somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অমর একুশে বইমেলা-২০১৫ পর্যালোচনা

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলছিল হরতাল, আবার এর সাথে শুরু হলো ক্রিকেট বিশ্বকাপ, কিন্তু অমর একুশে বইমেলাতে মানুষের ঢলে কোন পরিবর্তন ছিল না। অনেকে শুধু হয়তো বই দেখার জন্য অথবা নিজের চেহারা টিভি পর্দায় দেখানোর জন্য অথবা বিখ্যাত কোন লেখকের দেখা পাওয়ার আশায় গিয়েছিলেন বইমেলাতে। তবে এটি না বললেই নয় এবারের বইমেলায় মানুষের ভিড়ের কমতি ছিল না। বইমেলা বলতেই লেখকদের মিলনমেলা। আমরা যারা কিছু লেখালেখি করার চেষ্টা করি, তাদের জন্য বইমেলা এক মিলনমেলার নাম, বিভিন্ন নতুন লেখকদের সাথে পরিচিত হবার নাম। যদিও নিজের কোন বই বের হয়নি, কিন্তু পরিচিত নানা জনের বই বের হওয়া দেখে বা বই বের হবার কথা শুনে ভালোই লেগেছে। বইমেলায় হাটতে হাটতে হঠাৎ যখন সামনে ইমদাদুল হক মিলন স্যারের সাথে দেখা হয়ে গেল তখন মজা পেয়েছিলাম। তার সাথে কথা বললাম, তার নতুন বই কিনে তার অটোগ্রাফ নিলাম, তার সাথে ছবি তুললাম। এ যেন এক আলাদা অনুভূতি। বইমেলায় ঘুরতে ঘরতে হঠাৎ একজায়গায় ভীড় দেখে গিয়ে দেখি জাফর ইকবাল স্যার। আমি ছোট বেলা থেকে গণিত অলিম্পিয়াড, ভাষা প্রতিযোগ পরবর্তীতে সাংবাদিকতা করার কারণে জাফর ইকবাল স্যারের দেখা পাওয়াটা স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু এ কথা সত্যি যে আমি জাফর ইকবাল স্যারকে সরাসরি দেখলাম এবারের বইমেলাতে। এরকম বিখ্যাত লেখকদের সাথে দেখা হওয়া ছিল বইমেলার নিয়মিত ঘটনা। বইমেলার মাঝামাঝি সময়ে লেখকদের ভীড় ছিল অনেক বেশি। আমার পরিচিত কয়েকজনের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন দেখলাম, তাদের বই কিনলাম, অটোগ্রাফ নিলাম; তারাও খুশি হলো আবার আমার বই কেনাও হলো! শোনা গেছে এবারের বইমেলায় সাড়ে তিন হাজারের মতো বই বের হয়েছে। যা বাংলা সাহিত্যের জন্য একটি ভাল সংবাদ। আরেক খবর চমৎকৃত করেছে সবাইকে, সেটি হলো এবারের বইমেলায় তরুণ লেখকদের বই ছিল বেশি। কিছু কিছু সম্পাদনা বই বের হয়েছে যেখানে নবীন লেখকদের একটি করে লেখা ছাপানো হয়েছে। এই উদ্যোগটি খুব ভাল ছিল। নতুন লেখকরা এতে আরো বেশি লেখার উৎসাহ পাবে। হুমায়ুন আহমেদ চলে যাওয়ার পর বইমেলায় তাকে সবাই খুব মিস করে। দেখা যায় বিভিন্ন প্রকাশনীতে ঠিকই তার পুরনো বই-ই বেশি বিক্রি হয়। কিছু প্রকাশক হুমায়ুন আহমেদকে বা তার বই বেচেই তাদের প্রকাশনীকে টিকিয়ে রাখতে পেরেছেন। বইমেলায় তরুণদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করার মতো। তারা বই না কিনলেও বই দেখতে যে বইমেলায় এসেছে এটিই একটা ভাল দিক। অনেকে বলেছেন এবারের বইমেলায় নাকি দর্শনার্থীর সংখ্যাই বেশি, ক্রেতার সংখ্যা কম। এটিকে অনেকে নেতিবাচক