আমি এবং আমার বউ কঠিন একটা সময় পার করতেছি। আমার মেয়ের এ বছর ভর্তি পরীক্ষা। সে ২য় শ্রেণীতে পড়ে।
আমার মত যারা জেলা শহরে পরিবার নিয়ে বাস করে তারা প্রায় সকলেই জানেন, জেলা শহরের সরকারি গার্লস এবং বয়েজ স্কুলটাই ঐ জেলার সবচেয়ে ভালো স্কুল। যদিও মানের দিক থেকে ঢাকা এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরের ভালো স্কুলগুলোর তুলনায় তেমন কিছুই না। তারপরও এ স্কুলগুলোতে যে প্রতিযোগিতা হয় সেটা প্রায় আতংকিত হওয়ার মত।
ক্লাস টু এর বাচ্চার লেখাপড়াটা হবে হাসতে হাসতে খেলতে খেলতে, সেভাবেই কারিকুলাম করা আছে। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার জন্য এই বাচ্চাকে কোচিং থেকে যা পড়াচ্ছে সেটা ক্লাস থ্রি, ফোর এবং ফাইভের সিলেবাসের পড়া। বাচ্চাদের এ জন্য যে চাপটা দেয়া হয় সেটাকে অমানবিক বললেও কম বলা হয়।
আমার প্রতি সপ্তাহের সাধারণ ঘটনা মা মেয়ের বিবাদ মিটানো। মেয়ে ঠিকমত পড়বেনা, সেটা নিয়ে মার একগাদা অভিযোগ। আমাকে অনেক সময় মেয়ের প্রতি রূঢ় আচরন করতে হইছে।
কোচিং এর অভিভাবকদের একটা যুদ্ধাংদেহী ভাব আছে। যে মায়েরা চাকুরিজীবি না, তারা শেষ রাতে রান্নাবান্না শেষ করে সারাদিনই বাচ্চার পেছনে লেগে আছে। কোচিং করাচ্ছে, প্রাইভেট পড়াচ্ছে এর পর সারাদিন নিজেরা পড়াচ্ছে। আমরা দু'জনই চাকুরিজীবি এবং আমাকে সপ্তাহের বেশিরভাগ সময় আমার বাড়ির বাইরে কর্মস্থলে থাকতে হয়। মেয়ের মা তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্ঠা দিয়ে এখন ক্লান্ত। মানুষের সময় কেটে যায় টের পায় না, আমাদের আগামি চার পাচটা মাস পার হতে চাচ্ছে না।
একটা সময় ছিলো অজপাড়া গায়ের স্কুল থেকেও বোর্ডে স্ট্যান্ড করতো, কারণ তখন স্কুলে ভালো শিক্ষক ছিলো। মেধাবি ছেলে মেয়েরাও বাড়ির কাছের স্কুলে পড়তো। কিন্তু এখন এ সমস্ত স্কুলে ভালো শিক্ষক কমে গেছে। যে কারণে জেলা সদরের এই স্কুল দুটাতে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সারা জেলা থেকেই ছেলে মেয়েরা আসে।
জেলা শহরে অন্য যে স্কুলগুলো আছে সে স্কুলগুলোতে পড়ানো যাবে না তা না, জেলার বেশিরভাগ মেধাবিরা এই স্কুলদুটিতে ভর্তি হওয়ায়, বাচ্চারা এই স্কুলে চান্স না পেলে পরবর্তিতে প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে পরে। মানসম্মান হানির একটা ব্যাপারও হয়ে যায়।
পরিশেষে নজরুলের ভাষায় বলতে হয়,
"এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।"
এই দুঃসময় যাতে কেটে যায়, মেয়েও যাতে ভর্তি হতে পারে সকলের কাছে এই দোয়া চাচ্ছি।