অনেক আগের কথা। একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশে পাগলা কুত্তাদের উপদ্র প্রচুর বেড়ে যেত। দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরায় নিরীহ মানুষদের এসব পাগলা কুত্তার কামড় প্রায়ই খেতে হতো। তখন জনসাধারণের নিরাপত্তার কথা ভেবে মিউনিসিপ্যালিটি থেকে প্রতি বছর পাগলা কুত্তাদের নিধনের জন্য অভিযান শুরু হয়। অভিজানে লাওয়ারিশ কুকুরদের গণহারে সাঁড়াশি দিয়ে ধরে মেরে ফেলা হতো।
চোখের সামনে এমন অভিযান দেখার সৌভাগ্য কিংবা বলতে পারেন দুর্ভাগ্য আমার হয়েছিল। অভিযানের পূর্বে মাইকিং করে ব্যক্তিগত পোশা কুকুরদের গলায় বেল্ট কিংবা কলার আইডি লাগিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হতো। অভিযানের দিন যেসব কুকুরের গলায় বেল্ট থাকত না তাদের নির্মমভাবে ধরে ছুড়ে ফেলা হতো মিউনিসিপ্যালিটির ডাম্পারে। বিষয়টি অতি বেদনাদায়ক হলেও জনসাধারণের জন্য ছিল অত্যন্ত স্বস্তিকর। অভিযান শেষে সকল পথচারী নির্ভয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আবারও চলাফের শুরু করতো।।
এই প্রক্রিয়ায় কেটে গেল অনেকগুলো বছর। অনেক বছর পেরিয়ে আমাদের প্রযুক্তি উন্নত হলো। আমাদের জীবনযাত্রার মান এবং চিন্তাধারা উন্নত হলো। আমাদের মাঝে মানবতার এক মহা জাগরণের সৃষ্টি হলো। প্রতিটি প্রাণীর বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। অবলা এইসব প্রাণীর প্রতি এমন নিষ্ঠুর আচরণ, অন্যায় এবং অবিচারের প্রতি আমরা জাগ্রত হয়ে মানববন্ধন করলাম। সভা মিছিল এবং আন্দোলন করলাম।
আন্দোলনের ফসল স্বরূপ সমাজে কুকুরদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো। বন্ধ করা হলো নির্মমভাবে গণ-কুকুর নিধন প্রক্রিয়া। কুকুরদের এখন নিধন না করে ভ্যাকসিন এবং কেয়ার সেল্টারে রাখার ব্যবস্থা করা হলো। পেট কেয়ার এবং এনিমেল রাইটস নামক বিভিন্ন সংস্থা চালু করা হলো।
এরপর পরিয়ে গেল কয়েক বছর।
ধীরে ধীরে সমাজে বৃদ্ধি পেতে থাকলো কুকুরাধিকার নামক বিভিন্ন সংস্থার ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা কুকুরদের সংখ্যা। দেখতে দেখতে একসময় তারা ছাড়িয়ে গেল তাদের পূর্বের সংখ্যাকেও। কুকুরের প্রকৃত এবং জন্মগত, যাকে বলে ঈশ্বর প্রদত্ত স্বভাব হচ্ছে কামড় দেয়া। ভ্যাকসিন দিয়ে কুকুরদের জলাতঙ্ক দূর করা গেলেও, দূর করা গেল না ওদের প্রকৃতিগত স্বভাব।
ফলস্বরূপ একটা দীর্ঘ সময় পেড়িয়ে আবারো শুরু হলো পাগলা কুত্তাদের তাণ্ডব লীলা। শুরু হলো নিরীহ জনসাধারণের উপর আক্রমণ। শিশু কি বৃদ্ধ, মহিলা কি পুরুষ, পাগলা কুত্তাদের কোনো বাদ বিচার নেই। তারা যাকেই তাদের পথের কাঁটা মনে করছে তাকেই কামড় দিচ্ছে।
জলাতঙ্ক গ্রস্থ এসব পাগলা কুত্তাদের একটাই ধর্ম কামড় দেয়া। জনসাধারণের মনে এখন ছড়িয়ে পড়েছে পাগলা কুত্তাদের আক্রমণের ভীতি। এসব কুত্তাদের কাজ হচ্ছে জাতির নামে, গোত্রের নামে কিংবা ধর্মের নামে পাগল হয়ে কামড়া-কামড়ি করা। ধর্মের নামে জলাতঙ্ক গ্রস্থ পাগলা কুত্তাদের হাত থেকে নিস্তার চাই।
আপনি মানেন বা নাই মানেন, সেকুলার বাংলাদেশ ছিল এবং সেকুলার বাংলাদেশ থাকবে। ধর্ম যার যার বাংলাদেশ সবার। এখনো সময় আছে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নেন কামড়া-কামড়ি বন্ধ করেন নাইলে নিজেরে খাঁচায় কিংবা কপাল খারাপ ইইলে মিউনিসিপ্যালিটির ডাম্পারে পাইবেন কইয়া রাখলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ভোর ৫:০৩