ভাবে নিলেও আমি এটিকে ইতিবাচক ভাবেই নিতে চাই। বই কিনুক আর না কিনুক তরুণ প্রজন্ম যে বইয়ের প্রতি ভালবাসা থেকে বইমেলাতে এসেছে এটিই তো অনেক। অনেকে নতুন লেখকদের লেখার দূর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমি তাদের কাছে প্রশ্ন করতে চাই, তরুণ লেখকদের প্রথম একটি দুইটি বইতেই যদি আপনি তাদের লেখা বিশ্বমানের চান তাহলে আপনি কি ধরনের সমালোচক? অনেক তরুণ লেখকের লেখা যে ভাল ছিল তা তারা স্বীকার করতে চান না। মানের কথা বলতে গিয়ে যদি আপনি হুমায়ুন আহমেদের প্রথম দিকের উপন্যাস শঙ্খনীল কারাগার বা নন্দিত নরকের উদাহরণ দেন তাহলে আপনাদের একটি বিষয় মনে রাখতে হবে সবাই কিন্তু হুমায়ুন আহমেদ হয় না। অনেকে ভেবেছেন তরুণরা অর্থ আয়ের জন্য বই বের করেছেন। কিন্তু কয়েকজন তরুণ লেখকদের সাথে কথা বলে জেনেছি, তাদের কোন অর্থ দেয়া তো দূরের কথা কিছু কিছু প্রকাশক তরুণ লেখকদের বই প্রকাশের জন্য তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বা ৫০-১০০ বই কিনে নিতে বাধ্য করেছেন। তবুও তরুণরা নিজেদের লেখা সকলের কাছে পৌছে দিতে নিজের বই প্রকাশের চেষ্টা করেছেন। কিছু কিছু বইয়ের নাম নিয়ে অনেক সমালোচনা ছিল। কিন্তু সেগুলো সমালোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অশ্লীল নাম দিয়ে বই আমরা আগে প্রচুর দেখেছি। এবারের বইমেলার বইয়ের নাম অশ্লীল ছিল না, কিন্তু কিছু কিছু বইয়ের নাম একটু অদ্ভুত ছিল। এবারের বইমেলায় নাম নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার স্বীকার হওয়া বইটির নাম, নিচের ঠোট কামড়ে ধরে কাদতে নেই। লেখক আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং আমাদের বন্ধু; তার কাছে নামের কারণ জানতে চাইলে সে অনেক ভাল যুক্তি দিয়েছে এবং ফেসবুকের মজা লস পেজে তার বইয়ের নামে ট্রল প্রকাশ হওয়ার পর সে এর প্রতিবাদ জানিয়ে কেন বইয়ের নাম এমন হলো তার ব্যাখ্যা দিয়েছে। বইমেলার শেষে দেখা গেছে সমালোচনা সহ্য করে তার বই-ই প্রচুর বিক্রি হয়েছে। বলা হয়, নেতিবাচক হোক আর ইতিবাচক হোক মার্কেটিং-ই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ; যার প্রমাণ এই বইটি। প্রকাশক সমিতি নিজেরা যেখানে কিছু বলেনি সেখানে অন্যদের এই বিষয়ে কথা বলা ঠিক কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। বইমেলায় রোদেলা প্রকাশনীকে মৌলবাদী বই প্রকাশের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা অনেক সমালোচনার স্বীকার হয়েছে। সৃজনশীল একটি প্রকাশনীকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা ঠিক কি না এটি নিয়ে যৌক্তিক প্রশ্ন উঠতেই পারে। বই নিষিদ্ধ করা যেতে পারে কিন্তু তাই বলে পুরো প্রকাশনী! অন্য অনেক প্রকাশনীতে পূর্বে নিযিদ্ধ বা ধর্মীয় অনুভূতিকে