somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দার্জিলিং, ক্যালিম্পং ভ্রমন, পর্ব-২

১৫ ই জুন, ২০২০ রাত ৮:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিলিগুড়িতে হোটেল ভাড়া করতে যেয়ে টের পেলাম ট্যুরিস্টের অনেক চাপ আছে। অনেক হোটেলেই রুম ফাকা ছিলো না, যে দুই একটা পেলাম ভাড়া অনেক বেশি চাচ্ছিল।

অবস্থা যখন এ রকম তখন আমরা বাংলাদেশে ফেরার বাসের টিকিট কেটে তারপর দার্জিলিং যাব সিদ্ধান্ত নিলাম। সেন্ট্রাল প্লাজার সামনে যে শ্যামলী কাউন্টার তারা জানালো আগামী দশ দিন তাদের কোন সিট ফাকা নেই, সামনে আরেকটি কাউন্টার আছে সেখানে খোঁজ নিতে বললো।

সকালে নাস্তা করে সেই কাউন্টারে যেয়ে দেখি সেখানেও একই অবস্থা তবে চার দিন পর শেষের দুইটা সিট ফাকা আছে। কোন চিন্তা ছাড়াই টিকেট কেটে ফেললাম।

সেন্ট্রাল প্লাজার সামনে দাঁড়ালে একটু পর পরই দার্জিলিং এর গাড়ি পাওয়া যায়, ভাড়া ১৫০ রুপি। আমরা এ রকম একটি গাড়িতে যখন উঠলাম তখন সাড়ে নয়টা বাজে।

আমরা দার্জিলিং শহরে প্রবেশের আগে আবার জ্যামে পড়লাম। জ্যাম ঠেলে আমরা যখন দার্জিলিং নামলাম তখন ১ টার কিছু বেশি বাজে।

দার্জিলিং এ হোটেল খুঁজতে যেয়ে দেখলাম অনেক হোটেলেই রুম ফাঁকা নেই, যাও আছে অনেক বেশি ভাড়া চাচ্ছে। এর মাঝে আছে দালালদের যন্ত্রনা, যে হোটেলেই যাই পিছে পিছে দালাল হাজির। ঘন্টাখানেক ঘুরাঘুরির পর একটা হোটেল ঠিক হলো দুই দিন এর জন্য ৪০০০ রুপি।

হোটেলে উঠার পর হোটেলের রফিক নামের এক কর্মচারী বিভিন্ন প্যাকেজের প্রস্তাব দিলো, এক বেলার জন্য এক জন ২৫০ রুপি। নিজেরা গাড়ি ভাড়া করে ঘুরতে গেলে অনেক খরচ পরে যাবে ভেবে আমরা রাজি হলাম। এটা শেয়ারের গাড়ি, আমরা দুই জন বলে এছাড়া উপায়ও ছিলো না।

দুপুরের খাবারের পর আমরা গাড়িতে উঠলাম। আমাদের সাথে মুর্শিদাবাদের দুই দম্পতি ছিলো, আায়নাল ভাই আর রফিক ভাইয়ের পরিবার। তারা পেশায় শিক্ষক হওয়ায় তাদের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলো।

আমাদের ছয়টা স্পট দেখাবে, ১। চিড়িয়াখানা ২ চিড়িয়াখানার ভেতরে একটা মিউজিয়াম আছে সেটা। ৩। HMI, এটাও চিড়িয়াখানা কম্পাউন্ডের ভেতরে। ৪। টি গার্ডেন, ৫। তেনজিং রক, ৬। রোপ ওয়ে।

পাহাড়ের উপর চিড়িয়াখানাটা ভালো লাগবে, মিউজিয়ামটা এভারেস্টে উঠার ইতিহাস, ঐতিহ্য সংক্রান্ত এবং পাহাড় সংক্রান্ত একটা সংগ্রহশালা।HMI হচ্ছে Himalayan Mountearing Institute.

টি গার্ডেনটা ভালো লাগবে, পাহাড়ের ঢাল বেয়ে চা বাগান যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। টি গার্ডেনে রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে ফ্রি চা খাওয়াবে, ভালো লাগলে চায়ের দোকান থেকে চা পাতা কিনতে পারেন। দাম তেমন বেশি না। কিছুটা দ্বিধা দন্দ নিয়ে অনেকটা চা পাতা কিনে ফেললাম। রাস্তার পাশের চা পাতার দোকান ভালো হবে না খারাপ হবে সন্দেহ কাজ করছিলো। পরে বাসায় এসে দেখছি দার্জিলিং এর ভালো দোকান থেকে কেনা চায়ের মানের তুলনায় এটার চা খুব একটা খারাপ না। দার্জিলিং এ পৃথিবী বিখ্যাত চা উৎপন্ন হয় যেটার দাম অনেক বেশি, সেটা আমি কিনি নাই অতএব সেটার সাথে তুলনা করে লাভ নাই।

