হুমাযূনের লাশের দখল নেয়ার জন্য শাওন কোর্টের ভয় দেখিয়েছিলো এবং শাওনের বাবা-মা প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবহার করে।ওই রাতে শাওন হুমকি দেয়, প্রয়োজনে আদালতে যাবেন, এবং রায় না হওয়া পর্যন্ত মরদেহ হিমঘরেই থাকবে!!
এ কথা শোনার পর নোভা, শীলা ও নুহাশ
চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। তারা ঢাকায় দাফনের কথাই বলতে থাকেন। এসময় জাফর ইকবাল, ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ, নাসিরুদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু ও এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক তাদের বোঝান। তারা বলেন, লাশটা দাফন হওয়া প্রয়োজন। অবশেষে হুমায়ূনের প্রথম পক্ষের সন্তানেরা তাদের আবেগ চেপে ধরে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, বাবা হিমঘরে পড়ে থাকবেন, এটা হয় না। তারা নুহাশপল্লীতেই বাবার দাফনে সম্মত হন। এভাবেই লাশ নিয়ে নাটকের শেষ দৃশ্য মঞ্চস্থ হয়।
এর আগে, ২৩ জুলাই, সোমবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে হুমায়ূনের লাশের সঙ্গে ফেরা দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ঢাকা এয়ারপোর্টে জানান, নুহাশপল্লীতে দাফনই ছিল হুমায়ূনের শেষ ইচ্ছা। তবে হুমায়ূন আহমেদের প্রথম পক্ষের তিন সন্তান নোভা, শিলা ও নুহাশ, হুমায়ূনের মা আয়েশা ফয়েজসহ পরিবারের সদস্যরা চাচ্ছিলেন ঢাকায় দাফন করতে। তারা সম্ভাব্য স্থান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবির সমাধি চত্বর, মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও বনানী কবরস্থানের কথা বলেছিলেন। রাজধানীতে দাফন হলে মানুষ সহজে কবর জিয়ারত করতে পারবে।
কিন্তু নুহাশপল্লীর ব্যাপারে গোঁ ধরে থাকেন শাওন। বেলা যত বাড়তে থাকে এই দ্বন্দ্ব স্পষ্ট ও প্রকট হতে থাকে। দুপুর আড়াইটার দিকে ঈদগাহ ময়দানে হুমায়ূন আহমেদের জানাজা শেষে তার লাশ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়। লেখকের ছোট ভাই জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের জানান, সন্ধ্যায় পারিবারিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
পারিবারিকভাবে বিষয়টির সমাধান চেয়েছিলেন দেশবাসীও। কিন্তু তা হয়নি। পর্দার অন্তরালে শাওনের তরফে শুরু হয় রাজনৈতিক যোগাযোগ। জানা যায়, শাওনের বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফকে টেলিফোন করেন। তিনি বলেন, নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন আহমেদকে দাফনের ব্যাপারে আপনারা সহযোগিতা করুন। হুমায়ূনের প্রথম পক্ষের সন্তানরা, তাঁর মা, ভাই, বোনসহ পুরো পরিবার চাচ্ছে ঢাকায় দাফন করতে। কিন্তু শাওন নুহাশপল্লীতে দাফন করতে চায়। আপনারা সহযোগিতা করুন। মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, আমি যতটুকু জানি, পারিবারিকভাবে হুমায়ূন আহমেদকে দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সেখানে আপনারা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন। এ ব্যাপারে আমাদের অযাচিত হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না। এক পর্যায়ে মরিয়া হয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা দুজন ব্যারিস্টারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। তারা বলেছেন, আদালতের সিদ্ধান্ত শাওনের পক্ষেই যাবে। আপনারা সহযোগিতা করুন। এ সময় মাহবুব হানিফ বলেন, এর মধ্যে আইন-আদালত টানছেন কেন। বিষয়টি পারিবারিকভাবেই সমাধান করুন। এরপর বিরক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফোনটি কেটে দেন।
শাওনের মা আওয়ামীলীগের এমপি তহুরা আলীও বসে ছিলেন না। বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিবের কাছে ফোন করে শাওনের ইচ্ছানুযায়ী নুহাশপল্লীতে হুমায়ুনকে দাফনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বলতে বলেন। সন্ধ্যায় গণভবনে আয়োজিত ইফতার পার্টিতে প্রধানমন্ত্রী সবার সঙ্গে সাক্ষাতের এক পর্যায়ে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানককে বলেন, হুমায়ূন আহমেদের জানাজা হয়ে গেছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব দাফন করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রীকে দুই পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত দাফনের তাগিদ দেন।
