শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ১২তম ব্যাচের কিছু অস্থির পোলাপাইন গত ১৪-১০-২০১১...শুক্রবারে সিরাম একখান অস্থির ঝরনা ঘুরে
আসলাম।
অনেকদিন ধরেই শ্রীমঙ্গলের কমলগঞ্জে অবস্থিত চরম অদ্ভুত এই ঝরনা টি দেখার জন্য আমরা পোলাপাইন সব কাবজাব করছিলাম।অবশেষে ক্যাম্পাসে একটা ঝটিকা মিটিং এ সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৩ অক্টোবর রাতের ট্রেনে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে আমরা ১৫ জন পোলাপাইন রওনা হলাম। ট্রেনে আমাদের ৩ ঘণ্টার যাত্রায় পুরা পাঙ্খা মেজাজে ছিলাম......এক বাউল শিল্পীর সাথে আমরা সবাই গান গেয়ে ট্রেনের পুরো বগিটিকে গরম করে রাখলাম।সাথে চা...সিগারেট এর ধুয়া ছড়িয়ে কিছু বন্ধু তো পুরা পিনিক হয়ে ছিলাম। দিপু...নোমান...আলভী,মঞ্জয়,লনি,মালেক,ইমরান,অপু,জেম,সুপন,মানিক,পরাগ,হিমেল,সানভি ভাই, আর আমি নিজে- এই ছিলো আমাদের অভিযাত্রি দল। শ্রীমঙ্গলে আমরা পৌছুলাম রাত ১২ টায়। আলভি আগে থেকেই তার এক নানুর বাসায় আমাদের রাতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে ফেলেছিলো। রেলষ্টেশনের খুব কাছের ওই বাসায় আমরা ১৫ জন পরের দিনের লম্বা ভ্রমণের কথা মাথায় নিয়ে দিলাম একখান ঘুম। সেই ঘুম ভাঙলো ভোর সাড়ে পাঁচটায়। সকালে এক হোটেলে নাস্তা শেষে সবাই যার যার ইচ্ছেমত হাল্কা খাবার......পানি...সিগারেট...নিয়ে ভাড়া করা পিকআপ গাড়িতে গিয়ে উঠলাম। গাড়িতে উঠেই পোলাপাইন শুরু করে দিলাম সিরাম গান, গান যেনো থামতেই চায়না...গানে গানে কখন যে ২ ঘণ্টা পার হয়ে গেলো টেরই পেলাম না। দুই ঘণ্টা পর আমাদের গাড়ি গিয়ে থামলো এক জায়গায়। সেখান থেকে সাজ্জাদ নামের এক গাইড ভাড়া করলাম, তাকে নিয়ে আমাদের নতুন যাত্রা শুরু ...তবে এবার হেঁটে। সাজ্জাদ ভাই জানালেন এখন আমাদের হাঁটতে হবে.........খালি হাঁটার উপরে থাকতে হবে। ১ ঘণ্টার মত কড়া রোদে চা বাগানের পাশের রাস্তায় হাঁটার পর আমরা বনের সম্মুখভাগে এসে দাঁড়ালাম। ঘন পাহাড়ি রাস্তা আর সেইরকম মাইনকার চিপা বনের মাঝ দিয়ে হাটা। পথে আমরা প্রত্যেকে ৫ ফুট লম্বা সাইজের বাঁশ সংগ্রহ করলাম। এই বাঁশ সাম্নের পথে কাজে লাগবে। হাঁটছি তো হাঁটছি, হাঁটা শেষ হয়না। তারপর নামলাম পানিতে...কোথাও হাঁটু পানি...কোথাও কোমর পানি, কোথাও পানি নেই...কিন্তু সিরাম পিচ্ছিল...কোথাও আমরা পাহাড়ের গা ঘেষে যাচ্ছিলাম......সেই রকম pain মামা...দুই চোখে আন্ধার দেখছিলাম অনেকে......একবার পা পিছলে পড়লেই কাম সারছে। পুরা ১৪ জেনারেশনের নাম ভুইলা যাবার অবস্থা। পথে আবার আমরা নায়কের মত মাঞ্জা মেরে ছবি তুলছিই। ছবি তোলাও শেষ হয়না। এই ভালো রাস্তা তো এই চরম খারাপ রাস্তা......সাথে আবার জোক...সাপ এর পুরা গোষ্ঠি তো আছেই আমাদের আপ্যায়ন করার দায়িত্বে। আড়াই ঘণ্টা এরকম ভয়ানক রাস্তা পেরিয়ে আমরা অবশেষে দূর থেকে দেখতে পেলাম প্রতিক্ষীত হাম হাম এর সুন্দর খোমা/মুখ।