উষ্কে দেওয়া প্রচুর বই লক্ষ্য করা গেছে, কিন্তু এটি নিয়ে কারো কোন মাথাব্যাথা লক্ষ্য করা যায়নি। কত বিখ্যাত লেখক, স্বনামধন্য সাহিত্যিক, দেশের মন্ত্রী, নেতা-নেত্রী, কর্মকর্তা বইমেলাতে এসেছেন নিজেদের প্রাণের তাগিদে। কিন্তু বাংলা একাডেমির যেন এদিকে কোন খেয়াল ছিল না। বইমেলার গেটে মেটাল ডিটেক্টর রাখা ছাড়া তেমন কোন নিরাপত্তা লক্ষ্য করা যায়নি। আমাদের ছোট ভাই রিভু আমাদের সাথে গল্প করে বাইরে বের হবার সময় দেখে তার প্রিয় সাইকেলটি চুরি হয়ে গেছে। বইমেলার সম্মানিত নিরাপত্তা রক্ষীদের সামনেই সে তার সাইকেলটি তালা মেরে রেখে গিয়েছিল। কিন্তু তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করে কোন সদুত্তর পাইনি, কোন অভিযোগ করারও জায়গা ছিল না। বইমেলার নিরাপত্তা নিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন উঠেছে অভিজিৎ রায়ের হত্যার ঘটনায়। একজন মানুষকে পুলিশের সামনে কুপিয়ে মেরে ফেললো আর পুলিশরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখলো, তা সত্যি দু:খ জনক। ক্যাম্পাসে নিয়মিত মারামারির দোহাই দিয়ে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। বইমেলার আশাপাশে ককটেল ফোটা ছিল নিয়মিত ঘটনা। নিরপত্তারক্ষীদের সামনে ককটেল ফুটিয়ে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতিকারী কিন্তু তারা একজনকে আটক করতে পারেনি। তাছাড়া মেলায় ঢোকার জন্য কোন আধুনিক ব্যবস্থা ছিল না। লাইনের ব্যবস্থা ছিল না। ফলে অত্যাচারের স্বীকার হয়েছে মেয়েরা। কিছু অমানুষ তাদেরকে ঘিরে ধরে তাদের গায়ে হাত দিয়ে মজা নিয়েছে। বেশিরভাগ মেয়ে প্রতিবাদ জানাতেও পারেনি, নীরবে সহ্য করেছে। প্রতিবছর যেহেতু বইমেলা একই জায়গায় হবে, সেহেতু বইমেলায় ঢোকার একটি আধুনিক এবং স্থায়ী পন্থা কি বের করতে পারে না বাংলা একাডেমি? বইমেলা থেকে ঘুরে আসলে পায়ে, জামাকাপড়ে ধুলোবালির এক স্তর পড়ে গিয়েছে। এতো মানুষের কল্যানে ধুলামুক্ত অমর একুশে মেলা দেখতে চাই। আবর্জনা মুক্ত মেলা দেখতে চাই। আমাদের অমর একুশে বইমেলা আমাদের গর্ব তাই এই বইমেলায় আমরা যেকোন ধরনের নেতিবাচক বিষয় দেখতে চাই না। এই মেলা হবে আমাদের গর্বের মেলা, এই প্রত্যাশা।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:১৯
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের কবিতা

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৪



বিজয়ের মাস ডিসেম্বর, লক্ষ প্রাণে লেখা বিজয়ের
সেই সোনালি অক্ষর,
দিকে দিকে শুনি জয়ধ্বনি বাংলাদেশের নামে, এই
স্বাধীনতা কেনা রক্তের দামে;
হৃদয়ে হৃদয়ে বাজে মুক্তির শত গান, ডিসেম্বরে
পেয়েছি আমরা বিজয়ীর সম্মান;
মার্চের সেই অমর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×