বায়তুল মোকাদ্দস
বায়তুল মোকাদ্দস এবং আল আকসা মসজিদ এক স্থাপনা নয়। অনেকেই ভুল করে মনে করেন যে বায়তুল মোকাদ্দস এবং আল আকসা মসজিদ বুঝি একই স্থাপনা।
বর্তমানে বায়তুল মোকাদ্দস নামে কোন মসজিদ বা স্থাপনার অস্তিত্ব নাই। তবে টেম্পল মাউন্ট বা আল হারাম আশ শরীফ বা আল হারাম আল কুদস আশ শরীফ বা সংক্ষেপে হারাম শরীফ কমপ্লেক্সের ভিতরেই এটা একসময় ছিল। বায়তুল মোকাদ্দস নামের ঘরটি না থাকলেও ঘরের পবিত্রতা এখনো আছে। তাই কোনো নির্দিষ্ট কাঠামোকে নয় বরং এ জায়গাটিকেই বায়তুল মুকাদ্দাস বলা হয়।
নামকরণ: আরবিতে এই নাম প্রচলনের অনেক আগেই হিব্রুতে এই পবিত্র উপাসনালয় বা হোলি টেম্পলকে ‘বেইত হা-মিকদাস’ ডাকা হতো। ‘মিকদাস’ মানে পবিত্র, মুকাদ্দাস বা আল-মাক্বদিস বলতে আরবিতে যা বোঝায়, আর বেইত হলো ‘ঘর’, আরবিতে যা বাইত। অর্থাৎ বায়তুল মোকাদ্দস মানে পবিত্র ঘর।
নির্মাণ ইতিহাস: খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দে রাজা ডেভিড বা হযরত দাউদ (আ) জেবুসাইটদের কাছ থেকে জয় করে নেন জেরুজালেম নগরী। এরপর একে তিনি তার ইসরায়েল রাজ্যের রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করেন।
খ্রিস্টপূর্ব ৯৫৭ সালে দাউদ (আ) এর ছেলে রাজা সলোমন বা হযরত সুলাইমান (আ) রাজধানী জেরুজালেমের টেম্পল মাউন্ট বা আল হারাম আশ শরীফ বা আল হারাম আল কুদস আশ শরীফ বা সংক্ষেপে হারাম শরীফ এলাকায় ফার্স্ট টেম্পল বা প্রথম উপাসনালয়ের বা বায়তুল মুকাদ্দাস নির্মাণ কাজ শেষ করেন।
পবিত্র কুরআনের সূরা সবার ১৪ নং আয়াত অনুযায়ী, বায়তুল মোকাদ্দস নির্মাণের আগেই দাঁড়ানো অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন সুলাইমান(আ)। তিনি জিনদের দ্বারা এটা নির্মাণ করছিলেন।
সূরা সবার ১৪ নং আয়াত:
"যখন আমি সোলায়মানের মৃত্যু ঘটালাম, তখন ঘুণ পোকাই জিনদেরকে তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত করল। সোলায়মানের লাঠি খেয়ে যাচ্ছিল। যখন তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন, তখন জিনেরা বুঝতে পারল যে, অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান থাকলে তারা এই লাঞ্ছনাপূর্ণ শাস্তিতে আবদ্ধ থাকতো না।"
খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬ সালে ব্যবিলনীয়রা ধ্বংস করে দেয় ফার্স্ট টেম্পল বা বায়তুল মোকাদ্দস।
খ্রিস্টপূর্ব ৫১৬ সালে হুদিয়া প্রদেশের পারস্য অঞ্চলের গভর্নর জেরুবাবেলের পৃষ্ঠপোষকতায় সেই আগের উপাসনালয়ের জায়গায়ই নির্মিত হয় সেকেন্ড টেম্পল বা দ্বিতীয় উপাসনালয় বা নতুন বায়তুল মোকাদ্দস।
৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা সেকেন্ড টেম্পল বা দ্বিতীয় উপাসনালয় বা নতুন বায়তুল মোকাদ্দসকেও ধ্বংস করে দেয়। এরপর থেকে বায়তুল মোকাদ্দস নামের কোন স্থাপনার অস্তিত্ব নাই।
বায়তুল মোকাদ্দস নামের কোন স্থাপনার অস্তিত্ব না থাকলেও এটি এখন পর্যন্ত ইহুদীদের প্রার্থনার কিবলা এবং মুসলমানদের প্রথম কিবলা ছিল বহু বছর পর্যন্ত। এদিকে ফিরেই মুসলমানরা আগে নামাজ আদায় করত। হিজরতের ১৭তম মাসে মুসলমানদের কিবলা বায়তুল মোকাদ্দস থেকে কাবার দিকে পরিবর্তন হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০২০ রাত ৯:২৮