বিদ্যুৎ নিয়া কিছু বলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ছোট ভাইকে হোয়াটসঅ্যাপ খুদে বার্তায় কহিলাম,
ভালবেসে তোমরা তাকে কি বলবে! কি বলবে...?
ও বিজলী চলে যেও না।
পোলাডা দেখলাম চেইত্ত্যা উঠলো। বুঝলাম আবারো ইলেকট্রিসিটি গেছেগা। শুধু হেই না আমার জেলার সব মানুষের এহন সেইম অবস্থা। গরমের দোচনে কাউরো সাথে কথা কওন যায় না। দুই মিনিট কথা কইলে তিন মিনিটের মধ্যে নগদ গ্যাঞ্জাম-মারামারি লাগনের মত অবস্থা।
লোডশেডিং বিষয়টা নিয়ে মুরুব্বির লেখা "হ্যারিকেন-এর যুগের আমি" নামক একটা আর্টিকেল থেকে কিছু কথাবার্তা বলা যায়। বেশ অনুপ্রেরণা মূলক কথাবার্তা লিখেছেন, ওনার লেখার অনেক বিষয়বস্তু আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বিদ্যুৎ-এর খুঁটি খাম্বা ধইরা ক্যাম্নে বদলাইয়া গেল গ্রামবাংলার পল্লী অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা। অন্ধকার কুসংস্কার দূরে ঠেলে দিয়ে বিদ্যুতের মাধ্যমে আলোর মুখ দেখলো গ্রামবাংলার মানুষ। লেখার এক পর্যায় মুরুব্বী কহিলেন, ব্যাটারি দিয়ে সাদা-কালো টেলিভিশনে এক উঠান মানুষ লইয়া বাংলা সিনেমা দেখা। মাহফিল আর মেলার ময়দানে ল্যাম্পোর আলো জ্বালিয়ে বসে থাকা বাতাসা-নাড়ুর দোকান হইতে কিছু বাতাসা খরিদ করিয়া খাওনের আনন্দ। শীতল পাটিতে ক্লান্ত দুপুরে টং অথবা গাছের ছায়ায় একটু ঘুমিয়ে জিরিয়ে নেওয়া। হ্যাজাক বাতি জ্বালাইয়া রাতভর হাটবারে ব্যাপস্যা-পাতি শেষ করিয়া ভ্যানগাড়ি লইয়া রেললাইনের পাশে পাথরের রাস্তা ধরিয়া ঝাঁকুনি খাইতে খাইতে শেষ রাইতে বাড়িপথে যাত্রায় ছিল অন্তহীন সুখ। ভ্যানগাড়ির নিচে জ্বলন্ত হ্যারিকেন ছিল নিয়ন আলো।
এরপর মুরুব্বি বিদ্যুতের হাত ধরে কলকারখানা, শিল্প অঞ্চল, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও মর্ডান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নানান প্রশংসা করিলেন। তারপর একগুচ্ছো আবেগি হতাশায় কহিলেন, এভাবে একে একে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে হারিয়ে গেলো আমার প্রিয় গ্রাম।
বুঝলাম ঘন ঘন লোডশেডিং-এর সুবাধে কারো কোনো সুবিধা হোক না হোক মুরুব্বির একটা সুবিধা হয়েছে। মুরুব্বী তার রুপালী জীবনে পার করে আশা সোনালী স্মৃতির একাংশ হাতরানোর সুযোগ পেয়েছেন। হাতরাউক... বেশ ভালো লাগে যখন মুরুব্বির মুখ থেইক্কা মাটির ঘরে চাঁন্দের আলোর গল্পগুলা শুনি।
কিছুক্ষণ মুরুব্বি সাথে আলোচনা করলাম,
নতুন জেনারেশন বাল্বের আলোয় জন্ম নেয়া। অনেকটা ফার্মের মুরগিরে যেমন লাইটের নিচে রাইক্ষা ফুটানো হয় তেমন। জন্মের পর থেইক্কা ওয়েস্টার্ন শিক্ষার ফিডিং করিয়ে বড় হবার পর ফার্ম নামক মর্ডান চাকুরিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সারাদিন ঘড়ি ধরে রোবটের ন্যায় কাজ করে যাওয়া। বিনোদনের নামে ওই একটা স্মার্ট ফোন আর কিছু সোশ্যাল মিডিয়া আ্যাপ। প্রকৃতি ও প্রকৃত কষ্ট কি এরা জানে না।
সময়ের সাথে সাথে মানুষ বদলায়। মানুষের চিন্তাধারা ও জীবন যাত্রা বদলায়। সবার কাছে নিজ নিজ জেনারেশনটাই বেষ্ট মনে হয়। তবুও এসব পাশ কাটিয়ে কিছু চিন্তা আমাকে গভীর ভাবে ভাবায়..। বিশ্বজুড়ে এই চাকচিক্যের আড়ালে কোথাও তো একটা সবচেয়ে বড় ঘাপলা রয়েছে। শুভঙ্করের ফাঁকির মতো লোকচক্ষুর আড়ালে। ভাবি এই বুঝি দাজ্জাল নামক বস্তুটা কখন না জানি বের হয়।
অনেক বিষয়ে আমি মুরুব্বির সাথে বাহাজ করি না। শুধু শুনেই যাই... কারণ আমাদের চিন্তাধারা সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়। আজকে যা সঠিক কালকে তাই আবার ভুল প্রমাণিত হয়।
যাইহোক কোন বিষয় থাইক্কা কোন বিষয়ে ঢুইকা গেলাম। কি নিয়া কথা কইতেছিলাম.. ও হ্যাঁ বিদ্যুৎ।
ইলেকট্রিসিটি চইল্লা আসছে এহন যাইগা।
- Ajob Linkon.
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৩