আজকাল ফেবুতে কিছু মুসলিমদের দেখি যারা পোস্ট দিয়ে বলছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের ত্রিশলক্ষ শহীদ বলা যাবে না কারণ, এটা শুধু আল্লাহর জন্য অনুমদিত শব্দ।
হ্যাঁ ওনার কথা দেখে মনে হচ্ছে কট্টর ইসলামপন্থি ইসলামের অনেক বিধি নিষেধ ওনার জানা আছে!!।আমিও কট্টর ইসলামপন্থি তবে চোখ-কান খোলা রেখে কিন্তু ইসলামের বিধিনিষেধ আমার তেমন জানা নেই আমি খুবই নগন্য। তবু নিম্মোক্ত হাদীস থেকে যা উপলব্ধি করেছি তাই তুলে ধরলাম।
যাই হোক আসল কথায় আসি-আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে পরিসরে যা জানি তা হল-
শহীদ ইসলামীক দৃষ্টিতে খুবই মর্যাদাবান ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি শব্দ। এটি ইসলামের নিজস্ব পরিভাষা। পরিভাষায় যারা আল্লাহর পথে বা দ্বিনের জন্য নিজের প্রান ত্যাগ করেছে তাকে শহীদ বলে। শহীদ মৃত্যুবরণ করার সাথে সাথেই জান্নাতের নেয়ামত ভোগ করতে থাকে।
শহীদ কোন সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিভাষা নয়। তাই এটার যত্রতত্র ব্যবহার কিছুতেই কাম্য নয়।
যেহেতু বাংলাভাষা বিভিন্ন ভাষার সংমিশ্রন, সেহেতু শহীদ শব্দটি এখানেও ঢুকে পরেছে, এটা যদি বাংলা ভাষাতে যোগ না হত তাহলে নিশ্চয় অন্য কোন শব্দে আমরা যুদ্ধে নিহতদের ভুষিত করতাম। তাহলে এখানে কোন সমস্যা থাকার বিষয় না। এতেও অনেকের চুলকানি আছে তাই এখানে শহীদ বলা আর না বলা নিয়ে কিছু পয়েন্ট আছে খিয়াল করবেন।
تعريف الشهيد شرعا : هو من قتله أهل الحرب مباشرة أو تسببا بأي سبب كان أو من قتله أهل البغي أو قطاع الطرق أو اللصوص في منزله أو وجد في المعركة مع الكفار وبه أثر جرح أو كسر أو حرق أو خروج دم من أذن أو عين لا من الفم والأنف ( لأن الدم يخرج من هذه المخارج من غير ضرب ) أو قتله مسلم ظلما عمدا لا خطأ بمحدد ( 1 ) لا بمثقل ( 2 ) وسمي شهيدا لأنه مشهود له بالجنة (فقه العباداة، كتاب الصلاة، الباب العاشر ( الجنائز )-1/123)
শহীদ বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে, যাকে কাফেররা হত্যা করে যেকোন কারণেই হোক। অথবা ইসলামী খিলাফতের বিরুদ্ধাচরণকারী, অথবা ডাকাত, অথবা স্বীয় বাড়িতে চোর হত্যা করে, অথবা যাকে কাফেরদের সাথে অনুষ্ঠিত জিহাদের ময়দানে পাওয়া যায়, সাথে সাথে তার গায়ে থাকে কাটার দাগ, বা ক্ষত কিংবা পোড়ার চিহ্ন, কিংবা চোখ বা কান থেকে রক্তক্ষরণ অবস্থায়, মুখ বা কান থেকে নয়। {কেননা কান বা মুখ থেকে আঘাত ছাড়াও রক্ত বের হতে পারে} অথবা যাকে হত্যা করেছে কোন মুসলমান ইচ্ছেকৃত জুলুম করে, ভুল করে নয়। হত্যা করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভার দিয়ে নয়।
উক্ত ব্যক্তির নাম শহীদ। তাকে শহীদ এজন্য বলা হয় যে, সে জান্নাতে উপস্থিত হয়ে যায়। {ফিক্বহুল ইবাদাত, কিতাবুস সালাত, ১০ম অধ্যায়, জানাযা-১/১২৩
প্রথমত এখানে বলা হয়েছে,
যাকে ডাকাত অথবা স্বীয় বাড়িতে চোর হত্যা করলে অথবা যাকে হত্যা করেছে কোন মুসলমান ইচ্ছেকৃত জুলুম করে, তাকে শহীদ বলা যাবে। আয়ত্বাধীন দেশের ভিতর ঢুকে দেশের মানুষকে জখম করার মত, দেশের মুসলমান বলেন হিন্দু বলেন মা-বোনের উজ্জত লুন্টনের মত বড় চুরি-ডাকাতি আর কি হতে পারে??!!(অন্যান্য গুলো নাই বললাম), এবং মুসলমান হয়ে মুসলমানকে বিনা অপরাধে ইচ্ছেকৃত হত্যা করার মত জুলুম আর কি হতে পারে????!!! ।
দেশে মুসলমানের সংখ্যা বেশি ছিল বিধায় মুক্তিযুদ্ধে নিহত মুসলমানদের শহীদ বলা যাবে ।
قتل دون أهله أو دون دمه أو دون دينه فهو شهيد
হযরত সাঈদ বিন যায়েদ থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন-”যে ব্যক্তি নিজ সম্পত্তি রক্ষায় নিহত হয় সে শহীদ। যে ব্যক্তি নিজ পরিবার রক্ষায় নিহত হয় সেও শহীদ। অথবা প্রাণ রক্ষায় কিংবা দ্বীন রক্ষায় নিহত হয় সেও শহীদ। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৭৭৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৬৫২)
এখানে স্পষ্ট বলা আছে যে,নিজ সম্পত্তি রক্ষায়,নিজ পরিবার রক্ষায় এবং প্রাণ রক্ষায় যে ব্যক্তি নিহত হয় সেও শহীদ।
এখানে নিজের নাগরিক অধীকার এবং নিজের দেশের চেয়ে বড় সম্পত্তি আছে কি আর???!!। আমরা পুরো দেশটা মিলে একটা পরিবার আবার বাংলার প্রতিটা পরিবারে পাক-হানাদারেরা ইজ্জত-জান-মাল লুন্ঠন করেছে এটা নিজ পরিবার রক্ষা ছাড়া আর কি হতে পারে??!। মুক্তিযুদ্ধ মানেই অধীকার আদায়ের যুদ্ধ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর যুদ্ধ সর্বপরি মুক্তিযুদ্ধ মানে বাংলার হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-মুসলমানদের প্রাণ রক্ষার যুদ্ধ। ৩০ লক্ষ মানুষে তো মুসলমানদের সংখ্যাও অগণিত তাই নয় কি!!!?? ।
তাহলে শাব্দিক ভাবে দিক দিয়ে শহীদ শব্দকে যদি রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদান করা হয় উভয় দিক থেকে এই যুদ্ধে নিহতদের ৩০ লক্ষ শহীদ বললে অনুচিত বা মহাপাপ হয় কোথায় বুঝে উঠতে পারি না ।