somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ ছক্কা মিয়ার পাঞ্জা

২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছক্কা মিয়া দুর্ধর্ষ পকেটমার। তার শিষ্যরা বলে, ‘ওস্তাদ মাইয়াগো বেলাউজের বিতর থাইকা ট্যাকা বাইর কইরা আনবার পারে।’
এ একটা কথার কথা। হয়তো ছক্কা মিয়ার পেশাগত দক্ষতার প্রশংসা করতে গিয়ে তার শিষ্যরা এমন বাড়িয়ে বলে। তবে এ কথাও ঠিক যে, ছক্কা মিয়া পকেট মারতে গিয়ে কোনদিন ধরা পড়েনি। মাঝে মাঝে শিকার হাতছাড়া হয়ে গেছে। কিন্তু শিষ্যদের মতো ধরা পড়ে কখনো গণপিটুনি খেতে হয়নি তাকে। চোয়াল বসা হালকা পাতলা গড়নের ছোট খাটো মানুষ ছক্কা মিয়া। পূর্বপুরুষ অবাঙালী ছিল বলে দু’চারটা উর্দু হিন্দি কথা সে বলতে পারে। তার পোশাকে আশাকে নিম্ন শ্রেনির মানুষের চিহ্ন নাই। ইস্তিরি করা ধবধবে প্যান্ট শার্ট। পায়ে পালিশ করা চকচকে জুতা। শীতের সময় কোট এবং নিখুঁতভাবে নট বাঁধা টাই। এমন একজন লোককে পকেটমার ভাবা সত্যিই কঠিন। এই ক্যামোফ্লেজ ছক্কা মিয়ার প্লাস পয়েন্ট। ওস্তাদের ব্যর্থতা একটাই। বহু চেষ্টা করেও সে এমন ধোপ দুরস্ত থাকার মাজেজা শিষ্যদের শেখাতে পারেনি। শিষ্যদের কেউ কেউ লুঙ্গি পরেও ডিউটিতে যায়। ছিঃ ছিঃ। ওদের এই স্বভাবের দোষে মাঝে মাঝে ওরা ধরা পড়ে মার খায়। কখনো কখনো পুলিশের হাতেও ধরা পড়ে। থানা থেকে ছাড়ানো না গেলে কোর্টে গিয়ে জামিন নিতে হয়। এ কাজের জন্য ছক্কা মিয়ার বাঁধা উকিল আছে।

তো সেই উকিল বদর আলির নিজেরই একদিন পকেট মারা গেল। ছক্কা মিয়ার দলে কিছু নিয়ম কানুন আছে। সারাদিনের কামাই শেষে সন্ধ্যের পর ভাগ বাঁটোয়ারা হয়। থানা পুলিশ কোর্ট কাচারি সামলানোর জন্য আয়ের একটা অংশ ছক্কা মিয়ার কাছে জমা থাকে। শিকার হওয়া লোকদের সম্পর্কে শিষ্যদের কাছে ছক্কা মিয়া খোঁজ খবর নেয়। লোকটি দেখতে কেমন? মানি ট্রান্সফার কোথায় হলো? কী কী নোট ছিল? লোকটির পেশা কী হতে পারে? পরনে কাপড় চোপড় কী ছিল? এই ধরণের নানা রকম খোঁজ খবর। ওস্তাদ কেন এসব জানতে চায় সাগরিদরা বুঝতে পারে না। তারা ভাবে, এসব হলো ওস্তাদের গায়েবী এলেম। সব গোমর ফাঁস করে দিলে তো আর ওস্তাদের ওস্তাদি থাকে না। শিষ্যদের এসব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। তারা দিন শেষে টাকার ভাগ পেলেই খুশি।

