২০১৯ সালের শেষের দিকে, চিনের উহান থেকে শ্বাস-প্রশ্বাসের সংক্রমণ হচ্ছে এমন একটা নতুন ধরণের অসুখের খবর আসে। সেই সাথে এই খবর আসে শ্বাস-প্রশ্বাসের এই সংক্রমণটা মারাত্মক ধরণের এবং প্রাণঘাতী। নতুন ধরণের অসুখের ভাইরাসটি দ্রুতই সনাক্ত হয় যার নাম দেয়া হয় নভেল করোনাভাইরাস এবং সেই সাথে ২০০২-২০০৪ সালের মহামারীর জন্য দায়ী SARS এবং ২০১২ সালের মহামারীর জন্য দায়ী MERS ভাইরাসের সাথে এই নতুন ভাইরাসের সম্পর্ক আছে বলে চিহ্নিত করা হয়।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন এই নতুন ভাইরাস থেকে যে রোগ হচ্ছে তার নাম দেয় COVID-19 (কোভিড-১৯) এবং আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরী অবস্থার ঘোষণা দিয়েছে। আজকে এই লেখা পর্যন্ত এই ভাইরাসটি সারা বিশ্বে ৪,৮৮,৩৪৫ জনকে আক্রান্ত করেছে এবং ২২,০৭১ জনকে হত্যা করেছে।
অন্যান্য করোনাভাইরাসগুলির মতো, SARS-CoV-2 ভাইরাসের কণাগুলি গোলাকার হয় এবং তাদের পিঠে কাঁটার মত প্রোটিনের স্পাইক থাকে। ছিটকিনি দিয়ে যে ভাবে দরজা আটকানো হয় ঠিক সে ভাবে ভাইরাসটি তার কাঁটাগুলি দিয়ে মানুষের কোষগুলির সাথে নিজেদেরকে প্রথমে আটকায়। তারপরে একটি কাঠামোগত পরিবর্তন হয় যা ভাইরাল ঝিল্লিটি মানুষের কোষের ঝিল্লি দিয়ে গলিয়ে ফেলে মানুষের কোষের মধ্যে দ্রবীভূত হয়ে যায়। ভাইরাল জিনগুলি তারপরে তাদের মত আরো ভাইরাস উৎপাদনে জন্য মানুষের কোষটিতে প্রবেশ করতে পারে এবং আরও ভাইরাস তৈরি করতে থাকে। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলিতে দেখায় যে SARS-CoV-2 ভাইরাসটি ২০০২ সালের SARS ভাইরাসের মত তার স্পাইকগুলি দিয়ে মানুষের কোষের মধ্যে একটা রিসেপ্টর তৈরি করে যার নাম অ্যাঞ্জিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম ২ (ACE2) । এই রিসেপ্টরের কাজ হচ্ছে আলো, তাপ বা অন্যান্য বাহ্যিক উপাদান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মানুষের সংবেদনশীল স্নায়ুত্রন্ত্রকে সংকেত প্রেরণ করা।
দ্রুত গবেষণা অগ্রগতি স্বার্থে, নতুন করোনাভাইরাসের জিনোম ক্রমটি চীনের বিজ্ঞানীরা জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করেছিলেন। অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাঃ জেসন ম্যাকেলেন'স ল্যাব এবং এনআইএআইডি ভ্যাকসিন রিসার্চ সেন্টার (VRC) এর বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে একটি দল করোনাভাইরাসগুলির জিনোমের একটি অংশ বিচ্ছিন্ন করতে পেরেছে। ফলে ভাইরাসটির স্পাইকের প্রোটিনগুলির মধ্যে থাকা সংকেতগুলি গবেষকরা জানতে পারবে। এখন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য গবেষকরা সেল কালচার করে এই ধরণের অনেক প্রোটিন সেল উৎপাদন করবে।
এই তথ্যগুলি পাবেন ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ এলার্জি এন্ড ইনফেকসাস ডিজিসেস (NIAID) এর গবেষণা পত্রে।
স্পাইক প্রোটিনের কাঠামোর বিশদ ছবি তোলার জন্য গবেষকরা ক্রিও-ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপি (cryo-electron microscopy) নামে একটি কৌশল ব্যবহার করেছিলেন। ভাইরাস কণার হাজার হাজার ছবি তোলার জন্য বরফ শীতল নমুনা প্রোটিনটির মাধ্যম দিয়ে উচ্চ-শক্তির ইলেকট্রনের একটি প্রবাহকে পাঠানো হয়। এই হাজার হাজার ছবিগুলি একত্রিত করে ভাইরাসটির একটি বিশদ ৩ডি ছবি বানানো হয় ।
গবেষকরা দেখেছেন যে SARS-CoV-2 ভাইরাসের প্রোটিন স্পাইকটি ২০০২ সালর SARS ভাইরাস থেকে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি অ্যাঞ্জিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম ২ (ACE2) মানব কোষে তৈরি করতে পারে। ফলে এই ভাইরাসটি আগের ভাইরাসগুলোর তুলনায় বেশি ছড়াতে পারে অর্থাৎ বেশি ছোঁয়াচে।
SARS ভাইরাস এবং SARS-CoV-2 ভাইরাসের মধ্যে ক্রমবিন্যাস এবং কাঠামো গত অনেক মিল থাকা সত্ত্বেও SARS ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর তিনটি পৃথক অ্যান্টিবডি SARS-CoV-2 ভাইরাসের ক্ষেত্রে কাজ করছে না। তাই গবেষকরা বলছেন একদম নতুন অ্যান্টিবডি ভিত্তিক একটা ভ্যাকসিন বানানোর প্রয়োজন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:৩৭