রাত সাড়ে আটটার দিকে হুমায়ূনের প্রথম পক্ষের তিন সন্তান নোভা, শিলা আর নুহাশ মিরপুরে চাচা আহসান হাবীবের বাসায় সাংবাদিকদের জানান, তারা বাবার কবর নুহাশপল্লীতে চান না। তারা এমন কোনো জায়গায় বাবাকে দাফনের কথা বলেন, যেখানে সবাই সহজে যেতে পারে।
এরপর থেকেই শুরু দফায় দফায় বৈঠক। হুমায়ূন আহমেদের ভাই জাফর ইকবাল, তাঁর স্ত্রী ইয়াসমীন হক, নোভা, শিলা, নুহাশ, ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ ও নাসিরুদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু সংসদ ভবনে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রীর বাসায় যান। সেখানে হুমায়ূন পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় দাফনের সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করেন। রাত পৌনে এগারটায় সেখান থেকে জাফর ইকবাল, ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ ও নাসিরুদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানককে নিয়ে ধানমন্ডির ‘দখিনা হাওয়া’য় হুমায়ূনের দ্বিতীয় স্ত্রী শাওনের কাছে যান। দুই ঘন্টার বেশি সময় ধরে আলোচনার পর কোনো সমাধানে না আসতে পেরে তারা আবার এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রীর বাসায় ফিরে আসেন। তারা পরিবারের সদস্যদের জানান, ”শাওন তার সিদ্ধান্তে অটল। শাওন বলেছেন, প্রয়োজনে আদালতে যাবেন। রায় না হওয়া পর্যন্ত মরদেহ হিমঘরেই থাকবে।” শাওনের এহেন অনড় অবস্থানের ফলে সবাই বুঝে যায়, দরকার হলে শাওন দিনের পর দিন হুমায়ুনের লাশ দাফন ছাড়াই হিমঘরে রাখবে। এতে আঁতকে ওঠেন স্বজনরা।
শাওনের জিদ আর ক্ষমতার কাছে শিলা-নোভা-বিপাশা-নুহাসের পিতার প্রতি ভালোবাসা আত্মসমর্পন করে। আর হুমায়ূন আহমেদের সত্যিকারের আপনজনেরা তাকে ঢাকায় দাফন করার ন্যায্য দাবি থেকে সরে দাঁড়ান। তারা প্রমাণ করলেন, হিমঘরে লাশ রেখে দাফনের স্থান ঠিক করার জন্য আইন-আদালতে যাওয়াকে ভালবাসা বলে না।
তাবৎ ঘটনাচক্রে আমার কাছে এটা পরিস্কার হয়েছে:
__________________________________
১. মৃত হুমায়ুনের লাশের দখল নেয়ার জন্য শাওন নিকৃষ্ট ও নোংরা পথে নেমে গিয়েছিল। নিউইয়র্কে লোকজনের সামনে শাওন বলে এসেছে, দাফন কোথায় হবে তা হুমায়ুন বলে যায় নি। তবে তার মা তহুরা আলী তাকে থামিয়ে দেয়। ঢাকায় লাশ আনার জন্য নিউইয়র্কে পিআর মোমেনের কাছে সরকারী পয়সায় প্রথম শ্রেনীর ৬টি টিকেট দাবী করে শাওন। সেটা না পাওয়াতে ১ দিন লাশ পড়ে থাকে ফিউনারেল হোমে। প্লেনে পুরো পরিকল্পনা হয়। ঢাকায় নেমেই শাওন দাবী করে, হুমায়ুন শেষ ইচ্ছা বলে গেছে, নুহাশ পল্লীতে দাফন করতে! এ কাজে সে সাংবাদিকদের সাহায্য চায়। সাথে সাথেই তার পাশে দাড়ায় চ্যানেল আই এবং সাংস্কৃতিক জোট।
২. অসুস্থ হুমায়ুনের চিকিৎসায় শাওন অবহেলা করেছিল এটা স্পষ্ট। হুমায়ুনের ব্যান্ডেজ বাসায় খোলা হতো এমনটা বলেছেন ফেরদৌস আরা।
৩. শাওনের বাসায় নিয়মিত মদের আসর বসতো। নানা রকম লোকজনের আনাগোনা ছিলো। অসুস্থ হুমায়ূনকেও দেয়া হতো সে সব। (ব্যক্তিগত সোর্সের খবর)
৪. অসুস্থ হুমায়ুনকে প্লাষ্টিকের চেয়ার বসানো হয়েছিলো। সেখান থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়। শাওন-মাজহার মিলে এটা গোপন করে। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় একদিন পরে সাধারন গাড়িতে করে জ্যামাইকা হাসপাতাল ও পরে বেলভ্যুতে নিয়ে যায়। হুমায়ুনের মূল চিকিৎসকের কাছে (স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার হাসপাতাল) আর নেয়া হয়নি।
৫. হুমায়ুনের শরীরের প্রকৃত অবস্থা রহস্যজনক কারনে গোপন করেছে শাওন ও মাজহার। কাউকে জানতে দিত না। এমনকি মোমেন সাহেবও না।
৬. অন্যপ্রকাশ প্রকাশনার স্বত্তাধিকারী মাজহারুল ইসলাম হুমায়ুনের বাসাতেই থেকেছে এ নয় মাস। শাওনের সাথে তার কি মাত্রার সম্পর্ক? এটা আমেরিকার বাংলাদেশী কমিনিটিতে আলোচিত হচ্ছে। হুমায়ুনের যখন চুড়ান্ত সংকট, তখন এরা হাসপাতালের বাইরে ২ঘন্টা থেকে এসেছে, যা কমিউনিটির চোখে পড়েছে। শাওনকে ১০ ঘন্টায়ও হাসপাতালে দেখা যায় নি, এমন তথ্যও কাগজে ছাপ হয়েছে।
৭. তবে কি শাওন-মাজহারের দীর্ঘ নয় মাসের অবৈধ প্রণয়ের বলি হলো হুমায়ুন আহমেদ??
শেষ কথা হলো, শাওন হুমাযূনকে ভালোবেসে নয়, যা করেছে পুরোটাই স্বার্থের জন্য। শাওন একটা ডাইনী বা শয়তানের প্রেতাত্মা। ওর জন্য রইলো অভিসম্পাত।
একটা পূর্নাঙ্গ হওয়া তদন্ত চাই।
সংগ্রহ:...।