ঝরনাটাকে সামনাসামনি দেখতেই সব আজাইরা ক্লান্তির কথা ভুলেই গেলাম। সিরাম হীমশীতল ঠাণ্ডা পানিতে সবাই আমরা কাবজাব করতে লাগলাম। সাথে সেই অস্থির ভাব মেরে যার যার ছবি তোলা তো আছেই। শুক্রবার বলে ওইদিন অসংখ্য মানুষ এসেছিলো। আল্লাহ তাআলার এই সুন্দর সৃষ্টি কে দেখে আনন্দে এম্নিতেই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠি।
তারপর ফিরে যাবার পালা। দুপুর দেড়টার(১.৩০) দিকে আমরা আবার হাঁটা শুরু করলাম......এইবার আমরা ঠিক করলাম অন্য রাস্তা ধরে যাবো। যেই কথা সেই কাজ। যে রাস্তায় যাওয়া শুরু করলাম... সেই রাস্তা আগেরবার থেকে হাজারগুণ কঠিন।বাপ-দাদা থেকে পাওয়া নবাবি দেহের প্রতি বিন্দুমাত্র খেয়াল না করে কঠিন থেকে কঠিনতর পাহাড় ঘেরা পিচ্ছিল রাস্তা আমরা পার হতে লাগলাম। সেই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে ব্যথা পায় নাই...এমন কোনো বাপের ব্যাটা ছিল না। কারও পা...কারো হাত...কারো মাথা...কারো দেহের বিভিন্ন অংশে আঘাতপ্রাপ্তি ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু এতো pain এর পরেও সবার মুখের হাসিটা কিন্তু থামেনি কখনো।একজন কোনো কঠিন রাস্তা পার হতে না পারলে তাকে সাহায্য করতে এত্তুটুকু পিছপা হইনি আমরা কেউ। পথে আমরা আবার হাম হাম ঝরনা প্রথম যে বড় একভাই আবিষ্কার করলেন, সেই স্থানীয় বড় ভাই এর সাথে কথা বল্লাম।তিনি জানালেন একটা খুশির খবর। সরকার নাকি হাম হাম ঝরনার যাবার রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
আমাদের মগজে তখন একটাই গানের মেটাল ভার্সন বাজছে "দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাপার হে!!!!!
এভাবে আবার একটানা ৩ ঘণ্টা হাঁটার পর আমরা আমাদের পিকআপ এর সামনে ফিরে আসলাম। সবাই চরম ক্লান্ত দেহটা কোনো মতে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে ড্রাইভার বাঘা কে বললাম ইঞ্জিন চালু করতে।গাড়িতে উঠে কোথায় আমরা এমন pain এর পরে চুপ থাকব, তা না আবার সেই গান...গান গান...গান...হাল্কা কৌ্তুক... গান এবং শ্রীমঙ্গল
মরে যাবার আগে আমরা কেউ ই হয়তো এই দিনের কথা ভুলতে চাইবো না
আল্লাহ কে ধন্যবাদ এমন একটা জীবন আর এমন একটা দিন দেয়ার জন্য
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



