মইন যখন মানিকগন্জ থেকে সাটুরিয়া যাওয়ার জন্য সিএনজিতে উঠতে গেলো, তখন মইনকে পেছনে সিট না থাকায় সামনে ড্রাইভারের পাশে বসতে হলো। ব্যাগটা সিএনজির পেছনে রাখতে গেলে, পেছনে বসা এক লোক আগ্রহ করে ব্যাগটা নিলো এবং সেটা পেছনে না রেখে তার কোলে রাখলো।
মইন বিষয়টাকে তেমন গুরুত্ব সহকারে নেয় নি। কিন্তু কিছু দূর সিএনজি যেতে সিএনজির যে গ্লাস দিয়ে পেছনের সিট দেখা যায় সেটায় তাকিয়ে মইন দেখলো লোকটা তার দিকে তাকিয়ে আছে।
মইনের মনে সন্দেহ ঢুকে গেলো লোকটার কি অন্য কোন মতলব আছে, নাহলে যেচে পরে এরকম একটা ভারী ব্যাগ কেনো সে কোলে নিয়ে বসবে। আবার মইন ভাবছে ব্যাগে তো কোন দামী কিছু নেই, আগামি কয়েকদিনের জন্য কাপড় কয়েক সেট, সেভিং আইটেম, একট বডি স্প্রে, কিছু ওষুধ ও মোবাইল চার্জার। আর তা ছাড়া লোকটা ব্যাগ থেকে যদি কিছু বের করতে যায়, তাহলে পাশে বসা অন্য লোকেরা সেটা খেয়াল করবে, অতএব ব্যাগ থেকে কিছু বের করা তার জন্য সহজ হবে না।
মইন লোকটাকে ভালো করে খেয়াল করে দেখলো, চেহারায় কেমন যেনো একটা ধূর্ত ভাব রয়েছে। পুলিশের সোর্সরা যেমন হয়।
যদি এমন হয় লোকটা পুলিশের সোর্স এবং মইনের বেশভুষা দেখে মইনকে টার্গেট করছে, মইন এর ব্যাগে দুইটা ইয়াবা বা দুই পুরিয়া গাজা ঢুকিয়ে দিয়ে সাটুরিয়ায় নেমে পুলিশকে ফোন দিয়ে ধরিয়ে দেবে। তারপর ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় একটা রফা করে মইনকে ছেড়ে দিবে।
মইনের মনের অস্বস্তি কাটতে না কাটতেই লোকটা সিএনজি থামাতে বললো। মইন ও সামনে থেকে বের হয়ে আসলো পেছনে বসার জন্য, এই বার লোকটাকে ভালো করে খেয়াল করে দেখলো জরাজির্ণ প্যান্ট এবং পুরোনো গেন্জি পরা লোকটির হাতে দুটি ব্যাগে কিছু খালি বোতল। গ্রামের খুব সাধারণ সরল একজন মানুষ যে হয়তো কখনো কারো কিছু অন্যায়ভাবে নেয়ার কথা চিন্তাও করে না।
মইন সিটের উপর রাখা তার ব্যাগ সরিয়ে সিটে বসে মনে মনে লজ্জিত হয়ে ভাবলো, আমরা মাঝেমাঝে চেনা অচেনা লোকদের কিছুটা অস্বাভাবিক কর্মকান্ডের জন্য যে অবিশ্বাস করি সেটা প্রায় ক্ষেত্রেই ভূল হয়। আমরা মানুষকে ভূলভাবে পর্যবেক্ষণ করি যেটা তার প্রতি নিঃসন্দেহে অন্যায় আচরণ।