিয়ে নাকি জুতা পরে যাওয়া যেত না। রাজাদের কুর্নিশ করে চলতে হত। রাজহুকুম না মানলে মেনে নিতে হত নির্মম অত্যাচার, কিংবা সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড।
সে যুগে রাজা বলত প্রজারা শুনত। কিন্তু প্রজারা খুব একটা বলার সুযোগ পেত না। রাজার ছেলে রাজা হত। প্রজা কখনও রাজা হয়েছে তা গল্পে শুনা গেলেও বাস্তবে তা হয়েছে বলে কখনও শুনেনি।
আজ যুগ বদলেছে। নেই সে রাজা-প্রজা। কিন্তু সৃষ্টি হয়েছে নতুন ক্ষমাতায়ন, রাষ্ট্রের সরকার।
আগে ফসল-ফলাদি রাজাদের কর দিতে হত। এখন দিতে হয় টাকা, পার্থক্য শুধু এতটুকুই।
মানুষ একজন রাজাকে কুর্নিশ করত। আজ হাজারও রাজার জন্ম হয়েছে সমাজের স্তরে স্তরে। যাদের প্রতিনিয়ত কুর্নিশ করে পথ চলতে হয়। আগে শোষণ করত একজন। এখন যে যারে যেমনে পারে করে।
রাজাদের আমলে আর যাই হোক প্রজারা চাইলে রাজ দরবারে গিয়ে সরাসরি তাদের অভাব- অভিযোগ শুনাতে পারত। কিন্তু আজকের এই আধুনিক সভ্যতার দিনে সরকার প্রধানের কাছে তো দূরে থাক, তার মন্ত্রী-আমলাদের কাছে পৌঁছানো কতজনের পক্ষে সম্ভব হয়, তা আপনারা ভালই জানেন।
সে যুগে হত্যার বিচার প্রকাশ্যে হত যাতে কেউ হত্যা করতে ভয় পায়। আজ প্রকাশ্যে তো দূরের কথা বিচারের আশায় বছরের পর বছর দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়।
মানুষকে আগে যুদ্ধ করতে হত প্রকৃতি, শত্রু, রোগ-শোকের বিপক্ষে। এগুলোর বিপক্ষে এখনও মানুষ কম-বেশি লড়াই করে। কিন্তু নতুন যোগ হয়েছে ক্ষুধা-দ্রারিদ্র্য, নব্য সাম্রাজ্যবাদ ইত্যাদি।
তখনকার রাজারা সৈন্য দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে আরেক রাজ্য দখল করত। আজ করে পণ্য দিয়ে।
একসময় রাজ্যের অধিকাংশ সম্পদের মালিক ছিল রাজার ও তার আমিররা। আজও অল্প কিছু মানুষের(মাত্র ২%) কাছে পৃথিবীর ৯৮% সম্পদের মালিকানা ।
সকল ক্ষমতার অধিকারী ছিল রাজা'রা। আর স্বাদ ভোগ করত তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু বর্তমানে শুধু পরিবারের সদস্যরা নয়, আত্মীয়-স্বজন, আত্মীয়'র আত্মীয়, পরিচিত সহ নানা তোষামদকারী এমনকি বাড়ির কাজের লোকেরাও ভোগ করে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট।
আগে ট্যাক্স দিতে হত একজনকে। এখন কতজনকে দিতে হয় তার ইয়াত্তা নাই।
রাজ পরিবারের লোক মসনদের উত্তোরাধিকার পেত। এখনও তা হয়।
তবুও মানুষ দুইবেলা দুইমুঠো খেয়ে পড়ে নিশ্চিনতে শান্তিতে ঘুমাতে পারত। এখন তাও পারে না।
সভ্যতার পর সভ্যতা তৈরি হয়। তবু নিয়ম বদলায় না। বদলায় শুধু ক্ষমতায়নের ধরন। কিছু মানুষের ভাগ্য খালি উন্নতির শিখরে পৌঁছতেই থাকে। কিন্তু সাধারন মানুষের ভাগ্যের শিকে ছিড়ে না। তবু দিন বদলের আশায় বুক বাধি।