কিছু মানুষ মনে করে এই পৃথিবীর অনেক কিছুই তারা রাতারাতি পাল্টে ফেলবে। তাদের উদ্যোগ-আবেগ আর প্রচেষ্টা যতই থাক তাকেও ছাপিয়ে যায় প্রপাগাণ্ডা আর প্রত্যাশার ব্যাপ্তি। কিছু মানুষ আছে যারা পরিবর্তনের কথা শুনলেই কিছুটা পরিবর্তন চোখে দেখতে শুরু করেন।...হ্যারে আসলেইতো এই আমগাছটাতো এখানে ছিল না, এলো কী করে? নাকি ছিল? আগে লক্ষ করিনি। কেমন যেন সেব পরিবর্তন হয়ে গেছে।...এমন আজব পরিবর্তন এই সরকারের আমলে আমরাও দেখেছিলাম...নিজেকে পজিটিভ থিংকার্স ভাবতে (থিংক) গিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা, তরুণ নেতৃত্ব, কয়েকটি বক্তৃতা ইত্যাদি শুনে সেই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসছে বলেই ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু কতটা পরিবর্তন হলো তা কি আজ ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে পরিষ্কার নয়? তিনি ওয়ান ইলেভেনের মতো সুনামির আশংকা করছেন। তার এ উক্তির জন্য তাকে শত সাধুবাদ না জানালে কার্পণ্য হয়। কিন্তু তিনিও কি গালসর্বস্ব নেতাই নন আওয়ামী লীগের? দু-চারটে মুখরোচক কথা ছাড়া আর কি কোনও পরিবর্তন তিনি আনতে পেরেছেন, তার দলে? শুনেছি আমল বিহীন আলেমের সমাজে দাম থাকে না; তেমনি কি?....
বারাক ওবামার পরিবর্তন-পলিসি, হাসিনার পরিবর্তন অঙ্গীকার স্বর্ণযুগের মুতাজিলাদের চেয়ে কম কী? কিন্তু পরিবর্তন চাওয়া সত্ত্বেও কেন কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসে না? এর একটিই কারণ আমরা অন্যকে পরিবর্তন করাতে চাই, নিজেকে রাখতে চাই আগের মতোই। সদাই বলি তার এটা করা উচিৎ ছিল ওটা করা উচিৎ হয়নি। কিন্তু কখনও এটা ভাবি না এটাতো আমার করা উচিৎ হচ্ছে না...ঔচিত্যবোধ, জ্ঞান, উপদেশ সবই যেন শুধু অন্যকে বিলাবার জন্যই। প্রথম আলো বোধয় এটাও টের পেয়ে যায় তাই সাজিয়ে বলে বদলে যাও, বদলে দাও। তবে তারাই বোধয় সবচেয়ে দ্রুত ভোল পাল্টাতে পারে, পারে অন্যকেও বদলাতে। এই দেখা গেলো সরকারের পক্ষে খানিকটা সাফাই গাইলেন, বিরোধীদলকে ধুয়ে দিলেন তারপরই আবার দেখা যাবে সরকারের কোনও সিদ্ধান্তকে সামালোচনা করে হেডলাইন করে আগের দিনের ঘাটতি পুষিয়ে নিলেন। সরকারকে অবিরামভাবে সাপোর্ট জানাতে জানাতেও হঠাৎ আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণ নিয়ে আটঘাঁট বাঁধা রিপোর্ট করে ফেললেন। এমন রাতারাতি পাল্টে যাওয়ারই সমালোচনা করে জবাব দিল সবকিছু বদলে দিতে নেই...সত্য সংবাদ সুন্দর সম্পর্ক।
যারা এতোদিন ভেসে যাচ্ছিলেন পরিবর্তনের তোড়ে, তারা তীর পেলেন; সব পরিবর্তন কিন্তু যাচ্য নয়। আমরা আমাদের জীবনে এই পরিবর্তনের হাওয়াকে অনেকভাবেই দেখি....গত চারটি বছর তিন ভাই একত্রে থাকার পর এই এপ্রিলে বাসা পরিবর্তন করে আলাদা হলাম। এই পরিবর্তন কি পজিটিভ নাকি....
