#বইমেলা
#গ্রেফতার_নৈরাজ্য
বইমেলা হয় কীসের জন্য? পাঠকের কাছে বই পৌঁছে দিতেই তো?
আচ্ছা, পাঠক কাকে বলে? বা লেখকইবা কে? এর কি আলাদা কোন ডেফিনেশন আছে? এই ধরুন, পাঞ্জাবি থাকতে পারবেনা, টুপি-দাড়ি থাকতে পারবেনা? জিন্স-টিশার্ট ও চে গুয়েভারার ক্যাপ পরতে হবে?
উত্তরগুলো জানা নেই।
আচ্ছা আসুন আপনাকে একটা গল্প শোনাই।
ছেলেগুলোর বয়স ১৭ থেকে ২৩ কিবা ২৪। পাঠ ও ভাবনার গভীরতা এদের অতুলনীয়। গল্প-কবিতা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, রাষ্ট্র-সমাজ, ইতিহাস-দর্শন সর্ববিষয়ে পাঠ এবং পদচারণা এদের নিয়মিত। চলন-বলনে আধুনিক, মননে উদার, পাঠ ও ভাবনায় গভীর একদল তরুণ।
এদের কেউ লিখে সমাজের কথা, কেউবা সংস্কৃতির, কেউ লিখে গল্পকথা, কেউ প্রতীতির, অল্পস্বল্প গল্পকল্প সবাই লিখে। ছেলেগুলো গিয়েছে বইমেলায়। বই কিনবে, বইয়ের ঘ্রাণ নিবে এবং বইয়ের প্রাঙ্গণে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিবে বলে।
ছেলেগুলো ছিলো বড্ড বোকা! টুপি-দাড়ি নিয়ে দশ পনেরোজন একসাথে কখনো প্রগতির মেলায় যায়! ভুলের খেসারত দিতে হলো। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা-চিন্তায় অতন্দ্র প্রহরাধীন সেপাইগণ চিন্তিত হলেন। বইমেলা থেকে ছেলেগুলোকে আটক করে নিয়ে গেলো ডিবি কার্যালয়ে।
উপরের গল্পটা দুদিন আগে ঘটে যাওয়া একটি সত্যি। আচ্ছা, বইমেলাও কি তবে নষ্টদের অধিকারে যাবে?
এদের একজন যাইফ মাসরূর। (Zaeef Masrur) কিশোর লেখক। মাঝে মাঝেই ইনবক্সে নক দেয়, আলাপ হয়, আলোচনা হয়। ওর পড়ার পরিধি শুনে আমি অবাক হই, লজ্জায় নত হই। এই মেলায় সালাউদ্দীন বইঘর থেকে আসছে তার গল্পগ্রন্থ #কুকুরকাহিনী।
যে ছেলেটি কৈশোরের চপলতা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি, যে ছেলেটির রাতদিন কাটে সাহিত্য নিয়ে, তাকেও এই সাহিত্য এবং বইমেলা তীক্ষ্ণভাবে চিহ্নিত করে বুঝিয়ে দিলো- এপথ তোমার নয়!
সারাটা দিন এবং রাত পর্যন্ত বইমেলায় ছিলাম। প্রতিটা মুহূর্ত মনে হয়েছে আমি এখানে নিরাপদ তো? প্রাণের টানে এই যে মেলায় ছুটে আসা, মেলা কি আমার জানের নিরাপত্তা দিতে সক্ষম?
একজন বইপ্রেমী এবং মানুষ হিসেবে এর ধিক্কার জানাই। সবাই দ্রুত মুক্তি পাক। বইমেলায় নৈরাজ্য বন্ধ হোক। সবার জন্য নির্বিঘ্ন হোক। প্রাণের বইমেলা নিরাপদ এবং প্রিয় হোক- এই কামনা করি।
আল্লাহ সহায় হোন!