somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ আলী আকন্দ
আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

নিরাপত্তার জন্য ন্যাটো এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের ভবিষ্যৎ

১৪ ই জুলাই, ২০২৩ সকাল ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ন্যাটো, উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা, ৩২টি দেশের একটি সামরিক জোট যা ১৯৪৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের হুমকি মোকাবেলায় জন্য গঠিত হয়েছিল। ন্যাটোর মূল উদ্দেশ্য বহিরাগত আগ্রাসন থেকে সদস্যদের রক্ষা করা এবং ইউরো-আটলান্টিক এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করা।

সাম্প্রতিক সময়ে ন্যাটো ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নতুন চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগের মুখোমুখি হয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল আফ্রিকার পূর্ব উপকূল থেকে আমেরিকার পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি বসবাস করে। এই অঞ্চলের কয়েকটি দেশের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল। এই অঞ্চলটি কৌশলগত প্রতিযোগিতার একটি অঞ্চল। এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক এবং সামরিক ভাবে চীনের উত্থান হয়েছে। তাছাড়া উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সন্ত্রাসবাদ, জলদস্যুতা এবং সাইবার আক্রমণের মতো আন্তর্জাতিক হুমকি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করেছে।

ন্যাটো তার নিজস্ব নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধির জন্য ইন্দো-প্যাসিফিকের গুরুত্বকে উপলব্ধি করছে এবং এই উপলব্ধি থেকেই এই অঞ্চলের সাথে তার সম্পৃক্ততা বাড়াতে পদক্ষেপ নিয়েছে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সাথে সম্পর্ক বাড়াতে ন্যাটো যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে:

১. চারটি প্রধান ইন্দো-প্যাসিফিক দেশের সাথে অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে:
অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে ন্যাটো সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এই সম্পর্কের ফলে ইন্দো-প্যাসিফিকের এই চারটি দেশের সাথে ন্যাটো রাজনৈতিক সংলাপ, ব্যবহারিক সহযোগিতা, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাস দমন, সাইবার প্রতিরক্ষা এবং দুর্যোগ ত্রাণের মতো বিষয়গুলি নিয়ে যৌথ ভাবে কাজ করবে।

২. ইন্ডিয়াকে ন্যাটোর এনহ্যান্সড অপারচুনিটিস পার্টনার প্রোগ্রামে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ইন্ডিয়া এই আহ্বানে সারা দিলে ন্যাটোর সাথে ইন্ডিয়ার আন্তঃকার্যকারিতা, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির মতো বিভিন্ন বিষয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।

৩. ন্যাটো কোয়াড এর কার্যক্রমকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোয়াড হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, ইন্ডিয়া, জাপান এবং আমেরিকার মধ্যে একটি কৌশলগত সংস্থা। এই সংস্থার লক্ষ্য হচ্ছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং পরস্পরের স্বার্থের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন এবং উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ে তোলা।

৪. নতুন ধারণাটি হচ্ছে "ইন্দো-প্যাসিফিক ন্যাটো"। এক কথায় ন্যাটো এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি এক সাথে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি একটি প্রস্তাবিত বহুপাক্ষিক নিরাপত্তা কাঠামো হিসাবে কাজ করবে। এরফলে এই অঞ্চলের ন্যাটো সদস্য এবং অংশীদারদের পাশাপাশি ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের মতো অন্যান্য সমমনা দেশগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করবে৷ এই ধারণাটি উদ্দেশ্য হল গণতান্ত্রিক দেশগুলির একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা যা তাদের নীতি ও আদর্শকে অগণতান্ত্রিক আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে পারে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বাড়াতে সমন্বিত ভাবে কাজ করতে পারে।

ইন্দো-প্যাসিফিকের সাথে ন্যাটোর সম্পৃক্ততার উদ্দেশ্য চীন বা অন্য কোনো দেশের প্রতি বিরোধিতা করা নয় বরং নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এক সাথে সবাই মিলে কাজ করা। এরফলে এই অঞ্চলের সবগুলি দেশই উপকৃত হবে। ন্যাটো চীনের সাথে সংঘর্ষ বা সংঘাত চায় না বরং যেখানে সম্ভব সংলাপ এবং সহযোগিতা এবং প্রয়োজনে প্রতিযোগিতা করতে রাজি আছে। ন্যাটো এ অঞ্চলের সকল দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকেও সম্মান করে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান সমর্থন করে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ন্যাটোর সম্পৃক্ততা কেবল বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলির প্রতিক্রিয়া হিসাবে গণ্য করা যাবে না। বরং ভবিষ্যতের জন্য ন্যাটোর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলনও বটে। ন্যাটো একটি আঞ্চলিক সংস্থা থেকে বৈশ্বিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চাচ্ছে। এরফলে ন্যাটো তার অংশীদারদের সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তায় অবদান রাখতে পারে। ন্যাটো একটি প্রাণবন্ত জোট হিসাবে কাজ করতে চায়। যা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবং যেকোনো উদীয়মান হুমকির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সাথে জড়িত থাকার মাধ্যমে ন্যাটো একবিংশ শতাব্দীর প্রাসঙ্গিকতা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং কার্যকারিতা বাড়াতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২৩ সকাল ৭:০৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: রহস্যময় চৌধুরী ভিলা

লিখেছেন গ্রু, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৩৩



পরদিন সকালে আকাশ পরিষ্কার। গতরাতের বৃষ্টির কোনো চিহ্ন নেই, শুধু রাস্তার ধারের গাছগুলো থেকে টুপটাপ জল পড়ছে। অনিরুদ্ধ তার জীর্ণ নীল রঙের পাঞ্জাবিটা পরে তৈরি হয়ে নিল। সে সাধারণত রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ দম্পতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

I have a plan

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:২২

আসেন নেতা পা বাড়ান সামনে এগিয়ে চলেন
প্ল্যান টা কী বলেন।

সামনে আজাদ পেছনে দিল্লি কোন দিকে যাই বলেন
প্ল্যান টা কী বলেন।

যে দিকেই যাই ৩৬ যাবে? সেইটা ক্লিয়ার করেন
প্ল্যান... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি

লিখেছেন মুনতাসির, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৯

অনেকেই বলেন, ৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি। এই কথাটার সূত্র ধরেই এগোনো যায়। ৫ আগস্টের পর আমাদের কোন কোন পরিবর্তন এসেছে, সেটাই আগে দেখা দরকার। হিসাব করে দেখলাম, বলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আদর্শের রাজনীতি না কোটি টাকার হাতছানি...

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:২৫



১. আমি অনেক আগে ব্লগে লিখেছিলাম, বাংলাদেশে ছোট দলগুলো নিষিদ্ধ করা উচিত। উন্নত দেশের মত ২/৩ টিতে থাকাই উত্তম। কারণ, ছোট দলের নেতাদের টকশো-তে গলাবাজি করা ছাড়া আর কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×