যে টি গার্ডেনে আমরা গেছিলাম তার অল্প একটু দূরেই তেনজিং রক, এখানে ক্লাইম্বিং অনুশীলন করা যায়।

রোপ ওয়েতে আমরা যখন যাই তখন মেরামত করছিলো, রোপওয়ের ক্যাবল কার ছিড়ে পরে যেয়ে কয়েকজন মারা গেছিলো।

সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে শহর ঘুরতে এবং মার্কেটগুলোর দিকে গেলাম। বিগবাজার এখানকার বড় সুপারশপ, আমরা ঢুকে দেখলাম মানুষে গাদাগাদি অবস্থা। কেনকাটা করে পেমেন্ট করতে যেয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে দেখি আমার সামনেও বাংলাদেশী পিছনেও বাংলাদেশী। এটা এ জন্য বলা যে কি পরিমান বাংলাদেশ থেকে ঘুরতে গেছে বোঝানোর জন্য।

রাতে হোটেলে ফিরে টাইগার হিলে যাব কি যাব না কনফিউশান এ থেকে সিদ্ধান্ত নিলাম যাব না। রফিক আমাদের পরামর্শ দিলো লোকাল ট্রান্সপোর্টে ২০ রুপি দিয়ে যেয়ে বাতাসিয়া লুপ আর ঘুম মনেস্ট্রি দেখে আসতে। আমরা সে ভাবেই বাতাসিয়া লুপ এ গেলাম। টয় ট্রেনগুলো বাতাসিয়া লুপ এ এসে কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়। আবহাওয়া ভালো থাকলে এখান থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। অবশ্য রফিক আমাদের বলছে হোটেল থেকেই নাকি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। বাতাসিয়া লুপ থেকে ফেরার পথে ঘুম মনেস্ট্রি না দেখে আমরা বোটানিক্যাল গার্ডেন যাব চিন্তা করলাম।

শহরের সাথে লাগায়ো বোটানিক্যাল গার্ডেনটা ১৮০০ খ্রীস্টাব্দের। গার্ডেনে যাওয়ার পথে ঢাল বেয়ে নামতে নামতে ভাবছিলাম ফেরার পথে উঠবো কিভাবে? এসে মনে হলো আমরা ভুল করি নি। এ পর্যন্ত মানুষ, জ্যাম দেখে কোথাও প্রকৃতির শান্ত নিস্তব্ধ রূপ খুজে পাই নি, এখানে এসে সেটা পেলাম। দুপুরে রক গার্ডেন যাব বলে একটু তারাতাড়িই হোটেলে চলে এলাম।

রক গার্ডেনে যাওয়ার সময় গাড়িতে আমাদের সহযাত্রী ছিলো আমাদের হোটেলে উঠা হিন্দিভাষী এক গ্রুপ, যথেষ্ট উগ্র এবং অসামাজিক হওয়ায় তাদের সাথে তেমন কোন কথাবার্তা হয় নি। রক গার্ডেন যাওয়ার রাস্তাটা ভয়ংকর, খাড়া ঢাল বেয়ে এবং আঁকাবাকা রাস্তা দিয়ে যেভাবে গাড়ি নীচে নেমে যাচ্ছিল সেটাতে ভয় পাওয়ারই কথা। মনে হলো আমরা উঁচু পাহাড় থেকে একেবারে সমতলে নেমে আসছি। রক গার্ডেন আহামরি তেমন কোন স্পট না, যাওয়া আসাটায় একটা এডভেঞ্চার আছে।

টাইগার হিলটা বাদ পরে যাচ্ছে বলে পরদিন টাইগার হিল যাওয়ার জন্য রাত ৪টার দিকে রফিক আমাদের ডেকে তুললো। ঘুম ঘুম চোখে গাড়িতে উঠে কিছুদূর যেয়ে জ্যামে পড়লাম, দার্জিলং শহর পার হতে হতেই সূর্য উঠে গেলো। টাইগার হিলের ছয় সাত কিলোমিটার আগে গাড়ি জ্যামে আটকে গেলো, ড্রাইভার বললো গাড়ি আর যাবে না আপনারা গেলে এখান থেকে হেটে যান। আমাদের সহযাত্রী সেই হিন্দিভাষী গ্রুপটা আর আমরা ড্রাইভারকে বললাম আমরা যাব না আপনি ফিরে চলেন। ড্রাইভার বাতাসিয়া লুপ এ গাড়ি থামালে আমরা ড্রাইভারকে বলে লোকাল ট্রান্সপোর্টে হোটেলে ফিরে আসলাম।

একটু পরেই আমরা ক্যালিম্পং এর দিকে রওয়ানা দিবো। (চলবে---)



৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×