রাস্তার এক পাশে শশ্বান আরেক পাশে কবরস্থান। আবার রাস্তাটাও ন্যাশনাল হাইওয়ে।শশ্বানে হরিবোল বলে মরদেহ আনা লোকজনের কাছে রাস্তার ওপারের কবরস্থানের মৃতরা নরকবাসী বলেই ধারণা, আবার এ পারের কলেমা বলে কবরস্থানে আসা লোকজনের কাছে ওপারের শশ্বানের মৃতরা জাহান্নামী বলেই বিশ্বাস।
যার যেই বিশ্বাসই থাকুক প্রতিবেশির মত শশ্বান এবং কবরস্থান যুগের পর যুগ ধরে রয়ে গেছে। শশ্বানের ভূত কবরস্থানের ভূতের উপর বা কবরস্থানের ভূত শশ্বানের ভূতের উপর কখনও চড়াও হয়েছে বলেও শোনা যায় নি। তারা পরস্পর শান্তিপূর্ণভাবেই দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করিতেছে।
তবে তারা একযোগে হাইওয়েতে চলমান গাড়ির উপর মাঝেমাঝেই চড়াও হয়, এটা এ রাস্তায় নিয়মিত গাড়ি চালানো ড্রাইভারদের কারো কারো ধারনা। যার ফলে এ অংশে প্রায়ই দূর্ঘটনা ঘটে। কোন এক ড্রাইভারকে জিজ্ঞাস করায় সে বললো, এটুকু পার হতে গেলে ড্রাইভারদের কেউ কেউ নাকি রাস্তাটাকে ডাবল দেখতে পায়, তখনই যত বিপত্তি ঘটে। গাড়ি নিয়ে খাদে পরতে হয় অথবা অন্য গাড়ির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ।
আমার দীর্ঘদিন এ রাস্তায় যাতায়াতে একবারই বড় দূর্ঘটনা দেখেছিলাম, তাও বছর চার পাচেক আগে। আর্মির ট্যাংকবাহী লড়ি এ জায়গার সাথে লাগোয়া ব্রিজের সামনে খাদে পরে গিয়েছিলো। সেবার ভূত আমাদের উপরও চড়াও হয়েছিল। লড়িটা শেষ রাতে খাদে পরায় সকাল থেকেই আর্মির লোকেরা সেটা উঠানোর চেষ্টা করছিলো, যার ফলে রাস্তার দুই পাশে দীর্ঘ জ্যাম ছিলো। আমাদের সকাল নয়টা থেকে পাবলিক পরীক্ষার ডিউটি ছিলো, আমরা সেই জ্যামে পরে ঢাকার দিক থেকে আসা আট নয় জন ১১ টার সময় কলেজে পৌছেছিলাম। যার ফলে আমাদের শো- কজ পেতে হয়েছিলো, আমার চাকুরি জীবনের প্রথম শো-কজ, এটা ভূতের কারসাজি ছাড়া আর কিছু হতেই পারে না।
দু কলম বিদ্যা যার পেটে পরেছে সে হয়তো বলবে ভূতটূত কিছুই না, ড্রাইভার ব্যাটা হয়তো শেষ রাতে ঘুমিয়ে গাড়ি চালিয়েছে অথবা ভরপেট চোলাই খেয়ে রাস্তায় নামছে যে কারনে এ দূর্ঘটনা ঘটে।
সম্প্রতি ঢাকা-টাঙ্গাইল রোড চার লেনের কাজ চলায় এ জায়গাটাও চার লেন হচ্ছে। কবরস্থানের বেশিরভাগ জায়গার উপর দিয়ে নতুন রাস্তা যাচ্ছে। কবরস্থানকে অবশ্য রাস্তা সংলগ্ন নতুন অনেকটা জায়গা দেয়া হয়েছে।
এত ক্ষণে হয়তো অনেকের কৌতুহল হচ্ছে জায়গাটা কোথায়? টাঙ্গাইলের আগে পাকুল্লা নামে একটা জায়গা আছে, তার সামনে জার্মুকি তে এই ভূতের আখড়া। যদিও টাঙ্গাইলের চমচম, টাঙ্গাইলের বিল পাড়ার মিষ্টির মত জার্মুকির সন্দেশও বিখ্যাত।