ভেবেছিলাম বাসা বদলের সাথে সাথে আমাদের স্বভাবেরও অনেক পরিবর্তন হবে। হয়নি। অফিসে হঠাৎ একজন ব্যক্তির আগমনে ব্যাপক পরিবর্তনের আভাস পেলাম কিন্তু শেষে সেই পর্বতের মুষিক প্রসব। যারা সুযোগ-সুবিধা নিত, তারা বৈধভাবে আরও বেশি সুযোগ–সুবিধা পেলো। কারও ভাগ্য ফিরলো আর কারও কপাল পুড়লো, পরিবর্তন বটে! বাকীদের ধৈর্য-সংযম শিক্ষা আর সান্ত্বনা দিয়ে ধরে রাখা হলো নিরপেক্ষতা। অবিচার-সুবিচার অত্যাচার যাই হোক বিরোধীদল চাইলেই আবার রাতারাতি সব পাল্টে যাবে না। তেমনি আমাদেরও সবকিছু পাল্টে গেলো না। আমরা পরিবর্তন প্রত্যাশীরা আবার প্রত্যাশা আর সংযম নিয়ে পরিবর্তনের অপেক্ষায়। এবার হয়ত বাসা পরিবর্তনের মতো অফিস পরিবর্তন হবে কিন্তু মানুষ পাল্টাবে না।...
জীবনের সঙ্গে রাজনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে, তাই রাজনীতিতেও আমরা যতো গলা ফাটাই পরিবর্তন আসে না। আসলে নিজেকেই পাল্টাতে হবে আগে। কিন্তু সেটাই যদি পাল্টাই তবে আর পরিবর্তন কেন চাইবো? ধরা যাক মানুষ মানুষ বলেই তার এতো দু:খ কষ্ট, তাহলে সে যন্ত্র হয়ে যেতে পারে...কিংবা দরিদ্র যে সে দরিদ্র বলেই এতো কষ্ট তাকে ধনী করে দেয়া হলো...তাতে কি দু:খ কষ্ট কমবে? কমবে। তার দু:খ কষ্ট কমবে কিন্তু দরিদ্রের কষ্টতো কমবে না। অন্য কোনও দরিদ্রের কষ্ট থেকেই যাবে। তাহলে কি মানুষ বা ব্যক্তির নয় পরিবর্তন প্রয়োজন সিস্টেমের? তাওতো নয়।...একটা উদাহলণ দেই...মুশকিল নামে আমার এক কলিগ একবার একটা গাড়ি চালাতে গিয়ে দেখলো গাড়ির গিয়ার উল্টা। সে গাড়ি চালাতে পারল না, ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলে ড্রাইভার দেখিয়ে দিল...সে বুঝলো গিয়ার-সিস্টেস আলাদা। এরপর সেও চালাতে পারলো কিন্তু বারবার বিব্রত হলো গিয়ার চেইঞ্জ করতে গিয়ে। কিন্তু গাড়িতো ঠিকই চললো...সিস্টেমের পরিবর্তনতো গাড়ির গতি কেড়ে নিতে পারেনি।... যদি এ গাড়ি এতকাল বারে বা বারবিকিউতে গিয়ে থাকে এখনও যাবে...যদি অন্য কোনও দিকে যেতে হয় তারজন্য প্রয়োজন ব্যক্তির পরিবর্তন। কিন্তু আমরাতো দেখলাম ব্যক্তির পরিবর্তনেও সব পরিবর্তন হয়নি, না আপনার আমার সংসারে, না রাষ্ট্রে, না অফিস আদালতে। তাহলে পরিবর্তন কি আসলে উভয়েরই দরকার? সিস্টেম এবং সিস্টেম যিনি চালাবেন তার এমনকি পরিবেশেরও? আর সেই পরিবর্তণ কি শুধুই মৃত্যুতে? সে কারণেই কি মুত্যুকে বলা হয় ইনতিকাল?....না হোক কোনও পরিবর্তন শুধু চেয়ে থাকলাম সেই মহাপরিবর্তন দিবসের দিকে.....