বদর আলির পকেট কাটা যাবার পরদিন ছক্কা মিয়া কোর্টে গিয়ে তার সাথে দেখা করলো। বললো, ‘উকিল সাহেব, আপনি কী কাল বাজারে গিয়েছিলেন?’
‘হাঁ, ছুটির দিন আমি নিজেই বাজার করি। কেন?’
‘আপনার কী কিছু .........’
‘আরে, হাঁ হাঁ’ বদর আলি হাউ মাউ করে তেড়ে এসে ছক্কা মিয়ার শার্টের কলার ধরে টেনে আড়ালে নিয়ে যায়, ‘আচ্ছা ছক্কু, আমি তোদের এত উপকার করি, আর তোরা আমারই পকেট মারলি? এমন বেইনসাফি আল্লাহ সহ্য করবে?’
‘আর বলবেন না স্যার।’ ছক্কা মিয়া সব সময় শুদ্ধ ভাষায় কথা বলে (এটা তার পেশার জন্য আর একটা প্লাস পয়েন্ট), ‘কিছুদিন হলো এক নতুন ছোকরা দলে যোগ দিয়েছে। ব্যাটা আপনাকে চেনেনা তো! তাই .........।’
‘দে, দে, আমার টাকা দে।’ বদর আলি পারে তো ছক্কা মিয়ার পকেট থেকে টাকা বের করে নেয়। ছক্কা মিয়া একটু দূরে সরে যায়। এবার সে নিজেই উকিল। তার সওয়াল জবাব এরকমঃ ‘কত গেছে স্যার?’
‘দু’শো টাকা।’
‘কী কী নোট ছিল?’
‘আরে হারামি, দুটো একশো টাকার নোট। তুই আমাকে অবিশ্বাস করছিস?’
ছক্কা মিয়া জিবে কামড় দিয়ে বলে, ‘ছিঃ ছিঃ, স্যার যে কী বলেন না! উকিল আর পকেটমারকে কেউ বিশ্বাস করে?’
পকেট থেকে একটা একশো টাকার নোট বের করে ছক্কা মিয়া এগিয়ে দেয় বদর আলির দিকে। থাবা মেরে টাকাটা ছিনিয়ে নিয়ে নিজের পকেটে রেখে বদর আলি বলে, ‘আর একশো?’
‘ও ব্যাটা একশো টাকা ভেঙ্গে ভাত আর মদ খেয়ে ফেলেছে। ওটা আমার নিজের কামাই থেকে শোধ করে দেব স্যার।’
‘শোধ করে দেব কী কথা! শোধ করে দে। কোর্টের বারান্দায় শত শত লোক গিজ গিজ করছে। দেখতে পাচ্ছিস না? এক্ষুনি যা। আমি ওই চায়ের দোকানে বসলাম। টাকা না পেলে কিন্তু তোর খবর আছে। এরপর কেউ ধরা পড়লে আসিস আমার কাছে!’
‘আচ্ছা, ঠিক আছে স্যার।’ ছক্কা মিয়া তার ডান হাতের তালু আর পাঁচ আঙ্গুলে ভক্তিভরে চুমু খেয়ে বললো, ‘চল মেরে পাঞ্জা, দিখা তেরা খেল।’
আধা ঘণ্টার মধ্যেই ছক্কা মিয়া একটা চকচকে একশো টাকার নোট এনে বদর আলির হাতে দিয়ে বললো, ‘একটা চায়ের অর্ডার দিয়ে যান স্যার।’
বদর আলির সাথে কয়েকজন মক্কেল ছিল। ছক্কা মিয়ার হাত থেকে টাকাটা ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে উঠে পড়লো বদর আলি। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে তার ডাক পড়েছে। যাওয়ার আগে সে ছক্কা মিয়ার জন্য চায়ের অর্ডার দিল ঠিকই, তবে সে নোটটা পকেট থেকে বের করে আলোর দিকে ধরে উল্টে পাল্টে দেখে ছক্কা মিয়াকে ফিস ফিস করে বললো, ‘জাল টাল নয় তো?
**********************************************************************************************************************
ছবিঃ নেট।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ২:৪২
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×