somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার নির্বাসন পর্ব দুইঃ "ডোবরে ঊত্রে" এবং আমার টারজান বেলা

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব এইখানে
বাস থেকে নামতেই ঠাণ্ডা হাওয়ার ঝাঁপটা কান নাক মুখে একটা জ্বালা ধরিয়ে দিয়ে গেল। বাসের হীটীং ঠিক ঠাক থাকায় আসার ৪৫ মিনিট পথ কিছু বুঝিনি।
বাস থেকে লাগেজ বের করে হোটেলের লবি পর্যন্ত আসতেই অনুভুতি শূন্য মনে হতে লাগল মুখের অনাবৃত অংশগুলি। আমাদের থাকার জায়গা হয়েছে 'সসনি" নামক এক জায়গায়। সসনি মানে হচ্ছে পাইন গাছ। নামকরণের সার্থকতা প্রমাণ করতেই বুঝি আকাশ ছোঁয়া সব পাইন গুলো বরফ ঢেকে জুবুথুবু হয়ে আছে হোটেলের আশ পাশ জুড়ে।


হোটেলের লবিতে বসে রুম এ যাবার জনয়ে অপেক্ষা করছি। আমাদের সাথের ইন্টারপ্রেটর আমাদের হয়ে সব কথা বলে দিচ্ছিল।

আমি ইন্টারনেটের খোঁজ নিতে ডেস্কে বসে থাকা মহিলা কে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেলাম। সাধারণ রাশিয়ান একবর্ণ ইংরেজী বোঝে না।
যাই হোক এই বেলা ইন্টারপ্রেটার এর সাহায্যে পার পেলাম। আসল পরীক্ষা আসল পরেরদিন সকালে। আমার রুম চেঞ্জ করতে হবে ৪০৬ থেকে ৪০৮; কারন ৪০৬ এ আমি আরেকজনের সাথে ছিলাম আগের রাতে ।
ডেস্কে নতুন আরেকজন বসা।তবে অবস্থার পরিবর্তন হল না।

মূকাভিনয় করে দেখালাম; you know english?

-হাসতে হাসতে গড়াগড়ি পর্যায়ে চলে গিয়ে মহিলা বলল, "নিয়ত"

আমি ভাবলাম আমার নিয়ত নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছে নাকি আবার।

একটু ঢোক গিলে আবার প্রশ্নটা রাখতেই এবার সে "নিয়ত" বলে মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল সে জানে না।

আমার শেখা প্রথম রাশিয়ান শব্দ, "না"

এবার আমার যুদ্ধ শুরু হল।

-আই, ৪০৬, ২ ম্যান, ওয়ান স্টে, আই গো, ৪০৮, বুঝসত??

এইবার হাসির দমকে মহিলার হেঁচকি উঠে গেল। নিয়ত নিয়ত দা দা আরও কি কি যেন হরবর করে বলে গেল।

৩০ মিনিটের কসরতের পর সে বুঝল ৪০৬ আর ৪০৮ এর রুমে কিছু একটা করতে হবে!

আমি হাল ছাড়লাম না। এরপর আমার মেয়ের স্টাইলে কিছু ছবি আঁকলাম। আদিম গুহামানব পর্যায়ে গিয়ে চিত্র কর্মের মাধ্যমে অবশেষে বোঝাতে সক্ষম হলাম আমার প্রয়োজন।

মহিলা দা দা করে কিছুক্ষন মাথা নাড়তে আমার দ্বিতীয় রাশিয়ান শব্দ শেখা হয়ে গেল। 'দা'= হ্যা।

অবশেষে ১ ঘন্টার মাথায় আমি নতুন রুমের চাবি পেলাম।
আসার আগে মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "ডোবরে ঊত্রে"

আমি ভাবলাম আমারে দৌরের উপড়ে থাকতে বলছে মনে হয়। তবে উনার হাসি দেখে মনে হল এইটা মনে হয় সেই গত রাতের "ডোবরে ভিয়েচার" জাতীয় কিছু। আর যেহেতু সকালে বলেছে, তারমানে সকাল বিশয়ক কিছুই হবে।

আমি আমার তৃতীয় এবং চতুর্থ রাশিয়ান শব্দ শিখলাম। "ডোবরে" মানে শুভ এবং "ঊত্রে" মানে সকাল।

আমিও "ডোবরে ঊত্রে" বলে স্থান ছাড়লাম। বাহিরে -১২, তবে আমার কপালে চিকন ঘাম। ৫ মাস পার হতে হতে হয় আমি রাশিয়ান নয়ত টারজান হয়ে ফেরত যাব দেশে।
মন খারাপ করে রুমের জানালায় দাড়াতেই হটাত করে আকাশ থেকে পেঁজা তুলোর মত নেমে এল তুষার কনা। আশে পাশে সব নিমিষে ঢেকে গেল সাদা চাদরে। আমার জীবনের প্রথম তুষার পাত দর্শন।
আমি অস্ফুটে বলে উঠলাম
"ডোবরে ঊত্রে"



সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:৪৩
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×