করোনার এই সময় যদি স্বাভাবিক অবস্থা থাকতো এবং আমরা ছুটিতে থাকতাম তাহলে দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ানো যেতো। সে উপায় যেহেতু নাই তাই ঘুরে আসা পুরোনো জায়গা গুলো নিয়ে ভ্রমন কাহিনী লেখা শুরু করলাম।
গত বছর জুন মাসে গেছিলাম দার্জিলিং ও কালিম্পং। সেটা দিয়েই ভ্রমন কাহিনী শুরু করা যাক।
ঢাকা থেকে দার্জিলিং যেতে চাইলে আপনাকে শিলিগুড়ি হয়ে যেতে হবে। শিলিগুড়ি অনেকভাবেই যাওয়া যায়,
১। বুড়িমারি স্থলবন্দর হয়ে শিলিগুড়ি ।
২। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর হয়ে শিলিগুড়ি।
এছাড়া কেউ যদি কলকাতা হয়ে যেতে চায় তাহলে,
১। কলকাতা থেকে বাসে শিলিগুড়ি।
২। কলকাতা থেকে ট্রেনে শিলিগুড়ি।
৩। কলকাতা থেকে প্লেনে বাগডোগরা এয়ারপোর্ট, যেটা বাই এয়ার যাওয়ার একমাত্র উপায়।
আমাদের চাকরিতে বড় কিছু ছুটি থাকে। গত বছর রোজা, ঈদ এবং গ্রীষ্মকালীন ছুটি একসাথে পরে যাওয়ায় আমরা প্রায় ৩৫ দিনের ছুটি পেয়েছিলাম। সমস্যা হচ্ছে রোজায় ঘুরতে যাওয়াটা খুব সুবিধার বিষয় না, তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ঈদের দুই দিন পর যাব।
আমরা বলতে আমি আর একই চাকরিতে কর্মরত আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু সুৃমন।
সার্কভুক্ত দেশে অফিসিয়াল পাসপোর্ট থাকলে কোন ভিসা লাগে না। তাই আমরা শুধু অধিদপ্তর থেকে বহিঃবাংলাদেশ একটি ছুটির অনুমোদন করে নিয়েছিলাম।
আমরা বুড়িমারী হয়ে শিলিগুরি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায়, যাওয়ার ৮/১০দিন আগে টেকনিক্যালের কাছে মানিক এক্সপ্রেসের কাউন্টার থেকে দুটি এসি বাসের টিকেট কেটেছিলাম।
আপনি বুড়িমারী যেতে চাইলে শ্যমলী, হানিফ, মানিক এক্সপ্রেস সহ আরো কিছু এসি/ ননএসি গাড়ি পাবেন। এগুলোর ভেতর শুধু শ্যামলী সরাসরি শিলিগুড়ি পর্যন্ত যায়।
ঈদের দুই দিন পর আমরা দুই বন্ধুর একজন কিশোরগন্জ থেকে আর আমি মানিকগন্জ থেকে রাত ৮ টার দিকে কাউন্টারে চলে আসলাম। আমাদের গাড়ি ছাড়ার সময় ছিলো রাত ১০টা কি ১০টা ৩০। গাড়ি ছাড়তে আধা ঘন্টা দেরি হয়েছিলো।
ঢাকা থেকে সিরাজগন্জ রোড পর্যন্ত আমরা নির্বিঘ্নেই গেলাম কিন্তু তারপর শুরু হলো জ্যাম। সেই জ্যাম পার হয়ে বগুড়া যখন যাই তখন সকাল ৭ টা ৩০ বাজে। আমরা বুড়িমারী পৌছলাম দুপুর ১ টার দিকে।
আমাদের গাড়িটা লালমনিরহাটে কিছু সময় বিরতি দিয়েছিলো, সে সময় ঢাকায় ব্যাবসা করে এমন তিন বন্ধুর সাথে আমাদের পরিচয় হয়। যারা আমাদের গাড়ির সহযাত্রী ছিলো। তারা আামাদের সাথে একসাথে শিলিগুড়ি যাওয়ার ইচ্ছা জানায়। গাড়ি ভাড়ার সময় লোক বেশি হলে সুবিধা হবে ভেবে আমরা রাজি হয়ে গেলাম।
ইমিগ্রেশন এ ৫০০ টাকার ট্র্যাভেল ট্যাক্স জমা দিতে হয়। ট্র্যাভেল ট্যাক্সটি আপনি চাইলে আগেও কেটে নিতে পারেন। বুড়িমারীতেও কাটতে পারেন। আমরা বুড়িমারীতেই ব্যাংক থেকে ট্র্যাভেল ট্যাক্স কেটে ইমিগ্রেশন এর কাজ শুরু করলাম।
ভারতের অংশে প্রথমেই কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের সিল পাসপোর্টে নিতে হয়। কাস্টমস কর্মকর্তা সবার কাছ থেকে ৫০ টাকা করে নিচ্ছে আর সিল দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। আমার কাছে টাকা চাইলে বললাম, " আপনি একটি দেশের সরকারি কর্মকর্তা, আমার কাছে অফসিয়াল পাসপোর্ট আছে মানে আমি অন্য একটি দেশের সরকারি কর্মকর্তা, তারপরও আপনি কিভাবে টাকা চান? " সে যথারীতি লজ্জিত হয়ে তার এক কর্মচারীকে ডিক্লেয়ারেশন ফর্ম দিতে বললো পূরণ করার জন্য। এই ফর্ম পূরণ করাটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ফর্ম পূরণ করে কাস্টমস কর্মকর্তার সাথে কিছু সাধারন কথাবার্তা শেষে বের হয়ে আসলাম।
ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে চ্যাংড়াবান্দা পোর্টেই ডলার ভাঙ্গালাম। ভালোই দাম পাওয়া গেলো। আমরা শিলিগুড়ির গাড়ি ভাড়া করে শিলিগুড়ির দিকে রওয়ানা দিলাম তখন বিকেল পাঁচটা বাজে। কিছুদূর যাওয়ার পর গাড়ির ড্রাইভার আমাদের প্রস্তাব দিলো তার গাড়ির বদলে টাটা সুমো জিপে যাওয়ার। আমরা তাকে জানালাম শিলিগুড়ি নামার আগে আমরা ভাড়া দিবো না। সে রাজি হয়ে ফোন করে গাড়ি আনলে আমরা গাড়ি চেন্জ করলাম। পরে জানলাম জিপের ড্রাইভারের বাড়ি শিলিগুড়ির দিকে হওয়ায় তারা গাড়ি বদলের প্রস্তাব দিছে।
জ্যাম যেনো আমাদের পিছু ছাড়ছেনা, এ পারেও জ্যামে পরলাম। জ্যাম ঠেলে রাত আট টায় শিলিগুড়ির হোটেল সেন্ট্রাল প্লাজার সামনে আামাদের নামিয়ে দিলো। সেন্ট্রাল প্লাজার পেছনের গলির এক হোটেলেই আমরা উঠলাম।
(চলবে......)